পৃথিবীতে দক্ষিণ এশিয়া বলে একটা গ্রাম আছে। এটাকে ১৯৪৭ সালের আগে ভারতবর্ষ বলা হতো। বৃটিশ বানরেরা এই গ্রামে হানা দেয়ার আগে এটা এক প্রত্ন নগর ছিল। এখানে রাস্তায় ভিক্ষুক বা স্যার কিছুই ছিল না। গোলা ভরা ধান ছিল, পুকুর ভরা মাছ ছিল, জীবনের ঔদার্য ছিল, সভ্যতার আলো ছিল।
বৃটিশ টাউটেরা এখানে আসার পর স্থাপিত হলো ভিক্ষুক ও স্যার তৈরীর কারখানা। ইংলন্ডের ক্রিমিনালদের কারাগারে স্থান সংকুলান হচ্ছিল না। রাণী ভিক্টোরিয়া বললেন, এগুলো সাগর পাড়ের শ্রীখন্ডে পাঠিয়ে দাও।
ব্যাস চোর-ডাকাত-ইতর জাহাজে চড়ে স্যুট টাই পরে স্যার সেজে নেমে পড়লো ভারতবর্ষে। তাদের চোর-সিন্ডিকেটের নাম ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী।
তারপর ভারতবর্ষের ইন্দ্রিয় প্রবণ রাজা-বাদশাহরা যখন হারেমে মুজরা দেখতে ব্যস্ত; সেই সুযোগে বৃটিশ টাউটেরা ভারত বর্ষের শাসন ক্ষমতা দখল করে রাণীকে জানালো, আম্মা কাম হয়্যা গেছে।
ইংলন্ডে যেসব রাজকর্মচারীরা ঘুষ খেয়ে সাফা করে দিচ্ছিল; তাদের তালিকা করে পানিশমেন্ট পোস্টিং-এ শ্রীখন্ডে পাঠিয়ে দেয়া হলো। শ্যালক প্রবরেরা ভারতের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে, সহজ সরল পুরবাসীকে জানালো, অই অহন থিকা আমগোরে সার কয়া ডাকবি। নাইলে ঢিঁচুয়া করে দেবোনে। লাল বান্দরদের বন্দুক দেখে ঘাবড়ে গেলো গ্রামবাসী।
স্থানীয় রাজা-বাদশার পাইক-পেয়াদা তরবারি-বল্লম নিয়ে ঘুরতো। কামারশালারা পুরবাসীকেও বানিয়ে দিতো, এক ধামা চাইলের বিনিময়ে। কিন্তু বন্দুক কোথায় পাবে শ্রীখন্ডের মানুষ। প্রাণভয়ে সবাই গরমে স্যুট পরে ঘেমে ওঠা বৃটিশ-আনসিভিল সার্ভেন্টদের সার সার বলতে লাগলো।
বৃটিশেরা খুঁজে খুঁজে শ্রীখন্ডে আরব-বোগদাদ-মোঙ্গল-শন-হুনদের রক্ত মিশে শংকর খুনী হয়েছে এইরকম নেটিভদের আন-সিভিল সার্ভিসে ঢুকাতে শুরু করলো।
সার তৈরীর কারখানা চালু হয়ে গেল।
শ্রীখন্ডের লোক অবাক। এলাকার সবচেয়ে বাজে লোকগুলি গরমে কোট পরে একটা পিস্তল দেখিয়ে বলে, অই অহন থিকা আমারেও সার কবি। পুরা ভারতে প্রাণ বাঁচাতে সার সার শুরু হয়ে গেল।
হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ ও নানামতের লোক এখানে সুখেই ছিল।
কিন্তু বৃটিশ পেডোফাইল পাদ্রীরা এসে কদমা দিয়ে ফুসলায়ে অনেককে খেরেস্তান বানাতে শুরু করলো। খেরেস্তান হলে ইংলন্ডে যাওয়া যাবে, একটা কোট পরা যাবে, মেমদের সঙ্গে বিলিতি লাল-পানি খেয়ে টুইস্ট করা যাবে।
বৃটিশ টাউটেরা খচ্চর নেটিভ হিন্দু সারদের মুসলমানদের এলাকায় পোস্টিং দিলো। মুসলমান সারদের পোস্টিং দিলো হিন্দু এলাকায়। যাতে ট্যাক্স আদায়ের ক্ষেত্রে কোন মানসিক দুর্বলতা নেটিভ সারদের বিভ্রান্ত না করে।
ব্যাস শুরু হয়ে গেলো ‘গুলির বিনিময়ে শান্তি’ কর্মসূচী। হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা-হাঙ্গামা।
সমাজে একটি নেটিভ রায় বাহাদুর ও খান বাহাদুর ‘বাদুড়’ সম্প্রদায় তৈরী হলো। এরা শ্রীখন্ডের সুপিরিয়র সার্ভিসের লোক। গ্লাসে ঠুকাঠুকি করে লাল পানি খায়।
ফটাফট ইংজিরি বলে। ভারতবর্ষের বাকী মানুষেরা ইনফেরিয়র হয়ে পড়লো। ঘুম ভাঙ্গা থেকে নিদ্রা যাবার আগে পর্যন্ত শুরু হলো সার সার সার।
বৃটিশ বান্দরদের এইসব উতপাত অসহ্য হয়ে যাওয়ায়; ভারতের মানুষ বললো; এই পাঁচিল টপকানির ব্যাটারা অনেক হইছে; এখন ভারত ছাড়।
যাইতেই যখন হবে; যাওয়ার আগে ভারত দুই ভাগ করে দুই জায়গায় নেটিভ শ’পাঁচেক বাহাদুর সার রেখে; কাশ্মীরটাকে হিন্দু-মুসলমানের গলার কাঁটা বানিয়ে; বুদ্ধিমান বাঙ্গালী জাতকে দুইভাগ করে ভিক্টোরিয়া নটিপুত্ররা বিদায় নিলো।
রয়ে গেল নেটিভ হিলারিয়াস বাস্টার্ড বাহাদুরেরা।
পাকিস্তানের পাঞ্জাবের সারেরা, যাদের চৌদ্দপুরুষ বাঁশ-ঝাড়ে, রেললাইনের ধারে প্রাতঃক্রিয়া সারতো; তারা পূর্ব পাকিস্তানে ‘সেইকাজ’ শুরু করলো। বাঙ্গালী ধরে চটকান দিয়ে আবার পাঞ্জাবে ফেরত পাঠিয়ে দিলো সারদের। যা বাপের বাঁশ ঝাড়ে গিয়ে এসব কর।
ভারতের সারমেয় নেটিভ সারেরা দলিতদের ক্রমাগতঃ দলাইমলাই করতে থাকলো।
তাদের প্রাতঃক্রিয়ার লোকেশন বদলায়নি। ফলে প্রজাদের বলে দিল; সার বলবি বুজলি; নইলে জেলে দেবো।
ওদিকে পাঞ্জাবের সারমেয়রা বাংলাদেশেও কিছু সার রেখে গেলো। এরা সিএসপি; গম্ভীর হয়ে কোট পরে বসে থাকে তারা আপিসে। বৃদ্ধ কৃষক-শ্রমিক-শিক্ষক সবাই তাদের সার বলতে বাধ্য।
এই কোট পরা ডগিরা কোথাও গেলে সব বয়সের মানুষকে উঠে দাঁড়াতে হবে। সার সার করতে হবে।
দক্ষিণ এশিয়া বা ভারতীয় উপমহাদেশের সংস্কৃতি ও পারিবারিক শিক্ষা, ছোটরা বয়েসে বড়দের শ্রদ্ধা করবে; বড়রা বয়েসে ছোটদের অপত্য স্নেহ দেবে।
কিন্তু না ডিসি সাহেব থাড়ুদার; তাকে দেখলে আশি বছর বয়েসীকে লাঠির ওপর ভর দিয়ে দাঁড়াতে হবে; দারোগার বউকে দেখে সত্তর বয়েসী বৃদ্ধাকে গিয়ে ভলাপচুয়াস দারোগা ওয়াইফির পা টিপে দিতে হবে।
এরপর এলো এনজিও কালচার, প্রথম জাজিরা ও মেরিল সংস্কৃতি।
সেখান থেকেও সার তৈরী হবে। এদেরকে শেলীব্রেটি বলে। গ্রামে গঞ্জে এরা বদলে দেয়ার ঝান্ডা নিয়ে ঘুরবে। প্রান্তের নানান বয়সের মানুষেরা তাদের সার বলবে; অটোগ্রাফ নেবে। কালে ভদ্রে তারা স্টান্ট মারতে কোন শীর্ণ কায়া নারী মুক্তিযোদ্ধাকে মা ডেকে উঠবে।
ব্যাস বর্তে যাবে গ্রাম আড়াই হাজারের ছোট খাট মানুষেরা।
তারপর এলো টেলিভীষণ। সেইখানে টকশো হবে। সেইখানে পাঞ্জাবের সারমেয়দের রেখে যাওয়া জীন-উপাদানে তৈরী সবজান্তারা ভাট বকবে; কিছু কিছু ইমানসিপেটেড আকলিমা নদী ‘পারসোনা’ থেকে ডেন্টিং পেন্টিং করে এসে নোবেল লরিয়েট শিরিন এবাদী হয়ে বসে ধাক্কা দিয়ে দিয়ে বাংলায় ইংরেজী বলবে। অথবা কন্ঠশীলনের আদিখ্যেতায় ‘ছ’ বর্গের উপরে চাপ দিয়ে নয়া অভিজাত বাংলা চটকে ম্যাডাম সংক্ষেপে ম্যাম হয়ে উঠবে।
এরা সবাই বাংলাদেশ উদ্ধারে ব্যস্ত। দুনিয়ায় যেন এই একটাই দেশ। কাজ-নাই কাম নাই রাজনীতির প্যাচাল।
ফেসবুকে এইসব সার ম্যাডামের ফলোয়াররা ভয়ে ভয়ে কথা বলবে। জন্মদিনে শুভেচ্ছার ডালিতে এক একজন সাক্ষাত রবীন্দ্রনাথ বা বেগম রোকেয়া যেন।
জন্মদিনের পরের দিন সার ম্যাডামেরা স্টেটাসে বলবে এতো মানুষ শুভেচ্ছা জানিয়েছে; এক এক করে উত্তর দিতে চাই; কিন্তু হিউম্যানলি ইমপসিবল বলে অকুন্ঠ কৃতজ্ঞতা সবার প্রতি। সঙ্গে ছবি; ছোট খাট জন্মদিন হলো। হিজাব পরা বোউ, পেট মোটা বরের সঙ্গে সার-ম্যাডামদের প্রগলভ ছবি। বাচাগুলো ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে; ভিডিও গেমস খেলছে অথবা শেলিব্রেটি ড্যাড-মাম্মির সঙ্গে অনিচ্ছায় ছবি তুলেছে। চিজ বলে তাদের হাসাতে হয়।
চৌদ্দ পুরুষ রেললাইনের ধারে ‘সেইকাজ’ করেছে। সুতরাং নিও এলিট সার-ম্যাডামেরা নিও-এফলুয়েন্সের ‘সেই একই জিনিস’ প্রদর্শন করবে ফেসবুকের রেললাইনের ধারে।
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে আলো ছুঁতে চাওয়া তারুণ্য আলোকিত আইকন হিসেবে হাতে তুলে নেবে শেলিব্রেটি দালাইলামা সার-ম্যাডামের সেই জিনিস।
চারপাশে কাংখিত সম্বোধনের খই সার সার সার সার; ম্যাম ম্যাম ম্যাম ম্যাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।