আমি সুমাইয়া বরকতউল্লাহ। ছাত্রী। লেখালেখি করা আমার ভীষণ পছন্দ। আমি ছড়া, গল্প লিখি। পত্রিকায় নিয়মিত লিখি।
লেখালেখি করে বেশ কয়েকটা পুরস্কারও পেয়েছি। শিশু অধিকার রক্ষায় বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ (প্রিণ্ট মিডিয়া) পর পর ৩ বার জাতিসংঘ-ইউন
মাননীয় অতিথি আসবেন আমাদের ইশকুলে। খুশির সীমা নেই। সবার মুখে হাসি। আমরা যারা ছাত্রী তারা ব্যস্ত আছি নানান কাজে।
কী কী কথা কেমন করে বলা হবে, কে সুন্দর করে উপস্থাপনা করতে পারে আর কী কী অনুষ্ঠান করে দেখানো হলে মাননীয় অতিথি খুশি হবেন তা নিয়ে আমরা সমানে রিহার্সেল করে যাচ্ছি। খাওয়ার সময় নেই! দাঁড়িয়ে এবং হাঁটার মধ্যে খাচ্ছি।
ধোয়া-মোছার কাজ চলছে সমানে। দপ্তরি থেকে শুরু করে প্রধান শিক্ষক স্যার কারো অবসর নেই। সবাই আছে দেৌড়ের ওপর।
তাঁরা যখন হাঁটেন তখন পন্ পন্ শব্দ হয়।
কয়েক জন স্যার আছেন, তাঁরা কাজ তেমন করেন না কিন্তু অনেক কাজ করার মতো ভাণ করেন। যাকে যেখানে দেখেন সেখানই ধমক লাগান এবং হাত-পা ছুঁড়ে কথা বলেন। এবং জোরে হেঁটে হেড স্যারের কাছে গিয়ে যখন কথা বলেন তখন তাঁরা হাঁপাতে হাঁপাতে কথা বলেন। আমরা তখন মুখ টিপে হাসি।
বেলা ১১ টায় অতিথি আসবেন। সাড়ে নটায় বিরাট বড়ো লাইন করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। ফুলের মালা, তোড়া আর পাঁপড়ির ডালি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। লাইন একটু আঁকা-বাঁকা হলে আর রক্ষা নেই। রাগী স্যার দেৌড়ে এসে বলবেন, এই এই সাবধান, একটুও নড়বে না, টাউক্কার মতো সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকো।
আমরা তখন মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকি।
১২টা বাজে অতিথি আসার নাম নেই। রোদের তাপে কেউ দাঁত বের করে ওড়না টেনে ধরেছে রোদ থেকে বাঁচার জন্য। স্যার এসে ধমক মেরে সোজা করে ফেললেন আমাদের।
একজন মাথা পাক খেয়ে বমি করে দিল।
তাকেও টেনে সোজা করে লাইনে দাঁড়াতে বলল। কারণ এখনই অতিথি আসবেন। নো ভং চং।
পানি পিপাসায় কলজে শুকিয়ে ঠনঠনা। কিছুই করার নেই।
দাঁড়িয়ে আছি, মাননীয় অতিথি আসবেন।
অতিথি এলেন। ফুলের মালা, তোড়া আর ডালি থেকে ফুলের পাঁপড়ি দিতে দিতে মাথা ঘুরিয়ে কুলাসহ পড়ে গেলাম মাটিতে। তিন জন শক্ত মেডাম আমাকে টেনে নিয়ে গেলেন কলের পাড়। মাথায় পানি দিলেন।
পানি কানে আর নাকে ঢুকল। হাঁচি আর কাশিতে সোজা হয়ে গেলাম। চোখে মুখে আন্ধার দেখছি আমি।
অনুষ্ঠান শুরু হলো। অনুষ্ঠানে ভাষণ দিলাম।
অনেক কথাই বললাম। এও বলেছি, মাননীয় অতিথি যদি দয়া করে সময় মতো আসতেন, তাহলে আমাদের এত বড় আনন্দ এত বড় কষ্টে পরিণত হতো না।
মাননীয় অতিথি ভাষণে বলেছিলেন, আমি দুঃখিত দেরি হওয়ার জন্য। আসলে দেরি করে আসা মোটেও ঠিক না। বিষয়টা আমার মনে থাকবে।
সবাই দিল তালি।
এখন কোনো অতিথি বা নেতার আগমনে নাকি ইশকুলের ছেলে-মেয়েদের দাঁড় করিয়ে রাখা যাবে না। এমন আইন করা হয়েছে।
এই কথা শুনে আমরা আনন্দে সমানে নাচানাচি করছি। কারণ এখন থেকে আর আমাদের মাননীয় অতিথির আগমনে সীমাহীন কষ্ট করতে হবে না।
এরচেয় আনন্দের আর কী হতে পারে?
ধন্যবাদ মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।