বচনে জুড়ি নেই ক্ষমতাসীন সরকারের কর্তাব্যক্তিদের। সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত সবাই বাকপটু। বিশেষ করে বিরোধী দলের প্রতি আক্রমণাত্মক বক্তব্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের তুলনা হয় না। পাশাপাশি তারা গণমাধ্যম এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার বিশিষ্টজনদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও কটাক্ষ করতে একেবারেই অকুণ্ঠ। রাজনৈতিক শিষ্টাচার, সভ্যতা-ভব্যতার ধার কমই ধারেন শাসক জোটের নেতারা।
শ্লীলতার সীমাও অনেক সময় লঙ্ঘিত হয় খোলামেলাভাবেই। আবার সরকারি দলের তীর্যক ও বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্যের বিপরীতে বিরোধী দল ও বুদ্ধিজীবীদের পক্ষ থেকেও কেউ কেউ মোক্ষম জবাব দেয়ার প্রয়াস পেয়েছেন। আগের বছরগুলোর মতোই বিদায়ী ২০১২ সালে বহু বক্তব্য-মন্তব্য আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর আলোচিত মন্তব্য : গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারওয়ার ও তার স্ত্রী এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি। দেশের আলোচিত ও নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৩ ফেব্রুয়ারি গণভবনে দলীয় এক অনুষ্ঠানে বলেন, আমরা কী মানুষের বেডরুমে পুলিশ বসাতে পারব? সরকারের পক্ষে কারও বেডরুম পাহারা দেয়া সম্ভব নয়।
ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ৭ জানুয়ারি গণভবনে এক মতবিনিময় সভায় বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আপনি এত অস্থির কেন? তত্ত্বাবধায়ক এলেই যে বিরোধীদলীয় নেতাকে চ্যাংদোলা করে ক্ষমতায় বসাবে তার গ্যারান্টি কী? ৭ মার্চ অনুরূপ আরেকটি মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
ওইদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে দলের শোভাযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার খালেদা জিয়াকে কোলে তুলে নিয়ে ক্ষমতায় বসাবে না।
বিরোধী দলীয় নেতা আইএসআইয়ের (পাকিস্তানি সেনা গোয়েন্দা সংস্থা) কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন এমন অভিযোগ তুলে ১৪ মার্চ এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে দেশের কাছ থেকে টাকা নেন আপনি সেদেশেই চলে যান। পাকিস্তানের প্রতি আপনার এতই দরদ থাকে তো সেখানে চলে যান।
এশিয়া কাপ ফাইনালে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের পরাজয় প্রসঙ্গ তুলে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, যিনি (বেগম জিয়া) জীবনে কোনো দিন মাঠে যান না, সেদিন কেন গিয়েছিলেন? হঠাত্ করে তিনি ত্রিক্রকেটপ্রেমীই বা হয়ে গেলেন কেন? কাদের উত্সাহ দিতে তিনি মাঠে গিয়েছিলেন? তিনি যদি মাঠে না যেতেন তাহলে...।
উল্লেখ্য, এই বক্তব্য দেয়ার দুদিন আগে মিরপুর জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে এশিয়া কাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ দুই রানে পরাজিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া দুজনই ওই খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে যান।
পদ্মা সেতুর দুর্নীতির দায় মাথায় নিয়ে পদত্যাগের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইসিটি মন্ত্রী আবুল হোসেনকে দেশপ্রেমিক বলে আখ্যায়িত করেন। গত ২৬ জুলাই লন্ডনে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, আবুল হোসেন প্রকৃত বড় দেশপ্রেমিক। দেশপ্রেম আর সত্ সাহস আছে বলেই তিনি পদত্যাগ করেছেন।
১৫ সেপ্টেম্বর দলের কার্যনিবাহী সংসদের বৈঠকে বিশিষ্ট সাংবাদিক এবিএম মূসার সমালোচনা করে তিনি বলেন, উনাকে (এবিএম মূসাকে) মিডিয়া (টিভি চ্যানেল) দিলে টাকা কোথায় পেতেন? চুরি করতেন না ভিক্ষা করতেন?
১১ অক্টোবর টকশোর আলোচকদের কড়া সমালোচনা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে তো আমরা জানতাম—মধ্যরাতে সিঁধ কাটতে যায়। আর এখন মধ্যরাতে আমাদের গলা কাটতে ও ধ্বংস করতে যায়। ঘুম কামাই দিয়ে রাত জেগে টকশো করে তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। পত্র-পত্রিকার মালিকদের চাহিদা পূরণ না হলেই তারা বেজার হয়ে যান এবং আমাদের বিরুদ্ধে অনেক কথাই লেখেন।
জুন মাসের ২ তারিখে গণভবনে শেখ হাসিনা বলেন, মিডিয়া সত্য-মিথ্যা যাচাই-বাছাই না করেই সরকারের বিরুদ্ধে লিখছে।
এগুলো সম্পূর্ণ ভুয়া খবর। প্রতিদিন সরকারের বিরুদ্ধে না লিখলে, তাদের পেটের ভাতই হজম হয় না। সরকারের বিরুদ্ধে তাদের লিখতেই হবে।
এদিকে বিদ্যুতের লোডশেডিং ও কুইক রেন্টাল নিয়ে সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ যাতে লোডশেডিংয়ের কথা ভুলে না যায় তারজন্য প্রতিদিন দুই ঘণ্টা লোডশেডিং দিতে বিদ্যুত্ বিভাগকে বলেছি।
রামুর বৌদ্ধমন্দিরে হামলার জন্য বিরোধী দলকে দায়ী করে গত ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলায় একটা কথা আছে না—সর্প হয়ে দংশন করে ওঝা হয়ে ঝাড়ে।
আমি বিএনপি নেত্রীকে বলব—আপনি সর্প হয়ে দংশন করেন আর ওঝা হয়ে ঝাড়েন। এই খেলাটা বন্ধ করেন।
গত ২০ ডিসেম্বর যশোরে এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতার সমালোচনা করে বলেছেন, তিনি তেল মারতেই ভারতে গিয়েছিলেন। উনি (খালেদা জিয়া) ক্ষমতায় থাকলে একেবারে ভারতপ্রীতি আর বিরোধীদলে থাকলে ভারত বিরোধিতা। ভারত সফরে গিয়ে টিপাইমুখে বাঁধ ও সীমান্ত হত্যার কথা ভুলে গিয়ে তেল মারায় ব্যস্ত ছিলেন।
খালেদা জিয়া : আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্যের জবাবে গত ২৬ ডিসেম্বর রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পথসভায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, সাপকে বিশ্বাস করা যায় আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করা যায় না। পরে অবশ্য খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দলীয় নেতা সাপের ঝাঁপি মাথায় নিয়ে ঘুরছেন।
স্পিকার আবদুল হামিদ : স্পিকার আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট ২ ডিসেম্বর বান্দবানের নীলগিরিতে রাত্রীযাপন করেন। এর পরদিন জেলা সার্কিট হাউসে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে সেখানে রাত যাপনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘নীলগিরিতে রাতযাপন বাসর রাতের মতো রোমাঞ্চকর। বাসর রাতের স্মৃতির মতো এ স্মৃতি আজীবন মনে থাকবে।
’
অর্থমন্ত্রী মুহিত : সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারি সম্পর্কে ৪ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ৪ হাজার কোটি টাকার জালিয়াতি বড় ঘটনা নয়। এদিকে এ মন্তব্যের জেরে সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা করলে তিনি তার ভুল স্বীকার করে বলেন, এ মুহূর্তে বোধ হয় আমি দেশের সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি। এরপরই নিজের পদত্যাগ গুজব সম্পর্কে অপর এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, অনেকদিন থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু চাইলে তো আর হয় না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেও আর মন্ত্রি হবেন না বলেও তিনি পরে অন্য এক অনুষ্ঠানে জানান।
গত ১৩ জুন শেয়ারবাজারের দুষ্টুচক্রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, আই অ্যাম একদম ফেডআপ।
এর দুদিন আগে সংসদে মন্ত্রী বলেন, শেয়ারবাজার দুষ্টু বাজার। এবং এখানকার সবাই দুষ্টু। না হলে নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার পরও এই বাজারে মানুষজন কেন রয়েছে?
গত ৮ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে তিনি নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের সমালোচনা করে বলেন, দেশের একমাত্র সমস্যা ড. ইউনূস। তার কথায় সততা নেই।
৮ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের বিষোদগার করে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস ফপর দালাল।
সর্বশেষ গত ২৩ ডিসেম্বর বলেন, তিনি অর্থনীতির বিষয়ে সাংবাদিকদের ক্লাস নেবেন।
সাজেদা চৌধুরী : গত ২৭ জুলাই আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে বলেন, রাজাকাররা আইন মেনে একাত্তরে নির্যাতন করেনি। কাজেই এত আইন দেখলে হবে না। বসে বসে আইন কপচালে হবে না। আগেই দু’একটাকে ঝুলিয়ে দিলে ওদের আইন নিয়ে কপচানি বন্ধ হবে।
বিচারাধীন বিষয় নিয়ে এ ধরনের বক্তব্যের কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাজেদা চৌধুরীকে সতর্ক করে দেন। এদিতে গত ২৬ ডিসেম্বর সাজেদা চৌধুরী বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে কালনাগিনী বলে আখ্যায়িত করেন।
সৈয়দ আশরাফ : ১৫ মে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ড. ইউনূসের নোবেল প্রাইজ নিয়ে তাচ্ছিল্য করে বলেন, মাইক্রোক্রেডিট (ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম) করলেন একজন কিন্তু অর্থনীতিতে নোবেল প্রাইজ পেলেন না। নোবেল পাইলেন কোথায়? পেলেন শান্তিতে। কোন যুদ্ধে উনি শান্তি আনলেন? কোন মহাদেশে উনি শান্তি আনছেন? বিশ্বের কিছু দেশ আছে যেখানে গিয়ে চিপস, স্যান্ডউইচ আর হোয়াইট ওয়াইন খেলে জনপ্রিয়তা বাড়ে।
সময়মত নোবেল প্রাইজও পাওয়া যায়।
মতিয়া চৌধুরী : গত বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনায় কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়া বিএনপির নেত্রী নন বৃহত্তর জামায়াতের মহিলা আমির। পৃথক অনুষ্ঠানে মতিয়া চৌধুরী খালেদা জিয়াকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত : ঘুষ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ধরা পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ এপ্রিল রেলভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বিমর্ষ অবস্থায় বলেন, ‘রাজনৈতিক জীবনে অনেককে তীর মেরেছি, কিন্তু তীরের ব্যথা সহ্য করিনি। এবার তীর আমার দিকে।
এতে কী যে ব্যথা তা আমি বুঝতে পারছি। ’
ওবায়দুল কাদের : পদ্মা সেতু নির্মাণে মালয়েশিয়ার সঙ্গে আলোচনার অগ্রগতির প্রসঙ্গ তুলে গত ২৭ এপ্রিল যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের দুয়ারে কড়া নাড়ছে। আমি যে সময় দিয়েছি সেই সময়ের মধ্য পদ্ম সেতু হবে। যারা বলছেন পদ্মা সেতু হবে না। তাদের বলব একটা শিশু জন্ম নেয়ার আগেই আপনারা বলতে শুরু করেছেন শিশুটি কানা হবে, শিশুটি পঙ্গু হবে।
শিশু তো এখনো ভূমিষ্টই হয়নি। চারুকলা ইনস্টিটিউটে পৃথক অনুষ্ঠানে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বর্তমান সরকারের সময়ে এ সেতু নির্মাণে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন পদ্মা সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে দেশের মানুষ পূর্ণিমার চাঁদ দেখবে।
সৈয়দ আবুল হোসেন : পদ্মা সেতুর দুর্নীতির মামলায় সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন দুদকের নজরদারিতে রয়েছেন এমন সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে গত ২০ ডিসেম্বর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নজরদারিতে থাকলে সমস্যা কী? আমি সত্, স্বচ্ছ ও পবিত্র মানুষ। আল্লাহর নজরদারিতেও তো রয়েছি। তার হাতে সততার একাধিক সনদ আছে জানিয়ে বলেন, বিশ্বের কারও কাছে আমার দুর্নীতির প্রমাণ নেই।
সাহারা খাতুন : রমজানের ঈদের আগে গত ৮ আগস্ট সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ঈদে গ্রামের বাড়িতে যেতে ইচ্ছুক জনগণকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ঈদে যারা বাসাবাড়ি বা দোকান বন্ধ রেখে ঢাকার বাইরে যাবেন, তাদের ঠিকমত তালা বন্ধ করে যেতে হবে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি নিজ বাসায় গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি নৃশংসভাবে নিহত হওয়ার পর ওইদিন তত্কালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সাগর-রুনি হত্যাকারীদের খুঁজে বের করা হবে। এছাড়া পরে তিনি ‘স্বাধীনতার ৪০ বছরের মধ্যে বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা সবচেয়ে ভালো আছে—এ ধরনের নানা বিতর্কিত মন্তব্য করেন।
তৌফিক-ই-ইলাহী : গত ৫ জুন সিরডাপ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, কুইক রেন্টালের যারা সমালোচনা করে তারা জ্ঞানপাপী ও রাষ্ট্রদ্রোহী।
শাহজাহান খান : গত ২২ অক্টোবর বেসরকারি টেলিভিশন আরটিভিতে একটি লাইভ টক শোতে অংশ নিয়ে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াকে কুরুচিপূর্ণ ও আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেন।
দুই নেতার বিতর্কের এক পর্যায়ে নৌমন্ত্রী উত্তেজিত হয়ে রফিকুল ইসলাম মিয়ার দিকে তেড়ে যান এবং তিনি বলেন, হারামজাদা তোর চোখ তুলে ফেলব। আগে অনেকের চোখ উপড়ে ফেলেছি। শাজাহান খান সব কিছুই পারে।
কামরুল ইসলাম : গত ২৭ এপ্রিল এক অনুষ্ঠানে আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হককে এক হাত নেন। তিনি বলেন, ‘রফিকুল হকের কথা শুনে আমার স্কুল পড়ুয়া নাতনি বলেছে, বুড়ো ব্যাটা বলে কি!’ কোনো ভারসাম্যহীন ব্যক্তি ছাড়া এ কথা কেউ বলতে পারেন না।
তাকে বলব বালকসূলভ কথা না বলে দায়িত্বশীল কথা বলুন। এর পর ২৫ মে অপর এক অনুষ্ঠানে তিনি রফিক-উল হকের সমালোচনা করে বলেন, আমাদের সমাজের অনেক বয়োবৃদ্ধ, খ্যাতিমান ব্যক্তি রয়েছেন, তারা এখন মিথ্যাচার করছেন, আইনের অপব্যাখ্যা দিচ্ছেন, সাধারণ মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন।
এবিএম মূসা : পদ্মা সেতু, হলমার্ক, শেয়ারবাজারসহ সরকারের বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলে গত সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বাংলাভিশনের টকশোতে অংশ নিয়ে প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসা বলেন, দুর্নীতি ও লুটপাট যে পর্যায়ে গেছে এখন সরকারি লোকজন ও মন্ত্রীদের দেখলেই সাধারণ মানুষের উচিত হবে ‘তুই চোর’, ‘তুই চোর’ বলা। এ মন্তব্যের পরে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা এবিএম মুসার কঠোর সমালোচনা করেন।
বিচারপতি নাসিম : মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক (নাসিম) গত ১৪ অক্টোবর বেলজিয়াম প্রবাসী আইনজীবী ড. আহমদ জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে স্কাইপ সংলাপে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় নিয়ে স্পর্শকাতর মন্তব্য করেন।
স্কাইপ সংলাপে ড. আহমদ জিয়াউদ্দিনকে বিচারের বিষয়ে সরকারে অবস্থান জানাতে গিয়ে নিজামুল হক বলেন, ‘গভর্নমেন্ট গেছে পাগল হইয়া, তারা একটা রায় চায়। ’ বিচারপতির স্কাইপ সংলাপের এই অংশটি গত ৯ ডিসেম্বর দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। উল্লেখ্য, স্বাইপ সংলাপের জের ধরে বিচারপতি নিজমুল হক মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন।
মাহফুজুর রহমান : এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান গত বছরের জুনে লন্ডনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, প্রাইম মিনিস্টার কতই না কথা বলেন।
বেশি কথা বলতে বলতে বাচালের মতো ফট করে মিসটেক (ভুল) হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে এই বক্তব্যের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। এক পর্যায়ে সমূহ বিপদ থেকে বাঁচতে মাহফুজুর রহমান নিজেকে বাচাল বলে তুলে ধরেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।