আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বাধীনতা যুদ্ধ ও ১৯৭২ এর ৬ই জানুয়ারী

আজ ৬ই জানুয়ারী । দিনাজপুর বাসীর জন্য একটি শোকাবহ দিন । ১৯৭২ সনের এই দিনে স্বাধীনতার ২১ দিন পরে – দিনাজপুর শহরের পূর্বপ্রান্তে দার্জিলিং রোড সংলগ্ন মহারাজা গীরিজানাথ হাই স্কুলে এক ভয়াবহ আরটিলারী বাঙ্কার বিস্ফোরণ ঘটে । বাঙ্কারটি তৈরি করে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় বাহিনী স্কুলের মাঠের পূর্ব প্রান্তে। ১৯৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বরের পরে এখানে প্রচুর গোলাবারুদ ও উদ্ধারকৃত ল্যান্ড মাইন এখানে মজুত করা হয় ।

কোন এক অজানা কারণে বিকালের দিকে এই বাঙ্কারে বিস্ফোরণ ঘটে । প্রায় ২৫০ জন লোক নিহত হয় ও অসংখ্য মানুষ আহত হয় । নিহতদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারন মানুষ ছাড়াও ভারতীয় সেনা সদস্যও ছিলেন। শব্দের তীব্রতা এতটাই ছিল যে আশেপাশে প্রায় এক মাইল পর্যন্ত বাড়িঘরের বন্ধ থাকা দরজা – জানালা গুলো কব্জা কপাট থেকে আলগা হয়ে যায় । আর খোলা দরজা – জানালা গুলো প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা খায় ।

দাড়ানো মানুষ দাড়িয়ে থাকতে পারেনি । নিহত মানুষগুলির ছিন্নভিন্ন লাস ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গ একত্রীত করে শহর থেকে চারমাইল দূরে *চেহেলগাজী কবর স্থানে গণকবর দেয়া হয় (উপরে ছবি)। এই ঘটনার উপরে যৌথ বাহিনীর তদন্ত কমিশন হয় । গণকবরটি প্রাচীর দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছে, স্মৃতি ফলক বসানো হয়েছে এবং দিনাজপুরে মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে । বিস্ফোরনে দিনাজপুরের জমিদার মহারাজা গীরিজানাথ কর্তৃক তৈরি মূল স্কুলভবনটি সম্পূর্ণ ধ্বংশ হয়ে যায় এবং বাঙ্কারটি একটি পুকুরে পরিণত হয় – যা এখনো বর্তমান ।

তীব্র শব্দে সীমান্তবর্তী লোকজন পুনরায় যুদ্ধ শুরু হয়েছে মনে করে বাড়িঘর ছেড়ে ভারতের দিকে পালাতে শুরু করে । স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশে এটি একটি অন্যতম বিয়োগান্তক ঘটনা – যার স্মরণ এখন সামান্যই হয়। দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের ওয়েব সাইটে বলা হয়েছেঃ "মুক্তিযুদ্ধে দেশ স্বাধীন হলেও তখনো দেশের সর্বত্র হানাদার বাহিনীর অসংখ্য নাশকতার চিহ্ন ছড়িয়ে ছিল। বিশেষ করে দিনাজপুরের পথে-ঘাটে মারাত্মক বিস্ফোরক অস্ত্র মাটির নিচে পুঁতে রাখা ছিল। এছাড়া শত্রুদের ফেলে যাওয়া অসংখ্য আগ্নেয়াস্ত্রও পড়ে ছিল যেখানে সেখানে।

এসব অস্ত্রমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত জেলার পথঘাটে চলাচল ছিল বিপজ্জনক। তাই এসব স্থান অস্ত্রমুক্ত করতে মুক্তিযোদ্ধারা নিয়োজিত হয় এবং প্রতিদিন প্রাণান্তকর পরিশ্রম করে প্রত্যন্ত এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে পরিত্যক্ত অস্ত্রশস্ত্র নির্ধারিত রক্ষণাগার মহারাজা হাইস্কুলে এনে জড়ো করা হয়। অস্ত্র সংগ্রহের এই কাজ চলার সময় ৬ জানুয়ারি, ১৯৭২ সালে একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। ঐ দিন সন্ধ্যার সময় এক ভূমি মাইন বিস্ফোরণে গোটা শহরসহ আশেপাশের এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। নিহিত হন মহারাজা হাইস্কুল ভবনে অবস্থানরত অনেক মুক্তিসেনা।

বিশাল স্কুল ভবনটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় আশেপাশের বহু বাড়ীঘর ও সম্পদ। পরের দিন উদ্ধারকৃত দেহাবশেষগুলি সামরিক মর্যাদায় পবিত্র ভূমি চেহেলগাজীর মাজার প্রাঙ্গনে সমাহিত করা হয়। অগণিত শোকার্ত মানুষ শোকমিছিলে যোগদান করে। এতো বড় শোক মিছিল দিনাজপুরে আর কখনো হয়নি। বিভিন্ন সূত্রে অনুসন্ধান চালিয়েও সে সময় বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক নাম, পরিচয় ও সংখ্যা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

১৯৯৬-৯৭ সালে গভীর অনুসন্ধানের পর বিস্ফোরণের কারণ উদঘাটিত হয়। উদ্ধার করা হয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ও ঠিকানা। " শ্রদ্ধাঞ্জলিঃ সেই সব শহীদদের - যাঁদের প্রাণের বিনিময়ে আজকের বাংলাদেশ । স্মরণঃ ইমন জুবায়ের ভাই – আমি ছিলাম যার নীরব পাঠক। *চেহেলগাজী কবরস্থানঃ এখানে একটি ৩৬ হাত লম্বা গণ কবর থেকে এই নামের উৎপত্তি।

অতীতে একদল সুফী দরবেশ এখানে স্থানীয় রাজার সঙ্গে যুদ্ধে শহীদ হন, তাঁদেরকে এই ৩৬ হাত লম্বা কবরে গণ কবর দেয়া হয়। এখানে একটি প্রাচীন মসজিদ ভগ্নাবস্থায় আছে – ঐতিহাসিক মেহরাব আলীর মতে এই অঞ্চলের প্রথম মসজিদ ও বাংলার আদিমতম মসজিদের একটি। চেহেল একটি ফার্সি শব্দ – যার অর্থ চল্লিশ । **ছবি নেট থেকে ।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.