নিরপেক্ষভাবে লিখেযেতে চাই..
আমি রক্ত দেখেছি; রক্ত...! অন্য কারও নয়। নিজের গায়ের রক্ত। ঠিক গোসল হয়তো করিনি; কিন্তু পা ধয়েছি। আমি ভাবতেও পারিনি সামান্য একটা ব্যথা আর ফুলা এতোদুর গড়াবে। জানুয়ারির ৪/৫ তারিখের কথা।
অন্তত ৬ফুট উঁচু জায়গা থেকে নরম মাটিতে লাফ দিয়েছি। একই দিনে দুপুর দেড়টার ট্রেন থেকেও লাফিয়ে নেমেছি অক্সিজেন শহরের পাশে এক বস্তি এলাকায়। যেখানে রেলের গতি খুবই ধীর হয়ে যায়। প্রতিদিন একই জায়গায় একইভাবে লাফিয়ে ট্রেন থেকে নামি। এককথায় প্রতিদিন যা করি আজও কেবল তাই করেছি।
কিন্তু বিধীবাম। আজ কোথাও একটুখানি আঘাত লেগেছে। যদিও আমি টের পেয়েছিলাম পরে। দু’দিন পর অনুভব করলাম ধীরে ধীরে ব্যথাটা বাড়ছে। একদিন লক্ষ করলাম আঙ্গুলটা ফুলে যাচ্ছে।
হঠাৎ একদিন দেখি পায়ের পাতাও। আর ব্যথা! সে আর লিখতে চাইনা।
তার কিছুদিন পরের কথা। ১৮ জানুয়ারির ২০১৪ইং। চট্টগ্রাম এর প্রাণকেন্দ্র জি.ই.সিতে অবস্থিত শপিংমল ‘সানমার’ এর সিঁড়িলিফ্ট এ থার্ড ফ্লোরে উঠছিলাম।
সিঁড়িটা যখন ফ্লোরের সাথে মিশেগেলো আমার সাথে থাকা ভদ্রলোক তার বুট জুতা সযত্নে বসিয়ে দিলো আমার ফুলা আঙ্গুলের উপর। সেখান থেকে আঙ্গুলের ফুলা অংশে পচন ধরতে শুরু করলো। চলতে থাকলো। আমি বুঝতে পারিনি। স্বয়ং ডাক্তারও না।
সব ডাক্তার একই আচরণ করলো। ঘা শুকানোর জন্য অধিক পরিমাণে হাই পাওয়ারের এন্টিবায়োটিক ঐষধ সেবন করতে দিলো। গাছের গোড়া কেটে আগায় পানি ডালার মতো অবস্থা আরকি! আর সেই ঔষধ সেবন করে করে আমার নাট বল্টু সব ডিলা হয়েগেলো। ঐ দিকে ভার্সিটিতে আমিতো একা। আড্ডার জন্য সঙ্গী পেলেও এই দুর্দিনে একাই থাকার কথা।
বাড়ী থেকেতো ফোনের উপর ফোন যাচ্ছে, “জীবন বাচলে পরে পরীক্ষা”। উপায় না পেয়ে তাই করলাম।
২৩ জানুয়ারি ৩য় বারের মতো আবারো গেলাম ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: চিকিৎসাকেন্দ্র’ এ। কশাই ডাক্তার শালা ড্রেসিং এর নামে আমাকে আস্ত খুন করতে শুরু করলো। ডাক্তারকে বল্লাম, “ছেড়ে দে বাবা কেঁদে বাঁচি”।
ভিক্ষা লাগবোনা তোর কুত্তা খেদা...; জীবন যেখানে ঝুঁকির মুখে পরীক্ষা দিয়ে কী আর হবে। ছুটে চল্লাম লক্ষ্মীপুরের উদ্দেশ্যে। রামগঞ্জে চিকিৎসা করালাম। অনেকে শুনে ঠাট্টা করলো; চট্টগ্রাম থেকে চিকিৎসার জন্য লক্ষ্মীপুরে! তারা হয়তো বুঝতে পারেনি সেখানে ডাক্তার ছিলো চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সহযোগীতার জন্য কেউ ছিলোনা।
শরীরের পচা-গলা অঙ্গ অবশ করা যায়না। ঔষধ কাজ করতে পারেনা এইখানে। তাই ২৪ তারিখের চিকিৎসা হলো; পা উচুতে রেখে সারাদিন শুয়ে থাকতে হবে। হাটা-চলা, উঠা-বসা নিষেধ। ক্ষতস্থানে নেকড়া দিয়ে আগুনের শ্যাক দিতে হবে সারাদিন।
ডাক্তারের পরামর্শে কাজ হলো। একদিনেই পায়ের ফুলা কমেগেলো। ঘা শুকাতে শুরু করলো। বড় উচু ডিগ্রির ভার কাঁদে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো বহু ডাক্তারের কাছে গিয়েছি। কারও মাথায়ই এই বুদ্ধিটা আসেনি।
সবাই বলেছে কোন উপায় নেই। হয়তো পুরো অজ্ঞান; নয়তো পূর্ণ হুশ রেখেই করতে হবে ড্রেসিং এর কাজ। আর পুরো অজ্ঞান করতে চাইলে অন্তত ২০ দিন পুর্ব থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। অন্যথায় চিরকালের জন্য অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পরদিন ২৫ জানুয়ারির কথা।
সন্ধ্যা ৫টার দিকে অপারেশন শুরু হলো। ড্রেসিং করতে গিয়ে অপারেশন! আঙ্গুলের উপরে নিচে মোটা সিরিজ দিয়ে ৬টা ইনজেকশন করা হলো। আঙ্গুল বেচারা দুঃখে পাথর হয়েগেলো। বাম পায়ের সর্ব বামের আঙ্গুলটাকে পুরো ন্যাড়া বানিয়ে দিলো ডাক্তার। হাড়টা রেখে সবগুলো গোস্ত কেটে ফেল্লো।
আর ঔষধ...। ভাত না খেলেও শুধু ঔষধ খেয়ে হয়তো থাকা যাবে এক সপ্তাহ। আর সেই ডাক্তার! তাকে স্মরণ না করলে হয়তো অকৃজ্ঞতা হবে। ডঃ জহিরুল হক। খুব ভালো এবং দ্বীনদার মানুষ।
সবার বেলায় কেমন জানিনা; আমার বেলায় তাকে খুব আন্তরীক হিসেবে পেয়েছি। তার চেম্বার রামগঞ্জ রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে। আল্লাহপাক তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন...।
সেখান থেকে; মানে রামগঞ্জ বোনের বাসা থেকে দু’দিন পর ২৭ তারিখ বিকেলে বাড়ীতে; পরদিন ২৮ তারিখ বিকেল ৪টার গাড়িতে চট্টগ্রামে আসলাম। ২৫ তারিখের পরীক্ষায় Supplement দিয়েছি।
পহেলা ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য ১০৩ কোর্সের পরীক্ষায় অংশ নিতে চাই। আজও পা উঁচুতে রেখে শুয়ে শুয়ে সময় কাটাই। অন্যের উপর ভরসা। যদি কেউ ক্যান্টিন থেকে এনে খাওয়ায় তাহলেই হয়তো খাবো। অন্যথায় উপোষ থাকবো।
এইতো জীবন...।
আজ আমি অসহায়। বড় বেশি অসহায়। দু’দিন আগের সেই শক্তি আর তেজ আজ আমার গায়ে নেই। সারাদিন বই অথবা ল্যাপটপ হাতে শুয়ে থাকি।
দু’দিন আগের আরাফাত আমার কল্পনায় থ্রিডি (3rd dimension) ভার্সনে আড্ডাবাজী করে। দুপুর দেড়টার ট্রেনের ৩য় সাইরেন বাজার পর রুম থেকে দৌড়ে গিয়ে চলন্ত ট্রেনে লাফিয়ে উঠে। মুল রাস্তা এড়িয়ে সংক্ষিপ্ত পথে ধানক্ষেত, শাঁকো, ছাত্রদের আবাসিক কটেজ আর উঁচু নীচু পাহাড়ী পথ পাড়ি দিয়ে ক্যান্টিন আর ডাইনিংএ খেতে যায়। আরো কতো কিছু...। আর নিজের অনিচ্ছায় কেন জানি বেদনায় দীর্ঘ শ্বাঃসগুলো কোথা থেকে ভেসে এসে আছড়ে পড়ে বুকের পরে।
এতোটা শক্তিশালী আর চালাক এই আমি আজ এতোটা অসহায়...। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।
তবুও আশায় বুক বেঁধে রাখি। একদিন সুস্থ হবো নিশ্চয়। সেদিন ছুঁয়ে দেখবো নিজকে।
নিশ্চিত হয়ে নেবো সত্যিই কি আমি সুস্থ? কল্পনার সিঁড়ি এড়িয়ে বাস্তবতার পথ ধরে হাঁটবো। আবারো প্রাণ খুলে হাঁসবো। শহীদ মিনার আর অনুষদ ভবনের সামনের ঝুপড়িতে বসে গলা চেড়ে গাইবো। বন্ধুরা সবাই ডোল বাজানোর নামে টেবিল পিটিয়ে ভাংবে। আমার গান ভালো লাগলে সবাই মিলে আমাকে আস্ত করে খাওয়াবে।
হা হা হা...। এই আন্ডার বেরীর চিন্তা আরি...!
(৩০ জানুয়ারি ২০১৪ ইং এর পোস্ট)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।