আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুগের এ নিষ্ঠুর বন্ধন হতে, মুক্তির এ বারতা আনলে যারা, আমরা তোমাদের ভুলবো না-মহান বিজয় দিবস ২০১৪


মা গো ভাবনা কেনো, আমরা তোমার শান্তি প্রিয় শান্ত ছেলে তবু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি, তোমার ভয় নেই মা আমরা প্রতিবাদ করতে জানি। প্রতিবাদ করেছিলো সেই শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলেগুলিই। স্বদেশ বা জন্মভুমির প্রতি একের পর এক অন্যায় ও নিপীড়নের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো তারা একদিন। ১৯৭১ সালের এই দিনেই পরাধীনতার শেকল ভেঙ্গে শত্রুপক্ষের হাত থেকে ছিনিয়ে এনেছিলো তারা বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্রের স্বাধীন সূর্য্যটিকে। দীর্ঘ নয় মাস পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করেছিলো তারা।

এ যুদ্ধ ছিলো সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় প্র্রতিষ্ঠার যুদ্ধ, এ যুদ্ধ ছিলো পরাধীনতার বন্ধন ছিড়ে প্রাণখুলে স্বাধীনতার গান গাইবার যুদ্ধ, এ যুদ্ধ ছিলো বাংলার স্বাধীন বাতাসে বুক ভরে শ্বাস টেনে নিতে পারার যুদ্ধ। এ যুদ্ধ ছিলো মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ের যুদ্ধ। ১৯৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বার মাতৃভুমির কপালে একে দিয়েছিলো তারা বিজয়ের লাল টিপ । তিরিশ লক্ষ্য তাজা প্রাণ ঢেলেছিলো লাল টকটকে খুন এ মাটির বুকে। আমরা আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি সেই সব বীর শহীদেরকে যারা জীবন বাজি রেখে আমাদেরকে এনে দিয়েছেন এ বিজয় গাঁথা, এ স্বাধীনতা।

১৬ই ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। কোটি বাঙ্গালীর অসীম ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের এ স্বাধীনতা, আমরা পেয়েছি এ বিজয়। বিজয় দিবস ২০১৪ অমর হোক। এ বছরটি আরও বেশি স্মরণীয় হয়ে থাকবে আরও একটি বিশেষ কারণে। দীর্ঘ ৪২ বছর পর বাংলার এ মাটিতে শুরু হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার।

আমাদের জন্য যারা জীবন বাজী রেখে লড়ে গেলেন, প্রান বিসর্জন দিলেন, মা হারালেন প্রিয় সন্তানকে, কন্যা হারালো তার আদরের বাবাকে, প্রিয়তমা স্ত্রী হারালেন প্রাণপ্রিয় স্বামীকে। তাদের অবদান বৃথা যায়নি, বৃথা যাবেনা, বৃথা যেতে দেবোনা আমরা কখনই। যুগের এ নিষ্ঠুর বন্ধন হতে, মুক্তির এ বারোতা আনলে যারা, আমরা তোমাদের ভুলবো না ভুলবোনা মায়ের আদরের সেই ছেলেটিকে, যে ছেলেটি যুদ্ধক্ষেত্র হতেও মাকে সান্তনা দিয়েছিলো, দুঃখ করতে নিষেধ করেছিলো তার জন্য। যুদ্ধে যদি তার মৃত্যু হয় তবে অন্য বিজয়ীসেনাদের মুখে চেয়ে দুঃখ ভুলে তাদের গলায় বিজয় মাল্য পরিয়ে দেবার অনুরোধ করেছিলো মাকে। মায়ের কাছে লেখা সেই ছেলেটির চিঠি।

ছেলে নেই। স্ম্বতি হয়ে আছে সেই চিঠি। তারিখ: ২৫/০৮/১৯৭১ মা, আমার সালাম নিবেন। ভাবির কাছ থেকে আপনার চিঠি পেলাম। আপনি আমার জন্য সব সময় চিন্তা করেন।

কিন্তু মা, আপনার পুত্র হয়ে জন্ম নিয়ে মাতৃভূমির এই দুর্দিনে কি চুপ করে বসে থাকতে পারি? আর আপনিই বা আমার মতো এক পুত্রের জন্য কেন চিন্তা করবেন? পূর্ব বাংলার সব যুবকই তো আপনার পুত্র। সবার কথা চিন্তা করুন। আমাদের সবাইকে আশীর্বাদ করুন, যেন আমরা যে কাজে নেমেছি তাতে সাফল্য লাভ করতে পারি। তবেই না আপনার পুত্র হয়ে জন্ম নেওয়া সার্থক হবে। আমাদের বিজয়েই না আপনার এবং শত শত জননীর গৌরব।

শুনতে পেলাম আপনার শরীর খুব খারাপ। শরীরের দিকে নজর দেন। কেননা বিজয়ের পর যে উৎসব হবে, সেই উৎসবে আপনাকে তো আমাদের গলায় মালা পরিয়ে দিতে হবে। আপনি তো শুধু আমার জননীই নন, শত শত বিপ্লবী যুবকের মা। আপনি আমাকে বাড়ি আসতে লিখেছেন।

এই মুহূর্তে তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আশা করি সামনের মাসের প্রথম দিকে বাড়ি আসতে পারব। আমার জন্য চিন্তা না করে আশীর্বাদ করবেন। আব্বাকে আমার সালাম জানাবেন আর ছোটদেরকে স্নেহশীষ। আমি ভাল আছি।

ইতি আপনার শত শত বিপ্লবী যুবক সন্তানদের একজন আজু চিঠি লেখক: শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মুন্সী আবু হাসমত রশিদ। চিঠি প্রাপক: মা, তাহমিনা বেগম। চিরদিন স্মরণ রাখবো সেই শহীদ ভাইটিকে যার প্রিয়তমা স্ত্রীর কাছে তিনি আর ফিরে আসতে পারেননি। দেশমাতার সমভ্রম রক্ষার্থে যে ভাইটিকে জীবন দিতে হয়েছিলো। মৃত্যুর আগে বুকে খুব ছোট একটি আশা ছিলো তার ছো্ট্ট শিশুর মুখখানি আর একটিবার দেখবার।

সে আশা বিসর্জন দিতে হয়েছিলো তবে বৃহত্তর আশাটি ঠিকই পূরণ হয়েছে । তার আত্মত্যাগে বিজয় এসেছিলো । রোজ সকালে ভোরের সূর্য্যের মাঝে নিশ্চয় চেয়ে দেখেন তিনি তার স্বাধীন মাতৃভূমিকে। তিনি দেখেন তার শিশুটিকে তিনি দিয়ে গেছেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকবার অধিকার। আর প্রিয়তমা স্ত্রী বা পু্ত্রের কাছে ছোট্ট সেই অমূল্য চিঠিখানি বেঁচে রয় অমূল্য স্মৃতি হয়ে।

তারিখঃ ১৬/০৪/৭১ প্রিয় ফজিলা, জানি না কী অবস্থায় আছ। আমরা তো মরণের সাথে যুদ্ধ করে এ পর্যন্ত জীবন হাতে নিয়ে বেঁচে আছি। এর পরে থাকতে পারব কি না বুঝতে পারছি না। সেলিমদের বিদায় দিয়ে আজ পর্যন্ত অশান্তির মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। আবার মনে হয় তারা যদি আর একটা দিন আমাদের এইখানে থাকত তাহলে তাদের নিয়ে আমি কী করতাম।

সত্যিই ফজিলা, রবিবার ১১ এপ্রিলের কথা মনে হলে আজও ভয় হয়। রাইফেল, কামান, মেশিনগান, বোমা, রকেট বোমার কী আওয়াজ আর ঘর বাড়ির আগুনের আলো দেখলে ভয় হয়। সুফিয়ার বাড়ির ওখানে ৪২ জন মরেছে। সুফিয়ার আব্বার হাতে গুলি লেগেছিল। অবশ্য তিনি বেঁচে আছেন।

সুফিয়াদের বাড়ি এবং বাড়ির সব জিনিস পুড়ে গেছে। য়ামাদের বাড়িতে তিন-চার দিন শোয়ার মত জায়গা পাইনি। রাহেলাদের বাড়ির সবাই, ওদের গ্রামের আর ১৫-১৬ জন, সুফিয়ার বাড়ির পাশের বাড়ির চারজন, দুলালের বাড়ির সকলে, দুলালের ফুফুজামাই দীঘির কয়েকজন এসে বাড়িতে উঠল। তাই বলি, সেই দিন যদি আব্বা এবং সেলিমরা থাকত তাহলে কী অবস্থা হতো। এদিকে আমরাও আবার পায়খানার কাছে জঙ্গলে আশ্রয় নিলাম।

কী যে ব্যাপার, থাকলে বুঝতে। বর্তমানে যে পরিস্থিতি তা আর বলার নয়, রাস্তার ধারের মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। রোজ গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগী ছাড়াও যুবতী মেয়েদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। দুই একদিন পর আধা মরা আবস্থায় রাস্তার ধারে ফেলে দিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেক এসব ঘটনা।

বাড়িতে আগুন আর গুলি করে মানুষ মারার তো কথাই নেই। তা ছাড়া লুটতরাজ, চুরি, ডাকাতি সব সময় হচ্ছে। কয়েকদিন বৃষ্টির জন্য রাস্তা ঘাটে কাদা হওয়ায় আমরা বেঁচে আছি। রাস্তাঘাট শুকনা থাকলে হয়তো আমাদের এদিকেও আসত। জানি না ভবিষ্যতে কী হবে।

তবে ওরা শিক্ষিত এবং হিন্দুদের আর রাখবে না বলে বিশ্বাস। হিন্দু এবং ছাত্রদের সামনে পেলে সঙ্গে সঙ্গে গুলি করছে। গত রাতে পাশের গ্রামে এক বাড়িতে ডাকাত্রা এসে সেই বাড়ির মানুষদের যা মেরেছে তা আর বলার নয়। কখন কী হয় বলার নেই। তবু খোদা ভরসা করে বেঁচে আছি।

আমাদের এদিকে ছেলেরা প্রায় সবাঈ বাড়ি ছেড়ে দূরে থাকে। কারণ বাড়িতে থাকা এ সময় মোটেই নিরাপদ নয়। তোমাদের দেখার জন্য চৌবাড়ি যাওয়ার অনেক চেষ্টা করেছি। দুঃখের বিষয়, একটি দিনও বৃষ্টি থামেনি। অবশ্য বৃষ্টি না থামার জন্য আমাদের একটু সুবিধাই হয়েছে।

তোমাদের সংবাদ জানানোর মতো কনো পথ নেই। কীভাবে যে সংবাদ পাব ভেবে পাই না। মিঠু বোধ হয় এখন হাঁটতে শিখেছে তাই না? মিঠুকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু পথ নেই। সান্ত্বনা এইটুকুই যে বেঁচে থাকলে একদিন দেখা হবে।

কিন্তু বাঁচাই সমস্যা। রাতে ঘুম নেই দিনে পালিয়ে বেড়াই। মা-বাবা তো প্রায়ই আমার জন্য কাঁদে। যাক, দোয়া করো যেন ভালো থাকতে পারি। বুবুদের যে কী অবস্থায় পাঠিয়েছি, তা মনে হলে দুঃখ লাগে।

আমি সঙ্গে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সম্ভব হয়নি। অবশ্য সেদিন নাপাঠালে তাদের নিয়ে দারুন মুশকিলে পড়তে হতো। রবিবার দিন বাবলুর আম্মা মেরীগাছা এসেছিল। বাবলুরা ভালো আছে।

তোমাদের সংবাদটা জানাতে পারলে জানাবে। আমার মানসিক ও শারীরিক অবস্থা ভীষন খারাপ। বুবু, আম্মা, দুলাভাইকে আমার সালাম এবং সেলিমদের ও মিনাদের আমার স্নেহ দেবে। সম্ভব হলে তোমাদের সংবাদটা জানাবে। আমরা তো মরেও কোনো রকমে বেঁচে আছি।

শেষ পর্যন্ত কী হবে জানি না। ইতি আজিজ চিঠি লেখকঃ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ। চিঠি প্রাপকঃ স্ত্রী ফজিলা আজিজ। চিঠিটি পাঠিয়েছেনঃ মোঃ ফারুক জাহাঙ্গীর, গ্রামঃ কুজাইল, নাটোর। ফারুক জাহাঙ্গীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজের পুত্র।

এমনি কত শত ভায়ের কাছে ভাই এর চিঠি। মায়ের কাছে পুত্রের আকুতি, ব্যাকুলতা পরিবার পরিজন ও সর্বপোরি দেশের জন্যে। ভোলা যায়না, ভোলা হয়না কখনও। কোনো এক শহীদভাই এর চিঠি--- বেনু ভাই, শুভেচ্ছা জানবেন। হাবীব সাহেবের সিগনাল এইমাত্র এসেছে।

আপনার সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই বলে তিনি জানিয়েছেন। গতকাল তার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য এবং তার কাছাকাছি অবস্থান করার জন্য আপনাকে লিখেছিলাম। হাবীব সাহেবের কাছাকাছি থাকবেন। পুংলীর পুল পার হবেন না। কারণ, বিপদে পড়তে পারেন।

হাবীব সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফেলুন। আজ এনায়েত করীম সাহেব কিছু লোকজন এবং অস্ত্র নিয়ে আসবেন। সম্ভব হলে আপনাকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করব। বর্তমানে কোনো রিস্ক না নিয়ে হাবীব সাহেবের সঙ্গে মিলিত হয়ে ওই এলাকার অপারেশন সফল করুন। কারণ, এই অপারেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশেষ জরুরি পরিকল্পনা অনুযায়ী তৈরি হয়েছে।

সব সময় আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন। কারণ, হেডকোয়ার্টারে নিয়মিত খবর পাঠাতে হয়। আপনারা কোনো চাঁদা জোর করে তুলবেন না। জয় বাংলা। বুলবুল খান মাহবুব।

চিঠি লেখক: মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল খান মাহবুব। চিঠি প্রাপক: হাবিবুল হক খান বেনু। গ্রাম: কোলাহাট, গৌরঙ্গী, টাঙ্গাইল। মায়ের কাছে সন্তানের চিঠি--- ২৩/০৪/৭১ মা, দোয়া করো । তোমার ছেলে আজ তোমার সন্তানদের রক্তের প্রতিশোধ নিতে চলেছে ।

বর্বর পাকিস্তানী জঙ্গিগোষ্ঠী আজ তোমার সন্তানদের ওপর নির্বিচারে হত্যাকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে । যেখানে তোমার সন্তানদের ইজ্জতের ওপর আঘাত করেছে, সেখানে তো আর তোমার সন্তানরা চুপ করে বসে থাকতে পারে না । তাই আজ তোমার হাজার হাজার বীর সন্তান বাঁচার দাবী নিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করবার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে । ‘তোমার নগণ্য ছেলে তাদের মধ্যে একজন । ’ পরম করুণাময় আল্লাহ্‌র কাছে দু হাত তুলে দোয়া করি তোমার সন্তানরা যেন বর্বর পাকিস্তানী জঙ্গিগোষ্ঠীকে কতল করে এ দেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করতে পারে ।

‘এ দেশের নাম হবে বাংলাদেশ’, সোনার বাংলাদেশ । এ দেশের জন্য তোমার কত বীর সন্তান শহীদ হয়ে গিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই । ইনশাল্লাহ শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না । দেশকে স্বাধীন করে ছাড়বই । জয় আমাদের সুনিশ্চিত ।

দোয়া করো যেন জয়ের গৌরব নিয়ে ফিরে আসতে পারি, নচেৎ - বিদায় । ইতি তোমার হতভাগ্য ছেলে খোরশেদ ৫ এপ্রিল, ১৯৭১ সাল মাগো, তুমি যখন এ পত্র পাবে, আমি তখন তোমার থেকে অনেক দুরে থাকব। মা, জানি, তুমি আমাকে যেতে দিবে না, তাই তোমাকে না বলে চলে যাচ্ছি । তবে যেদিন মা‌-বোনের ইজ্জতের প্রতিশোধ এবং এই সোনার বাংলাকে শত্রুমুক্ত করতে পারব, সেদিন তোমার ছেলে তোমার কোলে ফিরে আসবে। দোয়া করবে, মা, তোমার আশা যেন পূর্ণ হয়।

ইতি তোমারই হতভাগা ছেলে পুনশ্চ: সেই গাঢ় অন্ধকারে একাকী পথ চলেছি। শরীরের রক্ত মাঝে মাঝে টগবগিয়ে উঠছে, আবার মনে ভয় জেগে উঠছে, যদি পাকসেনাদের হাতে ধরা পড়ি, তবে সব আশাই শেষ(..) যশোর হয়ে নাগদা বর্ডার দিয়ে ভারতে প্রবেশ করি। পথে একবার রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ি। তারা শুধু টাকা‌-পয়সা ও চার-পাচটা হিন্দু যুবতী মেয়েকে নিয়ে আমাদের ছেড়ে দেয়। তখন একবার মনে হয়েছিল, নিজের জীবন দিয়ে মেয়েদের ওদের হাত থেকে রক্ষা করি ।

কিন্তু পরমূহূর্তে মনে হয়, না, এদের উদ্ধার করতে গেলে প্রাণটাই যাবে, তাহলে হাজার মা বোনের কী হবে? রাত চারটার দিকে বর্ডার পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করি। বাল্যবন্ধু শ্রী মদনকুমার ব্যানার্জি ইতনা কলোনি, শিবমন্দির, বারাসাত, ২৪ পরগনা - এই ঠিকানায় উঠলাম । এখানে এক সপ্তাহ থেকে ওই বন্ধুর বড় ভাই শরত্‍ চন্দ্র ব্যানার্জি আমাকে বসিরহাট মহকুমা ৮ নম্বর সেক্টর মেজর ডালিমের তত্ত্বাবধানে আমাকে মুক্তিযুদ্ধে ট্রেনিংয়ে ভর্তি করে দেন। সেখানে পরিচয় হয় ব.রেজিমেন্টের আবুল ভাইয়ের সঙ্গে। ট্রেনিং ক্যাম্পে এক সপ্তাহ থাকার পর কর্ণেল ওসমান গণির নির্দেশে আমাদের উচ্চ ট্রেনিং (... অসম্পুর্ণ ...) এমনি হাজারো স্মৃতি, হাজারও আত্মত্যাগের বিনিময়ে এসেছিলো বাংলাদেশের বিজয়।

আরও কোটি কোটি বছর যতদিন পৃথিবী বেঁচে থাকবে বেঁচে থাকবে আমাদের স্বাধীনতা, বেঁচে থাকবে আমাদের বিজয়। আমাদের সন্তানেরা মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে। ১৬ই ডিসেম্বার, মহান বিজয় দিবস অমর হোক। ছবিতে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সংক্ষিপ্ত চিত্র- যুদ্ধগামী সাধারণ বাঙ্গালীরা। অজ্ঞাত অজানা ভবিষ্যৎ।

গণহত্যা নারকীয় গণহত্যা যুদ্ধে বীর বাঙ্গালী যুদ্ধক্ষেত্রে অবাক শিশু। বীরাঙ্গনা ১৬ই ডিসেম্বার ১৯৭১ পাক বাহিনীর আত্মসমর্পন- ১৬ই ডিসেম্বার ১৯৭১ বিজয় মিছিল মুক্তিযুদ্ধের ছবি নিয়ে একটি অসাধারণ পোস্ট মুক্তিযুদ্ধের গান নিয়ে আরও একটি অসাধারণ লেখা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই নিয়ে লেখা একটি অসাধারণ পোস্ট্ মুক্তিযুদ্ধের কবিতা বিষয়ক আমার একটি প্রিয় লেখা সকলকে জানাই বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা। মহান বিজয় দিবস অমর হোক।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।