বাংলা চলচ্চিত্রের তথা উপমহাদেশের কিংবদনন্তী অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের পাবনার পৈত্রিক বাড়ি স্বাধীনতা বিরোধী একটি রাজনৈতিক দলের কবল থেকে আজও দখলমুক্ত হয়নি।
বাংলা চলচ্চিত্রের সম্রাজ্ঞি সুচিত্র সেনের শৈশব ও কৈশরের স্মৃতি বিজরিত এই বাড়িটিতে এখনো ইমাম গাজ্জালী ট্রাস্টের পরিচালিত একটি কিন্ডারগার্টেনের কার্যক্রম চলছে বাড়িটিতে। পাবনার বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের দাবী উপেক্ষা করে বহাল তবিয়তে বাড়িটি দখলে রেখেছে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত ওই ট্রাষ্ট।
পাবনা সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ বাড়িটি দখলমুক্ত করার জন্যে বিভিন্ন সময়ে সভা, সমাবেশ, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেললন, চলচ্চিত্র উৎসবসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। পরিষদ নেতারা অভিযোগ করেছেন, বাড়িটি জামায়াত না ছাড়ার জন্যে বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে।
যার ফলে আইনি জটিলতায় ঝুলে আছে প্রশাসনের ইজারা বাতিল প্রক্রিয়া।
পাবনা সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষন পরিষদের সাধারন সম্পাদক ডা: রাম দুলাল ভৌমিক বলেন, রমা সেন, পুরো নাম রমাদাশ গুপ্ত। সহপাঠিরা তাকে কৃষ্ঞা বলেই জানতেন। ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল এই বাড়িতেই জন্ম গ্রহন করেন কৃষ্ঞা অর্থাৎ সুচিত্র সেন। পাবনার এই বাড়িতেই কেটেছে তার শৈশর ও কৈশর কাল।
ছোট বেলায় দুরন্তপনা আর গান গাইয়ে মাতিয়ে রাখতেন সঙ্গীদের। সে ভাল গান গাইতে পারতেন বলে তার বান্ধবীদের নিকট থেকে জানা গেছে। সুচিত্রা সেন তার বাবা মা, এক ভাই ও তিন বোনকে সাথে নিয়ে শৈশব কৈশর কেটেছে পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনের বাড়িতে। পাবনা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীতে পড়া কালীন সময়ে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগষ্ট পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে স্বপরিবারে ওপার বাংলায় পাড়ি জমায় তিনি। তার বাবা করুনাময় দাশ গুপ্ত ছিলেন পাবনা পৌরসভার স্যানিটারী ইন্সপেক্টর।
১৯৪৭ সালের পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে তাঁর বাবা স্বপরিবারে ভারত চলে যান। সে সময় জেলা প্রশাসন উর্দ্বতন সরকারী কর্মকর্তাদের আবাসনের জন্য বাড়িটি রিক্যুইজিশন করেন। পরে ওই বাড়িটির প্রতি লোলুপ দৃষ্টি পরে রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতের স্থানীয় নেতাদের। বাড়িটি স্থায়ীভাবে দখলের জন্য জামায়াত নেতারা নানা ধরনের কেৌশলের আশ্রয় নেন। ১৯৮৭ সালে তত্কালীন জেলা প্রশাসক সাইদুর রহমান তাঁদের বাড়িটি বাৎসরিক চুক্তি ভিত্তিতে ইজারা দেয়।
পরে সুকৌশলে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এর নায়াবে আমীর বর্তমানে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত মাওলানা আব্দুস সুবহান অর্পিত সম্পত্তিতে পরিনত করে ইমাম গাজ্জালী ট্রাষ্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাড়িটি দখলের চেষ্টা চালায়।
১৯৯১ সালের ১৮ জুন ইমাম গাজ্জালি ট্রাস্ট বাড়িটি স্থায়ী বন্দোবস্ত নেওয়ার আবেদন করে। ওই বছরের আগস্টে ভূমি মন্ত্রণালয় তাদের স্থায়ী বন্দোবস্ত না দিয়ে আবারও বাত্সরিক ইজারা দেয়। পরে ইজারার টাকা পরিশোধ না করায় ১৯৯৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ইজারা বাতিল করা হয়।
কিন্তু জামায়াত নেতারা বকেয়া পরিশোধ সাপেক্ষে ১৯৯৫ সালের ১৫ আগস্ট আবার ইজারা নবায়ন করিয়ে নেন।
তারপর থেকে আজ অবধী তাদের নিয়ন্ত্রনেই রয়েছে সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িটি। পরে পাবনাবাসী বাড়িটি উদ্ধারের জন্যে আন্দোলন করলে কর্তৃপক্ষ তাদের লীজ বাতিল করে। কিন্তু স্থানীয় জামায়াত নেতারা হাই কোর্টে রিট করে স্থিতি অবস্থা জারি করে নিজেদের দখল বজায় রাখে।
এ প্রসঙ্গে পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাজমুল হোসেন মুঠোফোনে জানান, আইনী প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এ ব্যাপারে ডেপুটি এটনী জেনারেল বিশ্বজিত্ রায় বলেন, বিষয়টি আপিল বিভাগে পেন্ডিং আবস্থায় রয়েছে।
তবে এর আগে হাইকোর্ট ডিভিশনের একটি বেঞ্চে থাকা সময়ে রায় আমাদের পক্ষে ছিল।
জেলা পরিষদের প্রশাসক ও সুচিত্রা সেন স্মৃতি পরিষদের সভাপতি এম সাইদুল হক চুন্নু জানান, জামায়াতের দখল থেকে সুচিত্রার পৈতৃক বাড়িটি মুক্ত করে 'সুচিত্রা সংগ্রহশালা' গড়ে তুলতে জেলাবাসী ঐক্যবদ্ধ। স্বাধীনতাবিরোধী এই চক্রের কবল থেকে বাড়িটি উদ্ধারে দলমত-নির্বিশেষে সবাই আন্দোলন করছেন।
সুচিত্রা সেনের প্রতিবেশী গোপালপুর মহল্লার বাসিন্দা এড: শফিকুল ইসলাম শিবলী জানান, রমাদি'র (সুচিত্রা সেন) বাড়িটি অনেক সুসজ্জিত ছিল। ইজারাদাররা দখল নিয়ে বাড়িটির ছাদ ভেঙ্গে টিন সংযোজন করেছে।
বাড়িটির সৌন্ধর্য ও স্থাপত্য নষ্ট করেছেন। বাড়িটি দখল মুক্ত করে পাবনার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র কিংবা ফিল্ম ইনিষ্টিটিউট গড়ে তুললে তার স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি ভবিষ্যত প্রজন্মের নিকট সাক্ষী হয়ে থাকবে।
ইমাম গাজ্জালি ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক আবিদ হাসান দুলাল বলেন, চুক্তিতে ইজারা বাতিলের পক্ষে কোনো যুক্তি নেই। প্রশাসন ইজারা চুক্তিতে কোথা বলা হয়নি। এটি সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাড়ি ছিল।
তবু সবার দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বাড়িতে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি আছে, তা রক্ষায় প্রশাসন বিকল্প ব্যবস্থা নিলে আমরা বাড়িটি ছেড়ে দেব।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।