কোনো কিছুই সিরিয়াসলি নিতে পারিনা। ব্লগিং-টাও সিরিয়াসলি নেয়ার প্রয়োজন বোধ করিনা। বরং ক্রমাগত আকাশে উড্ডয়নরত ঠ্যাং-খানাকে মাটিতে রাখার কাজটা সিরিয়াসলি করা দরকার!
আমি সম্প্রতি আমার সামুর নিকটা দিয়ে ফেসবুকে একটা আইডি খুলেছি। এই আইডিটাকে কেউ যদি ফেক আইডি বলে আমার কোনো সমস্যা নাই। কারণ আমি নিজেও এটাকে ফেক আইডিই বলি।
তবে ইনফরমেশন কিন্তু কোনোটাই ভুল দেয়ানাই। আমি কই থাকি, কোথায় পড়ি, আমার জেন্ডার কি ইত্যাদি সব তথ্যই সেখানে দেয়া আছে। সামুতে যারা আমাকে আগে চিনতেন তাদের কাছে আমি মেয়ে হিসাবেই পরিচিত। কিন্তু আমাকে নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন কতিপয় সাধারন জনগন। তারা কেন জানি আমাকে ছেলে ভাবতে পছন্দ করছেন।
আমিও প্রথম কিছুদিন ব্যাপারটায় বেশ মজা পেয়েছিলাম। তাই আর তাদের কাছে ব্যাপারটা খোলাসা করিনি। কিন্তু সম্প্রতি কয়েকটা ঘটনা ঘটার কারণে গতকাল ঘটা করে স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়ে দিলাম যে আমি ছেলে নই, আমি মেয়ে। যা হোক-কয়েকটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলেই ফেলি
ঘটনা ১
ধরে নাই ছেলেটার নাম আক্কাছ
আক্কাছ- মামু খবর কি?
আমি-(মামু ডাক শুনে ইতিমধ্যে তব্দা খাইছি) জ্বি ভালো। আপনার খবর কি?
আক্কাছ- হ ভালা।
কই থাকো মামা?
আমি-বাসায় থাকি।
আক্কাছ- হ বুজছি। বাসা কই?
আমি আর মামু ডাক হজম করতে না পেরে অফলাইনে চলে আসি। এর ভিতর ঐ আক্কাইছ্যা আমাকে দুই একজায়গায় ওপেনলি মামুও ডেকেছে। দুইদিন পর সে আবার নক দিয়ে জানতে চাইল আমি কি ছেলে নাকি মেয়ে।
আমি বললাম- প্রোফাইল দেখেন।
আক্কাইছ্যা প্রোফাইল দেখে বলল- শালা ফাইজলামী মারোস? পোলা হইয়া আবার প্রোফাইলে ফিমেল দিয়া রাখছোত?*****( ঐখানে কিছু গালি)
গালি খেয়ে আমার কেন যেন রাগ লাগল না। বরং হাসি আসল।
ঘটনা ২
এক মেয়ে প্রায়ই নক দেয়। গল্প করে।
আমিও গল্প করি। আমি আসলে তখনও বুঝিনি যে সে আমাকে ছেলে ভেবেছে। মেয়েটা বেশ আন্তরিক। গল্প করতে ভালো লাগে। প্রতিদিনই সে এসেই শুরুতেই অভিযোগ করে যে আমি নাকি কখনই তার খোজ নেই না।
আসলে আমি ভেবে পাইনা আমি কিভাবে তার খোজ নিব! প্রতিদিনই চ্যাট হচ্ছে। তাহলে আমি কিভাবে তার খোজ নেব? আসল পেট ব্যাথা বোঝা গেল কিছুদিন পর। মেয়ে আমাকে এখন আর অভিযোগ করে না, কিছুটা আক্রমনাত্মক ভঙ্গীতে কথা বলে। কথার ধরনে বুঝলাম- অবলা নারী আমাকে ছেলে ভাবছে। শেষ দিন তার সাথে হওয়া কথোপকথন গুলো এমন
মেয়ে- আপনি একদিনও নিজে এসে আমাকে নক করেন না।
আমি- আসলে খেয়াল করিনি।
মেয়ে- খেয়াল করবেন কি করে? আপনি তো শুধু আমার একার সাথে চ্যাট করেন না।
আমি- হ্যা তা হয়তো করিনা। তবে আপনার সাথেও প্রচুর কথা হয়।
মেয়ে- আপনাকে আর বিরক্ত করা যাবেনা তাহলে।
আমি- কেন?আর আমি কি একবারও বলেছি যে আমি বিরক্ত হই?
মেয়ে- যেটাই হোক, আমি আর আপনাকে নক করব না।
আমি- ওকে!
মেয়ে আমাকে আর নক দেয়নি। আমার স্ট্যাটাস দেখার পর হয়তো আর দেবেও না। হয়তো ব্লক দেবে। খুব উদার মানসিকতার হলে হয়তো ব্লক নাও খেতে পারি।
ঘটনা ৩
এক ছেলে হাই ব্রো ,হ্যালো ব্রো বলে মাঝে মাঝেই নক দেয়। সুখ দুঃখের কথা বলে। আমি মনোযোগ দিয়ে তা শুনি। ধরে নিলাম তার নাম মফিজ।
তার সাথে কথোপকথনগুলো এমন
মফিজ-খবর কি ব্রো?
আমি- এইতো ভাল।
আপনার কেমন চলছে?
মফিজ- ভালো নারে ভাই। হাতে একদম কোনো টাকাপয়সা নাই। এমন অবস্থা যে হাতে কোনো কাজও নাই।
আমি- কি কাজ করেন আপনি?
মফিজঃ তেমন কিছু না। অনলাইনে কিছু কাজ করি আরকি।
আমিঃ ভালোতো। এখন তো ফ্রীল্যান্সিং একটা ভাল পেশা।
মফিজঃ আরে ধুর। আমার জন্য সেইটা না। আমি কাজ জানি।
কিন্তু ইংরেজীটা ভাল না জানার কারণে অনেক কাজ ছুটে যায়।
আমিঃ ইংরেজীটা শিখছেন না কেন? এটাতো তেমন কঠিন কিছু না।
মফিজঃ আরে ধুর! পড়াশুনা ভাল্লাগেনা। কেমনে যে মেট্টিক ইন্টার পাশ দিছি বুঝিনা। খালি অভ্রটাই ভালো চালাইতে পারি।
এরপর বাকি চ্যাটেও সে আমাকে তার অজ্ঞতা জানালো। হঠাত গতকাল মফিজ নক দিয়ে একটা প্রশ্ন করল।
মফিজঃ আপনাকে একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি?
আমি; সিওর
মফিজঃ আপনি কি ছেলে নাকি মেয়ে?
আমি; এ প্রশ্ন কেন? (এর আগে গালি খেয়ে শিক্ষা হওয়ায় আমি তো শিক্ষিত হয়ে গেছি)
মফিজঃ না মানে আপনার আচরণটা আসলে টিনএজ ছেলেদের মত।
আমিঃ চেক মাই প্রোফাইল।
মফিজ একটু পর একটা দাত কেলানো হাসির ইমো দিল।
তারপর বলল-আগে বলবেন না যে আপনি মেয়ে?
আমিঃ আমাকে ছেলে ভেবেও তো আপনার কোনো সমস্যা হয়নি, তাইনা?
মফিজঃ জ্বি তা অবশ্য হয়নি। একটা জোক শুনবেন?
আমিঃ না। আমার জোক শুনতে ভাল লাগেনা।
মফিজঃ আপনি কই পড়েন?
আমিঃএকটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে।
মফিজঃ ওহ ভালো ভালো!!!!! জানেন আমি না গবেষণা করি?
আমিঃকি গবেষনা?
মফিজঃ এই কৃষি, প্রাণী, জীব, মোট কথা প্রকৃতি গবেষণা করি আরকি!
আমার প্রচন্ড হাসি আসল মফিজের কথা শুনে।
এর আগে তার সাথে যতবার চ্যাট হয়েছে সে বরাবরই বলে এসেছে সে পড়াশুনা সংক্রান্ত কোনো ব্যাপারেই আগ্রহী না। এখন বলে- সে নাকি গবেষক! আমি হাসি চাপিয়ে বললামঃ এত গবেষনা করেন কেন?
মফিজঃ আসলে আমার ছোটোবেলা থেকেই ন্যাশনাল জিওগ্রাফী আর ডিস্কভারী চ্যানেল পছন্দ। আপনার যদি কোনো পশুপাখি নিয়ে জানার আগ্রহ থাকে তাহলে আমাকে বলবেন। আমি খুশি হব।
আমিঃ আচ্ছা আপনি আমাকে চিগারাখুয়া প্রাণীটার ব্যাপারে একটু ইনফরমেশন দিতে পারবেন?
চিগারাখুয়া কি জিনিস আমি আসলে জানিনা।
আজাইরা একটা নাম বলে দিয়েছি। কিন্তু নামটা শোনার পর মফিজ অনেক সময় কোনো জবাব দিল না। মনে হয় গুগলে চিগারাখুয়ার সন্ধানে নেমেছিল। পাচ ছয় মিনিট পর সে বললঃ চিগারাখুয়া কেমন প্রাণী? আমি তো এর নামই শুনিনি।
আমিঃ আমিও ওভাবে শুনিনি।
যতটুকু জানি ওটা নাকি পাচ মাথাওয়ালা বানর!
মফিজঃ জানলাম। আসলে কতকিছুই এই দুনিয়াতে আমাদের অজানা, তাইনা?
আমিঃ জ্বি,ঠিক বলেছেন। আপনি চিগারাখুয়ার ব্যাপারে জেনে আমাকে জানাবেন। আমি আসি।
মফিজকে অফলাইন করে প্রথমে এক ব্লগার ভাইয়ের সাথে এটা নিয়ে কিছু সময় হাসলাম।
তারপর ভাবলাম আর আক্কাস-মফিজদের বেদিশা করে লাভ নাই। তাদের জানিয়ে দেই যে আমি ছেলে নই। আশা করি, এরপর আর কেউ আক্কাস-মফিজদের দলে নাম লেখাবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।