ঘর ছেড়ে অন্য আরেক পাড়ায় আশ্রয় নেয়া ধর্ষণের শিকার এক নারীর শ্বাশুড়ি অনারতি দাস বলেন, সন্ত্রাসিরা ঘরের দরজা ভেঙ্গে ঢুকেই জিজ্ঞেস করে, তোরা কি ভোট দিছিস?
তিনি বলেন, “আমরা কেউই ভোট দিতে যাইনি। ওদের পাও ধরে বলেছি, তোরা আমার ধর্মের বাপ, বেদাত করিস নে। রাম দাও মাথার ওপর তুলে তখন বললো, বেশি কথা বলিস না, একদম কচু কাটা করবো। ”
যশোরের মণিরামপুর উপজেলা সদর থেকে আনুমানিক ৭ কিলোমিটার দূরে দাস পাড়া গ্রামে ঘটে এই ঘটনা।
ঋষি পাড়া, দাস পাড়া হাজরাইল গ্রামের পাশাপাশি দুটি পাড়া, যার সবাই হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
যেখানে রিকশা বা তিন চাকা, চার চাকার বাহন ঢোকা একেবারেই অসম্ভব। বেশির ভাগই বেড়া বা মাটির ছোট ছোট ঘর। পেশায় তারা বেশিরভাগই বাঁশের ঝুড়ির কারিগর, কৃষি জমিতে দৈনিক হিসাবে কাজ করা কৃষি শ্রমিক।
ওই রাতের বর্ণনা দিয়ে অনারতি দাস জানান, রাতের খাবার শেষে আনুমানিক রাত ৯টা-সাড়ে ৯টার দিকে ৯ থেকে ১০ জনের সশস্ত্র এক দল তাদের ঘরে ঢোকে।
ঢুকেই প্রথমে তার স্বামী কার্তিক দাসের মাথার ওপর রাম দা ধরে।
এরপর পাশের ঘরে থাকা ছেলেকে বেঁধে ফেলে, আর তারপরই মাত্র ২ মাস আগে বিয়ে হয়ে বউ হয়ে আসা বউকে ধর্ষণ করে।
তিনি বলেন, এর আগে তার ভাশুরের মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়, কিন্তু সেই ঘটনা তারা জানতে পারেন তার ছেলের বউ ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর।
সন্ত্রাসীদের হুমকির কারণে, তারা থানা পুলিশ করেননি। কিন্তু পাড়ার লোকজনের সাহস দেয়ার কারণে শুক্রবার থানায় তারা মামলা করেন।
আর তারপরই তারা সিদ্ধান্ত নেন ঘরবাড়ি ছেড়ে দেওয়ার।
শনিবার বিকালে ধর্ষণের শিকার পরিবারগুলোর বাড়ি গেলে দেখা যায়, পুরো ঘর বাড়ি ফাঁকা। এক বাড়ির ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, কেবল একটা চৌকি পড়ে আছে খালি। একটু দূরেই ধর্ষণের শিকার আরেক পরিবারের ঘর। সেখানেও কেউই নাই। সম্পর্কে দুই পরিবার, আপন দুই ভাইয়ের।
একজনের ছেলের বউ আর আরেকজনের মেয়ে শিকার হয়েছেন ধর্ষণের।
পাড়ার লোকজনদের জিজ্ঞেস করে করে পরিবারের সদস্যদের খুঁজে পাওয়া যায় অন্য আরেক পাড়ায়।
সেই পাড়ার বাসিন্দা আরতি দাস বলেন, “ছোট থেকে এই বুড়া হয়ে গেলাম, এমন ঘটনা জীবনেও দেখি নি। হিন্দু বলেই ভেবেছে আ্ওয়ামীলীগ করি আমরা। হিন্দু বলেই আমাদের মেয়ে-ছেলেদের বে ইজ্জত করেছে।
”
ঘরে ফেরত যাবেন কবে জানতে চাইলে, অনারতি দাসের স্বামী কার্তিক দাস পাল্টা প্রশ্ন করেন, “নিজের জান বড় না, বসত বাটি, কন তো। ওরা যে আবার হামলা করতি আসপি না, তার নিচ্চয়তা দিতে পারবেন?”
দিলীপ দাস, গ্রামের আরেক বাসিন্দা বলেন, মণিরামপুরে অনেকগুলো হিন্দু গ্রাম পাশাপাশি থাকলেও এখানেই নির্বাচনের আগে প্রথম পেট্রল বোমা বিস্ফোরিত হয়।
সবচে বেশি সহিংস ঘটনা ঘটে এখানে। ৫ ফেব্রুয়ারির নিবাচনে একসাথে ৬০টা ভোট কেন্দ্র স্থগিত ঘোষণা করা হয় সহিংসতার কারণে।
এই মণিরামপুরে ভোটের আগের দিন পুলিশের গাড়িতে পেট্রোল বোমা হামলা চালানো হয়।
৭ পুলিশ সদস্য আহত হয় তখন। ভোটের দিন ব্যাপক সহিংসতা হয়। মথুরাপুর, কাশিমনগর, ভোজগাতি, দেলুয়াবাড়ি, শুভলকাঠি কেন্দ্রগুলোতে ভোটের আগের দিন হামলা হয়।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।