আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিশিরের রাজনীতি কেন্দ্রিক কিছু কার্টুন: সময়কাল ১৯৯৮ থেকে ২০০০

শরীরে আচড়ের দাগ, নষ্ট হল বুঝি আবার মানবতা! বাংলাদেশের কার্টুন ও ক্যারিকেচার চিত্রশিল্পের জগতে সবচেয়ে উজ্জ্বল নাম শিশির ভট্টাচার্য। এ কথা অনস্বীকার্য শিশিরের কার্টুনই বাংলাদেশের লাখো তরুণকে কার্টুন বিষয়টি নিয়ে আরো গভীর ভাবে ভাবতে কিংবা উপলব্ধি করতে শিখিয়েছে। আজকে বাংলাদেশে কার্টুন চর্চার পথিকৃৎ হিসেবে যাদের নাম করা যায় শিশির তাদের মধ্যে উজ্জ্বলতম। শিশিরের কার্টুন বিষয়ে জ্ঞান গর্ভ আলোচনা এই পোস্টের উদ্দেশ্য নয়। তথাপি শিশিরে কার্টুন নিয়ে সামান্য বলা দরকার মনে করছি।

শিশিরের কার্টুন বছরের পর বছর ধরে আমাদের আমোদ ও হাস্যরসের খোরাক হয়ে আসছে, যেগুলো কিনা যাদের নিয়ে আকা হচ্ছে তাদের জন্য খুবই বিব্রতকর। অবশ্য এর বেশিরভাগেরই লক্ষ্য প্রধানত রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীগন যাদের আবার হিংস্র হয়ে উঠার নজির প্রায়শই আমরা দেখি। কিন্তু শিশিরের এই এক আশ্চর্য গুন নেতানেত্রীগন তার কার্টুন দেখে বিব্রত হলেও সম্ভবত তারাও আমাদেরই মত আমোদ পান তাই মারমুখী হবার আর সুযোগ পান না। তার কার্টুনের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আর্থ সামাজিক, ধর্মীয় ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিষয়ে পরিমিতি ও সজাগ ধারণার বহি:প্রকাশ। আমাদের এখানে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা মাঝে মাঝেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।

ব্যঙ্গ বিদ্রুপের এক নম্বর মাধ্যমএই ক্যারিকেচার মূলক শিশিরের কার্টুন কখনোই সেরকমটির উৎস হিসেবে কাজ করে নি। এই বিষয়টির সাথে সাথে আরো যেটা লক্ষ্যনীয় তা হল তাঁর কার্টুনে মানুষ কমেডির উপকরণ এবং এই কমেডি প্রাত্যহিক জীবনের রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন। রাজনৈতিক দর্শন অপেক্ষা তিনি রাজনৈতিক বাস্তবতা তুলে ধরতেই আগ্রহী ছিলেন বেশি, যে বাস্তবতা প্রতিদিনের, বৈশ্বিক কিংবা দেশজ। শিশিরের জনপ্রিয়তার মূল রহস্য বোধ হয় এখানেই। তুমুল জনপ্রিয় করে রেখেছে আপামর জনসাধারণের কাছে।

শিশিরবাবুর প্রতিযোগিতা এদেশে সম্ভবত নিজের সাথেই। ক্রমাগত নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। বাংলাদেশের কার্টুনকে বিশ্বমানে উপস্থাপনের জন্যে উনার কাছে বাংলাদেশের কার্টুনিস্টরা ঋণী। শিশির কেন জনপ্রিয়, কেন তার কার্টুন তথা ক্যারিকেচার সর্বজনের কাছে গ্রহন যোগ্য সে বিষয়টি জানতে ফিরে যাই তার কার্টুন দর্শনের কাছে, “ন্যায় অন্যায় বিচারের শক্তিটাই একজন কার্টুনিষ্টকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। রাজনীতিতে সরকার ও বিরোধীদল থাকে, একজন কার্টুনিষ্ট তিনি কখনোই কোন পক্ষের হয়ে কাজ করেন না- কোন দলের প্রতি তার ব্যক্তিগত পছন্দ, অপছন্দ, দূর্বলতা বা ঘৃণা কখনোই প্রকট হয়ে প্রকাশিত হয়ে যাওয়া মনে করি একজন কার্টুনিষ্ট এর দূর্বল দিক।

...নিরপেক্ষতা ব্যাপারটি অত্যন্ত জটিল ও স্পর্শকাতর। একটা শক্তিশালী এবং নির্ভেজাল সত্য অবস্থান কার্টুনিষ্টের অবশ্যই প্রয়োজন যেখানে দাড়িয়ে সে সব কিছুর সমালোচনা করবে। এখনো পর্যন্ত আমার মতে সেই অবস্থানটা হচ্ছে দেশ, দেশের মানুষ, তার অবস্থান, গর্ব করার ইতিহাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, সর্বোপরি দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন এবং মানবতাবোধ”। যাই হোক আমার আজকের পোস্টের উৎস শিশিরের কিছু কার্টুন। এ পোস্ট তৈরিতে মূলত রাজনৈতিক ইস্যুতে আকা কার্টুনগুলো নেয়া হয়েছে।

কার্টুন গুলো মূলত ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে আকা এবং এগুলো দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত। একুশে পাবলিকেন্স এগুলো গ্রন্থাকারে প্রকাশ করে। প্রথম কার্টুনটি বিরোধী দলহীন নিরুত্তাপ সংসদ নিয়ে। আওয়ামী ও বিএনপি দুই দলই বিরোধী দলে গেলে এখনো এ চিত্রের জন্ম দিচ্ছে আগেও দিত। দুই নেত্রীর আপোষহীনতা।

আমরা কি কোন দিকে যাবো এখনো ঠিক করতে পেরেছি ? হরতালে অফিস কর্মকতাদের অলস সময়ক্ষেপন। দাতা গোষ্ঠী অলওয়েজ বাংলাদেশ সরকারের উপর মহল হিসেবেই কাজ করেছে। আগেও এখনো। আমাদের সরকার গুলো ইদানীং তাও একটু আধটু ওদের না করা শিখেছে তবে তা খারাপের দিকে। অনেকটা খোলা জানলা পেলেই আগে বখাটেপনা শুরু হয় যেমন, সেরকম সরকারি চ্যানেল নিয়ে এক পশলা রঙ্গ।

এটা বোধহয় কোন এক সংসদীয় আসন খালি হবার পরে নির্বাচন প্রসঙ্গে করা। এটা একটা কার্টুন বটে। আমাদের রাজনীতির সবচেয়ে আনস্টেবল ক্যারেকটারের দু নম্বর হলেন লেজেহুমো এরশাদ। তার পার্টি বার বার ভাঙা নিয়েই এই কার্টুন। এরশাদের দলের ভাঙন নিয়ে আরেকটা।

রাজনৈতিক দলগুলোর রোডমার্চকে ব্যাঙ্গ করে। আওয়ামী লীগের সুবর্ণজয়ন্তী ছিল তখন। রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি সংস্কৃতির কার্টুনায়ন। প্রয়াত দুই বাজেট বিশেষজ্ঞ। এদের বাজেট নিয়ে বিতর্ক থেকেই এ কার্টুন।

আশা করছি কার্টুনগুলো আপনাদের পুরোনো দিনে ফিরিয়ে নিয়ে গেল। সবাইকে শুভেচ্ছা। বেশ কিছুদিন ব্লগে পোস্ট দিতে পারিনি। খুব মিস করেছি এ সময়টাতে ব্লগ। আশা করছি সকলে ভাল আছেন।

সকলকে জানাই নতুন বছরের শুভেচ্ছা। অনেক ভাল কাটুক দিন গুলি। তথ্যসূত্র: একুশে পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত 'শিশিরের কার্টুন' ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।