বাংলাদেশের এই নির্বাচনকে নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতার জন্য নানা কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলেছে গত কয়েক মাস ধরে। কিন্তু প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতের মধ্যে স্পষ্টতই মতবিরোধ ছিল কিভাবে বাংলাদেশের এই সংকটের সুরাহা হতে পারে তা নিয়ে। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতমুখী অবস্থান এখন আর অজানা কিছু নয়।
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে মিত্র হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত কেন বাংলাদেশের নির্বাচন প্রশ্নে অভিন্ন অবস্থান নিতে পারলো না? তাদের বিদেশ নীতিতে বাংলাদেশের গুরুত্বটা আসলে কোথায়?বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে জানা যায় ভারত বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকেই পছন্দ করছে। প্রধান বিরোধীদল বিএনপিকে নিয়ে ভারতের প্রকাশ্য কোন আপত্তি দেখা না গেলেও বিএনপির রাজনৈতিক সহযোগী জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে ভারতের আপত্তি অনেকটাই প্রকাশ্য।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত দেব মুখার্জি বলেন, জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে ভারতের উদ্বেগ রয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশীদকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে ভারত যে চিন্তা-ভাবনা করছে সেটা আমেরিকা বুঝলে তাদের লাভ হবে। দেব মুখার্জি বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতায় অনেকে মারা গেছেন। যদি এ রকম চলতে থাকে তাহলে ভারতের উদ্বেগের কারণ আছে। কারণ ভারত বাংলাদেশের প্রতিবেশী।
তিনি বলেন, "বাংলাদেশে যদি মৌলবাদ এভাবে নিজেদের প্রকট করতে থাকে, যেটা জামায়াত বাংলাদেশে করার চেষ্টা করছে , সেটা ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ। "কিন্তু জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে আমেরিকার অবস্থান ভারতের মতো নয় বলে বিশ্লেষণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক এম. শহিদুজ্জমান। তিনি বলেন, আমেরিকা মনে করে জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বাইরে ঠেলে দেয়া ঠিক হবে না।
সংকটের সমাধানে একমত হতে না পারার জন্য সেটিও একটি কারণ বলে মনে করেন অধ্যাপক শহিদুজ্জমান। তিনি বলেন, ভারত এবং আমেরিকার কাছে বাংলাদেশের বাড়তি গুরুত্ব রয়েছে।
তিনি বলেন, "ভারত নিশ্চিত হতে চায় যে তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কোনভাবেই যেন বাংলাদেশ সহিংসতায় সহযোগিতা না করে। আওয়ামীলীগ সরকারের মাধ্যমে ভারত সে সুবিধা পেয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের সাথে আমেরিকা কার্যকর সহযোগিতা গড়ে তুলেছে। "
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্শিটনে ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলী রিয়াজ মনে করেন, নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ করা কিংবা না করার প্রশ্নে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য রয়েছে। ভারতে মনে করে আওয়ামী লীগ সরকার যদি আরও কয়েক বছর ক্ষমতায় থাকে - তাহলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা আরও দূর্বল হয়ে পড়বে।
"অন্যদিকে আমেরিকা চায় বাংলাদেশের সব রাজনিতক দলে বিশেষ করে বিএনপির অংশগ্রহণে নির্বাচন। সেটি না হলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা এবং অস্থিতিশীলতা চলতে থাকবে বলে আমেরিকা মনে করে। " বলেন অধ্যাপক রিয়াজ।
তিনি বলেন , "রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সহিংসতার জন্ম দেবে এবং সেটা বাংলাদেশের বাইরেও চলে যেতে পারে। তাছড়া এ ধরনের অস্থিতিশীলতা অর্থনীতির জন্যও ক্ষতিক্ষর।
সকলের অংশগ্রহনে নির্বাচন হলে সেটার স্থায়িত্ব দীর্ঘমেয়াদী হবে বলে মনে করে আমেরিকা। "
অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে আমেরিকা এবং ভারতের মধ্যে মতপার্থক্যের এক ধরনের সমাধান শেষ পর্যন্ত করতে হবে। তার মতে, আঞ্চলিক রাজনীতিকে মাথায় নিয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে আমেরিকার ভাবনা দীর্ঘমেয়াদী। কিন্তু বাংলাদেশ নিয়ে ভারত স্বল্পমেয়াদে চিন্তা করছে বলে অধ্যাপক আলী রিয়াজ ধারণা করেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।