ব্লগ লিখার মত অনেক টপিকস মাথায় আসে, কিন্তু লিখতে ইচ্ছা করে না... তবে কমেন্ট করতে ভাল লাগে... সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিবেশী দেশে সংগঠিত একটি জঘন্য নারী নির্যাতনের প্রেক্ষাপটে মিডিয়ার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নিন্দার ঝড় ওঠে। সোচ্চার হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষ। একি সাথে উঠে আসে আমাদের দেশেও ঘটে যাওয়া এরকমই একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। ফলে সোচ্চার প্রতিবাদী মানুষ গুলোর ঘৃণা পরিণত হয় তীব্র ক্ষোভে। আলোচনায় উঠে আসে সামাজিক অবক্ষয়ের কথা।
আলোচনায় উঠে আসে সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এরকম ঘটনা প্রতিরোধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ঐক্যবদ্ধ প্রচারনার পরিবর্তে বিভাজনের সৃষ্টি হয়েছে।
এক্ষেত্রে রক্ষনশীল লেখকরা উল্লেখ করেন নারীদের পর্দাপ্রথার প্রতি অনিহার কথা, যাকে তারা সাম্প্রতিক সময়ের এই অনাকাঙ্খিত ঘটনার বেড়ে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবেও দেখাতে চেয়েছেন। হতাশার বিষয় তাদের লেখায় সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে পুরুষের ভুমিকার যথার্থ প্রতিফলন দেখা যায় নি।
প্রথাগতভাবেই তথাকথিত স্বাধীনচেতা নারী ও নারী নামধারী লেখকরা রক্ষনশীলদের কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন।
তারা তীব্র ভাষায় এই অবক্ষয়ের জন্য পুরুষদেরই দায়ী করেছেন। তাদের মতে সমস্ত দোষ শুধুমাত্র পুরুষরাই করেছে।
বিখ্যাত হওয়ার দুটি সহজ উপায় আছে- নিজ ধর্ম ও নিজ লিঙ্গের বিরোধিতা করা বা আরও স্পষ্টভাবে বলতে অন্য ধর্ম ও অন্য লিঙ্গের পক্ষাবলম্বনে কথা বলা। আর সহজ পথই বেছে নিয়ে নারীবাদিরা নারী ও নারী নামধারীদের সাথে সুর মিলিয়ে পুরুষদের গোষ্ঠী উদ্ধারে নেমেছে।
এসব ধারার কর্মকাণ্ডের সাথে সাধারণ মানুষের খুব একটা সম্পৃক্ততা নেই।
সাধারণ মানুষ মানবতাবাদি মনোভাব ধারন করে থাকেন। যেকোন অন্যায় কাজের প্রতিবাদ জানান ও অন্যায়ের বিচার দাবি করেন। নিজেকে সাধারণ মানুষের একজন মনে করি বলেই উপরে উল্লেখিত পক্ষপাতদুষ্ট ভাবধারার বিপরীতে সাধারণ মানুষের কথা গুলো বলাই এই লেখার উদ্দেশ্য।
সামাজিক অবক্ষয়ের স্বরূপঃ
১। রাস্তা দিয়ে যাওয়া মেয়েদের উদ্দেশ্য করে কতিপয় ছেলের* আইটেম সং চর্চা।
২। সামনে থাকা ছেলেদের উদ্দেশ্যে পিছনে থাকা কতিপয় মেয়েদের* অনর্থক হাসাহাসি।
*এই ছেলে-মেয়েরা একই বোধের ধারক, ক্ষেত্র বিশেষে এদের মাঝে বন্ধুত্ব লক্ষ্য করা যায়। এরা পরস্পরের কাছ থেকে এই রকম আচরণ আশা করে থাকে ও উপভোগ করে থাকে।
৩।
আগেরকার দিনের বাই সাইকেল ইদানিং মোটর বাইক দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। প্রয়োজনীয় এই যানটি কারো কারো কাছে স্মার্টনেসের প্রধান বাহক। মেয়েদের স্কুল-কলেজ ও বাসা-বাড়ির আসে পাশে এদের বেপরয়া আনাগোনা গুটি কয়েক মেয়ে বাদে সকলের কাছেই আতঙ্কের ব্যাপার। এলাকার অলি-গলিতে উচ্চ শব্দে কুরুচিপূর্ণ গান বাজনা।
৪।
শারীরিক সুস্থতায় ব্যায়াম ইদানিং সিক্স প্যাক চর্চা ও ললনাদের মুগ্ধতা অর্জনে তা প্রদর্শনের ভিড়ে হারিয়ে গেছে। মেয়েদের মাঝে জিরো ফিগার দিয়ে তথাকথিত হিরোদের দৃষ্টি আকর্ষণের ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
৫। ফ্যাশন চর্চায় ছেলে-মেয়েরা একে অপরের অবস্থান দখল করে নিয়েছে। সাধারণ মেয়েদের সাধারণ পোশাকগুলোয় আধুনিকতার ছোঁয়া আনতে করা হয়েছে আরো বেশি আঁটসাঁট ও স্বচ্ছ।
তার সাথে ল্যাগিংস, শর্ট ফতুয়া-টিশার্টের সাথে নাম সর্বস্ব ওড়না, লং ফতুয়ার সাথে ওড়না হীনতা আধুনিক মেয়েদের শালীনতা জ্ঞানের লোপ সম্পর্কে ভাবিয়ে তুলছে। ছেলেদের পোশাকে আঁটসাঁট জিন্স, ধুতি-স্টাইল পায়জামা ও মেয়েদের একসময়ের প্রিয় দুই ফিতার চটি ছেলেদের রুচি বোধ নিয়ে ভাবিত করে। এছাড়াও ছেলে-মেয়ে উভয়ের পোশাকেই প্রতিবেশি দেশের সিরিয়াল-স্টাইল হতাশাজনকভাবে লক্ষ্যনীয়।
৬। ছেলে-মেয়েদের আধুনিকতার নামে অসংলগ্ন কথাবার্তা, যাচ্ছেতাই চলাফেরা আমাদের দেশের প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের নামান্তর।
এছাড়া বহুপ্রণয় ও লিভিং টুগেদার ছাড়া যেন তথাকথিত আধুনিকতার সংজ্ঞা অসম্পূর্ণ। নিয়মিত মাদক ও ধূমপান ছেলে-মেয়ে উভয়ের কাছেই আধুনিকতার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
৭। নাস্তিকতা ও অসাম্প্রদায়িকতার নামে ধর্মহীনতা বা অন্য ধর্মের প্রতি অনুরাগ বর্তমান সুশীলিয়-আধুনিকতার পূর্বশর্ত।
৮।
চাকুরী ক্ষেত্রে মুনাফালোভী কর্পোরেট ভণ্ডদের দ্বারা মেয়েদেরকে ব্যবসায়িক স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে নগ্ন রূপে ব্যবহার ও ছেলেদেরকে কলুর বলদের ভূমিকায় ব্যবহার করা চাকুরী বাজারে অবক্ষয়ের প্রমাণ। তবে বিশ্বায়নের নামে নারীবাদিরা এই নোংরামীর বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করে থাকে।
সামাজিক অবক্ষয়ের কারনঃ
১। পারিবারিক মূল্যবোধহীনতা ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন।
২।
পারিবারিক মূল্যবোধহীনতা ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন।
৩। দায়িত্বজ্ঞানহীন অভিভাবকত্ব ও সমাজপতিদের প্রশ্রয়।
৪। সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও শালীনতাবোধের অভাব।
৫। সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও শালীনতাবোধের অভাব।
৬। সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও শালীনতাবোধের অভাব।
৭।
ধর্মীয় জ্ঞানহীনতা ও পারিবারিক মূল্যবোধহীনতা।
৮। বেকারত্ব ও নৈতিক জ্ঞান লোপ।
সামাজিক অবক্ষয়ের ফলাফলঃ উগ্রতা, উত্তক্তকরণ, অশালীনতা, যৌন নির্যাতন ইত্যাদি।
অবক্ষয় রোধে করণীয়ঃ
১।
পারিবারই সন্তানদের শিক্ষার প্রাথমিক উৎস। সন্তানদের পারিবারিক মূল্যবোধ শিক্ষা দেয়ার ব্যাপারটি খুবই গুরুত্বের সাথে সম্পন্ন করতে হবে। নতুবা ঐসকল ইতর ছেলে-মেয়েদের কুকর্মের দায় অভিভাবকরা এড়াতে পারে না। সন্তানকে সমাজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ আচার-ব্যবহার, পোশাক-পরিচ্ছেদ শিখাতে হবে। তবে পূর্বশর্ত রূপে অভিভাবকদেরও সঠিক মূল্যবোধের ধারক হতে হবে।
পরিবারে সঠিক ধর্ম চর্চা থাকতে হবে।
২। সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রোধের প্রাথমিক কাজটি পরিবারের দায়িত্বের মধ্যেই পরে। সন্তান কি ধরনের অনুষ্ঠান দেখবে, কখন দেখবে ও কতক্ষন দেখবে তা অভিভাবকের সচেতনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মোবাইল-কম্পিউটার ইত্যাদি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতনভাবে নিয়ন্রণ আরোপ করতে হবে।
পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে কম্পিউটার-মোবাইল ব্যবহারের অভিভাবকদের নিয়মিত মনিটর করতে হবে। এছাড়া বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে হবে। অভিভাবকদেরও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনমুক্ত হতে হবে। সকলকে দেশপ্রেমে উদ্ভুদ্ধ হতে হবে।
৩।
সমাজপতিদের প্রশ্রয় মূলতঃ রাজনৈতিক বিবেচনা প্রসূত ও এলাকায় প্রভাব বিস্তার সংক্রান্ত বিষয়ে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। এক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের সদিচ্ছা অতি আবশ্যক। এছাড়া পারিবারিক ও সা্মাজিকভাবে এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
৪। পারিবারে ও বিদ্যালয়ে ধর্মীয় বিষয়ের উপর আরো গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।
এলাকা ভিত্তিক ধর্মীয় উপাসনালয় গুলোকে রাজনৈতিক ও এলাকাভিত্তিক দূর্নীতিমুক্ত রেখে ধর্মীয় জ্ঞান চর্চা প্রচলন করতে হবে।
৫। বেকারত্ব দূরীকরণে রাষ্ট্রযন্ত্রের কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
সামাজিক অবক্ষয় আজ ব্যাধির মত ছড়িয়ে পরছে, এই ব্যাধি রোধে সকলের পারিবারিক ও সামাজিকভাবে সচেতনতা ও আন্তরিকতা কামনা করছি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।