পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনের সেই কৃষ্ণাই পরে পরিচিত হন সুচিত্রা সেন নামে, পরিণত হন বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রীতে।
সুচিত্রার চলে যাওয়ার খবর শুনে আবেগে ভাসলেন তার এক সময়ের সহপাঠী অঞ্জলী রানী গোস্বামী। পাবনা গার্লস স্কুলে ক্লাস নাইন পর্যন্ত একসঙ্গে পড়ালেখা করেছেন তারা।
অশীতিপর এই বৃদ্ধা স্মৃতি হাতড়ে ফিরিয়ে আনলেন ছেলেবেলার সেই কৃষ্ণাকে, বান্ধবী আগেই চলে যাওয়ায় তার কণ্ঠে জড়ালো অভিমান।
কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মহানায়িকা সুচিত্রা সেন গত শুক্রবার সকালে পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চ ছেড়ে চিরবিদায় নেন, জীবনের শেষ ৩৫টি বছর যিনি কাটিয়েছেন অন্তরালে।
১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল জন্ম নেয়া সুচিত্রার পারিবারিক নাম রমা দাশগুপ্ত। বাবার নাম করুণাময় দাশগুপ্ত, আর মা ইন্দিরা দেবী।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় আরো অনেক পরিবারের মতো করুনাময়ও কলকাতায় পাড়ি জমান। সেখানেই রমার বিয়ে। আর চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরুর পর তার নতুন নাম হয় সুচিত্রা সেন।
প্রশ্ন করতেই অঞ্জলী রানী বলে উঠলেন, “বান্ধবী ছিলো আমার। ক্লাশ নাইন পর্যন্ত একসাথে পড়েছি। ”
“…আমরা একসাথে স্কুলে যেতাম, খেলতাম, কৃষ্ণা (সুচিত্রা সেন) একটু বড় হয়ে গানটান করত। অনেক দুষ্টুমিও করেছি। ”
স্কুলে কোনো নাটক বা গানের অনুষ্ঠান হলে তাতে কৃষ্ণাকে দেখা যেত নিয়মিতই।
তারপর হঠাৎ করেই চুকে গেল পাবনার পাট।
“আমি তো জানি যে ও চলে গেছে। তারপর শুনলাম বিয়ে হয়ে গেল। এরপর একবার আসছিল, পরে শুনলাম সিনেমায় নামছে। আমাদের এক বান্ধবী নুরুন্নাহার, ও বললো যে কৃষ্ণার নাম কিন্তু সুচিত্রা সেন, আমি তো বিশ্বাসই করতে পারলাম না।
”
সুচিত্রার ছবি নিয়মিত দেখতেন?
“ওর প্রথম বই (সিনেমা) সাত নম্বর কয়েদী… নামও করলো বাবা!”
এরপর কথায় কথায় ছেলেবেলায় ফিরে গেলেন অঞ্জলী।
“শোনো, একদিন যাচ্ছি… বললো যে আয় আমরা একটু বৃষ্টিতে ভিজব। সাহারা সিনেমা দেখার পরে। আমি, নুরুন্নাহার আর ও, ভীষণ বৃষ্টি… ভিজে গেলাম। পরে অবশ্য বকা খাইছি সবাই।
“স্লিপার ছিলো স্কুলে। উঠতাম, কখনো ঝগড়া হতো, ঝগড়াতো হবেই… বন্ধু না?”
“কখনো কখনো বখাটে ছেলেরা রাস্তায় বিরক্ত করত”, বলতে বলতে অজান্তেই হেসে ফেলেন অঞ্জলী রানী।
“পাশ দিয়ে ছেলেগুলো বলে উঠত দিলকা রানী। আর কৃষ্ণা টিপটিপ করে হাসত। ”
কলকাতায় যাওয়ার পর পাবনার সঙ্গে আর যোগাযোগ রাখেননি সুচিত্রা; সেজন্য খানিকটা অভিমানও রয়েছে অঞ্জলীর।
“তার মা-বাবা সব চলে গেল, তারপর আর যোগাযোগ করে নাকি! ওর প্ল্যান ছিল আগে থেকে মনে হয়। বলে নাই আমাদের, এই যা। চলে গেল যে যাওয়ার…”
িছুক্ষণ নিরবতার পর আবার কৃষ্ণার কথা, সুচিত্রার কথা বলতে শুরু করেন তার বান্ধবী।
“ওর চেয়ে কিছুটা খাট ছিলাম। ও অনেক লম্বা ছিল।
দেখতে ধবধবা ফর্সা ছিল না, কিন্তু খুব সুন্দর চেহারা। হাসি, চোখ খুব সুন্দর। ”
“ওর বই (সিনেমা) হলে আমি দেখবই। অন্যদের সাথেও জুটি ছিল, কিন্তু উত্তম কুমারের সাথে খুব ভালো লাগত। ”
শুক্রবার সুচিত্রার মৃত্যুর পর খবরটা অঞ্জলীর কাছে চেপেই রেখেছিলেন পরিবারের সদস্যরা।
এই বয়সে বান্ধবীর মৃত্যু সংবাদ তিনি কীভাবে নেবেন, তা নিয়ে ভয় ছিল তাদের। কিন্তু টেলিভেশনে ঠিকই খবর পেয়ে যান তিনি।
“কৃষ্ণা তো মরে গেল। খুব খারাপ লাগছে। কাল রাতে তো ঘুমাতে পারিনি।
কেবল মুখটা মনে পড়তেছিল। খুব পাগল পাগল লাগতেছিল আমার। কেমন জানি লাগতেছিল। ”
অঞ্জলীর সেঝ ছেলে কিশোর কুমার গোস্বামী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মা টিভিতে সুচিত্রা সেনকে দেখেলেই আমাদের কাছে তার গল্প বলত। মায়ের বয়স অনেক, শরীরটাও খারাপ।
তাই শুরুতে তাকে মৃত্যুসংবাদ দেয়া হয়নি। ”
পরে টিভিতে নিজেই জানতে পারেন বান্ধবীর খবর।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।