আমি ভাল েছেল নতুন বছর উদযাপন হোক বা ঈদ, বাঙালির দীর্ঘ ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে মোরগ লড়াই। গ্রামবাংলার বিখ্যাত এই লড়াই ছাড়া কোনো উৎসব যেন জমতেই চায় না। আর সেই মোরগ যদি হয় সরাইলের ‘আঁচিল’ মোরগ তা হলে তো কথাই নেই। অনেক সময় এসব মোরগের জয়-পরাজয়ের সাথে জড়িত থাকে পুরো গ্রামের সম্মানের বিষয়ও। খাসা, পারাং জাতের ধান, ছোলা ও পোস্তা বাদাম খাইয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করা হয় এসব মোরগকে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের এই মোরগের খ্যাতি দেশজুড়ে। শুধু আভিজাত্যের জন্যও ওই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পালিত হয় এই মোরগ।
সরেজমিনে সরাইল গিয়ে এবং বিভিন্ন বই থেকে জানা গেছে, মোগল আমলে মনোয়ার আলী নামে সরাইলের এক দেওয়ান সুদূর ইরান থেকে এক প্রকার যুদ্ধবাজ মোরগ এ দেশে নিয়ে আসেন। আবার অনেকের মতে, রায়বেরেলি থেকে ওই দেওয়ান মোরগটি এনেছিলেন, যা পরবর্তী কালে আঁচিল বা আসলি মোরগ নামে পরিচিতি পায়। দেওয়ানদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় মোগল আমল থেকে এ অঞ্চলে মোরগ লড়াইয়ের গোড়াপত্তন ঘটে।
এখন দেওয়ানদের অস্তিত্ব না থাকলেও রয়ে গেছে আঁচিল মোরগ আর এদের জমজমাট লড়াই। নিম, কারি, বাড়ি, ফাঁক, ছোট আর কর্নারে (যুদ্ধের সময় যেসব কায়দার মোরগ পরস্পরকে মার দেয় তার নাম) একে অপরকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে এরা।
মোরগ পালনকারীরা জানালেন, আঁচিল মোরগ অত্যন্ত দুর্ধর্ষ ও কষ্টসহিষ্ণু হয় । এদের মধ্যে গলায় পালক না থাকা মোরগগুলো বেশি জেদি হয়ে থাকে। সাধারণত এসব মোরগের পা, গলা ও দেহ লম্বা হয়।
নখগুলোকে বিশেষ কায়দায় ধারালো করে তোলেন মালিকরা। কারণ যুদ্ধের সময় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এই নখকে মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বেশ কিছু পরিবার এখনো পালন করে এ মোরগ।
সরাইলের ওচালিয়াপাড়া গ্রামের উজ্জ্বল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ঈদ এবং বর্ষবরণ ছাড়াও মার্চ-এপ্রিলে মোরগ লড়াইয়ের ধুম পড়ে। ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে খেলায় অংশ নিতে ডাক পড়ে এখানকার মোরগ মালিকদের।
তবে লড়াইয়ে নামার আগে কমপক্ষে তিন মাস প্রশিক্ষণ দিতে হয় মোরগগুলোকে। লড়াইয়ে বিজয়ী মোরগকে কয়েক গুণ বেশি দাম দিয়ে মাঠ থেকে কিনে নিয়ে যাওয়া হয়। আবার সরাইল এসেও কিনে নিয়ে যান অনেকে। একটি ভালো যোদ্ধা মোরগের দাম পড়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। এক দিনের একটি বাচ্চাও ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয় বলে তিনি জানান।
একই গ্রামের ইনসান আলী নামের আরেক মোরগ-মালিক জানান, আঁচিল মোরগ বছরে তিন থেকে চার বার ডিম পাড়ে। প্রতিবারে ১০-১২টি ডিম দেয় এ মোরগ। একটি ভালো যোদ্ধা মোরগের উচ্চতা ২০-২৫ ইঞ্চি হয়ে থাকে। সাদা ও লাল মোরগের দাম সবচেয়ে বেশি। সম্প্রতি একটি মোরগ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন বলে জানালেন তিনি।
তাছাড়া ৭০ হাজার টাকায় বিক্রির উপযুক্ত মোরগও তার কাছে রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
সরাইল উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মুজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বিলুপ্তপ্রায় এই আঁচিল মোরগের বংশবৃদ্ধি ও সংরক্ষণের জন্য সরাকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. ওমর ফারুক বিষয়টি নিয়ে বছর খানেক ধরে কাজ করছেন।
collected ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।