আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জামায়াতের দখলে সুচিত্রার বাড়ি

বাংলা চলচ্চিত্রের সম্রাজ্ঞী সুচিত্রা সেনের শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতি বিজড়িত এই বাড়িটির অবস্থান পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, বর্তমানে এই বাড়িটি কৌশলে জামায়াত পরিচালিত ‘ইমাম গাজ্জালী ট্রাস্ট’ পরিচালিত একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে রূপান্তর করা হয়েছে।

পাবনা সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ বাড়িটি দখলমুক্ত করার জন্য বিভিন্ন সময়ে সভা, সমাবেশ, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেললন, চলচ্চিত্র উৎসবসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে।

পরিষদ নেতারা অভিযোগ করেছেন, বাড়িটি জামায়াত না ছাড়ার জন্যে বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে। যার ফলে আইনি জটিলতায় ঝুলে আছে প্রশাসনের ইজারা বাতিল প্রক্রিয়া।

পাবনা সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা: রাম দুলাল ভৌমিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় সুচিত্রা সেনের পরিবার নিয়ে তার বাবা করুনাময় দাশ গুপ্ত কলকাতায় পাড়ি জমান। ”

তিনি জানান, সে সময় জেলা প্রশাসন উর্দ্বতন সরকারী কর্মকর্তাদের আবাসনের জন্য বাড়িটি রিক্যুইজিশন করেন। স্বাধীনতার আগে থেকেই ওই বাড়িটি স্থায়ীভাবে দখলের জন্য জামায়াত নেতারা নানা ধরনের কৌশলের আশ্রয় নেন।

১৯৮৭ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক সাইদুর রহমান বাড়িটি বাৎসরিক চুক্তি ভিত্তিতে ইজারা দেয়। পরে সুকৌশলে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমীর ও বর্তমানে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত মাওলানা আব্দুস সুবহান অর্পিত সম্পত্তিতে পরিণত করে ইমাম গাজ্জালী ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাড়িটি দখলের চেষ্টা চালায়।

১৯৯১ সালের ১৮ জুন ইমাম গাজ্জালি ট্রাস্ট বাড়িটি স্থায়ী বন্দোবস্ত নেওয়ার আবেদন করে। ওই বছরের আগস্টে ভূমি মন্ত্রণালয় তাদের স্থায়ী বন্দোবস্ত না দিয়ে আবারও বাৎসরিক ইজারা দেয়।

পরে ইজারার টাকা পরিশোধ না করায় ১৯৯৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ইজারা বাতিল করা হয়। কিন্তু জামায়াত নেতারা বকেয়া পরিশোধ সাপেক্ষে ১৯৯৫ সালের ১৫ আগস্ট আবার ইজারা নবায়ন করিয়ে নেন। এখন পর্যন্ত তাদের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িটি।

পরে পাবনাবাসী বাড়িটি উদ্ধারের জন্যে আন্দোলন করলে কর্তৃপক্ষ তাদের ইজারা বাতিল করে। কিন্তু স্থানীয় জামায়াত নেতারা হাই কোর্টে রিট করে স্থিতি অবস্থা জারি করে নিজেদের দখল বজায় রাখে।

এ প্রসঙ্গে পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাজমুল হোসেন মুঠোফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, আইনি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।  

এ ব্যাপারে ডেপুটি এটর্নী জেনারেল বিশ্বজিৎ রায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টি আপিল বিভাগে পেন্ডিং অবস্থায় রয়েছে। তবে এর আগে হাইকোর্ট ডিভিশনের একটি বেঞ্চে থাকা সময়ে রায় আমাদের পক্ষে ছিল।

জেলা পরিষদের প্রশাসক ও সুচিত্রা সেন স্মৃতি পরিষদের সভাপতি এম সাইদুল হক চুন্নু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জামায়াতের দখল থেকে সুচিত্রার পৈতৃক বাড়িটি মুক্ত করে ‘সুচিত্রা সংগ্রহশালা’ গড়ে তুলতে জেলাবাসী ঐক্যবদ্ধ। স্বাধীনতাবিরোধী এই চক্রের কবল থেকে বাড়িটি উদ্ধারে দলমত-নির্বিশেষে সবাই আন্দোলন করছেন। ”

সুচিত্রা সেনের প্রতিবেশী গোপালপুর মহল্লার বাসিন্দা আইনজীবী শফিকুল ইসলাম শিবলী জানান, “রমাদি’র (সুচিত্রা সেন) বাড়িটি অনেক সুসজ্জিত ছিল। ইজারাদাররা দখল নিয়ে বাড়িটির ছাদ ভেঙ্গে টিন সংযোজন করেছে। বাড়িটির সৌন্ধর্য ও স্থাপত্য নষ্ট করেছে।

বাড়িটি দখল মুক্ত করে পাবনার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র কিংবা ফিল্ম ইনিষ্টিটিউট গড়ে তুললে তার স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি ভবিষ্যত প্রজন্মের নিকট সাক্ষী হয়ে থাকবে বলে অভিমত দেন তিনি।

ইমাম গাজ্জালী ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক আবিদ হাসান দুলাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চুক্তিতে ইজারা বাতিলের পক্ষে কোনো যুক্তি নেই। প্রশাসন ইজারা চুক্তিতে কোথা বলা হয়নি। এটি সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাড়ি ছিল। তবু সবার দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বাড়িতে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি আছে, তা রক্ষায় প্রশাসন বিকল্প ব্যবস্থা নিলে আমরা বাড়িটি ছেড়ে দেব।

চার দলীয় জোট সরকারের আমলে জামায়াত নেতৃবৃন্দ ‘ইমাম গাজ্জালী স্কুল অ্যান্ড কলেজে’র অজুহাত দেখিয়ে নামমাত্র মূল্যে গনপূর্ত বিভাগের চতুর্থ শ্রেনীর কোয়ার্টারের প্রায় এক একর জায়গা কিনে বিশাল ভবন তৈরি করে।

পরবর্তীতে তারা স্কুলটি স্থানান্তর না করে বাড়িটি নিজেদেরে দখলে রেখে ইমাম গাজ্জালী কেজি স্কুলের পাঠদান কার্যক্রম চালু রাখেন।

গত বছরে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ দেখে ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশে’র পক্ষে সুচিত্রার বাড়িটি দখলমুক্ত করতে অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান সিদ্দিকী হাইকোর্টে একটি রিট করেন।

বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ গত ২০১২ সালের ২৬ জুলাই সুচিত্রা সেনের পাবনার পৈত্রিক বাড়িটি পরবর্তী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে সরকারের দখলে  নেওয়ার নির্দেশ দেন।

আদেশের পর সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িটি দখল করে গড়ে ওঠা ইমাম গাজ্জালী ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ আইয়ুব হোসেন খাঁন ওই বছরের ২৭ জুলাই স্থগিতাদেশের জন্য আপিল বিভাগে আবেদন করেন।

পরে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গঠিত আট সদস্য বিশিষ্ট আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চ পরদিন ওই আদেশের স্থগিতাদেশ দেন।

জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যদিও আমি নতুন এ জেলায় যোগদান করেছি। তবুও আমার জানা মতে সর্বশেষ আদালত একটি রায়ে স্থিতাবস্থা বাতিল করে ওই বাড়ি থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ করে প্রতিবেদন দিতে বলেন।

“কিন্তু ইজারাগ্রহীতারা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন। ফলে উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি।

এখন বিষয়টি বিচারাধীন রয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়ায় বাড়িটি দখলমুক্ত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ”

১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল এই বাড়িতেই জন্ম গ্রহণ করেন কৃষ্ণা অর্থাৎ সুচিত্র সেন। পাবনার এই বাড়িতেই কেটেছে তার শৈশর ও কৈশোর কাল।




সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.