বিভিন্ন সিটি করপোরেশনে বিরোধী দল সমর্থিত মেয়রদের অনেকে আন্দোলনের মাঠে সক্রিয় থাকলেও কেউ কেউ নিষ্ক্রিয়।
নগরপিতার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি প্রধান বিরোধী দল বিএনপিরও গুরুত্বপূর্ণ নেতা তারা। কিন্তু নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিসহ সরকারবিরোধী আন্দোলনে দু-একজন একেবারেই অনুপস্থিত।আন্দোলনে বেশ সক্রিয় খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুজ্জামান মনি, রাজশাহীর মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও গাজীপুরের অধ্যাপক এম এ মান্নান। তবে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় বিএনপির সমর্থনে বিজয়ী হওয়া চট্টগ্রামের মেয়র এম মনজুর আলম।
জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণার পর থেকে আন্দোলন-সংগ্রামে ছন্দপতন ঘটেছে বরিশালের মেয়র আহসান হাবিব কামালের। আর দলীয় কর্মকাণ্ডের চেয়ে নগরভবনে বেশি ব্যস্ত সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। অন্যদিকে ছোট ভাইকে গ্রেফতারের পর থেকে আন্দোলনে নেই কুমিল্লার মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। বাংলাদেশ প্রতিদিনের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-চট্টগ্রাম : আন্দোলনের মাঠে নেই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম। বিএনপির সমর্থন নিয়ে 'চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের' ব্যানারে নির্বাচিত হন আওয়ামী ঘরানার এ নেতা।
কিন্তু এখন আন্দোলন নিয়ে তিনি উভয় সংকটে রয়েছেন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট গত ২৫ অক্টোবর থেকে হরতাল-অবরোধের ধারাবাহিক কর্মসূচি শুরু করে। প্রথম দফার অবরোধের সময় মেয়র মনজুর কাট্টলির নিজ এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করলেও পরবর্তীতে আর কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। টানা হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে তিনি করপোরেশনের কার্যালয়ে না গিয়ে বাড়িতেই কাজ সম্পন্ন করেন বলে জানা যায়। পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন মনজুর আলম।
এ দলের সমর্থন নিয়ে তিনবার কাউন্সিলরও নির্বাচিত হন। কিন্তু ২০১০ সালের ১৭ জুন বিএনপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে প্রায় এক লাখ ভোটে ১৭ বছরের মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে পরাজিত করেন। এরপর থেকে তিনি হয়ে যান বিএনপির মেয়র। মনোনীত হন বিরোধীদলীয় নেতার বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টাও। এ ব্যাপারে গতকাল সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইলফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
খুলনা : মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের পদে থাকায় আন্দোলনের মাঠে থাকতেই হচ্ছে খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনিকে। দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের দৈনন্দিন কাজ নিয়ে ব্যস্ততা তার। জানা যায়, মনি নিয়মিতভাবেই নেতা-কর্মীদের নিয়ে পথে নামছেন। পুলিশের হামলায় আহতও হয়েছেন। কিন্তু এ অবস্থায়ও হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচির দিনগুলোতে ভোরে নেতা-কর্মীদের নিয়ে মিছিল-মিটিং করছেন।
আবার নির্ধারিত সময়ে সিটি করপোরেশনের কার্যালয়ে বসে কাজ সামলাচ্ছেন এ মুক্তিযোদ্ধা। আন্দোলনের কারণে কাজে ব্যাঘাত ঘটছে না জানিয়ে মনিরুজ্জামান মনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'দীর্ঘদিন রাজনীতি করছি। বড় সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছি। তাই সমস্যা হয় না। '
রাজশাহী : আন্দোলনের অন্যতম কাণ্ডারি হিসেবে আবিভর্ূত হয়েছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (আরসিসি) মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।
অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে গত জুনের নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন পান মহানগর ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় এই সদস্য। তবে আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে সিটি করপোরেশনের কাজে ভাটা পড়ছে কিনা জানতে চাইলে বুলবুল বলেন, 'দলের এই সংকটময় সময়ে পেছনে ফেরার সময় নেই। নগরীর দায়িত্ব শুধু নগরপিতার একার দায়িত্ব নয়। ৪০ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মিলে কাজ করেন। আমার দায়িত্ব তাদের সঠিকপথ নির্দেশনা দেওয়া।
' আন্দোলনে অংশ নিয়ে সম্প্রতি গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন বুলবুল। প্রতিবাদে মহানগরে দুই দিন আধাবেলা হরতালও ডাকে বিএনপি। বুলবুল বলেন, 'সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ে নেতা-কর্মীরা অনেকটাই প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে সবাই এখন সক্রিয়ভাবে মাঠে রয়েছেন। সরকার পতনের লক্ষ্যে ভেদাভেদ ভুলে প্রতিটি কর্মসূচিতে তারা অংশ নিচ্ছেন।
'
বরিশাল : সিটি নির্বাচনের পর থেকে কখনো মহানগর বিএনপি সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার এমপির সঙ্গে, আবার কখনো নিজস্ব বলয় নিয়ে আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) মেয়র আহসান হাবিব কামাল। কিন্তু জেলা কমিটি ঘোষণার পর তাকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না। তবে এখনো নিজেকে বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে দাবি করছেন কামাল। আর তার অনুপস্থিতির কারণে টানা অবরোধসহ দলের কোনো কর্মসূচিতেই দেখা যাচ্ছে না অনুসারী নেতা-কর্মীদের। দলীয় সূত্র মতে, মেয়র কামালকে পাশে পেলে মামলায় জর্জরিত নেতা-কর্মীরা চাঙ্গা হতেন।
তার এমন ভূমিকায় দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামও ক্ষুব্ধ। প্রায় আড়াই বছর আগে কামালকে সভাপতি ও সংরক্ষিত আসনে সাবেক এমপি বিলকিস জাহান শিরিনকে সাধারণ সম্পাদক করে দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু এ কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়নি। এমনকি বিলুপ্ত না করেই গত ২৬ নভেম্বর জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবায়েদুল হক চাঁনকে সভাপতি ও সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কালাম শাহিনকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। অবশ্য নীতিনির্ধারকদের অনুরোধে মেয়রপদে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন এবায়দুল হক চাঁন।
নতুন কমিটি ঘোষণার পর ছন্দপতন ঘটে মেয়র কামালের। শিরিনকেও মাঠে দেখা যাচ্ছে না। নতুন কমিটিকে অবৈধ এবং এ নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে দলের স্বার্থান্বেষী মহল আন্দোলন মুখর নেতা-কর্মীদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মেয়র কামাল। নগরীর হজরত কালুশাহ সড়কের বাসভবনে গত ৪ ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে এখনো দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি ও শিরিনকে সাধারণ সম্পাদক বলেও দাবি করেন। আন্দোলনের বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবীবিষয়ক এ সম্পাদক বলেন, 'ষড়যন্ত্র করে আমার পদ কেড়ে নেওয়ায় নেতা-কর্মীরা মনোবল হারিয়েছেন।
তাদের মনোবল চাঙ্গা করে মাঠে-ময়দানে থাকতে বলা হয়েছে। ' বিজয় দিবসে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দেওয়া ও আলোচনা সভায় অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমি আন্দোলনে নেই, এ কথা ঠিক নয়। যারা এসব বলেন, তারা সরকারের এজেন্ট। '
সিলেট : নগরভবনেই বেশি ব্যস্ত সিলেট সিটি করপোরেশনের (এসসিসি) মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে গত এক মাস ধরে তাকে স্বল্প সময়ের জন্যই দেখা গেছে।
জোটের ডাকা গতকালের মিছিল-সমাবেশেও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। দুপুর ১২টার দিকে নগরভবনে গিয়ে দেখা যায়, একটি এনজিওর প্রতিনিধির সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। জানতে চাইলে মেয়র বলেন, 'নগরপিতা হিসেবে নগরবাসীর সুখে-দুঃখে দৌড়াতে হয়। উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শনে যেতে হয় প্রায় প্রতিদিন। আধুনিক ও পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ার কাজে নিরলসভাবে কাজ করছি।
' রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'জোটের সব কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ নিই। নগরভবনের ব্যস্ততা ও পারিবারিক সমস্যায় মাঝেমধ্যে উপস্থিত না থাকতে পারলেও নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। '
কুমিল্লা : ছোট ভাইকে গ্রেফতারের পর থেকে আন্দোলনের মাঠে নেই কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু। নগরীর চর্থা এলাকায় গত ২৬ নভেম্বর জোটের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে বিজিবির এক সদস্য নিহত হন। সূত্র জানায়, ওইদিন সন্ধ্যায় নানুয়ার দিঘির পাড়ে সাক্কুর বাসায় অভিযান চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
আটক করা হয় তার ছোট ভাই আইনজীবী নেতা অ্যাডভোকেট কাইমুল হক রিংকুকে। তাকে ৫৪ ধারায় আটকের পর বিজিবি সদস্য হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এরপর থেকেই মাঠে নেই মেয়র সাক্কু। কিন্তু মাঝে মাঝে সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে গিয়ে কাগজপত্রে স্বাক্ষর করে ঢাকার বাসায় ফেরেন। মোবাইলফোনে মেয়র সাক্কু বলেন, 'দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনারা ভালোই জানেন।
আমি জনপ্রতিনিধি হলেও আমার বাসায় ভাঙচুর করা হয়েছে। সেখানে সাধারণ মানুষের কী অবস্থা? আমার নিরপরাধ ভাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে নেতা-কর্মীরা মাঠে আন্দোলন করছেন। কয়েক দিন পর আমিও মাঠে নামব। '
গাজীপুর : আন্দোলনে বেশ সক্রিয় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এম এ মান্নান।
কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে আহতও হয়েছেন। নগরীতে গত ২৯ অক্টোবর হরতালের সমর্থনে তার নেতৃত্বে মিছিল বের হলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হন। চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরেও যেতে হয়েছে। অধ্যাপক মান্নান বলেন, 'এই স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী আন্দোলন চলছে। ভোটারবিহীন নির্বাচন দেশে-বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্য হবে না।
' তিনি বলেন, 'গাজীপুরে সরকারবিরোধী আন্দোলন সফল। তবে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশ হয়রানি করছে। বাড়ি বাড়ি পুলিশ যাচ্ছে, হামলা ও গ্রেফতার করছে। '
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।