আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসীর দাবী সমাজের তীব্র বৈষম্যের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হয়ে উঠুক

আমি এমন এক সাধারন মানুষ হতে চাই যে অসাধারন হবার পেছনে দৌঁড়ায়না এবং বিনা প্রশ্নে কিছু গ্রহন করেনা ।

এই বছরের ৫ ফেব্রুয়ারী যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার অন্যায্য রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বিপুল সংখ্যক মানুষ শাহবাগে জড় হয়েছিলো । শাহবাগের এই ‘ গণআন্দোলন ‘ এমন একটি আকাঙ্খাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিলো যেই আকাঙ্খাটি এই দেশের ধর্ম , বর্ণ , নির্বিশেষে প্রায় সবারই সম পর্যায়ে হবার কথা । যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসীর দাবীটি কেবল মাত্র বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির জন্মলগ্ন থেকে তার উপর লেগে থাকা কলঙ্ক মোচনই নয় বরং বিগত ৪২ বছরে রাষ্ট্রটির অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক , সাংস্কৃতিক প্রতিটি জায়গায় কলেবরে বৃদ্ধি পাওয়া জামাত-শিবির নামক প্রতিক্রিয়াশীল এক শক্তিকে পদানত করবারও । সেই দৃষ্টিভঙ্গী থেকেই সম্পূর্ণ বিষয়টিকে দেখলে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসীর বিষয়টি শুধুমাত্র আবেগসর্বস্ব শ্লোগানের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে এসে অপেক্ষাকৃত অনেক বেশী রাজনৈতিক গুরুত্ব সহকারে আমাদের সবার নিকট হাজির হয় , হাজির হতে পারে ।

কিন্তু বাস্তব চিত্র কি তাই বলে ? শাহবাগের সেই গণআন্দোলনে যেই বিপুল সংখ্যক মানুষ জড় হয়েছিলেন তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠদের দেশপ্রেম , যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসীর বিষয়ে তাদের আবেগের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলতে হচ্ছে দৈনন্দিন জীবনে সেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষরা প্রত্যক্ষভাবে জামাত-শিবিরের প্রতিক্রিয়াশীলতা দ্বারা আক্রান্তদের অন্তর্ভুক্ত নন । সেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষদের যুদ্ধাপরাধী , জামাত-শিবিরের প্রতি ঘৃণার বিষয়টি সম্পূর্ণই দেশপ্রেমজাত আবেগের অপর নাম । মানুষ প্রাণের অস্তিত্বসম্পন্ন এক জীব বলেই এই আবেগকে এড়িয়ে যাওয়া যায়না । আবার এটাও এক অনস্বীকার্য সত্য যে যে কোন রাজনৈতিক বিষয়কেই রাজনৈতিক চেতনা , রাজনৈতিকতাবোধ সম্পন্ন যুক্তি , চিন্তাশক্তি , প্রখর বিশ্লেষণ করে বিবেচনা করাটাই কাম্য । যুদ্ধাপরাধী , জামাত-শিবিরের মতো প্রতিক্রিয়াশীলদের দ্বারা যেই শ্রেণীর মানুষেরা সরাসরি আক্রান্ত ।

গত ৪২ বছরে এইসব নোংরা প্রতিক্রিয়াশীলদের দ্বারা যারা সবচেয়ে বেশী সরাসরি নিষ্পেষিত সেই শ্রেণীটিকে শাহবাগের আন্দোলনে , যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসীর দাবীতে অনেকাংশেই একীভূত করা যায়নি । এই নিপীড়িত শ্রেণীটিরই আমাদের সবার আগে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসীর দাবীতে রাস্তায় নেমে আসবার কথা । এই শ্রেণীটিরই জামাত-শিবিরের মতো প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির বিরুদ্ধে সবার আগে প্রতিবাদ-প্রতিরোধে নেমে আসবার কথা । তবুও তা ঘটেনি । কারণ সেই শ্রেণীটির আর্থিক , সামাজিক , রাজনৈতিক , সাংস্কৃতিক জীবনের সাথে শাহবাগের গণআন্দোলনে সম্পৃক্ত আমাদের কোন প্রকারের আত্মিক সংযোগ নেই ।

আমরা তাদের থেকে প্রায় সম্পূর্ণই বিচ্ছিন্ন । আমাদের যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসীর দাবী , জামাত-শিবিরের বিরুদ্ধে অবস্থান অনেকাংশেই শক্ত হতে পারে এই শ্রেণীটির আর্থিক , সামাজিক , রাজনৈতিক , সাংস্কৃতিক জীবনের সাথে আমাদের সংযোগ ঘটলে । কাজটা রাষ্ট্র , সরকার এসে অতি অবশ্যই করবেনা । করতে হবে আমাদেরই । যারা যুদ্ধাপরাধী , জামাত-শিবিরের মতো প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিগুলো দ্বারা সবচাইতে বেশী নিষ্পেষিত সেই শ্রেণীটিকেই সাথে না নিয়ে কিংবা সেই শ্রেণীর দৈনন্দিন জীবনের সাথে সম্পৃক্ত নানাবিধ ইস্যুগুলোকে বাইপাস করে কিংবা এড়িয়ে গিয়ে জামাত-শিবিরের থেকে নিরাপদে অবস্থান করে নিজেদের জামাত-শিবিরের বিরুদ্ধে বৃহত্তম শক্তি দাবী করাটা চিন্তাগত দীনতা থেকে তঞ্চকতা , অপরিসীম নির্লজ্জতায় পরিণত হয় ।

ঠিক এমনই এক বিভাজিত সমাজ কাঠামোতে টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরো ঘোলাটে করে দেওয়ার জন্য রাজনীতির মাঠে ফরহাদ মজহারের মতো প্রতিক্রিয়াশীল ধূর্ত বুদ্ধিজীবীরা আবির্ভূত হন । তার লেখা , রাজনৈতিক দর্শন , কর্মকান্ড ইত্যাদিকে খোলা চোখে দেখলে মনে হতে পারে সমাজের সবচাইতে নিষ্পেষিত শ্রেণী যাদের কথা উপরে উল্লিখিত আছে তাদের স্বার্থের কথা ভেবেই তিনি তার রাজনৈতিক কর্মকান্ডে নিজেকে ব্যাপৃত রাখেন । কিন্তু যেই জিনিসগুলো আমাদের মাথায় রাখা জরুরী তা হলো ফরহাদ মজহার সমাজের নিপীড়িত শ্রেণীর স্বার্থে কথা বলার প্রতারণা করতে গিয়ে যেই ইস্যুগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন সেগুলো আদপেই নিপীড়িত শ্রেণীর নিপীড়ণের প্রধান কারণ নয় । বিগত কয়েক মাসে যেভাবে সমাজের নীম্নশ্রেণীর স্বার্থে কথা বলার নাম করে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসীর বিরুদ্ধে , জামাত-শিবিরের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অবস্থান নেওয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন সেগুলো কোনভাবেই সমাজের নিপীড়িত শ্রেণীর অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক , সাংস্কৃতিক নিপীড়নের প্রধান কারণসমূহ নয় । বরং তার জন্য এক কৃত্রিম বাস্তবিক অবস্থা তৈরী করার দিকেই ফরহাদ মজহারদের মতো বুদ্ধিজীবী সহ বাংলাদেশের প্রতিটি সরকারের লক্ষ্য থাকে ।

তাছাড়া যাদের পক্ষালম্বন করে ফরহাদ মজহারের এই রাজনৈতিক ধুম্রজাল সৃষ্টি করার অভিলাষ সেই বিএনপি , জামাত কোনকালেই সমাজের নিপীড়িত শ্রেণীর মিত্র ছিলোনা , হতেও পারেনা । এবং ধর্ম নামক যেই পরিচয়কে ফরহাদ মজহার নিপীড়িত শ্রেণীর প্রধান পরিচয় বলে তুলে ধরে তার রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াশীলতার পতাকা ঊর্ধ্বে তুলতে চাচ্ছেন সেই পরিচয় কোনভাবেই সমাজের নিপীড়িত শ্রেণীর প্রধান পরিচয় নয় । এটা এক অমোঘ সত্য বলেই সমাজ়ের নিপীড়িত শ্রেণীর অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক , সাংস্কৃতিক সমস্যাসমূহকে ধর্মীয় পরিচয়ের বর্ম ব্যবহার করে সমাধান করা যায়নি এবং এখনো যাচ্ছেনা । একই দৃশ্য হেফাজতে ইসলামের নেতাসমূহের রাজনৈতিক চিন্তাচেতনা , কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করলেও স্পষ্টভাবেই প্রতীয়মান হয় । গত চার বছরের মতো বিগত কয়েক মাসের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়তেও আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের প্রতিটি সরকারের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই নানাবিধ প্রতিক্রিয়াশীলতার জন্ম দিয়েছে ।

যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসীর রায় নিয়ে টালবাহানা থেকে শুরু করে ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীলতার প্রমাণ দিয়ে ব্লগারদের গ্রেফতার , রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র , টিকফা চুক্তি থেকে শুরু করে ন্যায্য দাবীতে আন্দোলনরত গার্মেন্টস শ্রমিকদের উপর ধারাবাহিক আক্রমন এবং বিএনপি , জামাতের সারা দেশ ব্যাপী সহিংসতায় নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে আন্তরিকতার অভাব দেখানো ইত্যাদি ইস্যুগুলো আওয়ামী লীগের জনসমর্থন অনেক কমিয়ে দিয়েছে । এবং প্রত্যাশিতভাবেই বিএনপি , জামাত এসকল ইস্যু নিয়ে কনামাত্রও টু-শব্দ করেনি । বরং ক্ষমতার মসনদে যেতে রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের পরিচয় দিয়ে তারা সারা দেশব্যাপী নৃশংস আক্রমনকেই বেছে নিয়েছে । জনগণের সমর্থন কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের পক্ষে না গিয়ে বরং অপর একটি রাজনৈতিক দলের প্রতি তাদের ক্ষোভের পক্ষে যায় এই বিষয়টি সম্পর্কে আওয়ামী লীগ , বিএনপি উভয়েই ওয়াকিবহাল । কিন্তু এই দুই রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়াশীল চরিত্রের থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই সকল ঘটনায় সমাজের যেই শ্রেণীটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সে শ্রেণীটিই তাদের দৈনন্দিন জীবনে নানাবিধভাবে যুদ্ধপরাধীদের দল জামাত-শিবির দ্বারা সবচাইতে বেশী নির্যাতিত ।

অথচ আমাদের যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসীর দাবীতে এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠদের যুক্ত না করার অনিবার্য পরিণাম হলো ফরহাদ মজহারদের রাজনীতির মাঠে নেমে নিজেদের প্রতিক্রিয়াশীল কর্মকান্ডের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করানোয় সাহায্য করা । যুদ্ধাপরাধী দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসীর পর চাঁদে তাকে দেখতে পাওয়ার মতো অবাস্তব পরিস্থিতি তৈরী করার বাস্তবিক শর্ত কি আমরাই তৈরী করিনি জামাত-শিবিরের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নিপীড়িত এই শ্রেণীটির অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক , সাংস্কৃতিক জীবনের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে রাষ্ট্র , সরকার ইত্যাদির অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে ? আমাদের এই উদাসীনতাই কি যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসীর দাবিটিকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সর্ববৃহৎ প্রতিবন্ধকতা নয় ? গত ৪২ বছর ধরে তিলে তিলে তৈরী করা তথাকথিত প্রগতিশীল মধ্যবিত্ত বনাম পশ্চাৎপদ দরিদ্রের কৃত্রিম বিভাজনকে বজায় রাখাটাই কি নূন্যতম একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তৈরী করা থেকে শুরু করে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসীর বিষয়গুলোকে ক্রমশ জটিল থেকে জটিলতর করছেনা ? সমাজে যেই বৈষম্যগুলো সম্পূর্ণভাবে বিরাজমান থাকলে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসীর বিষয়ের মতো সর্বজনীন একটি বিষয়তেও দ্বিধাবিভক্তি দেখা দেয় তার বাস্তবিক পরিস্থিতি রাষ্ট্রপক্ষের সাথে সাথে আমরাও কেন তৈরী করবো ? এই বিভক্তিতে রাষ্ট্রপক্ষের ক্ষমতা কুক্ষীগত করে রাখবার রাজনৈতিকবোধ জড়িত কিন্তু আমরা কোন রাজনৈতিক চেতনার দ্বারা তাড়িত হয়ে এই বিভক্তিকে এক অসম্ভব বিপদসংকূল অবস্থায় টেনে নিয়ে যাচ্ছি ? রামপাল , টিকফার মতো চুক্তির বিরুদ্ধে যেই জনপদের মানুষ একত্রিত হয়ে রাষ্ট্রপক্ষ , সরকারের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান নিতে সক্ষম নয় সেই জনপদের মানুষ কিভাবে প্রত্যাশ করতে পারে তারা একত্রিত হয়ে এই দেশের মাটিতে প্রতিটি যুদ্ধপরাধীর ফাঁসীর কার্যকর নিশ্চিত করবে ? প্রশ্নগুলো অনেকগুলো বিষয়ের মীমাংসার জন্যেই জরুরী । যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসীর দাবীর সাথে সাথে সমাজের নিপীড়িত শ্রেণীর মানুষের অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক , সাংস্কৃতিক বিষয়ে সাথে সম্পর্কিত দাবীগুলো যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসীর দাবীকেই কেবল অপেক্ষাকৃত অনেক বেশী শক্তিশালী করতে সক্ষম । তথাকথিত প্রগতিশীল , সুবিধাভোগী মধ্যবিত্ত বনাম নিপীড়িত , পশ্চাৎপদ শ্রমজীবী মানুষের এই ক্রমবর্ধমান এবং ভয়ঙ্কর দ্বন্দ্ব নিরসনে , বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিকে নূন্যতম একটি গণতান্ত্রিক অবয়ব দিতে , সমাজে বিদ্যমান তীব্র শ্রেণী বৈষম্যকে উপজীব্য করে ফরহাদ মজহারদের মতো প্রতিক্রিয়াশীল বুদ্ধিজীবীদের ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীলতার গান যেন কোরাসে পরিণত হয়ে গোটা রাষ্ট্রকে আদ্যপান্ত একটি মধ্যযুগীয় সময়ে ফিরিয়ে না নিতে পারে এর প্রতিটি ইস্যুর মীমাংসাই একটি বিষয়ের উপর অনেকাংশে নির্ভর করছে । সেটা হলো সমাজের অভ্যন্তরে তীব্রভাবে বিরাজমান থাকা এই শ্রেণী বৈষম্যের নিরসনের পথে পদক্ষেপ নেওয়া ।

আমরা সমাজের যেই সুবিধাভোগী অংশটি যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসীর দাবীকে প্রাণের দাবী বলে মনে করি তাদের প্রত্যেকেরই এই সামাজিক বিভাজনের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে দ্বিতীয় কোন অপশন নেই । বিগত প্রায় এক বছরে স্পষ্টভাবেই প্রতীয়মান এই বিভাজনের চিত্র এড়িয়ে গিয়ে , তাকে জোরপূর্বক অস্বীকার করে আমরা এক পা এগোতে গেলে পাঁচ পা পিছিয়ে যাবো । গত ৪২ বছরের প্রতিদিনই আমরা এভাবে পাঁচ পা করে পিছিয়েছি । ইতোমধ্যেই সারা দেশে নানাবিধ রাজনৈতিক ঘটনা ঘটেছে । দেশের মাটিতে একজন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসী কার্যকর করা হয়েছে ।

এর ফলে আমাদের আজন্ম শত্রু পাকিস্তান রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সেই ফাঁসীর রায়ের বিরুদ্ধে নানাবিধ প্রতিক্রিয়াশীল বক্তব্য দেওয়া হয়েছে এবং অপতৎপরতার প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে । দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিও নানাবিধ কারণেই টালমাটাল । নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলমান রাজনৈতিক সংকট , ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী দলের ক্ষমতা কুক্ষীগত রাখবার লড়াইয়ে প্রতিদিন সাধারণ জনগণের উপর পীড়ন এবং অতঃপর তাদের অনেকের বীভৎস মৃত্যু , সামনের সময়ে সামরিক শাসনের ছত্রছায়ায় সাধারণ জনগণ থেকে আজন্ম বিচ্ছিন্ন তথাকথিত টেকনোক্রেটদের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো কয়েক ধাপে অবনমনের সম্ভাবনা সবকিছুই রুদ্ধশ্বাস এক অবস্থার বাতাবরণ সৃষ্টি করেছে । এর সাথে যুক্ত আছে অবশিষ্ট যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসীর বিষয়টি যার মীমাংসা দেশের ভবিষ্যত রাজনীতির গতিপথ এবং সাধারণ জনগণের আবেগের দাবী উভয়ের জন্যেই আবশ্যক । তার যথাযথ সমাধানের জন্যেই সমাজে ক্রমশ তীব্রতর হতে থাকা বৈষম্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াটা অবশ্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

এই কথা যেমন সত্য যে শুধুমাত্র যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসীর দাবী পূরণ হলেই বাংলাদেশ ক্ষীরে – মাখনে , দধিতে পূর্ণ হয়ে যাবেনা তার বিপরীতে এই কথাও সত্য যে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসীর বিষয়টি মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কোন ইতিবাচক গুণগত পরিবর্তন আমরা প্রত্যশা করতে পারিনা । যারা যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসীর বিষয়টির মধ্যেই নিজেদের রাজনৈতিক চেতনা , কর্মকান্ড সীমাবদ্ধ রাখতে সচেষ্ট সেই পক্ষ এবং যারা নিজেদের ধর্মীয় প্রতিক্রিয়াশীল চরিত্রের কারণে এবং আওয়ামী লীগ সরকারের উপর বিরুপ হয়ে খোদ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসীর বিষয়টি সম্পর্কেই উদাসীন অথবা নিষ্ক্রিয় অবস্থান গ্রহণ করবেন তাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্থান থেকে সমাজে প্রচন্ডভাবে বিরাজমান বৈষম্যসমূহকে জিইয়ে রেখে নিজেদের প্রতিক্রিয়াশীলতাকেই জয়যুক্ত করে সাধারণ জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠদের মুক্তিকামী সংগ্রামকে প্রতিহত করবেন । যেমনটা আমরা নানা আঙ্গিকে গত ৪২ বছর যাবত দেখে যাচ্ছি । তথাকথিত প্রগতিশীল মধ্যবিত্ত বনাম পশ্চাৎপদ নিপীড়িত শ্রেণীর ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্বের মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি বিশ্বের মানচিত্রে স্রেফ ভাঁগাড় হয়েই অস্তিত্বশীল থাকবে ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.