হাসন রাজায় কয়, আমি কিছু নয় রে আমি কিছু নয় !
ঘুটঘুটে অন্ধকার রাত। চারদিকে কুয়াশা। আজ বেশ জাঁকিয়ে শীত পড়েছে। সিরু পাগলা শিমুল গাছের তলায় পা ছড়িয়ে বসে আছে। এই শীতেও তার গায়ে কোন কাপড় নেই, একটা গামছা কেবল ঝুলছে গলায়।
নিজের দড়ির মতন জটলা পাকানো চুল টানতে টানতে সে হঠাৎ হঠাৎ বাজখাঁই গলায় চেঁচিয়ে উঠছে, “এইবার ঈদে রক্ত খাইমু। রক্ত। ” তারপর সে মাটি খাবলাতে খাবলাতে ভয়াবহ কন্ঠে বিকট ডাক ছাড়ে, “হালুম”। তার হালুম জাতীয় শব্দ জলা মাঠের দুই প্রান্তে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে ফিরে আসে। এর পরপরই সে পুরোপুরি নিশ্চুপ হয়ে যায়।
কিছু সময় বাদেই আবার নতুন উদ্যমে বলতে শুরু করে, “এইবার ঈদে রক্ত খাইমু...”
খালের এপার থেকে ছপ-ছপ শব্দ শোনা যায়। প্রায় শুকিয়ে আসা খাল ভেঙে কেউ মাঠে উঠে আসছে। সিরু সচকিত হয়ে চারপাশ দেখতে লাগলো। কে আসে? সিরু উঠে দাঁড়ায়। লুঙ্গি হাঁটুর উপর তুলে গোটাতে গোটাতে বলে, “কোন রাজাকারের বাচ্চা রে তুই? ঐ হারামী, কেডা? তোর রক্ত খাইমু।
আয়। খাইমু তর রক্ত আইজকে। হালু...”। কথা শেষ করার আগেই কেউ একজন শক্ত হাতে তার মুখ চেপে ধরে। সিরু হাসফাঁস করে, গোঙায়।
তখনই চাপা গলায় লোকটি বলে, “আরে মামা- করো কি? চিৎকার করো কেন? আমি হায়দার। চেয়ারম্যান বাড়ীর হায়দার। ” গোঙানি থেমে যায়। সিরু তার চোখ বড়-বড় করে ফেলেছে। সেই চোখে উচ্ছ্বাসের ঝিলিক।
হায়দার সিরুর মুখ থেকে হাত সরিয়ে নেয়। সিরু আবারও বিকট শব্দে চিৎকার করে, “আরে ভাইগ্না বেটা তুই!”
হায়দার আবার সিরুর মুখে হাত রাখে, “আহা, আস্তে বলো, চেঁচাও কেন?”
সিরু ফিসফিসিয়ে বলে, “মারলি কয়ডা, হুম? মিলিটারী কয়ডা মারলি?”
উত্তর না দিলে সিরুর বকবকানি থামবে না। হায়দার বলল, “আজকে তিনটাকে মেরে দিয়ে এসেছি। ”
“সাবাশ ভাইগ্না সাবাশ, ক্যামতে মারলি ? ঠাও-ঠাও-ঠাও-ঠাও...?”
হায়দার জবাব না দিয়ে সিরুকে জিজ্ঞেস করে, “বাড়িতে কি হয়েছে মামা? বাড়ির সামনে সিপাই কেন?”
“তর কাশেম চাচার কাম। হালা বদের বদ।
রাজাকার ফুডায়। অর রাজাকারের আমি ...”
“বাড়িতে ঢোকা যাবে না ?”
“আরে যাইবো না ক্যান ? আয় দেহি আমার লগে। ”
সিরু পাগলা গম্ভীর ভঙ্গীতে হেঁটে চলছে। হায়দার তার কথায় কোনরকম ভরসা পেলো না। বরং একটু যেন ঘাবড়ে গেলো।
সিরু বদ্ধ-উন্মাদ। সে সবসময় একটা ভজঘট বাঁধাতে প্রস্তুত হয়েই থাকে। গাছে তুলে মই কেড়ে নিতে তার কোন তুলনা নেই—পাগল বলে কথা। একসময় অবশ্যি এমন ছিল না। চুপচাপ প্রকৃতির চমৎকার এই লোকটিকে হায়দাররা তিন ভাই-বোনই প্রচন্ড ভালবাসতো।
বাড়িতে তার আসা মানেই গা-ছমছমানো ভুতের গল্প। নীতু তাকে দেখলেই তার স্বভাবসুলভ ফাজলামো ভঙ্গিতে হাততালি দিয়ে রিনরিনে গলায় সুর করে করে বলত,
“চালাক পেত্নী, বুদ্ধু ভুত
কন্ধকাটা, মাইছ্যা ভুত
বলবে এবার ‘ভুতনামা’
ভুতের রাজা সিরু মামা। ”
নীতুর এই এক স্বভাব। সবকিছুতেই হাসাহাসি। সবকিছু নিয়ে মজার মজার ছড়া বানানো।
নীতুটা এতো সুন্দর হয়েছে। টানা-টানা চোখ। বরফি-কাটা চিবুক। শুধু এই এক দোষ। হায়দারকে সে ঠাট্টা করে ডাকে ‘হাঁদারাম’।
প্রথম প্রথম হায়দার ক্ষেপতো খুব। নীতু যখন টের পেলো শুধু হাঁদারামে কাজ হচ্ছে না, তখন সে ছড়া বানালো,
“হায়দার! হায়দার!!
হাঁদারাম সর্দার । । ”
এমন অদ্ভুত স্বভাব সে কোত্থেকে জোগাড় করেছে- কে বলবে! দেশের এতো খারাপ অবস্থা- তাকে দেখে বোঝাই দায়। অতি তুচ্ছ বিষয়েও হাসতে হাসতে এমনভাবে গড়িয়ে পড়বে যে আশপাশের মানুষের পিলে চমকে যাবে।
তার হাসিতে কিছু একটা ম্যাজিকও আছে। গম্ভীর টাইপের মানুষগুলোও তার হাসির দমকে মুখ ফসকে হেসে ফেলে। যদিও সিরু মামার ভুতের গল্পে সবচে’ বেশী ভয়টা সে-ই পায়। গল্পের এক পর্যায়ে সে ছোট ভাই বাবলুকে কোলে জড়িয়ে ধরে চেঁচাবে, “মামা, আর শুনবো না। আর না”।
বাবলুটার ভয়-ডর বলে কিছু নেই। একটুখানি ছেলে। সবে ক্লাস ফোরে উঠেছে। হায়দারও যেখানে ভয়ে মুখ-চোখ কুঁচকে ফেলে, বাবলু সেখানে খুব সহজ-স্বাভাবিক। সে জোড় করে সিরু মামাকে একদম শেষ পর্যন্ত গল্প বলায়।
গল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত চোখ বড়বড় করে তাকিয়েই থাকে।
মে মাসের শেষাশেষি কোন এক সন্ধ্যাবেলার উষ্ণ জোছনায় সিরুর অন্ধ বাবা পাটি পেতে বসে ছিলেন বাড়ির উঠোনে। হাটবার ছিল সেদিন। বাজার শেষ করে বাড়ি যাবার আগে কি মনে করে সিরু চেয়ারম্যান বাড়িতে ঢুকলো। সেখানে টেবিলের ওপর একটা হারিকেন টিমটিম করে জ্বলছে।
সেটাকে ঘিরে হায়দারের বাবা, মা, নছর মোল্লা, সীদকাঠীর বেয়াইসাহেব, নীতু, বাবলু সবাই মিলে একসঙ্গে বসে রেডিও শুনছে। সিরুও বসে গেল। ভয় পেতে এখন আর সিরুর মেকী ভুতের গল্পের দরকার পড়ে না। পাকিস্তানী মিলিটারীরাই সাক্ষাত কন্ধকাটা ভুত। এইসব ভুতদের গল্প শোনায় রেডিও নামের যন্ত্রটি।
সেই রেডিও আবার খানিকটা শোনা যায়- খানিকটা যায় না। এলোমেলো ভৌতিক শোঁ-শোঁ শব্দ আসে যন্ত্রটার ভেতর থেকে। রেডিও পাকিস্তানের নাম বদলে এখন আবার নতুন নাম হয়েছে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। নামটা যেমন অদ্ভুত এদের শ্লোগানগুলোও অদ্ভুত। মে’র শুরুর দিকে একবার বলল, “জল্লাদ বাহিনীর গতিবিধি লক্ষ্য করুন।
নিকটবর্তী মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটিতে খবর দিন। ” নীতু তো হেসেই খুন। সে তার স্বভাবমত হাসি চাপতে চাপতে বলে, “মুক্তিবাহিনী আছেটা কোথায় যে খবর দেবে? পটকা ফুটিয়ে দৌড়ে পালায়- তাদের আবার ঘাঁটি। হি হি হি। ” হায়দার সে বার নীতুর গালে চড় বসিয়ে দিয়েছিল।
নীতু তার পিঠাপিঠি বোন। হয়ত আপন বোন বলেই ঐদিন ওভাবে সবার সামনে নীতুকে চড় মারতে পেরেছিল সে। সেই থেকে নীতু হায়দারের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। আর তার পরের সপ্তাহে তো হায়দার বাড়ি থেকে পালিয়েই যায়। চলে যায় যুদ্ধে।
মুক্তিযুদ্ধে। আজ বাড়িতে গেলে নীতু’টা কি কথা বলবে? আগের মত হয়ত অকারনে তাকে দেখে হাসতেই থাকবে। অথবা হয়ত কথাই বলবে না। মুখ ফুলিয়ে বসে থাকবে। এটা হওয়াও অস্বাভাবিক না যে নীতু খুব সহজ ভঙ্গিতে বলবে, “এতো রাতে এসেছিস? ছিঁচকে চোর নাকি তুই? হি হি হি।
যা, ভাত খেতে বসগে। আমি ঘুমাতে যাই। ” যেন বাড়ি পালিয়ে যুদ্ধে যাওয়াটা কোন ব্যাপার না— রোজই হচ্ছে। নীতুর পুরোটাই বড্ড ছেলেমানুষী !
সেইদিন হাটে যাওয়ার আগে সিরু বেশ অসুস্থ্য হয়ে পড়েছিল। তার নাকি মাথা ঘুড়াচ্ছে।
সিরুর বৌ জোড়-জবরদস্তি করে তাকে উঠিয়ে দিয়েছে। ঘরে একটা ফোঁটা তেল নেই। রান্না হবে কি দিয়ে? ভর-সন্ধ্যাবেলা উঠোনে শ্বশুরকে চা দিয়ে ভিতরের ঘরে চুলার আগুনে ভাত বসিয়েছিল সিরুর তরুনী স্ত্রী। তার পাশেই পিঁড়ির ওপর বসে খেলছিল তাদের চার বছরের শিশুপুত্রটি। ভাত যখন প্রায় হয়ে এসেছে ঠিক তখন আচমকা গুলির শব্দে ভয় পেয়ে মাকে এসে জড়িয়ে ধরে শিশুটি।
ছেলেকে কোলে নিয়ে দৌড়ে বাইরে নেমে সিরুর বৌটি আঁচলে নিজের মুখ চেপে দাঁড়িয়ে পড়ে। পাটির ওপর তার প্রৌঢ় শ্বশুর চিৎ হয়ে পড়ে আছে। তার বুক থেকে ফিনকি দিয়ে বেরুচ্ছে লাল-লাল রক্ত। টুপি-পাঞ্জাবী পড়া সলিম ব্যাপারী চোখমুখ কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে একপাশে। বন্দুকটা তার-ই হাতে।
এই লোককে সে চেনে। সিরুর দূর-সম্পর্কের মামাতো ভাই। মধ্যবয়স্ক, থলথলে দেহ, মুখে কাঁচা-পাকা দাঁড়ি। নিতান্তই নির্বিবাদী শান্ত ধরনের ভালো মানুষ। তার সাথে দুটি যুবক ছেলে।
তাদের মাথায়ও টুপি, চোখে ভয়ানক দৃষ্টি। এরা গ্রামে নব-গঠিত রাজাকার দলের লোক। সলিম ব্যাপারী নামের ভালো মানুষটিই সিরুর বৌকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায় মাঝের ঘরের চৌকিতে। মায়ের করুণ আর্তনাদে পাঁচ বছর বয়েসী অবুঝ শিশুটি উঠোনে হাত-পা ছড়িয়ে কাঁদে। চুলার উপর থেকে পাতিলের পানি উথলে সরা আছড়ে পড়ার শব্দ হয়।
বাড়ির পিছনের জঙ্গল থেকে নাম না জানা পাখিটি ইনিয়ে–বিনিয়ে কান্নার সুর তোলে। রাজাকার যুবক দুটি তখন টুপি মাথায় সিরুর ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা সংসারটি লুটতরাজে ব্যস্ত।
সিরু সে রাতে বাড়ি ফিরে কাক-জ্যোৎস্নার আলোয় তার বৌটির লাশ গাছের সাথে ঝুলতে দেখে। পরের দিন শান্তি কমিটির দুইজন এসে বেশ আন্তরিকস্বরে সিরুকে সান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করে। বলে, ‘এর বিচার অবশ্যই পাকিস্তানের মাটিতে হবে’।
সলিম ব্যাপারীকে তারা ব্যাপারটা দেখবার দায়ভার দিয়ে যায়। সলিম ব্যাপারীও চোখ মুছতে মুছতে আন্তরিক ভঙ্গিতেই বলার চেষ্টা করে, ‘ভাগ্যের উপর কার-ই বা হাত আছে?” ইত্যাদি-ইত্যাদি। ঘটনাটি মুখে-মুখে রটে যায়। হাটে নদু শেখের চায়ের দোকানে বসে সলিম ব্যাপারী গলা নামিয়ে কুৎসিত ভঙ্গিতে সিরুর বৌ-এর দৈহিক সৌন্দর্যের বর্ণনা করে। আসল ঘটনাটা ঘটে তার দুদিন বাদে।
ভোরবেলা সলিমের নিজের বাড়ির উঠোনেই তার মরা নিথর রক্তাক্ত দেহ পাওয়া যায়। বীভৎস দৃশ্য। তার চোখ দুটি উপড়ানো। এবড়ো-খেবড়ো ভাবে পেটে ছুড়ি চালানোয় নাড়ি-ভুড়ি সব বেড়িয়ে আছে। রাজ্যের কাক এসে ভীড় জমিয়েছে রাজাকার নেতার উঠানে।
এরা ছড়ানো শাদা ভাত না, রক্তে ডুবানো অন্ত্র চায় ! কে তাকে এমন নিষ্ঠুরভাবে মেরেছে কে জানে! সেইদিন থেকেই সিরুর মাথার ঠিক নেই।
বাড়ি প্রায় চলে এসেছে। আঙিনায় বসে সিপাই দুটো ঝিমুচ্ছে। রাত একটা-দুটো তো হবেই। রমজান মাসে এই সময় নিস্তব্ধতা তো থাকবেই।
সুনসান নীরবতা খান-খান হয়ে গেল সিরুর প্রলয়চিৎকারে, “আয় বেটা বাপের ব্যাটা হইলে নে দেহি হাত থিকা ! হালুম !!” সে দুই সিপাই’র থ্রি-নট-থ্রি দুটো নিয়ে ভোঁ-দৌড় দিয়েছে। বাকী দুজনও ছুটছে তার পিছু-পিছু। হায়দার অবাক হয়ে গেল। ক্ষনিকের জন্যে হলেও তার মনে হল, ‘সিরু কি আসলেই পাগল? নাকি ভান ধরে থাকে?’ হায়দার ভাবনা বাদ দিয়ে লোহার মরচে পড়া কড়া নাড়লো। হাতে একদম সময় নেই।
খুব মিষ্টি একটা গন্ধ আসছে দরজার সামনে থেকে। শিউলী গাছটা ফুল ছেড়েছে বোধহয়। কিন্তু এখন কি শিউলী ফোটার সময়? বাইরে কিছু কুকুর তারস্বরে চিৎকার করছে। হায়দার আরও জোড়ে কড়া নাড়ানো শুরু করল। দরজা খুলল।
চেক শার্ট আর লুঙ্গি পড়ে টুপি মাথায় তার বাবা দাঁড়িয়ে আছে। গায়ে ঘিয়া রঙের একটা চাদর। কি অচেনা দেখাচ্ছে তাকে ! চোখের নিচে কালি জমেছে। সাস্থ্যও ভেঙে গেছে একেবারে। হায়দার সালাম করতে মাথা নামাতেই তার বাবা তাকে জাপটে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।
হায়দার না দেখেও বুঝতে পারছে বাবা কাঁদছেন।
মুক্তিযুদ্ধে যাবার পর এই প্রথম সে নিজের বাড়িতে এলো। ছয়মাস। বিরাট সময়। এই সৌভাগ্যও সবার হয় না।
কমান্ডারের সম্মতি মেলে না। কেউবা আবার এসে নিজের বাড়িতেই ধরা পড়ে। ছাত্রসংঘে থাকা ছেলেগুলো ভালো দিগদারি শুরু করেছে। নিজেদেরকে এরা পরিচয় দেয় বদর-বাহিনী। এদের দলও নাকি তিনশ তেরো জনের।
ধর্মের আশ্রয় নিয়ে ভালো সাজার চেষ্টা আর কি!
বাড়িটাকেও কেমন অপরিচিত লাগছে। আলনার ডানপাশে কাঠ দিয়ে বানানো রবীন্দ্রনাথের একটা ছবি ছিল- সেটা নেই। সামনের খাটটাও বোধহয় ভিতরে নিয়ে গেছে। নীতুর শখের বড় ঘড়িটাও বোধহয় সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এই ভালো।
শখের সবকিছুই এখন লুকিয়ে রাখা উচিত। এই দেশ তো একদিন স্বাধীন হবে। তখন সবকিছু ঠিক আগের মত করা হবে। নাকি হবে না? শখের জিনিসগুলো লুন্ঠিত হতেই থাকবে?
হায়দার দরোজার হুড়কো লাগিয়ে দিল। বাবা পকেট থেকে চশমা বের করে চোখে পড়লেন।
তার হাত ধরে ভিতরে নিয়ে গেলেন। যেন সে নতুন অতিথি। কিচ্ছু চিনবে না। হায়দারের মা শুয়ে ছিলেন। তার মাথার ওপর হায়দার আলতো করে হাত রাখতেই তিনি যেন চমকে উঠলেন।
চোখ মেলে ভুত দেখলেন। তার চোখেও জল। হায়দার বড় বিব্রত বোধ করছে। সে আস্তে আস্তে বলল, “আম্মা, নীতু-বাবলু ওরা কই?” বাবা খুক-খুক করে কাশতে কাশতে বললেন, “বাবলুটা ওঘরে ঘুমুচ্ছে। নীতুকে পাঠিয়ে দিয়েছি তোর নানার বাড়িতে।
এই বাড়িটা ঠিক...” বাবা থেমে গিয়ে অন্যমনস্কভাবে চাদরে চশমার কাঁচ মুছতে লাগলেন।
“বাবলু একলা ঘুমায়?”
“এই ছেলেটা হয়েছে শয়তানের যম। কারো একটা কথা শুনবে না। কবে যেন এটাও...” বলেই বাবা লজ্জা পেয়ে থামলেন।
আমি অস্পষ্ট স্বরে বললাম, “কাউকে কিছু না বলে চলে গিয়েছিলাম, এইজন্যে কি আমার উপর অনেক রাগ করেছেন আব্বা?”
হায়দারের বাবা কিছু বললেন না।
ডান হাতে নিজের চোখ ডলতে লাগলেন শুধু। যেন কিছু গিয়েছে চোখে। হায়দার উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, “ভাত খাওয়ার কি আছে মা? অনেকদিন তোমার হাতের রান্না খাই না। ”
হায়দারের মা উঠে বসলেন। সর্বনাশ।
তরকারী বলতে গেলে কিছুই নেই। করলার ডাল আছে। ভেবেছিলেন সেহেরীতে আলু ভর্তা করে ডিম ভেজে দেবেন। আজ এতোগুলো দিন পর তার ছেলে বাড়িতে এসেছে। কি খায়, না খায়।
সারাদিনে হয়ত খাবারও পায় না। আর আজই এমন খারাপ আয়োজন! তার চোখে পানি এসে গেল। বাবলুকে পাশের করিম হাজীর বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে পারলে হয়। একটা বাটিতে করে কিছু একটা যদি... না থাক্, কোথা থেকে কে জেনে যায়। যা আছে তাই দিয়েই তিনি ভাত বেড়ে দেবেন।
টেবিলে যখন ভাত বাড়া শেষ তখন বাবলু দুহাতে চোখ ডলতে ডলতে আসলো। এসেই সে ‘দাদা’ বলে একটা চিৎকার দিয়ে হায়দারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। বাবলুটাও কেমন বদলে গেছে। আগে সে কোন-কিছুতেই এমন উচ্ছ্বাস দেখাতো না। হায়দারের অন্য এক ধরনের ভালো-লাগা কাজ করল।
যুদ্ধের এই দিকটা খারাপ না। সত্যিকারের আবেগ, ভালবাসা আর সত্যিকারের ভাল মানুষগুলো এসময় চেনা যায়।
মা বললেন, “আজকে কিছুই ছিল না রে। তরকারীর অবস্থা এতো খারাপ। ”
“এখন যা খাচ্ছি তাই অমৃত।
আমদের দলটা যখন দূর্গাপুর ছিল তখন খাবারের খুব টানাটানি ছিল। পাঁচ-ছ’জনের খাবার পঁচিশ জন মিলেও খেতে হয়েছে। পয়লা রমজান মোরলগঞ্জ অপারেশন শেষে ট্রাকে করে ফিরছি। বৈঠাঘাটা বসে ইফতারের সময় হল। আমাদের কাছে একফোঁটা পানিও নাই।
মোফাজ্জল বলল তার কাছে কিছু সিগারেট আছে। এই দিয়ে সে রোজা খুলতে চায়। আমাদের কমান্ডার আফসার মাস্টার দিলো এক ধমক। আমরা কলেমা পড়ে আল্লাহর নামে কিছু না খেয়েই রোজা খুললাম। ঐদিন খেয়েছিলাম রাত নয়টায়।
খিদের জ্বালায় চোখে কিছু দেখছি না...”
“এই গল্পটা থাকুক। তুই অন্য গল্প কর। ”
বাবলু বলল, “দাদা, যুদ্ধের একটা গল্প বলো না !”
হায়দার বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল, “বলতে ইচ্ছে করছে নারে বাবলু, যুদ্ধের গল্পগুলো বড় ভয়ঙ্কর। ”
“একটা বলো না”
“আমাদের দলে ফরিদ খুব ভালো গান গায়। চরমপত্র পড়ে যে আখতার মুকুল তার কন্ঠ অবিকল নকল করতে পারে।
ছেলেটার বাবাকে মিলিটারীর একটা দল ধরে নিয়ে যায়। এক রাজাকার তার খুব বন্ধু মানুষ ছিল। কিভাবে কিভাবে যেন সে ফরিদকে পটিয়ে ফেলে আমাদের দলটার অবস্থান বলার জন্য। হয়ত আশ্বাস দিয়েছিল তার বাবাকে ছাড়িয়ে এনে দেবে। ”
“তারপর? তোমরা ধরা পড়ে গেলে?”
“না।
ভাগ্য বলতে গেলে অনেক ভালো ছিল আমাদের। হেমায়েত বাহিনীর একটা দলের পরদিন আসার কথা ছিল কিছু অস্ত্র আর গোলাবারুদ নিয়ে। তারা আবার সম্মুখ যুদ্ধের ওস্তাদ লোক। তাদের একদিন আগে চলে আসাটাই আমাদের প্রানে বাঁচিয়ে দেয়। তাদের জোড়ে আমরা পালিয়ে যেতে পারলাম।
জাকের আর বারী মারা পড়ে ঐদিনই। ওরাই কভারে ছিল। হেমায়েত বাহিনীর একজন মারা যায়। ফরিদের ব্যাপারটা কিভাবে কিভাবে জানাজানি হয়ে গেল। কমান্ডার সাহেব বললেন ফরিদের মৃত্যুদন্ড হবে।
হরিনঘাটার পারে হাত-পা বেঁধে ওকে দাঁড় করানো হল। গুলি করার সময় ও মৃদুস্বরে বলছিল, ‘বাবা, বাবা...’। তারপর...”
“তারপর কি হল দাদা?”
“এই গল্পটা আর বলতে ইচ্ছে করছে না রে বাবলু”
“আচ্ছা। থাক তবে। তোমাদের নেক্সট যুদ্ধ আবার কবে?”
“ঈদের দিনও হতে পারে।
আবার ঈদের আগের দিনও হতে পারে। ঈদ কয় তারিখে পড়বে আব্বা?”
“নভেম্বরের উনিশ অথবা বিশ। ”
হায়দার একটু থেমে বলল, “তুই ঈদের জামা কিনেছিস বাবলু?”
হায়দারের বাবা ক্লান্ত কন্ঠে বললেন, “আর জামা ! গতবার ঈদে ঘুর্নিঝড়ে সব শেষ হল। আর এবার তো আরো বড় দুর্যোগ। পাকিস্তানে শয়তানের আছর লেগেছে।
শুনলাম ঈদ উপলক্ষ্যে রাজাকারদের বেতন বাড়িয়ে ১২০ রুপি করেছে। ”
“কার কাছে শুনলে?”
“তোর কাশেম চাচা বলল। ”
“সে কি রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়েছে নাকি?”
“তাই তো শুনছি। বাসার সামনে সিপাই লাগিয়ে দিয়েছে। বদ মতলব আছে নিশ্চয়ই।
আমাকে সেদিন জিজ্ঞেস করছিল তোর কথা। তুই মুক্তিতে যোগ দিয়েছিস কিনা। ”
“তুমি কি বললে?”
“আমি বললাম, তোকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ওকে বললাম খুঁজে দিতে। তুই কোন চিঠি দিস নি- ভালো করেছিস।
”
হায়দার প্রসঙ্গ পালটে বলল, “নীতু কি আমার উপর রাগ করেই ছিল? আমি কিন্তু মুক্তিবাহিনীতে যাবার কথাটা শুধু নীতুকে বলেছিলাম। পাগলীটা নানাবাড়িতে গিয়েছে কবে? ওর সাথে দেখা হল না। ”
“দাদা, বুবুকে ওরা উঠিয়ে নিয়ে গেছে” বলেই বাবলু হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। বাবার সাথে হায়দারের একবার চোখাচোখি হল। বাবা চোখ নামিয়ে নিলেন।
হায়দারের চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। নীতুর মায়াভরা মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠল। সেই যে নীতু গম্ভীর ভঙ্গিতে রাতের ভাত বেড়ে দিচ্ছিল। দেরী করে ভাত খাচ্ছে বলে হায়দার লজ্জিত মুখ করে বসে ছিল। তার জন্যেই নীতু জেগে আছে এতো রাতেও।
হায়দার ভাত মাখাতে মাখাতে বলছিল, “আমি যদি মরে-টরে যাই নীতু আমার জন্য কাঁদিস না কিন্তু”
নীতু ভুরু কুঁচকে তার দিকে না তাকিয়েই বলল, “কেউ যেনো আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা না করে। ”
“আমি মুক্তিবাহিনীতে চলে যাবো নীতু। তখন তো আর আমাকে পাবি না। মরেও যেতে পারি গুলি-টুলি খেয়ে। এখন আর রাগ করে থাকিস না”
নীতু হাত ছিটকে টেবিলে রাখা তরকারীর বাসন উলটে ফেলে দিয়ে দ্রুত চলে গেল।
তরকারীর ঝোল টেবিল বেয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছিল আর হায়দার ভাবছিল, নীতুটাকে না বলাই ভালো ছিল।
হায়দার তীব্রস্বরে তার বাবাকে বলল, “আমাকে বললে না কেন বাবা?”
বলেই আর থামলো না। মাখা ভাতের ওপর হাত ধুয়ে ফেলল। তার বমি-বমি লাগছে। চিৎকার দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছা করছে।
সে বসার ঘরে গিয়ে বসলো। নীতুর সাথে কেন এমন হবে? ওর মত ভালো মেয়ে তো এই পৃথিবীতে আর জন্মায় নি। মেয়েটা এখন কোথায়?
বাবা হায়দারের পাশে এসে বসলেন। হায়দারের কোলের ওপর একটা ডায়েরী রাখলেন। কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, “ওর ট্রাঙ্কে ছিল।
তোর বোনটা তোকে অনেক ভালবাসতো রে হায়দার। আমার কিছুই করার ছিল না। চোখের সামনে থেকে মেয়েটাকে ধরে নিয়ে গেল। বাপ হিসেবে আমি একটা গুলি খাবার সাহসও দেখাতে পারিনি। ”
হায়দার ডায়েরীর ওপর হাত রাখলো।
কোমল নীল রঙের মলাট। ডায়েরীটা খুলে হায়দার চোখের পানি ধরে রাখতে পারলো না। টপটপ করে ডায়েরীর পাতার ওপরে জল ঝরতে লাগলো। সব পাতাই চিঠির আকারে লেখা। প্রথম চিঠিটায় তারিখ দেয়া ৪ঠা মে।
প্রথম লাইনে লিখেছে, “হাঁদারাম সর্দার, আমাকে মেরে বড়ভাইগিরি ফলিয়েছিস? আর কথা বলব না তোর সাথে, যা। মাকেও বলে দেবো যে তুই লুকিয়ে লুকিয়ে হেনাকে প্রেমপত্র পাঠিয়েছিলি। ...”
৩১ মে
হায়দার, তুই এতো ভালো হলি কি করে? তুই যখন কাল রাতে বললি তুই মুক্তিবাহিনীতে যাবি, আমার এতো গর্ব হল। রাগ উঠলো যখন বললি মরে যাবি। ইচ্ছা করল ডালের চামচের এক বাড়িতে তোর মাথা ফাটিয়ে দি।
তবে আমি ভেবেছিলাম তুই সাহস পাবি না। আর শেষমেষ যাওয়াও হবে না। কিন্তু আজ সারাদিন তোর কোন খোঁজ নেই। মা বলল, তোকে কি কিছু বলেছিল? আমি মিথ্যামিথ্যি রাগের অভিনয় করে বললাম, ওর সাথে কথা বলি আমি? তুমি জানো না?? আমার কি ইচ্ছা ছিল জানিস? ছেলে সেজে তোর সাথে যুদ্ধে চলে যাবো। একথা তো তুই মানবি যে তোরচে আমি অনেক বেশী সাহসী।
সাপ দেখে তুই গত আষাঢ় মাসে কি ভয়টাই না পেয়েছিলি। আমাকে সাপের লেজ ধরে ঘুরাতে দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলি। কুকুর ভয় পেতিস খুব। তোর মত কুকুর-ভীতু আমি আর এ জীবনে দেখি নি। মেজোখালার বাড়িতে বৌ-চি খেলার সময় একবার তিনটে পাগলা কুকুর আমাকে ঘিরে ধরল।
সবাই পালিয়ে গেলো। তুই কোত্থেকে দৌঁড়ে এলি। কুকুরে এত্ত ভয় যার সে কুকুরের কামড় থেকে আমাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজে কামড় খেল। আমি প্রায়ই ভাবি আমার ভাইয়ের মত করে অন্য ভাইরাও কি তাদের বোনকে এতো ভালবাসে? তুই তাড়াতাড়ি চলে আয় হায়দার। তোর কাছে একটা গোপন কথা বলব।
আমার দেখার ইচ্ছা তুই শুনে কি করিস। আবার চড়-টড় মেরে বসবি কিনা কে জানে!
১৬ আগষ্ট
... আমার পুরস্কারের বড় দেয়াল ঘড়িটা ভেঙে গেছে রে। নিশ্চয়ই বাবলু গাধাটার কাজ। আজকাল সে দেয়ালে বল ছুঁড়ে ছুঁড়ে লোফালুফির খেলা খেলে। যদিও কিছু স্বীকার করছে না।
করলেও আমি অবশ্যি ওকে কিছুই বলতাম না। আচ্ছা, একটা কথা বলতো। তোরা সবাই আমাকে এতো ভয় পাস কেন? আমার চেহারাটা কি ভয়ঙ্কর? বাবাও দেখি ইদানীং আমাকে ভয় পায়। আমার এতো হাসি আসে। তবু ভাব ধরে থাকি।
আগে তোর কাছে সব মনের কথাগুলা বলা যেতো। তোর কোন গুন না থাকলেও একটা গুন ছিল। পেটের ভেতর কথা রাখতে পারতি। বোমা মেরেও কথা বের করা যেত না। কত কিছু যে ঘটছে আমাদের এখানে।
তোর জীবনে তো বোধহয় এখন অনেক অ্যাডভেঞ্চার। গুলি করছিস। মানুষ মারছিস। আর আমরা এখানে বসে রেডিওর নব ঘোরাচ্ছি। ৭০০’দাগের পাশে ঢাকা বেতার ধরার চেষ্টা করছি।
‘জল্লাদের দরবার’টা এতো ভালো লাগে আমার। ইয়াহিয়া খানকে বলে কেল্লা ফতে খান। হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যায়। কাল বিকেলে একটা জিনিস কিনেছি দুটাকা দিয়ে। দুটাকা দিয়ে কিনলেও দাম হওয়া উচিত দুশ’ টাকা।
দেখতে একেবারে সাধারন তবু হাজার হোক... উহুঁ, তোকে বলব না। আন্দাজ কর দেখি জিনিসটা কি? আচ্ছা তোকে একটা ধাঁধাঁ দি। এবার দেখ পারিস কিনা-
বড় গাঙ্গে বড় কৈ
মাগুড়ে ভাঙ্গে কাডা
এই শিল্লুক ভাঙ্গাইতে পারলে
বরিশালের বেডা
বরিশালের বেডা না তে
কুতুব খাঁর নাতি
এই শিল্লুক ভাঙ্গাইতে লাগে
আশ্বিন আর কাতি। ।
বল দেখি জিনিসটা কি? বলতে পারলে তোকে দিয়ে দেবো।
কিন্তু আমি জানি তুই পারবি না। কারন, তুই হচ্ছিস হাঁদারাম হায়দার। হি হি হি।
হায়দার আর পড়তে পারল না। নিজের কপালে একটা গুলি করে সব কষ্ট শেষ করে দিতে ইচ্ছা করছে।
হায়দার দাঁড়িয়ে পড়লো, “আব্বা, আমি যাই। ”
“এক্ষুনি যাবি?”
“হুঁ”
“তোর মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যা। ”
“না থাক্। আবার কান্নাকাটি করবে। তুমি বলে দিও।
”
“আচ্ছা। আচ্ছা। তুই বরং এক কাজ কর। আলনাটার পেছনে গিয়ে লুকিয়ে থাক। আমি সেপাই দুটোকে সেহ্রীর কথা বলে ভিতরে নিয়ে আসি।
এই ফাঁকে তুই বেড়িয়ে পড়। ”
“ঠিক আছে। ”
“আচ্ছা শোন। কাছে আয়। তোকে একটু আদর করে দেই।
”
বলেই বাবা জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। পরক্ষনেই ভারী স্বরে বললেন, “যা, যা। আলনার পিছনে গিয়ে লুকিয়ে পড়। ”
হায়দার হনহন করে হাঁটছে। নীল মলাটের ডায়েরীটা দড়ি দিয়ে তার বুকের সঙ্গে বাঁধা।
সেখানে পৃথিবীর সমস্ত ভালবাসা পৃষ্ঠাবন্দী করে রাখা আছে। এখন থেকে তাবিজের মত করে এটিকে সে নিজের শরীরে বেঁধে রাখবে। এটি যেনো কিছুতেই হারিয়ে না যায়। ভালবাসার মানুষকে কখনও দূরে সরিয়ে রাখতে নেই। কখন এরা হারিয়ে যাবে, কেউ বলতে পারে না।
.
.
পরিশিষ্টঃ ২২শে নভেম্বরের সাপ্তাহিক জয় বাংলা একজন বিদেশী সাংবাদিকের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছে, সাত মাস পাক বাহিনীর দখলে থাকার পর ঈদের দিন কালীগঞ্জ মুক্ত হয়েছে। ১৯ নভেম্বর উকসার দিকে আক্রমণ শুরু করে মুক্তিবাহিনী। পাকিস্তানীরা পিছু হটে অবস্থান নেয় ইছামতির পূর্ব পারে। সারারাত লড়াই চলে। ভোর পাঁচটায় মুক্তিবাহিনীর আর একটি দল শক্তিশালী আক্রমণ শুরু করে।
হিঙ্গলগঞ্জ থেকে তাদের আর্টিলারি সাপোর্ট দেয় ভারতীয় সেনাবাহিনীর তৃতীয় রাজপুত। দুঘন্টার এ যুদ্ধ শেষে শতাধিক পাকিস্তানী সেনা নিহত এবং চল্লিশ জন বন্দী হয়। আর দীর্ঘ সাত মাস পরে মুক্ত হয় কালীগঞ্জ এলাকা। এ যুদ্ধে প্রান হারান ত্রিশজন মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে অসাধারন সাহসিকতা দেখান মুক্তিযোদ্ধা হায়দার হোসেন এবং মোফাজ্জল করিম।
ভোর ছটায় শত্রুর গোলার আঘাতে শহীদ হন মুক্তিযোদ্ধা হায়দার হোসেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।