২০০৭ সালের ৩০ মার্চ শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইসহ ছয় শীর্ষ জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর হয়। শায়খ আবদুর রহমানের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে কুমিল্লা কারাগারে। সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই ও আবদুল আওয়ালকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে ময়মনসিংহ কারাগারে। খালেদ সাইফুল্লাহকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে পাবনা কারাগারে। কাশিমপুর কারাগারে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে আতাউর রহমান সানি ও ইফতেখার হাসান মামুনকে।
জেএমবি জঙ্গিরা ২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠি জেলার সিনিয়র সহকারী জজ সোহেল আহম্মেদ ও জগন্নাথ পাঁড়ের গাড়িতে বোমা হামলা চালিয়ে তাদের হত্যা করে। এই মামলায় তাদের দণ্ড দেওয়া হয়। ২০০৬ সালের ৬ মার্চ ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে বাংলা ভাইকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা গ্রেফতার করে। এর চার দিন আগে সিলেট থেকে গ্রেফতার করা হয় শায়খ রহমানকে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ও কঠোর গোপনীয়তায় এ বছরের ২৯ মার্চ গভীর রাতে বহুল আলোচিত ছয় জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
জামা'আতুল মুজাহিদীনের (জেএমবি) শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির খবর জানানো হয়নি তাদের আত্দীয়স্বজনকে, জানতে পারেনি মিডিয়ার লোকজনও।
২০০৭ সালের ২৯ মার্চ গভীর রাতে চারটি কারাগারে একযোগে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এর পরপরই র্যাব ও পুলিশ পাহারায় মৃতদেহ নজিরবিহীন নিরাপত্তায় নিজ নিজ গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানেই কড়া পুলিশি পাহারায় তাদের দাফন করা হয়। জেএমবির প্রধান শায়খ আবদুর রহমানকে কুমিল্লা কারাগারে, সেকেন্ড ইন কমান্ড সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাই ও শায়খ রহমানের জামাতা আবদুল আউয়ালের ফাঁসি কার্যকর করা হয় ময়মনসিংহ কারাগারে।
জেএমবির সামরিক শাখার কমান্ডার আতাউর রহমান সানি ও ইফতেখার হাসান মামুনকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে এবং খালেদ সাইফুল্লাহকে পাবনা কারাগারে ফাঁসি দেওয়া হয়। ফাঁসি কার্যকর করার সময় ছয় জঙ্গির সবাই ছিল নির্লিপ্ত, ভাবলেশহীন। পবিত্র কালেমা ও কোরআনের আয়াত পড়তে পড়তে তারা ফাঁসির মঞ্চে ওঠেন।
২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যা মামলায় জেএমবির ৭ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। গত ২৯ মার্চ বৃহস্পতিবার এদের ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
অপর আসামি আরিফ পলাতক অবস্থায় ঢাকার মিরপুর থেকে গ্রেফতার হয়। ২০০৬ সালের ২৯ মে ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালত হত্যাকাণ্ডের রায়ে ৭ জঙ্গির ফাঁসির আদেশ দেন। উচ্চ আদালত ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে গত বছর ৩১ আগস্ট মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রাখেন। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ গত বছর ২৮ নভেম্বর শীর্ষ জঙ্গিদের আবেদন খারিজ করে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। ২০০৭-এর ৫ মার্চ রাষ্ট্রপতি তাদের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করায় ফাঁসি কার্যকরের জন্য আইনগত কোনো বাধা থাকেনি।
শায়খ আবদুর রহমান জেএমবি প্রতিষ্ঠা করে ১৯৮৮ সালে। এরপর তিনি কিছুদিন সৌদি ও কুয়েত দূতাবাসে চাকরি করেন। দূতাবাসের চাকরি ছেড়ে দিয়ে জামালপুরে এসে সার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন। দেশের বিভিন্ন চরমপন্থি সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে জেএমবিকে শক্তিশালী করেন। আফগান যুদ্ধ শুরু হলে শায়খ রহমান, মুফতি হান্নান, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ ওয়ালীসহ কয়েকজন মিলে আফগান যুদ্ধে অংশ নেন।
তালেবানদের বিজয়ের পর কিছুদিন আফগানিস্তান, ভারত ও পাকিস্তান থেকে পরে দেশে ফিরে আসেন। মূলত ভারত ও আফগানিস্তান সফরকালেই আবদুর রহমান আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত হন। সেখান থেকে তিনি বোমা তৈরি, বিস্ফোরণ প্রযুক্তি ও সরঞ্জামসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নেন। আফগান যুদ্ধ থেকে ফিরে ১৯৯৮ সালে নতুন করে জেএমবি কার্যক্রম শুরু করেন। জেএমবির প্রকাশ্য তৎপরতা শুরু হয় ২০০৩ সালের প্রথম দিকে।
ওই বছর দিনাজপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে গ্রেফতারকৃত জঙ্গিরা জেএমবি সম্পর্কে জানায়। ২০০৩ সালের মাঝামাঝি থেকে শায়খ রহমানের পরামর্শে বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ বা জেএমজেবি গঠিত হয়। ২০০৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি নাশকতামূলক তৎপরতার অভিযোগে জেএমবি ও জেএমজেবির সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকার। মোস্ট ওয়ান্টেড ঘোষণা করা হয় শায়খ আবদুর রহমান এবং বাংলা ভাইকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।