মহম্মদ হান্নানকে বরিশালের করাপুর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে গ্লিটজকে জানিয়েছেন তার ছেলে মাহমুদ হায়াৎ অর্পন।
বুধবার দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে মহম্মদ হান্নানের মরদেহ আনা হয় এফডিসিতে। সেখানে অনুষ্ঠিত জানাজায় অংশ নিয়েছেন চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি শহীদুল ইসলাম খোকন, মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজার, সিনিয়র নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম, কাজী হায়াৎ, মতিন রহমান, জাকির হোসেন রাজু, অভিনেতা হাসান ইমাম, কে এস ফিরোজ, তারিক আনাম খান, অভিনেতা ও নির্মাতা অনন্ত জলিল, বাপ্পী চৌধুরীসহ চলচ্চিত্রাঙ্গনের তারকারা।
শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মহম্মদ হান্নান বাংলা চলচ্চিত্রের ধারা বদলে দিয়েছিলেন। তার চলচ্চিত্রে ফুটে উঠেছে সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠির কথা।
চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সমাজ বদলের ডাক দিয়েছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে চলচ্চিত্রাঙ্গন একজন সেনাপতিকে হারাল। ”
তার নির্মিত কোনো সিনেমাতে অভিনয় না করলেও বর্ষীয়ান অভিনেত্রী কবরী সারোয়ার বলেন তার ‘কাছের মানুষ’ ছিলেন মহম্মদ হান্নান।
কবরী গ্লিটজকে বলেন, “চলচ্চিত্রাঙ্গন যখন নতুন করে জেগে উঠছে, তখন তার মতো নির্মাতাকে হারানো আমাদের জন্য এক বড় ধাক্কা। ”
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, “সোমবার সন্ধ্যায় পরিচালক সমিতিতে বসে একসঙ্গে আড্ডা দিলাম।
হাসি-তামাশায় আড্ডা মাতিয়ে রাখতে তার জুড়ি মেলা ভার। সেই হাসিমুখ হুট করে চলে যাবে এটা ভাবতে পারছি না আমি। ”
পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম বলেন, “মহম্মদ হান্নান ছিলেন সৎ এবং সাহসী মানুষ। তার মতো এমন মানুষ ইন্ডাস্ট্রিতে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ”
মৃত্যুর আগে মহম্মদ হান্নান নির্মাণ করছিলেন এক হাজার পর্বের দীর্ঘ ধারাবাহিক ‘ও আমার চক্ষু নাই’।
এতে অভিনয় করছেন কে এস ফিরোজ।
বর্ষীয়ান এই অভিনেতা বলেন, “তিনি ভীষণ ভালো মানুষ ছিলেন। অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে তার সখ্যতা ছিল দারুণ। তিনি জানতেন, কীভাবে অভিনয় বের করে নিতে হয়। ”
প্রিয় বন্ধু টিভিনাটক নির্মাতা মোহন খান শোনালেন পঁচিশ বছর আগের স্মৃতি।
তিনি বলেন, “বন্ধু হান্নানের সঙ্গে প্রায়ই এফডিসিতে আড্ডা দিতাম। ও তখন ডাকসাইটে নির্মাতা। কিন্তু এতটুকু অহংকার ছিল না তার মধ্যে। সিনেমা, নাটকে দেশ ও সমাজের চালচিত্র ফুটিয়ে তোলার কথা বলত। সে বলত, একদিন আমাদের চলচ্চিত্র গোটা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করবে।
আমরা এক স্বপ্নদ্রষ্টাকে হারালাম আজ। ”
এর আগে মঙ্গলবার রাতে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি বরিশাল যাওয়ার পথে লঞ্চে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
মহম্মদ হান্নান ১৯৪৯ সালে বরিশালের উলানিয়া গ্রামে তার নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। ছেলে মাহমুদ হায়াৎ অর্পন তার সহকারী হিসেবে কাজ করছেন।
মেয়ে নবীনা নাজনীন একজন আইনজীবী।
১৯৮৩ সালে ‘রাই বিনোদিনী’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন মহম্মদ হান্নান। তার পরিচালনায় উল্লেখযোগ্য সিনেমা হল ‘অবরোধ’, ‘মালা বদল’, ‘বিক্ষোভ’, ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’, ‘ভালোবাসি তোমাকে’, ‘মাইয়ার নাম ময়না’, ‘বিদ্রোহ চারিদিকে’। তার পরিচালিত সর্বশেষ সিনেমা ‘শিখ-ী কথা’ ২০১৩ সালে মুক্তি পায়।
তিনি ২০১১-১২ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হন।
শুক্রবার দুপুরে পরিচালক সমিতি মহম্মদ হান্নান স্মরণে এফডিসিতে দোয়া মাহফিল ও স্মরণসভার আয়োজন করেছে বলে জানিয়েছেন মুশফিকুর রহমান গুলজার।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।