অনেকেই জানতেন বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদী বিয়ে করেননি। তিনি চিরকুমার। আসল কথাটা হলো, বিয়ে তিনি ঠিকই করেছিলেন কিন্তু সে বিয়েটা টেকেনি মোদির। মাত্র ৩ বছরের সংসার। এরপরই বিচ্ছেদ।
কিন্তু কাগজে কলমে নাকি সেই বিচ্ছেদ হয়নি। তবে গান্ধীনগরের সুরক্ষা বলয়ে ঘেরা মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে তার কোনো ঘর নেই।
আগামী লোকসভা নির্বাচনে ভারত 'নমো' মন্ত্রে দীক্ষা নিলেও তিনি 'ফার্স্ট লেডি' হবেন না। হাইটেক সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে যখন পক্ককেশ 'যুবা' ভাষণ দেন, কখনো একবারের জন্যও তার নাম সামনে আসে না। কেনই বা আসবে? তিনি যে অতীত!
কিন্ত্ত অতীত কী শেষ পর্যন্ত অতীত রইল? আচমকাই গোটা দেশ জানল, যশোদাবেন নামে গুজরাটের ৬২ বছর বয়স্কা অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষিকা আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই জীবন কাটাতেন, তার সঙ্গেই এককালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন দিল্লির এই মুহূর্তে সম্ভবত সবচেয়ে চর্চিত, নন্দিত এবং নিন্দিত নাম নরেন্দ্র দামোদর মোদী।
আর এই খবরটি সেই অন্তরালবাসিনী নিজেই জানালেন যে, তিনি মোদীর 'স্ত্রী'!
আজকের বৃদ্ধা যশোদাবেনের তখন ছিল ১৭ বছর। বিয়ে হয়েছিল ১৮ বছরের যুবক মোদীর সঙ্গে। তিন বছরের বেশি টেকেনি সেই সম্পর্ক। কাগজেকলমে বিবাহবিচ্ছেদ না হওয়ায় 'নমো-পত্মী' পরিচয়টা এখনো বৈধ, এমনই দাবি করেন যশোদাবেন।
স্বামী এখন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী।
বিয়ে যখন হয়েছিল, তখন অবশ্য রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের এক অনামা স্বেচ্ছাসেবকই ছিলেন। রাজনীতির সিঁড়ি বেয়ে এই জায়গায় পৌঁছতে নরেন্দ্র মোদীকে পেছনে ফেলে আসতে হয়েছে অনেককেই। তার মধ্যে একটা নাম 'স্ত্রী' যশোদাবেন।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অধিকাংশ সময়টাই স্পটলাইটের তলায় কেটেছে মোদীর। কিন্ত্ত দক্ষ প্রশাসক, 'সাম্প্রদায়িক' নেতা, উন্নয়নের ধ্বজাধারী, এ সমস্ত পরিচয়ের পেছনে মোদীর ব্যক্তিগত জীবনে বরাবরই থেকেছে কঠোর লক্ষ্মণরেখা।
তার যে এককালে বিয়ে হয়েছিল তা মোটামুটি অনেকের জানা থাকলেও মোদী নিজে সব সময়ই মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
একটি সংবাদপত্রকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ছবি না ছাপার শর্তে এবার মুখ খুললেন স্বয়ং যশোদাবেনই। মোদীর অতীতের অন্যতম মিসিং লিঙ্ক।
২০০৯ সালে একটি পত্রিকা খুঁজে বার করেছিল যশোদাবেনকে। তখন শিক্ষকতা করেন তিনি।
কিন্ত্ত কিছুতেই সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হননি। কারণ হিসেবে বলেছিলেন, 'ক্ষমতাধর' স্বামীকে ভয় পান তিনি। দলের বা মোদীর তরফে বিয়ের বিষয়ে কথাবার্তা না বলার কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল কি তাকে? একেবারেই না, জানাচ্ছেন যশোদা। বস্তুত বিয়ের তিন বছর পর সেই যে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বাবার কাছে ফিরে গিয়েছিলেন। এরপর থেকে আর একবারও নাকি স্বামীর সঙ্গে কথা হয়নি তার।
ভবিষ্যতেও যে হবে না, তাও মোটামুটি নিশ্চিত। কেন 'ভেঙেছিল' বিয়ে?
না, কোনো ঝগড়াঝাঁটি হয়নি। কিন্তু সংসার বা স্ত্রীর প্রতি কখনও তেমন মনোযোগ ছিল না মোদীর। বিয়ের পর পর স্ত্রীর সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠলেও তা স্থায়ী হয়নি বেশিদিন। যশোদার কথায়, তিন বছরের একত্রবাসে তাদের সম্পর্ক ছিল মোটে তিন মাসের।
বিয়ের পর পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন যশোদা। মোদী বারবারই তাকে ফের পড়াশোনা শুরু করতে বলতেন। কিছু দিন পরই অবশ্য সঙ্ঘের হয়ে প্রচারের কাজে বেরিয়ে যাওয়া শুরু করেন মোদী। স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগও রাখতেন না তিনি।
মোদীর জীবনীকার নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের দাবি, আরএসএস-এর সদস্যদের সে সময়ে বিয়ে-থা করাটা ভালো চোখে দেখা হত না।
রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকেই সম্ভবত স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করেন মোদী। শ্বশুরবাড়িতে আদরেই ছিলেন, কিন্তু বিয়ের বিষয়টা নিয়ে পরিবারের কেউই আর মুখ খুলতেন না।
তিন বছর পর নিজের সিদ্ধান্তেই পাকাপাকিভাবে বাপের বাড়ি ফিরে আসেন যশোদা। পড়াশোনা শেষ করেন। এসএসসি দিয়ে শিক্ষকতায় ঢোকেন।
শুরু হয় তার নতুন জীবন। তবে স্বামীর সব খবরই ঠিকমতো তিনি। পত্রপত্রিকা যা হাতের কাছে পান খুঁটিয়ে পড়েন। টিভিতে ভাষণ শোনেন। মনেপ্রাণে চান, উন্নতি করুন তিনি।
কিন্তু তাকে তো স্বীকৃতি দেননি মোদী। খারাপ লাগে না? তার কথায়, 'না, লাগে না। জানি এটাই আমার ভাগ্য। আর কিছু পরিস্থিতিতে মানুষকে মিথ্যে কথাও বলতে হয়।
যশোদাবেনের মতে, বিয়েটা 'শেষ' হয়ে যাওয়ার পর বরং তার ভাগ্য ফিরেছে।
চাকরি জীবনের শেষে এখন সারাদিন পূজার্চনা নিয়েই থাকেন। মাসে ১৪ হাজার টাকা পেনশন আর দাদাদের ছেলেমেয়েকে নিয়ে হেসেখেলেই কেটে যাচ্ছে দিন। কোনো অভিযোগ নেই তার।
ফের বিয়ে করার কথা ভাবেননি কখনো- এমন প্রশ্নের জবাববে তিনি জানালেন, একবারেই যা অভিজ্ঞতা হলো, তার পরে আর কোনো দিনও করতে চাইব বলে মনে হয়নি। ইচ্ছেটাই ছিল না।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।