জানি না কেন লিখি! তবু লিখি মনের খেয়ালে, পরিবর্তন করার মানসে, পরিবর্তিত হওয়ার মানসে। যদিও জানি সব ব্যর্থ হচ্ছে। তবুও আমি আছি সেদিনের সেই আলোকময় প্রত্যুষার আগমনের অপেক্ষায়
উগ্র জাতীয়তাবাদী চিন্তা-চেতনা এমন এক বিষয় যার জন্য একটি ভূ-খণ্ডের মানুষ সব বিষয়ে অন্ধভাবে দেশীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। অবশ্য এই শ্রেণির মানুষ একে দেশপ্রেম বলেও আখ্যায়িত করে থাকেন। কিন্তু আসলেই কি এটা দেশপ্রেম? কিংবা মানবজাতির জন্য এমন দেশপ্রেমের আদৌ কোন প্রয়োজন আছে কি? আমার দেশপ্রেম যদি বিশ্ব মানবতার অকল্যাণ ডেকে আনে, মানুষে মানুষে বিভক্তি টেনে আনে, সীমান্ত নিয়ে সংঘাত সৃষ্টি করে, প্রতিবেশীকে আঘাতের মাধ্যমে বিক্ষুব্ধ করে তবে তাকে কিছুতেই দেশপ্রেম হিসেবে আখ্যা দেওয়া যায় না।
এরপরেও যারা একে দেশপ্রেম হিসেবে জোর করে চাপিয়ে দিতে চাইবেন তাদেরকে মানসিক বিকারগ্রস্ত রোগী বলেই ধরে নিতে হবে।
হিটলারকে মানুষ তার ভূমিকার জন্য ঘৃণা করে। কিন্তু জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ঐ দেশপ্রেমিকগণ কি তাকে দোষ দিতে পারবেন? হিটলারকে কিন্তু ঐ উগ্র জাতীয়তাবাদীরা প্রবল ঘৃণার চোখেই দেখে থাকে। অথচ হিটলার ছিলেন প্রবল জার্মান জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী এক দেশপ্রেমি সৈনিক। তিনি এতটা কট্টর ছিলেন যে জার্মানদের মধ্যে যাতে অন্য কোন জাতির বৈশিষ্ট না থাকে সে জন্য খাটি জার্মান দম্পত্তি বাছাই করে নতুন জার্মান জাতির উন্মেষ ঘটাতে চেয়েছিলেন।
তিনি চেয়েছিলেন জার্মানদের মধ্যে যাতে বিজাতীয় কোন রক্তের ছোয়াও না থাকে। তাকে অনুসরণ না করলেও পৃথিবীর অনেক জাতিই জাতীয় বিশুদ্ধতা রক্ষায় নিজেদের বাইরে বৈবাহিক সম্পর্ক করে না। নিজেদের আবাসভূমিতে অন্যদের বসবাসের প্রশ্রয় দিতে চায় না। অভিবাসী আইন কঠোরতর থেকে কঠোরতর করতে এরা অতিরিক্ত উৎসাহী। প্রায়শঃই বিদেশিদেরকে উৎখাত করতে এরা দাঙ্গার সূচনা করে।
আমাদের পাশ্ববর্তী ভারতীয় রাজ্য আসামের অধিবাসীরা দেশপ্রেমের নামে সুদীর্ঘকাল থেকে সেখানে বসবাসকারী বাঙালি অধিবাসীদেরকে উচ্ছেদের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। সুযোগ পেলেই তারা বাঙালিদের উচ্ছেদ ও হত্যা করে। মায়ানমারের ‘বিদেশি’ রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ করতে ‘জীব হত্যা মহাপাপ’ এই তত্ত্বে বিশ্বাসী বৌদ্ধ ধর্মের ভিক্ষুরাও আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করে না। ধর্মীয় কারণের পাশাপাশি উগ্র জাতীয়তাবাদী চিন্তাই এর পেছনে মূল কারণ।
উগ্র জাতীয়তাবাদের এই চর্চা বৃহত্তর মানব কল্যাণ ও ঐক্যের ক্ষেত্রে সাংঘাতিক অন্তরায়।
মানব জাতির আদি সূচনা একই দম্পত্তি আদম-হাওয়া থেকে। সুতরাং তারা নানা কারণে বিভিন্ন গোত্রে, ভৌগোলিক দূরত্বে, গায়ের রঙের ভিন্নতায় এবং ভাষাগত দিক দিয়ে আলাদা হয়ে গেলেও তাদের গোড়া একই স্থানে। সুতরাং মাঝ থেকে কেউ যদি বিচ্ছিন্নভাবে পৃথিবীর বুকে কাল্পনিক সীমারেখা টেনে দ্বন্দ্বের সূচনা করে তবে তাকে দেশ প্রেমের দোহাই দিয়ে কোনভাবেই বৈধতা দেওয়া যায় না। যারা একে যে কোন যুক্তিতেই বৈধতা দিয়ে মানবজাতিতে ঐক্যের ফাটল ধরায় তারা মানবতার শত্র“, মানবজাতির শত্র“।
তবে এর মানে এই নয় যে সব দেশপ্রেমই জাতীয়তাবাদী চিন্তা-চেতনায় দুষ্ট।
উগ্রতা পরিহার করেও ভাল দেশপ্রেমিক হওয়া সম্ভব। কেননা মানুষ স্বাভাবিকভাবেই তার দেশ, তার জন্মভূমিকে অন্যান্য দূরবর্তী স্থানের চেয়ে বেশি ভালবাসবে। প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি এর পেছনে বৈজ্ঞানিক কারণও রয়েছে। যখন একটি নির্দিষ্ট ভূ-খণ্ডের মানুষ সেখানকার আবহাওয়া ও আলো-বাতাসে শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে বড় হয়ে উঠে, তার প্রতি তার মায়া-মমতা, ভালবাসা বেশি হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। প্রত্যেক ভূ-খণ্ডে বসবাসকারীরই তাই হওয়ার কথা।
তাই অন্যের জন্মভূমি, অন্যের জাতীয়তাকে অসম্মান করা কোন কৃতিত্ব নয়। সবাই যদি তাই করে তবে জাতিতে জাতিতে সংঘাত সৃষ্টি হবে। নষ্ট হবে সমষ্টিগত শান্তি ও স্থিতিশীলতা। সুতরাং উগ্র জাতীয়তাবাদী চিন্তা-চেতনাকে কোনভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যায় না। যার যার দেশকে ভালবেসে এবং অন্যের জাতীয়তাকে সম্মান প্রদর্শন করে মানব জাতির মধ্য থেকে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের স্থায়ী অবসান ঘটানো যায়।
এই দেশপ্রেমই আসলে প্রকৃত দেশপ্রেম। সুতরাং দেশপ্রেমের নামে যে কোন প্রকার উগ্রতা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।