অপ্রয়োজনে অনেক কথা বলে যাই, কিন্তু বলা হয়না আরো অনেক বেশী কথা- অনেক আপন মানুষদেরকে। তাইতো, এই খোলা চিঠি। হয়তো কারোর চোখে পরবে কোনদিন, যখন আমি থাকবোনা.....
একক, দশক আর দীর্ঘ শতক
১ । ০ । ১ ।
০
হাজার । শতক । দশক । একক
মানুষের চিন্তাধারা যেমন অদ্ভুত, তেমননি ভাবে তাদের আবিস্কারগুলোও বড্ড গোলমেলে। সোজাসাপ্টা কোন নিয়ম যেন এরা রাখতে জানেনা।
একটা-দুটা করে দিন পার করতে করতে আনন্দ কেবল ভাবে, প্রকৃতির সব সরল নিয়মগুলোকে একে একে পাল্টে দিয়ে এই জটিল-গরল মারপ্যাচের সংসার তৈরী করার কি দরকার ছিল, এই অতিবুদ্ধিমান মানুষদের?
আনন্দের মাথায় এই সব গোলমেলে চিন্তা আসার একটাই কারন। ছোটবেলার সেই একক-দশক আর শতকের হিসাব। আর আরো গভীরে গেলে পাওয়া যায়, আনন্দের এ্যলেনকে না দেখতে পাওয়া দিনগুলোর হিসাব। এ্যলেনের সাথে আনন্দের দেখা হয়েছিল ৯৯ দিন আগে। আর একটা দিন বাড়লেই তা হয়ে যাবে ১০০ দিন।
সংখ্যাটা চলে যাবে শতকের কোঠায়। এই ঘরটা অবশ্য অনেক বড়, এর পর পরিবর্তন হতে সময় নেবে অনেক দিন।
প্রথম সপ্তাহে, কেবল বারের নাম বদল করেই হিসাব রেখেছে। চোখের পলকে যেন চলে গেল প্রথম সপ্তাহটা। এলো পরের সপ্তাহের শনি বার, প্রথম বারের মতো।
তারপর এভাবে বেশ দ্রুতই যেন শেষ হলো এককের ঘরের হিসাব।
দশক এলো , চলেও গেল। বদল হলো ঋতুর। শরৎ গেল, শিউলো আছে আজো । শীত এলো, কোথাও তুষারে ঘেরা সান্তাক্লজের কাধে চেপে ,কোথাও বা হালকা ভাপা পিঠার ঘ্রান ছড়িয়ে।
এরই মাঝে, আজ থেকে যে শতকের শুরু।
হ্যা, হাজারের কোঠা অনেক দুরে। এর মাঝে হয়তো বদলে যাবে অনেক কিছু। বদলে যাবে বছরের হিসাব,হয়তো জীবনের হিসাব। কিংবা কোন কিছুই বদলাবেনা আনন্দের।
থেমে যাবে সব, যেমনি ভাবে থেমে যায় কোন না কোনদিন সবার হিসেবের চাকা।
কেন জানি, আজকাল মাঝে মাঝেই মৃত্যুর ভয় আনন্দকে আকড়ে ধরে। দম যেন বন্ধ হয়ে আসতে চায়। মনে হয় এই বুঝি আর ডেকে বলা হলো না কেওকে- বিদায়। আসলেই কি বিদায় বলাটা জরুরী?
না- ভাবে আনন্দ।
যেতে যখন হবেই, তবে আর এতো আড়ম্বর কেন? হ্যা মজার ব্যাপার এটাই, এই চলে যাওয়া নিয়েই বেশি আয়োজন। ভাবটা এমন যেন খুবই অদ্ভুত কোন ঘটনা ঘটে গেছে। যেন সবচেয়ে বেশি অবিশ্বাস্য কোন ঘটনা।
নিদির্ষ্ট ঘটনা, সবার জানা। এড়াবার কোন উপায় নেই।
যে যেমনই হোকনা কেন, যে ধর্ম-বর্ন কিংবা ধনী-গুনী। এই ঘটনার সাথে সাক্ষাৎ অনিবার্য। কিন্তু তাকেই যেন সবার এড়িয়ে চলা, এই পৃথিবীর মাঠে চলার সময়টাতে। ভুলেই যাই সবাই।
কিন্তু আনন্দ যেন এই চিন্তা থেকে বের হতে পারছেনা।
নিজেই ভাবে, মৃত্য যখন আসবে, দেখা করবো তার সাথে কিন্তু তাই বলে তো বসে থাকা যাবেনা। চলতে হবে, দেখতে হবে, শুনতে হবে। অসামাজিক হবারও উপায় নেই। সব কিছু ভেবে ভেবে আবারও আনন্দ, নিজের সাথে জড়িয়ে থাকা সমাজের এই বাঁধন কাটবার চেষ্টায় পার করে দেয় সারাটা সময়।
***************************************************
গ্রীষ্মদেশে এখন হালকা শীত পরতে শুরু করেছে।
ভোররাতের এই সময়টাতে মৃদু একটা বাতাস বইতে থাকে আর সাথে শিশির। সাদা আর কমলা রংয়ের ফ্রক পড়া শিউলতে ছেয়ে গেছে মফস্বলের অনেক আঙ্গিনা । আর আনন্দ ?
বদ্ধ ঘরের গোমট একটা ভপসা গন্ধ নিয়ে দিন পার করছে। কতগুলো শুকিয়ে যাওয়া শিউলী ফুলসহ একটা ডাল, ডাইরীর ভাজে শুকিয়ে রেখেছিল, কোন একটা সন্ধ্যার স্মৃতিকে ধরে রাখবার জন্য। শিউলী শুকিয়েছে, কিন্তু আনন্দের সেই অদ্ভুত ভালোলাগা শিউলী ফুলের গন্ধটা আজো তাকে ঘিরে আছে।
এ্যলেন আজ অনেক দুরে, কিন্তু অসাধারন সেই সুন্দর সন্ধ্যেটা আজো আনন্দকে প্রতিটা শরৎ এলেই জানিয়ে যায় এ্যলেনের সাথে থাকা কোন এক শরৎ সন্ধ্যার স্মৃতি। সে স্মৃতি, শিউলী আর আগামীতে কোন এক শরৎ সন্ধ্যায়, গ্রীষ্মদেশে এ্যলেনকে নিয়ে হাটবার স্বপ্নে বিভোর এই আনন্দ, মানসিকভাবে খুব বেশি দিশেহারা একাট সময় কাটাচ্ছে আজকাল। সবাই যেন পাশেই তবু সে যেন নিঃসঙ্গ। তবু এই একাকী আনন্দের ব্যক্তিগত বলে কিছু নেই, নেই একান্ত আপন এতটুকু সময়। মানসিক কষ্টের ভয়াবহতায় তাই মাঝে মাঝে নিজেই ভয় পেয়ে যায় আনন্দ।
এ্যলেনকে হারাবার ভয়, স্মৃতি নিয়ে খেলা করার মাঝে এই শরতের শীউলী খুব বেশি এলো মেলো করে দেয় আনন্দকে। কেন এ্যলেন এই শিউলী ফুলের সাথে জড়িয়ে আছে? কেনইবা এই তীব্র ঘ্রান বার বার নগর জীবনের সব বাধা পেড়িয়ে আনন্দকে নাড়া দেয়? দম বন্ধ হয়ে আসতে চায় যেন।
বি:দ্র: ছবিগুলো নেট থেকে সংগ্রহকৃত। নিজের তোলার খুব ইচ্ছে ছিল, কিন্তু বাস্তবতা অনেক বেশিই দুরে সরিয়ে রাখে মানুষকে তার স্বপ্ন গুলো থেকে। তাই অন্যের চোখ দিয়েই নিজের স্বপ্নের কাছাকাছি পৌছাবার চেষ্টা করলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।