আমাদের দেশে সামরিক বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীতে বীরত্বের জন্যে খেতাব প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পর বীরত্বের জন্যে ভূষিত করতে চারটি খেতাব প্রচলন করা হয়েছিলো। বীর শ্রেষ্ঠ, বীর উত্তম, বীর বিক্রম ও বীর প্রতীক, এই চারটি খেতাবে সামরিক ও বেসামরিক, উভয় প্রকার মুক্তিযোদ্ধারা ভূষিত হন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বীরত্বের জন্য সামরিক বাহিনীতে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করার নজির রয়েছে। খেতাবপ্রাপ্ত ব্যক্তির নামের পাশে খেতাবটি আমরণ ব্যবহৃত হয়।
যেমন কাদের সিদ্দিকী আজ যতোই রাজনৈতিক নোংরামি করুন না কেন, তিনি একজন বীর উত্তম। কোনো অনুষ্ঠানে তাঁকে ডাকা হলে আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম হিসাবেই উল্লেখ করা দস্তুর।
বর্তমানে এই চারটি খেতাব আর দেওয়া হয় না, এর পরিবর্তে বীর সর্বোত্তম, বীর মৃত্যুঞ্জয়ী, বীর চিরঞ্জীব ও বীর দুর্জয়, এই চারটি খেতাব সামরিক বাহিনীর জন্যে প্রচলন করা হয়েছে। এই নতুন চারটি খেতাব কি কেবল সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মাঝেই সীমিত, নাকি বেসামরিক ব্যক্তিরাও এই খেতাব পেতে পারেন, তা আমার কাছে স্পষ্ট নয়।
যুদ্ধ পরিস্থিতি ছাড়াও সাধারণ বেসামরিক নাগরিকের জীবনে বীরত্ব প্রদর্শনের সুযোগ রয়েছে।
বিশেষ করে গত একটি বছরে যে অভূতপূর্ব সহিংসতা ও দুর্যোগ দেশের মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করেছে, তা বীরত্ব প্রমাণের জন্যে যথেষ্ট ছিলো। ধ্বসে পড়া রানা প্লাজায় উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন কায়কোবাদ সাহেব, তাঁকে কি আমরা বীর হিসাবে চিহ্নিত করবো না? নিজে আগুনে পুড়ে ট্রেন ও ট্রেনের দেড় হাজার যাত্রীকে বাঁচালেন বুলবুল, তিনি কি বীরত্বের জন্যে ভূষিত হবেন না?
নাগরিককে যদি তার নাগরিক জীবনে বীরত্বের জন্যে কোনো স্বীকৃতি দেওয়া না হয়, এবং বীরত্বকে কেবল যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কৃতিত্বের মাঝে সীমিত রাখা হয়, তাহলে তা নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্রের অবিচার, এবং এক ধরনের সূক্ষ্ম বৈষম্যও বটে। সামরিক হোক আর বেসামরিক, যুদ্ধ পরিস্থিতির বাইরে যখন একজন মানুষ নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্বের অতিরিক্ত কিছু পালন করে অপরের জীবন রক্ষা করেন, তাঁকে বীরত্বের খেতাবে ভূষিত করলে আমরাই জাতি হিসেবে আরেকটু বড় হতে পারবো। আর্থিক পুরস্কার বা সংবর্ধনাই এখানে যথেষ্ট নয়।
এ কথা সত্য যে কেউ খেতাবের জন্যে বীরত্ব প্রদর্শন করেন না।
কিন্তু বীরত্ব যে একটি সংবর্ধিত হওয়ার মতো গুণ, এবং বীর ব্যক্তি সংবর্ধনার ফিফটিন মিনিটস অব ফেইমের বাইরেও আমরণ সেই বীরত্বের জন্যে খেতাব বহনের অধিকার বহন করেন, এ কথাও সত্য।
রাষ্ট্রপতির কাছে আমার অনুরোধ, যুদ্ধ পরিস্থিতির বাইরে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্যে দেশের বেসামরিক বীরদের জন্যে অন্তত দু'টি স্তরের বীরত্ব খেতাব প্রচলন করুন। উদাহরণের খাতিরে বলছি, খেতাব দু'টি হতে পারে "বীর অমর" ও "বীর অজেয়"। যিনি নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে বীরত্ব প্রদর্শন করবেন, তিনি বীর অমর খেতাবে ভূষিত হবেন। যিনি নিজের প্রাণকে বিপন্ন করে বীরত্ব প্রদর্শন করবেন, তিনি বীর অজেয় খেতাবে ভূষিত হবেন।
প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবসে রাষ্ট্রপতি তাঁর রাষ্ট্রের বীর নাগরিকদের এই খেতাব প্রদান করতে পারেন।
২০১৪ থেকেই এই রীতির শুভ সূচনা হোক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।