জেব্রা ফিন্চ, মধ্য অস্ট্রেলিয়ার অতি পরিচিত ছোট আকারের পাখি। Finch শব্দটির অর্থ ছোট আকারের গানের পাখি। বৈজ্ঞানিক নাম Taeniopygia guttata। এই পাখি অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের একটি নির্দিষ্ট সীমায় উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের ঠাণ্ডা আদ্রতা থেকে দূরে থাকে। এদেরকে ইন্দোনেশিয়া ও পূর্ব তাইমুরেও দেখা যায়।
পুয়েরতো রিকো, পর্তুগাল, ব্রাজিল ও আমেরিকাতেও পরিচিত।
বাংলাদেশে কেইজ বার্ড হিসেবে পরিচিত পাখির মধ্যে জেব্রা ফিন্চ বেশ জনপ্রিয়। এই পাখি ঘাসভূমি ও বনাঞ্চলের প্রশস্থ অঞ্চল ও পানির কাছাকাছি জায়গায় বাস করে। এরা ‘বিপ’, ‘মিপ’, ‘ওই’ বা ‘এ্যাহা’ উচ্চারণে ডাকে।
ছোট এ গানের পাখির গানের শব্দ স্ত্রী-পুরুষভেদে পার্থক্য আছে।
প্র্রাকৃতিক পরিবেশে ৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। খাঁচাতে কেইজ বার্ড হিসেবে এদের ৫ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত বাঁচতে দেখা গেছে।
এরা ছোট দানাজাতীয় খাবার যেমন চিনা, কাউন, তিল, গুজিতিল— এ ধরনের ছোট বীজদানা খেয়ে থাকে। ৩ মাস বয়স হলেই এরা প্রজনন শুরু করে। ২টা থেকে ৮টা পর্যন্ত ডিম দেয়।
ডিমের রং সাদা।
ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ১৪ থেকে ১৬ দিন সময় লাগে। বাচ্চা ৩ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যেই বাসা থেকে বের হয়।
কয়েক প্রকারের ফিন্চ বর্তমানে আমাদের দেশের অনেকেই সৌখিন ও বাণিজ্যিকভাবে পালন করছেন। এর মধ্যে জেব্রা ফিন্চও আছে।
দাম খুব বেশি নয়। প্রজনন উপযোগী প্রতি জোড়া জেব্রা ফিন্চ ৫শ’ থেকে ৭শ’ টাকায় পাওয়া যায়।
পালন পদ্ধতি
জেব্রা ফিন্চ সাধারণত মধ্য অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়ার উপযোগী। বর্তমানে আমাদের দেশে শৌখিন ও বাণিজ্যিকভাবে পালিত হচ্ছে। পালনের জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই।
শখের জন্য পালতে চাইলে পাখির দোকানে গেলেই হবে।
দরকার পড়বে ছোট একটি খাচা। দাম পড়বে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। খাবারের পাত্র ২০ টাকা। পানির পাত্র ১৫ টাকা ও ডিম পাড়ার হাঁড়ি ২০ টাকা।
ডিম পাড়ার পাত্র হিসেবে বাঁশের ঝুড়িও ব্যবহার করা যায়। ঝুড়িটি খাঁচার এক কোণে ঝুলিয়ে রাখলেই চলবে। এর মধ্যে শুকনো দূর্বাঘাস ও নারকেলের ছোবড়া দিয়ে রাখলে ওরা সুন্দর করে হাঁড়ির মধ্যে বাসা বাঁধবে। এছাড়া পাটের বস্তা বৃত্তাকারে কেটে ঝুড়িতে বসিয়ে দেওয়া যায়।
প্রাথমিক অবস্থায় বাণিজ্যিকভাবে পালন করতে তেমন খরচ হবে না।
প্রতিজোড়া পাখির জন্য একটি করে ছোট আকারের খাঁচা ব্যবহার করাই ভালো। বড় খাঁচায় একসঙ্গে কয়েক জোড়া পালন করা যায়। তবে এতে ঝুঁকি আছে। কারণ এরা প্রচুর পরিমাণে মারামারি করে। ফলে পাখি ও ডিমের ক্ষতি হয়।
প্রতি জোড়া জেব্রা ফিন্চ বা সাদা ফিন্চ পাখির দাম হবে ৫শ’ থেকে ৭শ’ টাকা। স্ট্রবেরি নামেও ফিন্চ আছে। দেখতে স্ট্রবেরি ফলের রংয়ের মতো। ব্যবসায়ীরা স্টার ফিন্চ হিসেবে চেনে। এদের দাম একটু বেশি।
আরও বেশি দামেরও ফিন্চ আছে।
পাখি কেনাবেচার জন্য পরিচিতি কাটাবনের দোকান ঘুরে কয়েক প্রজাতির ফিন্চ দেখা গেল। এখানে বেশি দামের প্রতি জোড়া ফিন্চের দাম ৮ হাজার ৫শ’ টাকা। ব্যবসায়ীরা ফিন্চ না বলে এদের ভিন্ন ভিন্ন নামে চেনে।
বিভিন্ন রংয়ের ফিন্চ ভিন্ন ভিন্ন নামেই হয়ে থকে।
সংগ্রহ করার জন্য মিরপুর ১নং (শুক্রবার), মিরপুর ১৪ নং (শনিবার), উত্তরা, কাটাবন, গুলিস্থান ও ধানমন্ডি (শুক্রবার) এসব এলাকায় বিকিকিনি হয়। তবে কাটাবনে সব ধরনের ফিন্চ পাওয়া যায়।
অনলাইনের মাধ্যমেও সংগ্রহ করা যায়। ঢাকার দারুসসালামের আসিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তিনি প্রতি মাসেই ফিন্চ পাখি বিক্রি করেন। তিনি গার্মেন্টস ব্যবসায়ী।
শখের বসে এই পাখি পালন করে থাকেন।
এছাড়াও ডায়মন্ড-জাতীয় ঘুঘুও তিনি পালন করেন। নিজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে আসিক বলেন, “একবার মিরপুর ১ নম্বরে মোটর বাইকের পিছনে করে ডিমসহ ৫টি ফিন্চ বিক্রি করতে গেলাম। সঙ্গে সঙ্গে আমাকে কয়েকজন ঘিরে ফেলে। সবাই আসলে ক্রেতা।
আমি দাম চাইলাম ১৫শ’ টাকা। শখের এক ক্রেতা ১২শ’ টাকা দিয়ে পাখিগুলি সংগ্রহ করেন। ”
খাবার
এদের খাদ্য ছোট বীজদানা। সব সময়ের জন্য পানি দিয়ে রাখতে হয়। পাখির খাবারের দোকানে খুব সহজে এদের খাবার প্রতি কেজি কাউন ও চিনা একত্রে ৩০ টাকায় পাওয়া যায়।
রোগ
রোগ বালাইয়ে সবাই আক্রান্ত হয় এটাই স্বাভাবিক। সেটার প্রতিকারও আছে। দিনে সূর্যের আলো পায় এমন জায়গায় রাখাই ভালো। এতে ঠাণ্ডা লাগা থেকে রেহাই পাবে। শীত মৌসুমে লাইট জ্বালিয়ে রাখা যেতে পারে।
যদি ঠাণ্ডা লেগেই যায় তবে ঠাণ্ডা প্রতিরোধক বড়ি বা সিরাপ পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
১৫ দিন পর পর ভিটামিন-জাতীয় বড়ি বা ক্যাপসুল পানির সঙ্গে অল্প পরিমাণ মিশিয়ে ৩/৪ দিন পর্যন্ত দিলে রোগ প্রতিরোধ ও প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।