কূক্ কূরুক কূউক্, কূক কূরুক......ক্। গাছের ডালে মোরগটি একনাগাড়ে ‘ডাক’ দিয়ে যাচ্ছে। ডাক শুনে নীচে এক শৃগাল এসে হাজির। শৃগাল মোরগকে উদ্দেশ্য করে বলছে, মুয়াজ্জিন সাহেব আজান দেওয়া তো শেষ হল, নেমে আসুন এক সাথে নামাজটি পড়ে ফেলি। মোরগ শৃগালকে নিকটবর্তী একটি ঝোপ দেখিয়ে বলল, ঐ খানে ঈমাম সাহেব শুয়ে আছেন, তাকে ঘুম থেকে তুলুন, তখন সবাই এক সাথে নামাজ পড়ব।
শৃগাল ঝোপের কাছে গিয়ে দেখে সেখানে এক বাঘা কুকুর শুয়ে আছে, অমনি বিলম্ব না করে শৃগাল পালাতে থাকলেন। মোরগ ডাকলেন ‘আবুল হোছেন’ (আরবী ভাষায় শৃগালের ছপ্দনাম) কোথায় যাচ্ছেন? শৃগাল দ্রুততার সহিত বললেন আমার ওজু ভেঙ্গে গেছে, ওজুটি করে আসি.......। এটি আবরী ভাষায় মোরগ সম্পর্কিত প্রচুর গল্পের একটি অংশ মাত্র।
মোরগ নিয়ে অনেক গল্প থাকলেও, তাকে নিয়ে তেমন কারো কৌতূহল নেই। প্রাইমারী স্কুলে গরু, ছাগল, ঘোড়া এমনকি চোরের রচনা পড়ানো হলেও, কখনও মোরগের রচনা পড়ানো হয়না।
কারণ মোরগ এখনও চক্ষুষ্মান মানুষের কাছে মূল্যবান প্রাণী হয়ে উঠতে পারেনি। তাছাড়া মানুষ তার কাছে আলাদা কোন বিশেষত্ব দেখতে পায়না, নিতান্ত ব্যবসায়ীক কারণে মোরগকে পছন্দ করা হয়। গরু, ছাগল, ঘোড়া, গাধা কদাচিৎ মানুষের চুমো খাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে থাকে, তবে মোরগের কপালে মানুষের লাথি ব্যতীত অন্যটি সহজে জোঠেনা। অথছ মানব সভ্যতা বিনির্মাণে ও রক্ষায় মোরগের মত অবদান আর কোন প্রাণীর নেই।
কবি ‘সুকান্ত ভট্টাচার্য’ একটি মোরগের আত্মকাহিনী লিখে লিখনির জগতে অমর হয়ে আছেন।
বাংলাভাষায় তিনিই বোধহয় প্রথম ব্যক্তি যিনি মোরগ কে সাহিত্যের পাতায় স্থান দিয়েছেন। এছাড়া মোরগের খ্যাতির উপর ভর করে কত মানুষ নিজেরা সেরা হয়েছেন তার কোন ইয়ত্তা নাই। তুরস্কে, আফগানে ও মধ্য এশিয়ায় মোরগ লড়াই প্রায় জাতীয় পর্যায়ের খেলার অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশে বাহ্মনবাড়ীয়ার সরাইল এলাকায় এখনও মোরগ লড়াই একটি প্রসিদ্ধ খেলা। মোঘল আমল থেকে শুরু করে দেওয়ানেরা এ খেলা চালু রাখেন, এখন স্থানীয় অধিবাসীরাই এটি খেলেন।
একটি মোরগকে অন্য মোরগের বিরুদ্ধে ক্ষেপীয়ে তুলে লড়াই বাধানো হয়। হার-জিতে মোরগের পাওনা শূন্য, জিত হয় মোরগ মালিকের। লম্বা পা, ঈগলের মত চোখ, কম পালকের দুর্লভ প্রজাতির হাস্লী মোরগ বাংলাদেশে এ খেলার জন্য সেরা। মোরগের নিজস্ব ফ্লাইং কিকের স্টাইল গুলোকে মানুষ বিভিন্ন নামে চিত্রিত করে। ‘নিম, কড়ি, বাড়ি, ফাক, ছুট, কর্নার’ এগুলো বিভিন্ন আঘাতের নাম।
চট্টগ্রামের বন্য অঞ্চলে আরেকটি বুনো মোরগ পাওয়া যায়, তার নাম ‘আছিল’ অসম্ভব তেজী ও যোদ্ধা প্রকৃতির মোরগ, দারুণ উড়তে পারে এরা। এদের পিছনের আঙ্গুলটি ১ ইঞ্চির বেশী লম্বা, দেখতে সূচালো পেরেকের মত। খেঁক শিয়াল, বেজীকে পর্যন্ত এই পেরেক ফুটিয়ে আহত করে, মানুষ তাকে ধরতে গেলে, সে বুঝতে পারবেনা কখন এই পেরেক শরীরে বিঁধিয়েছে, এক টানে হাতের গোশতকে দ্বিখণ্ডিত করে। এরা পাহাড়ি আক্রান্ত হলে নিজেকে বাঁচানোর জন্য পাল্টা হামলা করে, তাই আল্লাহ তাদের পেরেক জোড়াকে অস্ত্র হিসেবে বানিয়েছেন। ভারতের বালেশ্বর ও উত্তর ওড়িষ্যার জনপদে মোরগ লড়াই একটি খুবই জনপ্রিয় খেলা।
এ খেলা এখানে বীভৎস কায়দায় খেলানো হয়। মোরগের পায়ে ষ্টেইনলেস স্টিলের ধারাল নখ ও ছোট্ট ছুরি কায়দা করে বসানো হয়। মোরগ নিজেও জানেনা তার ছোট্ট একটি লাথিতে, প্রতিপক্ষের কি ভয়ঙ্কর পরিণাম হতে পারে! যুদ্ধালো মোরগ যখন প্রতিপক্ষের প্রতি ল্যাঙ্গ মারে, সাথে সাথে প্রতিপক্ষের মোরগের বুক মুহূর্তেই ফালা ফালা হয়ে যায়। কখনও বুঝে উঠার আগেই ধড় থেকে মাথা কিংবা দেহ থেকে পা মুহূর্তের মধ্যে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। নিহত না হওয়া পর্যন্ত এ লড়াই চলে।
বিজয়ী পক্ষ নিহত মোরগের লাশের মালিক হন। অসহায় প্রাণীদের দিয়ে ধী শক্তি সম্পন্ন মানুষ এভাবেই নিজেদের খ্যাতি বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালায়। ১৯৬০ সালে ভারত সরকার পশু ক্লেশ নিবারণ আইন পাশ করে মোরগের লড়াই নিষিদ্ধ করেন। এই আইন পাশের পরে মোরগ লড়াই যেন আরো বহুগুণে বেড়ে যায়।
চীন দেশে মোরগ একটি সম্মানের প্রতীক, সেদেশে ১২টি চান্দ্র রাশিতে এক বছর হয়, তার মধ্যে একটি চান্দ্র রাশির নাম মোরগ।
চীনারা বিশ্বাস করেন মোরগের পাঁচটি গুনের কারণে সে সবার কাছে আদরণীয় ও সম্মানিত প্রাণী। তাদের ধারনা, ‘মোরগের লাল ঝুটি পাণ্ডিত্যের লক্ষণ। শত্রুকে প্রতিহত করতে ভয় পায়না। সে দয়ালু তাই খাবার অন্যকে দেয়। সে প্রত্যূষে সবার ঘুম ভাঙ্গায়।
যথা সময়েই সে তার দায়িত্ব পালন করে’। চীনের কিংবদন্তী নেতা মাও সে তুং আধুনিক চীনের স্বপ্ন দেখে ঐতিহাসিক কবিতায় উদ্ধৃতি দিয়েছেন, ‘মোরগের জোরালো ডাক, চীনা জনগণের জন্য এনেছে মুক্তি ও স্বাধীনতা’। এই কথাটি চীনে প্রবাদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মোরগ নিয়ে পৃথিবীর বহু দেশে ছড়িয়ে আছে রাজ্যের সব উপকথা ও কাহিনী। মানব সভ্যতা বিকাশে মোরগের অবদান জানার আগে, মোরগ সম্পর্কে কয়েকটি কথা পূর্বে জেনে নেওয়া দরকার।
আমাদের দেশে শখ করে মোরগ পালনের প্রবণতা দিন দিন কমে যাচ্ছে বিভিন্ন কারণে। বর্তমানে মোরগ পালন, দিন দিন বাণিজ্যিক কারণে খামারী ব্যবসার অংশ হয়ে যাচ্ছে। ফলে মোরগের অনেক খাসিয়ত, চরিত্র ও ব্যবহার এ যুগের মানব সন্তানের কাছে অজানাই থাকবে। ফার্মে পালিত কম বয়সী মোরগ-মুরগী দেখে মোরগ জাতীর খাসিয়ত বুঝা যাবেনা, তাই দেশীয় মোরগের কিছু চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হল।
মুরগী গৃহস্থের পচা, বাসী, উচ্ছিষ্ট খাদ্য কণা খেয়ে গৃহস্থকে মিতব্যয়ী রাখে।
এছাড়াও বাড়ির আশে পাশের ঝোপ জঙ্গলের পোকা মাকড় খেয়ে গৃহস্থের বাড়তি উপদ্রব কমায়। গৃহস্থের বাড়ীর চারপাশের হালকা পচা মাটি খাদ্য তালাশ কালে নখ দিয়ে উল্টিয়ে, তাকে শুকিয়ে ঝরঝরে করে ও মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। গৃহস্থের ফেলে দেবার মত উচ্ছিষ্ট খানা দিয়েই মুরগী তার বংশ বৃদ্ধি অব্যাহত রাখে, ডিমের উৎপাদন দেয়। সর্বোপরি গৃহস্থের প্রদেয় খাদ্যের সাথে নিজেই সে পরিমাণ খাদ্য জোগাড় করে খায়, যার পুরো সুফল গৃহস্থের ঘরে যায়। মুরগী নোংরা থেকে খাদ্য খেলেও পরিষ্কার যায়গায় পায়খানা করা তার বদ স্বভাবের একটি।
বংশকে স্বাবলম্বী করতে মা মুরগী ২ মাস পরেই বাচ্চাদের পিটিয়ে-ঠুকরিয়ে আলাদা থাকতে বাধ্য করেন। বেয়াদবি ও বিরক্তির জন্য মাথার ঝুঁটিতে, বে-আকলির জন্য লেজের মাথায় ঠোকর মেরে শাসন করে। মা মুরগী নিজে না খেয়েই বাচ্চাদের উদর পূর্তি করায়, গরম রাখে, নিরাপত্তা দেয়। খাদ্য খেতে কিংবা খাদ্য জোগাড় করতে বুদ্ধি শেখায়। মা মুরগী নিজের বাচ্চাদের মাঝে লড়াই বাধিয়ে যুদ্ধে পারদর্শী করায়, সর্বক্ষণ যুদ্ধে লিপ্ত থাকলে, বে আকলীর কারণে লেজের ঢিবিতে ঠোকর মেরে নিবৃত করে।
মুরগীর ডিম্বকোষে ডিম আসলে মনের আনন্দে, কঁঅ... রবে আওয়াজ করে, ঝুটি রঙ্গিন হয়, চোখ হয় লাল। ডিম পারার অব্যাহতি পরেই খুবই চিল্লাচিল্লি শুরু করে, এটা সবার পেরেশানির কারণ হয়। মুরগীর চিল্লানির আওয়াজ শুনে মোরগ পুলকিত হয় ও এক প্রকার উত্তর দেয়, ফলে মুরগীর চিল্লানো বন্ধ হয়। মুরগী চায় তার ডিম পারার খবর মোরগ জানুক।
মোরগের খাসিয়ত একটু ভিন্ন প্রকৃতির।
প্রতিটি নতুন আগন্তুক মোরগকে বাড়ীর পুরানো মোরগদের সাথে লড়াই করে ঠিক করতে হয়, এ বাড়ীর সকল মোরগের জায়গায় তার স্থান কোন পর্যায়ে থাকবে। সে খাদ্যের প্রতি খুবই উদাসীন, বাহিরে দেখতে রাজকীয় আকৃতির মনে হলেও ভিতরে কিন্তু একেবারেই ফাঁকা। মোরগ অসম্ভব কামুক প্রকৃতির, তাই ঘর থেকে বের হয়ে প্রথমেই সে চিত্ত বিনোদনের কাজটি সেরে নেয়। তারপর পুরো শরীর নাড়া দিয়ে ধুলো, বালি, ক্লান্তি, ক্লেশ সব ঝেড়ে নেবে; অসহায় প্রতিদ্বন্দ্বী কাউকে দেখলে তাড়া দেবে, অতঃপর ‘কূক কুড়ূক কুক’ বলে ডাক দিবে; তারপর খানায় মনোনিবেশ করবে। ততক্ষণে গৃহস্থের থালায় খানা শেষ! বাহিরে ছিটকে পড়া খাদ্য কণা দু একটি খেয়ে উপোষ থাকবে, আবারো বাহাদুরী দেখিয়ে কূক্ কুড়ুক কূক্ বলে হাঁক ছাড়বে।
দৈবাৎ কোন একটি খাদ্য কণা সে যদি পেয়ে যায়, সেটা নিয়ে সে কট্ কট্ আওয়াজ করে, নিঃসঙ্গ মুরগীকে প্রলুব্ধ করে, কে খেতে আগ্রহী তা বুঝতে চায়। যে মুরগী খেতে আগ্রহী তাকে প্রাপ্ত খাদ্যকণা উপহার দেয়, মোরগের যদি সে মুরগীকে পছন্দ হয় তাহলে তাকেও ভালবাসবে বলে নিশ্চিত করে। ভালবাসার নিদর্শন স্বরূপ মোরগের একটি পাখা পায়ের সাথে লাগিয়ে, মাটি বরাবর বিছিয়ে মুরগীর চারিদিকে অর্ধ চন্দ্রের মত বৃত্ত বানায়। মানে তুমি আমার দখলে, তোমার উপর কেউ নজর দিলে কপালে খারাবী আছে। প্রতি আধা ঘণ্টা, এক ঘণ্টা পর পর তার কাম ভাব জেগে উঠে, চিত্ত ঠাণ্ডা না হওয়া অবধি তার পেরেশান যায়না।
পূর্ব আকাশের লালিমা যখন দেখা দেয় তখন সে পুরো মানব জাতিকে ঘুম থেকে ঢেকে তোলে, সে বদ্ধ ঘরে থেকে আকাশের লালিমা দেখেনা। আল্লাহ তাকে এমন জ্ঞান দিয়েছেন যদ্বারা সে সকাল-সন্ধ্যা-রাত্রির তফাৎ চোখ বন্ধ করেই বুঝতে পারে। এটা মানবজাতির জন্য এক অসাধারণ সহযোগিতা। ছোট কালে ঘড়ি দুর্লভ বস্তু ছিল, পুরো গ্রামে একটি ঘড়ি মেলা দায় ছিল। মেঘযুক্ত রোজার সন্ধ্যায় জেঠাই মা বলতেন, বাহিরে গিয়ে দেখ্তো শরীরের লোম দেখা যায় কিনা? না বললে বুঝত ইফতারির সময় হয়েছে।
বৃষ্টি-যুক্ত রোজার বিকালেই সন্ধ্যার আঁধার নেমে আসত, তখন জেঠাইমা বলতেন দেখতো মোরগ-মুরগী তাদের ঘরে ঢুকতে চাচ্ছে কিনা? উত্তর হ্যাঁ হলে বুঝত ইফতারির সময় হয়েছে। কখনও জেঠাইমায়ের সহযোগিতা হবার জন্য প্রশ্ন করতাম, মুরগীকে জোড় করে তাদের ঘরে ঢুকিয়ে দেব কিনা? তিনি বলতেন না না ও কাজ করোনা তাহলে তো রোজাটাই নষ্ট হয়ে যাবে। মোরগ-মুরগী স্ব-ইচ্ছায় যদি তাদের জন্য বানানো নির্দিষ্ট ঘরে ঢুকে তাহলে বুঝবে সন্ধ্যা হয়েছে এবং ইফতার করা যাবে।
ছোটকালে আমাদের ঘরে ৩ জন চাকরানী ২ জন চাকর সারা বছর থাকার পরও। মা আমাকে নিজেদের হাঁস-মুরগীর সেবক বানিয়েছিলেন।
ঘরে বোন না থাকাতে সকাল সন্ধ্যায় হাঁস-মুরগীকে খানা দেওয়া, ঘরে ঢুকানো, ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা, ডিমে তা দেবার জন্য বাসা তৈরি করা, গুনে গুনে হিসাব রাখা আমার কাজ ছিল। মেঝ ভাইয়ের কাজ ছিল গরু-ছাগলের যাবতীয় দেখা শোনা করা। চাকর-চাকরানী থাকা সত্ত্বেও আমাদের দিয়ে মা এগুলো নিয়মিত করাতেন। হঠাৎ অনেক মেহমান যদি বাড়ীতে আসত, এক ঘণ্টার মধ্যেই সবার জন্য খাদ্য প্রস্তুত করা সম্ভব হত, কেননা প্রচুর পরিমাণ হাঁস-মুরগী-ডিম ঘরেই থাকত, মাছের কথা বাদ দিলাম। সকল গৃহস্থের পরিবার এমনই ছিল, ফ্রিজ না থাকলেও মেহমান নিয়ে দুঃচিন্তা হতনা।
মা বলতেন, এগুলো না জানলে বাবার সম্পদের সুখের গুঁতোয় নাকি সংসার জীবন ধ্বংস করে দিব। আমি অবনত মস্তকে মায়ের এ আদেশ পালন করতে বাধ্য ছিলাম। তখন মোরগের কামুক প্রবৃত্তি দেখে ভাবতাম আল্লাহ মোরগকে এমন খোলামেলা বেতমিজ বানানোর হেতুটা কি?
পৃথিবীর সবাই ডিম পারে, আর সব স্ত্রী দেহে রয়েছে ডিম্বাশয়; ডিম্বাশয়ে জন্মে ডিম। ফুল, ফল, প্রাণী, মানুষ সবার ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য। ফুলের ডিম খোলা থাকে, মানুষ ও প্রাণীর ডিম পেটে থাকে, ব্যবহার না হলে নির্দিষ্ট সময়ে নষ্ট হয়ে যায়, তা কেউ দেখতে পায়না।
মাছের ডিম গুচ্ছ অবস্থায় থাকে, ডিম বের হবার পর নিষিক্ত হয়, অনিষিক্ত ডিম কাজে আসেনা। হাতির ডিমেব ব্যাস ৩ সেন্টি হলেও মুরগীর ডিমের ব্যাস কখনও ৬ সেন্টি পার হয়ে যায়। দৈহিক আকার আকৃতি ভেদে হাঁস-মুরগীর ডিম অপেক্ষাকৃত বড়। নিষিক্ত-অনিষিক্ত উভয় অবস্থায় মুরগীর ডিম মানুষ ব্যবহার করতে পারে। সব প্রাণীর ডিম পেটের ভিতরে থাকে, সেখানেই নষ্ট হয়, আর হাঁস-মুরগীর ডিমকে বাহিরে আনার এই প্রক্রিয়া মহান সৃষ্টিকর্তা একমাত্র মানুষের উপকারের জন্যই করেছেন এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিরাট অনুগ্রহ।
আল্লাহ এই ডিমের উপর মানুষের হাতকে করেছেন ক্ষমতাবান। তাদের ইচ্ছামত সময়ে এগুলো ফুটিয়ে, সদ্য বাচ্চা বের করে নিজেদের চাহিদা পূরণ করানো হচ্ছে। এই পৃথিবীতে মানুষ প্রতিদিন প্রতিনিয়ত খুন করে চলছে কোটি কোটি প্রাণী, মানুষের স্বদিচ্ছায় পৃথিবীতে অকালে মৃত্যুবরণ কারী একমাত্র প্রাণীটির নাম মোরগ। দৈনিক এত বেশী পরিমাণ মৃত্যুবরণকারী প্রাণী হিসেবে মোরগের স্থানে দুনিয়াতে দ্বিতীয়টি নেই। ফার্মের একটি বাচ্চা, তার যৌবন আসার অনেক আগেই মৃত্যুমুখে পতিত হতে হয়।
একটি খাঁচায়, এক মাসের ছোট্ট ক্ষণস্থায়ী জীবনে, মায়ের অনাদরে; দুনিয়ার শ্রেষ্ঠজীব মানুষের কঠিন বজ্র-তালুতে বিলীন হচ্ছে তাদের অসহায় জীবন। মানুষের ক্ষোভের যেন এখানে শেষ নয়, তাদের নরম মাংসকে সিদ্ধ করে, চিবিয়ে, ছেঁচিয়ে, পুড়িয়ে, জ্বালিয়ে, ভর্তা করে খায়, আর পরিতৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে। দুনিয়ার ৬৫০ কোটি মানুষ, দৈনিক তাদের জঠর জ্বালা নিবারণ করছে শত শত কোটি মুরগীর ডিম ও তাদের জীবন দিয়ে। মানব সম্প্রদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় আমিষের জোগান দিয়ে মানব জাতিকে জীবিত রেখেছে এই মোরগ। সুতরাং অস্বীকার করার ন্যূনতম কোন সুযোগ নাই, মানব সভ্যতা রক্ষায় মোরগের আত্মত্যাগ ও তাদের অবদানের কথা।
দুনিয়ার বেকারিগুলো অচল হয়ে পড়ত, বিস্কুট, কেক, রুটি, পাউরুটি, বন, মিষ্টি সহ হাজার হাজার প্রকারের খাদ্য সামগ্রী তৈরি হতনা ডিমের অভাবে। দীর্ঘমেয়াদী, সহজে বহনযোগ্য, সুস্বাদু আমিষ হিসেবে মুরগীর ডিম যদি না থাকত, তাহলে মানবজাতি বড় কেকায়দায় থাকত। মুরগীর গোশত যদি না থাকত, কেন্টাকী, বার্গার, ম্যাকডোনাল্ডর্স সহ হাজারো কোম্পানির জন্ম হতনা। ফাস্ট ফুড বলতে কোন কথা ডিকশনারিতে থাকত না। স্যান্ডউইচ, হট ডগ, বিভিন্ন নাগেটস সহ মুরগীর মাংস নির্ভর আরো হাজারো খাদ্য সামগ্রীর কোম্পানির সৃষ্টি হত না।
গরীব-মিসকিন মেহনতি মানুষের গরু-ছাগলের মাংস খাওয়া খুবই দুষ্কর ও দুঃসাধ্য। তারা এই মুরগীর মাংস দিয়ে নিজেদের মাংসের চাহিদা নিজেদের ক্ষমতানুযায়ী পূরণ করে থাকে। মানবজাতির আমিষের চাহিদা মেটাতে পুরো ধনী-গরিব সবাইকে, ঠেস দিয়ে ধরে রেখেছে মোরগ। সৃষ্টির এই নিপুণ কারুকাজ আল্লাহ একমাত্র মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেছেন ‘কৌতুক কিংবা তামাচ্ছলে তিনি কিছুই সৃষ্টি করেন নাই।
আর সকল সৃষ্টিই একমাত্র মানুষের কল্যানার্থেই বানিয়েছেন’। তারা ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক নিজের অজান্তে মানব সম্প্রদায়ের জন্য কল্যাণ করে যাচ্ছে। মুরগীর গোশত দিয়ে মৃত মানুষের জেয়াফত দেয়া হয়, কখনও মুরগীর জেয়াফতের কথা শুনিনি। তাই আসুন আমরা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হই, তার দেওয়া নেয়ামত ভোগ করে শোকরিয়া জ্ঞাপন করি। মোরগ সহ সকল সৃষ্টির প্রতি দয়ালু ও স্নেহবান হই, তাদের কে হেফাজত করি উত্তমভাবে।
আল্লাহ মোরগ জাতিকে সৃষ্টি না করলে মানুষ অভাবগ্রস্ত হত, “আর মোরগ যদি অসম্ভব কামুকই না হত, তাহলে দৈনিক কোটি কোটি মোরগের চাহিদাও পূরণ হতনা”।
লেখক আমীরাত প্রবাসী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।