নতুন বছরে নতুন বই নিয়ে যে শিশুটির স্কুলে যাওয়ার কথা এখন সে ঘরে বন্দী হয়ে আছে। তার চোখে-মুখে রাজ্যের বিষাদ। স্কুলে না যেতে পারার কষ্ট, নতুন ক্লাসে বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত না হতে পারার কষ্ট তাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। আর অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে সন্তানের শিক্ষা-জীবন নিয়ে। লাখ লাখ শিক্ষার্থী আর তার অভিভাবকদের এই কষ্ট ও উদ্বেগের কারণ হচ্ছে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা। হরতাল-অবরোধ অব্যাহত থাকায় ঘোর অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়েই শুরু হলো নতুন শিক্ষাবর্ষ।
টানা হরতাল-অবরোধের মধ্যেই যথাসময়ে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো পরীক্ষা শেষ করেছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল শেষে হরতাল-অবরোধের মধ্যেই সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বই পেঁৗছে দিয়েছে সরকার। কিন্তু সেই বই নিয়ে স্কুলে যাওয়ার উপায় নেই। কারণ আবারও হরতাল, আবারও অবরোধ। হরতাল-অবরোধের সমর্থনে গাড়িতে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ, গুপ্ত হামলা, গোলাগুলি আর ককটেল বিস্ফোরণে চারদিকে আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে সন্তানদের স্কুলে পাঠানো নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা।
এদিকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্কুলে ভোটকেন্দ্র হওয়ায় জামায়াত-বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুড়িয়ে দিয়েছে দেড় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পুড়ে গেছে স্কুলের প্রয়োজনীয় কাগজ, শিক্ষার্থীদের হাজিরা খাতা ও স্কুলে রাখা নতুন বছরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই। ফলে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুরু করতে পারছে না ভর্তি কার্যক্রম। পুড়ে ভস্ম হওয়া এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কবে থেকে ক্লাস শুরু করতে পারবে সেটি বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কেউ। বাংলা মাধ্যমের পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরাও পড়েছে বিপাকে। অবরোধের সঙ্গে হরতাল কর্মসূচি দেওয়ায় অনিশ্চয়তায় পড়েছে সাড়ে সাত হাজার এ লেভেল পরীক্ষার্থী। সেশন হারাতে বসেছে ইংরেজি মাধ্যমে অধ্যয়নরত এসব শিক্ষার্থী। হরতাল-অবরোধের কারণে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারেনি। আগে গ্রহণ করা সাময়িক পরীক্ষার ভিত্তিতে অনেক প্রতিষ্ঠান ফল প্রকাশ করেছে। শুধু মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরাও রয়েছে উদ্বেগের মধ্যে। গত বছর হরতাল অবরোধের কারণে উচ্চ শিক্ষায় যে বিপর্যয় নেমে এসেছে সেটি কাটিয়ে উঠতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। ৩৪টির মধ্যে ১৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিই সম্পন্ন করতে পারেনি। কবে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু হাজার হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে। হরতাল-অবরোধের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন শিক্ষা কার্যক্রমও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন দুই হাজার সাতটি প্রতিষ্ঠানের স্নাতক, স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। রাজনৈতিক অচলাবস্থায় গত নভেম্বর-ডিসেম্বর দুই মাস কোনো ক্লাস কিংবা পরীক্ষাই অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে শুরু হয়েছে সেশনজট। এ মুহূর্তে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষ হচ্ছে তিনটি। নতুন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হয়েছে একটি বর্ষ, আগের বছরে শুরু হওয়া বর্ষটি ফাইনাল পরীক্ষার পর্যায়ে পেঁৗছায়নি, তার আগের বছরের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিলেও ফল এখনো পায়নি। বিএ পরীক্ষা ডিসেম্বরে গ্রহণ করার কথা থাকলেও তা কবে গ্রহণ করা যাবে তা জানেন না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিএ পরীক্ষার সব রকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখা হয়েছে। কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে পরীক্ষার সূচি তৈরি করা যাচ্ছে না। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করতে পারছি না। কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নির্ধারণ করার চেষ্টা করছি। শত প্রতিকূল পরিবেশে নতুন বই সরবরাহ করেছি। তার মধ্যে জামায়াত-শিবির নির্বাচন প্রতিরোধের নামে পেট্রল ও গানপাউডার দিয়ে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা পুড়িয়ে দিয়েছে। তারা '৭১ সালে এমন করেছিল। এখন আবার সেই কার্যক্রম শুরু করেছে। এই শত্রুদের প্রতিহত করতে হবে। তারা সভ্যতার শত্রু। জাতি এদের ক্ষমা করবে না।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।