তোমার ভয় নেই মা, আমরা প্রতিবাদ করতে জানি
আপিল নিস্পত্তির মাধ্যমে সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড কার্যকরের পর যুদ্ধপরাধ মামলায় আরও ৯ জনের সাজা ঝুলছে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাজা ঘোষণার পর রায়ের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে আপিল করেছেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, সাবেক আমির গোলাম আযম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এমপি ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীম।
এছাড়া সাজাপ্রাপ্ত অপর তিনজন শুরু থেকেই পলাতক। পলাতক তিন সাজাপ্রাপ্ত হলেন জামায়াতের সাবেক সদস্য আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার, সাবেক জামায়াত নেতা চৌধুরী মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খান। এই তিন ব্যক্তি আত্মসমর্পণ করে আপিলের সুযোগ পাবেন।
নিষ্পত্তির পথে সাঈদীর আপিল : আপিল নিষ্পত্তির পথে এগিয়ে আছে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলা। এ আপিলের শুনানি শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। খালাস চেয়ে রায়ের বিরুদ্ধে ২৮ মার্চ মাওলানা সাঈদী এবং সব অভিযোগে সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড চেয়ে সরকারপক্ষ পৃথকভাবে আপিল (আপিল নম্বর ৩৯ ও ৪০) করে। ৩ এপ্রিল আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিলের আবেদনের সারসংক্ষেপ জমা দেয় সরকারপক্ষ।
সাঈদীর পক্ষে ১৬ এপ্রিল সারসংক্ষেপ জমা দেয়া হয়। প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতির বেঞ্চে চলছে বিচার কাজ। বেঞ্চের অপর বিচারপতিরা হলেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
কামারুজ্জামানের আপিল : দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পরই রয়েছে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের আপিল। খালাস চেয়ে তিনি আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষও সারসংক্ষেপ জমা দিয়েছে। প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতির বেঞ্চে শুনানির প্রস্তুতি চলছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ৯ মে কামারুজ্জামানের মৃতু্যুদন্ড ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫টিই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এ রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ের বিরুদ্ধে ৬ জুন আপিল করেন কামারুজ্জামান।
রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেনি।
খালাস চেয়েছেন গোলাম আযম : ৯০ বছরের কারাদন্ডের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আপিল করেছেন জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম। তার সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষও আপিল করেছে। এরই মধ্যে আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। গোলাম আযমকে ১ ডিসেম্বরের মধ্যে সারসংক্ষেপ জমা দেয়ার সময় বেঁধে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ১৫ জুলাই গোলাম আযমের ৯০ বছর কারাদণ্ড ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। রায়ে বলা হয়েছে, অপরাধ মৃত্যুদণ্ডযোগ্য হলেও বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
মুজাহিদের আপিল : ১৭ জুলাই জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২। মুজাহিদের বিরুদ্ধে আনা সাতটি অভিযোগের পাঁচটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। রায়ে প্রমাণিত পাঁচ অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এবং প্রমাণিত না হওয়া দুই অভিযোগ থেকে মুজাহিদকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
রায়ের বিরুদ্ধে ১১ আগস্ট আপিল করেন তিনি।
সাকা চৌধুরীর আপিল : মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা চৌধুরী) খালাস চেয়ে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করেন ২৯ আগস্ট। এ বিষয়ে এখনও শুনানি শুরু হয়নি। সাকা চৌধুরীর মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করে ১ অক্টোবর রায় দেন বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। তার বিরুদ্ধে আনা ২৩টি অভিযোগের মধ্যে প্রমাণিত ৯টিতে মৃত্যুদণ্ড ছাড়াও ৭০ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়।
বাকি ১৪টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
আলীমের আমৃত্যু কারাবাস : একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের আমৃত্যু কারাবাস ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ৯ অক্টোবর বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ এ রায় ঘোষণা করেন।
আলীমের বিরুদ্ধে আনা ১৭টি অভিযোগের মধ্যে পশ্চিম আমাত্রা গ্রামে গণহত্যা, ২৬ মুক্তিযোদ্ধা হত্যা, ফজলুল করিমসহ ৩ মুক্তিযোদ্ধা হত্যা, আওয়ামী লীগ নেতা ডা. আবুল কাশেম হত্যাকান্ডসহ ৯টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এসব অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডযোগ্য হলেও আবদুল আলীমের বয়স, বার্ধক্য ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হয়নি।
সার্বিক বিবেচনায় ট্রাইব্যুনাল চারটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাবাস, অপর পাঁচটিতে ৯০ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন তিনি। তবে, শুনানি শুরু হয়নি।
এছাড়া মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায় ঘোষণা হয় ২১ জানুয়ারি। ওই রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ দেন আন্তÍর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
মামলার শুরু থেকেই বাচ্চু রাজাকার পলাতক।
একইভাবে পলাতক রয়েছেন সাজাপ্রাপ্ত আসামি আলবদর নেতা চৌধুরী মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খান। ৩ নভেম্বর এক রায়ে তাদের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল। তারা দুজনই প্রবাসী বাংলাদেশী হিসেবে লন্ডনে বসবাস করছেন। এদিকে, জামায়াত নেতা আবদুস সোবহান, একেএম ইউসুফ, এটিএম আজহার, মীর কাসেম আলী, সৈয়দ মোঃ কায়সার, মোবারক হোসেন ও জাহিদ হোসেন খোকনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।