লিখতে ভাল লাগে, লিখে আনন্দ পাই,তাই লিখি। নতুন কিছু তৈরির আনন্দ পাই। কল্পনার আনন্দ। (http://www.ishakkhan.blogspot.com)
ভদ্রলোক চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে প্রথম পাতাটা ভাঁজ করতে করতে বললেন, যাহ, ছেলেটা বাপকে খুন করে ফেললো?
দ্বিতীয় ভদ্রলোককে মোটেও বিচলিত দেখায় না, তিনি বললেন, করবে না? সে যুগ কি আর আছে? এখনকার ছেলেপুলেরা সব করতে পারে।
তৃতীয়জন বলেন, যা বলেছেন।
এত স্বাধীনতা এই বয়সে পেলে তো ওরা বিগড়ে যাবেই। জন্মাত আমাদের সময়ে, ধোলাই খেয়ে টাইট হয়ে থাকতো। বাপের মুখের দিকে চোখ তুলে তাকাতেই সাহস পেত না, আর বুকের ওপর ছুরি ধরবে? নতুন যুগ এসে সব ভেসে গেল ভাই, আরও কত কী যে দেখতে হবে। একটা বড়সড় দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে তাঁর বুক চিরে।
তবে তাঁকে খুব বেশীক্ষণের জন্য দুঃখিত দেখায় না।
তিনি পাশ থেকে ছোট্ট চায়ের কাপটা তুলে নিয়ে চুমুক দেন।
... ...
চাঞ্চল্যকর খবর আবার কী? আমরা কিন্তু পাবলিকের হাতে মুখরোচক খবর তুলে দিতে গিয়ে বিবেকবোধ হারাতে বসেছি। একটা সংবাদ প্রকাশে কিছুটা দায়বদ্ধতা তো থাকতে হয়। ছেলেটার বয়স কম। তার একটা ভবিষ্যৎ আছে।
এভাবে রগরগে বর্ণনা দিয়ে আমরা ওর ভবিষ্যতকে আর মানসিক অবস্থাটাকে একেবারে দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছি। একটা নীতিমালা তৈরি হওয়া উচিৎ। এটা সাধারণ খুনের মত নয়। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ছেলেটি একা দায়ী নয়, দায়ী আমাদের সমাজব্যবস্থা, যে ব্যবস্থায় একটা উঠতি বয়সী ছেলে কিংবা মেয়ে নিজেকে খুব একা আর অসহায় মনে করতে শেখে, হতাশার বশবর্তী হয়ে নেশা করতে শেখে, পরিবার আর পিতামাতা থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন ভাবতে শেখে। সেই ঘুণে ধরা সমাজকে না পাল্টে একচেটিয়াভাবে এই ছেলেটিকে দায়ী করা অমানবিক।
বলুন ঠিক কীনা?
অবশ্যই ঠিক। অনেকগুলো হাত উঠলো।
আমরা এ ব্যবস্থার পরিবর্তন চাই। বলুন চাই কীনা?
চাই। চাই।
এবারও অনেকগুলো কণ্ঠের চিৎকার শোনা যায়।
আমরা আমাদের সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যৎ তৈরি করে দিতে চাই, বলুন চাই কীনা?
চাই। চাই।
আমরা চাই, পিতামাতা আধুনিক জীবনযাপনের ব্যস্ততায় নিজের সন্তানকে ভুলে যাবেন না। তাকে পর্যাপ্ত সময় দেবেন, তাকে আদর করবেন, আবার শাসনও করবেন।
সন্তানের জীবনকে চার দেয়ালের ভেতর সংকীর্ণ করে দেবেন না, আবার একেবারে লাগাম ছেড়ে উচ্ছৃঙ্খল হয়ে যেতেও দেবেন না। তাকে পকেটখরচা দেবেন, তবে তা দু’হাতে উড়িয়ে দেবার জন্য নয়, দেবেন তার দরকারে। তাদেরকে শুধু সফল হতে শেখাবেন না, শেখাবেন নীতিবান হতে, মানুষের মত মানুষ হতে। বলুন আমরা সবাই একমত কীনা?
একমত। একমত।
সবগুলো হাত উঠলো, একটাও বাদ রইলো না।
খবর হল, আলোচনা হল, সভা হল, মতবিনিময় হল, বাকবিতণ্ডা হল। তারপর একদিন ... ...
ভদ্রলোক চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে প্রথম পাতাটা ভাঁজ করতে করতে বললেন, যাহ, ছেলেটা মা’কে খুন করে ফেললো?
দ্বিতীয় ভদ্রলোককে মোটেও বিচলিত দেখায় না, তিনি বললেন, করবে না? সে যুগ কি আর ... ...
(১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।