আমি হাজারবার জেনেশুনে হেরে গিয়েছি,কেবল তোমায় একবার জিতে নেব বলে!
মারিও জিয়ানলুইগি পুজো বা মারিও পুজো,লেখনীতে তুলে এনেছেন প্রাচীন ইতালীয় পরিবারগুলোর দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্য। কেবলমাত্র ভেতরকার লোমহর্ষক ঘটনাগুলিই নয়,তার সাথে সাথে দেখিয়েছেন মানুষের ভেতরকার নানান পরিবর্তন-পরিবর্ধন। ষাটের দশকে দ্য সুপারম্যান,দ্য ডার্ক এরিনা,দ্য ওমেত্রা,দ্য সিসিলিয়ান,দ্য ফরচুনেট পিলগ্রিম,দ্য লাস্ট ডন-এর মত অসংখ্য ক্লাসিক উপহার দিয়েছেন আমাদের। তবে ইতিহাসে তিনি নন্দিত হয়ে আছেন “দ্য গডফাদার” নামে। কর্লিওনি পরিবারের সুড়ঙ্গের মধ্যে পাঠককে নিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন অবলীলায়।
মানুষের একটি মাত্র “নিয়তি” কিভাবে মানুষকে তার ভবিষ্যতের দিকে টেনে নিয়ে যায় তাও বর্ণনা করেছেন আড্ডার ভাষায়।
মারিও পুজোর জন্ম ম্যানহাটান,নিউইয়র্কে। সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন ২য় বিশ্বযুদ্ধে। তারপর থেকে কেবল ইতিহাস। কিন্তু আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বা বিখ্যাত বলিউড খুব যত্ন করে তার আইডিয়াগুলোকে নিজেদের কাজে লাগাচ্ছে।
এবং সেটা প্রায় মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে রেখে।
প্রকাশ ঝা পরিচালিত বহুল আলোচিত ছবি “রাজনীতি”-অজয় দেবগনের অংশটুকু খুব যত্ন করে “মহাভারত”-এর কর্ণের সাথে মিলিয়ে দেওয়া হয়ে হয়েছে। সেটা প্রকাশ ঝা নিজেই স্বীকার করেছেন। কিন্তু বাকিটুকু?দ্য গদফাদারের আধুনিক সংস্করণ। রাজনীতি একটু বেশি মিশিয়ে দেওয়ার জন্য মানুষ এটাকে গান্ধী পরিবারের কাহিনী ভাবতে পারেন।
এবার একটু মনোযোগ দিয়ে মিলিয়ে নিন বিষয়গুলো। সনি কর্লিওনির অবৈধ সম্পর্ক,বেসামাল রাগ আর আগামী নেতা হবার অদম্য আকাঙ্ক্ষার সাথে কি অর্জুন রামপালের অবৈধ সম্পর্ক,দুর্বিনীত ব্যবহার মেলে না?নানা পাটেকার খুব ভালভাবেই টম হেগেনের চরিত্র অনুসরণ করে গেছেন। যুদ্ধকালীন সমস্যাবলি আর নানান হুমকির মধ্যে তারা দুজনেই ছিলেন কোণঠাসা। পরবর্তীতে রণবীর কাপুর আর মাইকেল কর্লিওনি যেন একই মানুষ হিসেবে দেখা দিয়েছে। প্রচণ্ড প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেছে নিজ নিজ পরিবারের হারানো সম্মান পুনরুদ্ধার করতে।
পরিবারের হিসেবের বাইরে থাকা দুইজন সদস্যই শেষমেশ পরিবারের হাল ধরতে বাধ্য হয়। ক্যাটরিনা কাইফ অবশ্য মাইকেলের স্ত্রীর চেয়ে অনেক আলাদা। এখানেই একটা টুইস্ট ছিল মাত্র। কিন্তু মাইকেলের ইটালি বসবাসকালীন প্রেম,এপোলোনিয়া আর রণবীর কাপুরের ফিয়ান্সের মৃত্যু একইভাবে হওয়াটা অনেকটা সহজ করে দিয়েছে নকল ধরতে পারার অংশটুকু। যাই হোক,মিল পাওয়া যেতেই পারে।
কিন্তু এতগুলো মিল একসাথে দেখা দিলে কাহিনীর স্বকীয়তা কতটুকু থাকে তাও প্রশ্নবিদ্ধ।
সানি লিওন সম্বলিত ছায়াছবি “শ্যুট আউট এট ওয়াডালা”-তে এত ভদ্রতার পাশ দিয়েও যাননি পরিচালক। প্রায় হুবহু “দ্য সিসিলিয়ান” থেকে কেটেকুটে তুলে দিয়েছেন। সালভাতর তুরি গুইলিয়ানোর ভুমিকায় জন আব্রাহাম(মনিয়াসুরভে) আর আসপানো পিসিওতার ভূমিকায় কাপুরকে বসিয়ে দিয়ে ক্ষান্ত দেননি তিনি। সাথে পাসাতেম্পো,তারানোভার মত কয়েকজনকে জুটিয়ে নিয়েছেন।
শুরুতেই সানি লিওনের কথা বললাম এই কারণে যে,এই আইটেম সং ছাড়া কাহিনীতে আর কিছুই নতুন নেই। দুই ক্ষেত্রেই নায়ক একজন উদীয়মান তরুণ যে আইন নিজে তৈরি করে এবং নিজেই সেটার বাস্তবায়ন করে। তবে দ্য সিসিলিয়ানের যে দীর্ঘ এবং ঐতিহাসিক পটভূমি,রাজনৈতিক যে নোংরা হস্তক্ষেপ যুগে যুগে সকল দেশে চলে আসছে তা অনুপস্থিত ছবিটিতে। অনিল কাপুর বেশ সাহসের সাথে ইন্সপেক্টর ভ্যালার্দি সেজেছেন। পার্থক্য দুই জায়গায়,নায়ক মনিয়াসুরভে তার একগুঁয়েমির জন্য মারা যায়,তুরি গুইলিয়ানোও ঠিক একই কারণে।
কিন্তু তুরির বন্ধু আসপানো পিসিওতা যে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল সেটি ছায়াছবিতে নেই। মনটিলেপ্রে আর পালার্মো শহরের যে মুগ্ধ বর্ণনা দেওয়া হয়ে উপন্যাসে তা বেশ ভালোভাবে কাজে লাগানো হয়েছে চিত্রগ্রহণের সময়। কিন্তু ডন ক্রোসের জায়গায় আরও ভালো কাউকে তুলে আনা যেত। সে যাই হোক ছবিটা দেখলে আর “দ্য সিসিলিয়ান” পড়লে যে কারো মাথায় এই খটকা আসতে পারে।
এভাবে মেইন আইডিয়াটুকু মেরে দেওয়ার কারণ কি?মারিও পুজো উপমহাদেশে খুব একটা পরিচিত নন।
তাই তার কাহিনী থেকে একটু(!) নিয়ে কাজ করা দোষের কিছু নয়। কিন্তু এভাবে ঘটনার সাথে ঘটনা জোড়া লাগিয়ে খিচুড়ি তৈরি করার মানে কি?
যাই হোক বলিউডের নির্মাতারা হয়ত আর কাহিনী খুঁজে পাচ্ছেন না। নিজের দেশের তামিল-তেলেগু-বাংলা রিমেক করে আর কতদিন চালানো যায় বলেন তো?তার চেয়ে একটু বুদ্ধি খাটিয়ে চুরিই না হয় করলো। এতে দোষের কি?কিন্তু বাছাধনরা এভাবে আর কতদিন?
ছবি কৃতজ্ঞতাঃগুগল ভাইয়া!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।