পুরাতন ট্রাফিক ভবনের ছাদে একটি ধারালো চাকু দিয়ে নান্নুর দেহ থেকে মুণ্ডু আলাদা করেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন গ্রেপ্তার হওয়া পুলিশের এই কনস্টেবল।
পল্টন থানার ওসি মোরশেদ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে শওকতের দেয়া তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার দুপুরে ওই ভবনের চতুর্থ তলায় তার কক্ষের একটি ট্যাঙ্ক থেকে চাকুটি উদ্ধার করা হয়।
“চাকুতে কোনো রক্ত না থাকলেও শওকত বলছে, ওই চাকু দিয়ে নান্নু মুন্সীকে সে একাই খুন করেছে। ”
মঙ্গলবার সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের পুরাতন ট্রাফিক ভবনের ছাদ থেকে আব্দুল জলিল নান্নু ওরফে নান্নু মুন্সীর মুণ্ডুহীন লাশ পাওয়া যায়। পরে ব্যারাকের পাশের পুকুর থেকে তার কাটা মুণ্ডু উদ্ধার করা হয়।
ওইদিন রাতেই অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন ওই থানার উপপরিদর্শক মো. শহিদুল্লাহ।
পরে তার ভগ্নিপতি যশোরের জয়নাল আবেদীনের বক্তব্যের সূত্র ধরে ওইদিন দুপুরেই রাজারবাগ থেকে ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল শওকত হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের পুলিশ হেফাজতে দেয় আদালত।
শওকতের বরাত দিয়ে ওসি মোরশেদ বলেন, খাবারের সঙ্গে ‘চেতনানাশক’ ওষুধ খাওয়ানোর পর পুরোপুরি অচেতন হওয়ার আগেই নান্নুকে নিয়ে মই বেয়ে পাঁচতলার ছাদে ওঠে সে। ছাদে উঠে কথা বলতে বলতে একসময় অচেতন হয়ে যায় নান্নু।
“তার পর প্রথমে তার পেটে ও বুকে ছুরিকাঘাত করে। শেষে তার গলা কাটে শওকত। ”
তিনি জানান, ঘটনার সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে কিনা তা বের করতে শওকতকে নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও বরাবর সে একা খুন করার কথাই বলছে।
খুনের কারণ জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, পেশায় কবিরাজ নান্নু চিকিৎসার নামে তার কাছ থেকে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে দাবি করেছে শওকত। তাছাড়া নিজস্ত্রীর সঙ্গে নান্নুর ‘সম্পর্ক’ আছে বলেও তার সন্দেহ।
“মূলত টাকা ও স্ত্রীর সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতিতে মানসিক ভারসম্য হারিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় শওকত। ”
তবে নান্নুর ভগ্নিপতি জয়নাল দাবি করেছেন উল্টোটা।
শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “চিকিৎসাবাবদ পাওনা টাকা না দিতেই শওকত নান্নুকে হত্যা করেছে। ”
শওকতের স্ত্রীর সঙ্গে নান্নুর কোনো সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করে জয়নাল বলেন, “বছরখানেক ধরে শওকতের সব ধরনের চিকিৎসা করতো নান্নু।
তবে ওসি মোরশেদ বলেন, “শওকতের স্ত্রী বর্তমানে ঝিনাইদহে থাকে।
আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে যে, নান্নু মুন্সী ঝিনাইদহে গিয়ে শওকতের স্ত্রীকেও চিকিৎসা দিত। ”
নান্নু কি ধরনের চিকিৎসা দিত জানতে চাইলে তার ভগ্নিপতি বলেন, “শুধু গাছ-গাছালি দিয়ে চিকিৎসা দিত। কোনো জীন-পরীর চিকিৎসা দিতো না নান্নু। ”
যে ভবনে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সেই পুরাতন ট্রাফিক ভবনে যেতে হলে পল্টন থানার ফটক অথবা উত্তর পাশের পুলিশের স্টাফ কোয়ার্টার দিয়ে ঢুকতে হয়।
ভবনটির নিচ তলায় একটি ক্যান্টিন রয়েছে।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্য এবং চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনের খেলোয়াড়, চালকসহ অন্যরা মিলিয়ে পাঁচশতের মতো পুলিশ সদস্য থাকেন।
এমনিতে বাইরের কারো ওই ভবনে প্রবেশাধিকার নেই। তবে পুলিশের আত্মীয়-স্বজনরা আসতে পারতেন।
রাজধানীতে এর আগেও এরকম সংরক্ষিত এলাকায় হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি ঘটে ১৯৯৯ সালে মার্চ মাসে।
রাজধানীর মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশের একটি ভবনের ছাদে পানির ট্যাংকের ভেতরে পাওয়া যায় জালাল আহমেদ নামে পুলিশের এক ‘সোর্স’ এর গলিত লাশ। ওই ঘটনার বিচার এখনো চলছে।
প্রায় দেড় বছর আগে কচুক্ষেত এলাকায় নৌ বাহিনীর কোয়ার্টারের পাঁচ তলা ভবনের ছাদ থেকে এক নারীর লাশ উদ্ধার করে ভাষানটেক থানা পুলিশ। এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করে পুলিশ ইতোমধ্যে অভিযোগপত্র দিয়েছে।
আর ২০১২ সালের ২২ এপ্রিল সংসদ ভবন সংলগ্ন এমপি হোস্টেলের ৬ নম্বর ভবন থেকে এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
ওই মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।