সূর্যের আলো তখনো ফোটেনি। রাজপথ প্রায় জনশূন্য। দু-একটি যানবাহন মুহূর্তেই কুয়াশায় মিলিয়ে যাচ্ছে। কুয়াশাচ্ছন্ন রমনার লেকের এপার থেকে ওপার দেখা যায় না সহজে। এমন পরিবেশে গতকাল শুক্রবার সকালে রমনার বটমূলে ছিল পৌষ উৎসবের আয়োজন।
শীতের জড়তা কাটিয়ে যাঁরা সাতসকালে হাজির হয়েছিলেন, রমনার বটমূলের আনন্দের উষ্ণতায় সময় কাটিয়েছেন তাঁরা। তিন দিনব্যাপী পৌষমেলা শুরু হয়েছে এখানে।
রমনার বটমূলে এর আয়োজক পৌষমেলা উদ্যাপন পরিষদ। এবারের মেলার মূল প্রতিপাদ্য, ‘শহীদের রক্তকণিকা থেকে জন্ম নেবে পৌষের শিশির বিন্দু’। রাজনৈতিক অস্থিরতা, হরতাল, অবরোধ আর নাগরিক জীবনের শত ব্যস্ততা ছাপিয়ে যেন ক্ষণিকের প্রশান্তির ছোঁয়া নিয়ে গতকাল নাচ, গান, কবিতা আর যাত্রার মাধ্যমে নিজস্ব সংস্কৃতির কাছে ফিরতে রাজধানীবাসী নিয়েছে গুড়-পায়েশ আর মুড়ি-মুড়কির স্বাদ।
মেলার উদ্বোধন করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ। পৌষমেলা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিতে এতে বক্তব্য দেন জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের মহাসচিব ঝুনা চৌধুরী প্রমুখ। মেলার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায়। অতিথিরা গ্রামীণ বাংলার ঐতিহ্যবাহী আইলা জ্বালিয়ে মেলার উদ্বোধন করেন। এ সময় বাকিশল্পী রফিকুল ইসলাম পাঠ করেন কবিতা ‘প্রাপ্তি’।
উদ্বোধনী বক্তব্যে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘মরা কার্তিক অতিক্রম করে অগ্রহায়ণের আলো চোখে নিয়ে পৌষ যখন উপস্থিত হয়, তখন কৃষকের ঘরে থাকে ফসলের বন্যা। আর তাই পৌষ আসে আনন্দের বার্তা নিয়ে। যদিও নগরজীবনে হিম জড়ানো সেই পৌষের ছোঁয়া আমরা পাই না। তার পরেও আমাদের সংস্কৃতিকর্মীরা যে পৌষমেলার আয়োজন করেছে সেখানে নগরবাসী চিরায়ত বাংলার একটুখানি স্বাদ পাবেন। সেটুকুই বা কম কিসে।
’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাবুল বিশ্বাস, মানজার চৌধুরী প্রমুখ।
বটমূলে লোকজ নকশায় অঙ্কিত চমৎকার মঞ্চ। সামনে শামিয়ানা টানিয়ে শ্রোতাদের বসার ব্যবস্থা। মঞ্চের বাঁ পাশে স্টলের সারি। সেখানে হরেক রকমের পিঠাপুলি, পায়েস, মিষ্টি খেজুরের রস আর গরম চায়ের ব্যবস্থা।
নানা রকমের কারুপণ্যের সমাবেশও। সকালে পার্কে ঘুরতে এসে অনেকেই এসব দোকানের ভাপা-চিতইসহ বিচিত্র রকমের পিঠা দিয়ে প্রাতরাশ করেছেন।
গতকাল মেলার প্রথম দিনে গান করে সংগীত সম্মিলন পরিষদ, বহ্নিশিখা ও সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা। দলীয় আবৃত্তি করে ‘প্রকাশ’ আবৃত্তি সংগঠন।
এ সময় গানের সুরে, নৃত্যের তালে ও কথার ছন্দে জমে ওঠে মেলার প্রাঙ্গণ।
মেলা আজ শনিবার সকাল সাতটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত ও আগামীকাল বেলা তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত চলবে।
দাদুকে স্মরণে আলোকচিত্র প্রদর্শনী
তাঁর প্রকৃত নাম মমিন আলী মৃধা। সবাই ডাকত দাদু বলে। বিগত পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশের চিত্রকলার ক্যানভাস, ভাস্কর্য আর আলোকচিত্রে দাদু যেভাবে আছেন, আর কোনো ব্যক্তির উপস্থিতি সেভাবে নেই।
তাই শিল্পকলায় পাশাপাশি আমাদের মনে, মননে ও ভালোবাসায় তিনি দীর্ঘদিন থাকবেন। প্রান্তিক মানুষ হয়েও তিনি ছিলেন চারুকলার রোল মডেল। তাঁর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘তুমি রবে নীরবে’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে আলোচকেরা এসব কথা বলেন।
আলোকচিত্রী সাহাদাত পারভেজের ছবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফিক সোসাইটি (ডিইউপিএস) আয়োজন করে দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীর। শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন চারুকলা অনুষদের ডিন আবুল বারক আলভী।
দাদুকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন চলচ্চিত্রনির্মাতা খালিদ মাহমুদ, কবি টোকন ঠাকুর ও ডিইউপিএসের সভাপতি মহসীন কবির। আজ সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
২০১১ সালের ২০ ডিসেম্বর মমিন আলী মৃধা মৃত্যুবরণ করেন।
ছায়ানটে আয়োজিত শুদ্ধসংগীত উত্সবে গাইছেন শিল্পীরা ছবি: প্রথম আলোশেষ হলো ছায়ানটের শুদ্ধসংগীত উৎসব
গতকাল শেষ হলো ছায়ানট আয়োজিত দুই দিনের শুদ্ধ সংগীত উৎসব। সকালে বসে দ্বিতীয় দিনের অধিবেশন।
এর শুরুতেই ছিল ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তনের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা। বিদ্যায়তনের শিক্ষক রেজোয়ান আলীর পরিচালনায় তাঁরা পরি-বেশন করেন রাগ গুর্জরি টোড়ি। শিল্পী বিজনচন্দ্র মিস্ত্রীর কণ্ঠে পরিবেশিত হয় রাগ বিলাসখানি টোড়ি। বেহালায় রাগ নট ভৈরব পরিবেশন করেন শিল্পী শিউলী ভট্টাচার্যী। সতীন্দ্রনাথ হালদারের কণ্ঠে পরিবেশিত হয় রাগ মঙ্গল ভৈরব।
দ্বিতীয় অধিবেশনের শেষ পরিবেশনা ছিল শিল্পী অলোক সেনের। তিনি পরিবেশন করেন রাগ মিয়া কি টোড়ি।
সুত্র প্রথম আলো
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।