জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, যুক্তি যেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।
'দুনিয়া কাঁপানো তিরিশ মিনিট' কিংবা 'দীর্ঘতম জাতীয় পতাকার রেকর্ড' ইত্যাদি নামে সুলভ মূল্যে দেশপ্রেমের নিত্য নতুন 'বড়ি'র আবিস্কার হচ্ছে। এসব বড়ি খেলে কিছু সময়ের জন্য দেশপ্রেম নামক ভীষণ কাঁপুনি ওঠে। কাঁপুনি সেরে গেলে দেশপ্রেমকে দেহেতো বটেই জীবনের কোনো অংশে খুঁজে পাবার সম্ভাবনা খুবই কম। যারা একবারের জন্য হলেও দেশের প্রেমে পড়তে চান তাদের জন্য এই বড়ি ভীষণ কার্যকরী বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তরুণ প্রজন্মকে দেশপ্রেমের জন্য নির্ভরশীল করা হচ্ছে এধরনের বড়িগুলোর উপর। এধরনের বড়ি না খেলে নাকি তরুণদের মনেই পড়ে না তাদের দেশপ্রেম আছে। 'দুনিয়া কাঁপানো তিরিশ মিনিট' নামক দেশপ্রেমের প্রথম বড়ির বাণিজ্যিক সাফল্যের পর আরো কিছু প্রতিষ্ঠান লোভনীয় এ বাণিজ্যে নামে।
কমিউনিস্টরা 'কাগুজে', 'তত্ত্বীয়', 'জনবিচ্ছিন্ন', ভদ্র সমাজের এসকল গালি খাবার ভয়ে আসল কথাটি বলতে ভয় পাই। তা হলো, ধর্ম নিয়ে বাণিজ্য এখন রমরমা।
সেদিনও দেখলাম আরো পাঁচ বেসরকারি ব্যাংক ইসলামি ব্যাংকিং চালু করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট আবেদন করেছে। (আর ফাইন্যান্স, ইন্স্যুরেন্স, এনজিও, হাসপাতাল, ক্লিনিক, কোচিং, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এসবের কথা বাদই দিলাম। ) এতোকিছুর পরও ধর্ম ব্যবসায়ীরা তাদের সাম্প্রদায়িক মনস্তাত্ত্বিক জালে এখনও এদেশের অধিকাংশ জনগণকে জড়াতে পারেনি। কেনো? মাটি। মাটিটাই যখন অসাম্প্রদায়িক তখন সাম্প্রদায়িকতার বৃক্ষে ফল ধরবে কেমন করে।
অসাম্প্রদায়িক এ জনগোষ্ঠীকে নিয়ে তখন মুক্তিযুদ্ধের নামে, ভাষা দিবসের নামে দেশপ্রেমের ব্যবসা করাটা কিন্তু বেশ 'ইনোভেটিভ। ' তরুণ প্রজন্মও একেবারে লুফে নিয়েছে। অর্থাৎ দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধ এসবের বাণিজ্যিক ব্যবহার এখন ধর্মের চাইতে কম নয়।
তাই বিদেশী মোবাইল অপারেটররা এদেশের মানুষের চাইতেও বড় দেশপ্রেমিক। জাতীয় দিবসগুলো নিয়ে তৈরী করা বিজ্ঞাপনগুলোর মাধ্যমে আপনার চোখের অশ্রু ঝরানোর প্রতিশ্রুতি দিবে আপনাকে।
তা ঝরাবেই বা না কেনো? আপনি ঐ ক'ফোঁটা চোখের জলে যে মোবাইল কোম্পানিটির সাথে আত্মিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যান। আর মোবাইল কোম্পানিগুলো আপনার চোখের জলের বিনিময়ে কতটাকা (হাজার কোটি) বছরে নিয়ে যাচ্ছে সে খেয়াল করলে আপনার আবেগ উবে যাবে। অশ্রুর খরা দেখা দেবে। তা কি করে হয়!! জানেনতো জাতি হিসেবে আমরা আবেগী। গান আছে, 'আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি, তাই তোমার কাছে ছুটে আসি।
' বরং অশ্রু ঝড়িয়ে মোবাইল কোম্পানিগুলোকে বাহবা না দিলে আমাদের মনের খচখচানি দূর হয় না।
তরুণ প্রজন্ম এসব বড়ি খাবেই বা না কেনো! স্কুলে-কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরে ঘুরে দেশের কথা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, শোষণহীন-মানবতার, মুক্ত মানব সমাজের স্বপ্ন ফেরি করে কতগুলো সংগঠনের কর্মীরা। ঘরের খেয়ে পরের মোষ তাড়ানো বলে যাকে আরকি! এত কষ্ট করার চাইতে একদিন বড়ি খেয়ে দেশপ্রেমের কাঁপুনি তুলে দেশপ্রেমের চৌদ্দ গুষ্ঠিকে জড়িয়ে ধরে দেশপ্রেম নামক খায়েস মিটিয়ে ফেলা অনেক সহজ।
বড়ি প্রস্তুতকারী সেসব প্রতিষ্ঠানের নেতারা বয়ান দিতে থাকেন, ছাত্র রাজনীতি খুব খারাপ। (যদিও লেজুড় ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের অর্থেই পুষে চলে) প্রকৃত ভাষাপ্রেম হলো দুনিয়া কাঁপানো তিরিশ মিনিট, প্রকৃত দেশপ্রেম হলো, 'দীর্ঘ জাতীয় পতাকার রেকর্ড'।
আর বাংলাদেশ জামাত-শিবিরের হাতে মার খেতে থাকে, খেতে থাকে। বাংলাদেশের রাজনীতি আওয়ামী-বিএনপি-জামাত-জাতীয় পার্টির ব্যবসায়ীরা যৌথভাবে দখল করতেই থাকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।