আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা... চির উন্নত মম শীর
বন্ধুরা আপনাদের সবসময় খুব বিরক্ত করি।
তবু নির্লজ্জের মত চাইছি, এই লেখাটা প্লিজ পুরোটা পড়বেন। আমার বীরাঙ্গনা মা কে আরেকবার ধর্ষণ করছে এই বাংলারই অনেক জারজ সন্তান। এই লেখাটা পড়লে কসাই আর মোল্লা বিভ্রান্তি দূর হবে আশা করি। তথ্য গুলো ছড়িয়ে দিন প্লিজ...
বিভ্রান্তিতে ফেসবুক ব্লগ তোলপাড়, লেখার শুরুতেই একটা কথা বলতে চাই, কাদের মোল্লা এবং তার আইনজীবীদের মতে কাদের মোল্লা ও কসাই কাদের আলাদা ব্যাক্তি এবং বিহারী কসাই কাদের খুনের দায়ে মোল্লা কাদেরের ফাঁসি হয়ে যাচ্ছে।
কাদের ট্রাইব্যুনালকেও বিভিন্নবার বলেন
"আজ এই কোরআন শরীফ হাতে নিয়ে আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, ১৯৭১ সালে মিরপুরে কসাই কাদের কর্তৃক যেইসব হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলো তার একটি অপরাধের সাথেও আমার দূরতম কোন সম্পর্ক নেই। কাদের মোল্লা বলেন, আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি আমি ১৯৭৩ সালের আগে কোনদিন মিরপুরেই যাইনি। "
তাহলে একটা বিষয় পরিস্কার, আমরা যদি প্রমাণ করতে পারি কসাই এবং মোল্লা এক ব্যাক্তি তাহলে এক্সাথেই প্রমাণ হয় মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়।
বিভিন্ন ভাবেই এটা প্রমাণ করা যায়,
আজকের কথাই ভাবুন
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার "১৯৭১ সালের ঘটনার ৪২ বছর পর কাদের মোল্লার ফাঁসি একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের প্রতি বিশ্বস্ততা ও সংহতির জন্য কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
তার মৃত্যুতে সকল পাকিস্তানি মর্মাহত এবং শোকাহত। তিনি আরো বলেন, এ ঘটনার মাধ্যমে পুরানো ক্ষত আবারো জাগিয়ে তোলা হয়েছে। "
"জামায়াতে ইসলামি পাকিস্তানের প্রধান মুনাওয়ার হাসান কাদের মোল্লাকে তাদের ‘বাংলাদেশি সহচর’ আখ্যায়িত করে তার ফাঁসিকে শোচনীয় বলে মন্তব্য করেন। " কাদেরের ফাঁসি দেয়ায় বাংলাদেশ আক্রমণের জন্য নিজেদের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তানের রাজনৈতিক দল জামায়াত-ই-ইসলামী।
কিন্তু বারবারই জামাত দাবী করে এসেছে কসাই কাদের আর কাদের মোল্লা এক ব্যাক্তি নন, জাবনবন্দীতে কাদের বলেছিলো
"১৯৭১ সালের ১২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের আমিরাবাদ চলে যান এবং মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়ই তিনি গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করেন।
গ্রামে অবস্থানকালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও হাই স্কুলের প্রায় ৩০ জন ছাত্রের সাথে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ থেকে ১ মে পর্যন্ত (পাকিস্তান সেনাবাহিনী ফরিদপুরে পৌঁছার দিন পর্যন্ত) অন্যদের সাথে তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ চালিয়ে যান। সেনাবাহিনীর জুনিয়র কমিশনড অফিসার (জেসিও) মফিজুর রহমান ডামি রাইফেল দিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দেন। " (ইত্তেফাক)
কাদেরের ভাষ্য মতে সে একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধা ছিল কিন্তু পাকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন,
"পাকিস্তানের প্রতি বিশ্বস্ততা ও সংহতির জন্য কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। "
এতেওকি প্রমাণ হয় না কসাই কাদের আর কাদের মোল্লা এক ব্যাক্তি ?
এবার চাক্ষুষ সাক্ষীর বয়ান শুনুন
একঃ ফজর আলী
"মিরপুর ১১ নম্বর বি ব্লকের বাসিন্দা ফজর আলী গণতদন্ত কমিশনকে দেওয়া সাক্ষ্যে তার ছোটভাই মিরপুর বাংলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে নৃশংসভাবে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন।
২৯ মার্চ নবাবপুর থেকে পল্লবকে তুলে নিয়ে আসে কাদের মোল্লার সাঙ্গপাঙ্গরা। এরপর তার নির্দেশে ১২ নম্বর থেকে ১ নম্বর সেকশানের শাহ আলী মাজার পর্যন্ত হাতে দড়ি বেধে হেচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ছাত্রলীগ কর্মী পল্লবকে। এরপর আবার ১ নম্বর থেকে ১২ নম্বর সেকশনের ঈদগাহ মাঠে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে টানা ২ দিন একটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয় পল্লবকে। ঘাতকরা এরপর তার দু হাতের সবকটি আঙুল কেটে ফেলে।
৫ এপ্রিল একটি মজার খেলা খেলেন কাদের মোল্লা। সঙ্গীদের নির্দেশ দেওয়া হয় গাছে ঝোলানো পল্লবকে গুলি করতে, যার গুলি লাগবে তাকে পুরষ্কার দেওয়া হবে। পরে কাদের মোল্লার সঙ্গী আখতার পল্লবের বুকে ৫টি গুলি করে পরপর। পল্লবের লাশ আরো দুইদিন ওই গাছে ঝুলিয়ে রাখেন কাদের মোল্লা, যাতে মানুষ বোঝে ভারতের দালালদের জন্য কি পরিণাম অপেক্ষা করছে। ১২ নম্বর সেকশানে কালাপানি ঝিলের পাশে আরো ৭ জন হতভাগার সঙ্গে মাটিচাপা দেওয়া হয় পল্লবকে।
অক্টোবরে মিরপুর ৬ নম্বর সেকশানে একজন মহিলা কবি মেহরুন্নেসাকে প্রকাশ্যে নিজের হাতে নির্মমভাবে হত্যা করে কাদের মো্ল্লা। প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন সিরাজ এই নৃশংসতায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। মূলত বিহারীদের নিয়ে একটি খুনে দল তৈরী করেছিলেন কাদের মোল্লা আর বুলেট বাচাতে জবাই করা ছিলো তার কাছে বেশী প্রিয়। "
দুইঃ ফিরোজ আলী
"ফিরোজ আলী তখন মধ্য বয়স্ক এক ব্যক্তি, তিনি একাত্তর সালে স্বপরিবারে মিরপুরে থাকতেন। একাত্তরের ২৫ মাচের্র পর তার ভাই পল্লবকে শুধু 'জয় বাংলা'র অনুসারী হওয়ার অপরাধে কাদের মোল্লার নির্দেশে অবাঙ্গালি গুন্ডারা অকথ্য নির্যাতন করে নির্মম ভাবে হত্যা করে।
তখন সমগ্র মিরপুরে হত্যা আর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে কাদের মোল্লা ও তার অনুসারী অবাঙ্গালিরা । জবাই করে বাঙ্গালি হত্যা ছিল তাদের প্রতিদিনের রুটিনমাফিক কাজ। একেকটি জবাইর আগে ঘোষনা দিত যারা বাংলাদেশ তথা জয় বাংলা অনুসারী, তারা বিধর্মী-নাস্তিক-ভারতের দালাল, এদের হত্যা করা সওয়াবের কাজ! এমন জবাই’র নেশা বেড়ে যাওয়ায় কাদের মোল্লার নাম তখন এ তল্লাটে আতঙ্কের সমার্থক শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। স্থানীয়রা আব্দুল কাদের মোল্লাকে 'কসাই কাদের' নামকরণ করে । গরু জবাই এর মত মানুষ জবাই এ দক্ষতার নামডাকে(!) কসাই কাদের 'মিরপুরের কসাই' নামেও পরিচিতি লাভ করে ব্যাপক ।
কসাই কাদের মোল্লার প্রতিহিংসার শিকার শহীদ পল্লবের ডাক নাম ছিল 'টুনটুনি'। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে বেশকিছু চলচিত্রে পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে অভিনয় করে সুখ্যাতি অর্জন করে প্রতিপক্ষের চক্ষুশূল হন পল্লব। এ কথা জানান ফিরোজ আলীর স্ত্রী। পল্লব ছাড়াও কবি মেহেরুননেছা নামের এলাকায় খুবই শান্ত-নিরীহ প্রকৃতির বাঙ্গালী গৃহবধূ কসাই কাদের মোল্লার প্রতিহিংসার বলি হন। মিরপুর ৬ নং সেকশন, ডি ব্লক মুকুল ফৌজের মাঠের কাছাকাছি একটি বাড়িতে থাকতেন কবি মেহেরুননেছা।
তিনি ছিলেন কবি কাজী রোজী'র ঘনিষ্ঠ বান্ধবী । কসাই কাদের মোল্লার নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে লেখালেখি'র অপরাধে মেহেরুননেছাসহ তার পুরো পরিবারকে বটি দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করা হয়েছিল! এরপর টুকরো করা নরমাংস খন্ডগুলো নিয়ে ফুটবলও খেলা হয়েছিল ৬ নং মুকুল ফৌজ এর মাঠে! কসাই কাদের মোল্লার নির্দেশে ৩০/৩৫ জনের একটি অবাঙ্গালি ঘাতকের দল, মাথায় লাল ফিতা বেঁধে, ধারালো তলোয়ারে সজ্জ্বিত হয়ে অংশ নেয় কবি মেহেরুননেছা ও তার পরিবারকে হত্যাকান্ডে!"
তিনঃ কাদের মোল্লার বন্ধু
মোজাম্মেল এইচ খান
"১৯৭৩ সালের প্রথমার্ধে আমি যখন উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে আসি তখন জানতাম না কাদের কোথায় আছে। ১৯৭৯ সালে আমি দেশে বেড়াতে গেলে একদিন যখন ঢাকার মগবাজারের রাস্তা দিয়ে হাঁটছি তখন পেছন থেকে একজন আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘তুই কি মোজাম্মেল?আমি কাদের। ’ আমার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল,‘কাদের,তুই বেঁচে আছিস?’ কাদেরের উত্তর ছিল,‘হ্যাঁ, আমি ভালভাবে বেঁচে আছি এবং এখন আমি দৈনিক সংগ্রামের নির্বাহী সম্পাদক। তোর “জয় বাংলা” এখন এদেশ থেকে নির্বাসিত; ফিরে এসেছে আমাদের জিন্দাবাদ এবং এটা এখনপ্রচণ্ড ভাবে জাগ্রত।
’ যেহেতু কাদের সত্য কথাই বলেছিল, সেহেতু আমি ওর কথার কোন জবাব দিতে পারিনি। কয়েক সপ্তাহ পরে আমি যখন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাই তখন সংবাদপত্রে পড়লাম প্রেসক্লাবে একটি বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিল কাদের মোল্লা; একেই বলে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস!"
শেষ করব...
পাঠক কি লক্ষ্য করেছেন আমি আমার লেখায় মোমেনা খাতুনের কথা আনিনি ? এই মহিলা কাদের মোল্লার হাতে ধর্ষিত। তার পরিবারের সব সদস্যকে চোখের সামনে মরতে দেখেছেন। তার সম্পর্কে একটা যুক্তিই খণ্ডন করব,
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সাক্ষাতকারে মোল্লার নাম নাই... ব্যাপারটা কি খুব সিম্পল না ? কাদের মোল্লার কথা প্রকাশ করলে সে কি বেচে থাকতে পারত ? সরকারের ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তা নিয়ে সাইদির সাক্ষী মারা গেল আর এসব ছাড়াই খোলা মাঠে কাদেরের কথা প্রকাশ করে বেঁচে থাকতে পারত মোমেনা খাতুন ?
আশা করি এই লেখা বিভ্রান্তি দূর করতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। খুবই সংক্ষেপে লিখেছি লিংকগুলতে বিস্তারিত পাবেন।
সুত্রঃ
১) http:bn.wikipedia.org/wiki/আব্দুল_কাদের_মোল্লা
২)http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article713859.bdnews
৩)http://www.somewhereinblog.net/blog/niandarthal/29905160
৪)http://www.somewhereinblog.net/blog/majoy/29761606
৫)http://www.unmochon.com/2013/12/12/55182.html#.UqyUlWUqaZ_
৬)http://www.bdtomorrow.com/newsdetail/detail/41/58586
৭)http://www.facebook.com/JIPOfficial
৮)http://www.kalerkantho.com/online/world/2013/12/14/30648
৯)http://www.prothom-alo.com/home/article/98515/
১০)http://www.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMTJfMTRfMTNfMV8yXzFfOTMyMTI=
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।