আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কুয়েতে আমাদের দুতাবাস ও তার রাজ কর্মচারীবৃন্দ



আমার জানামতে বিদেশে যেকোন দুতাবাসের কাজই তাদের দেশের লোকদের বিভিন্ন সমস্যা দেখাশুনা থেকে সবধরনের সাহায্য-সহযোগীতা করা। সাধারন মানুষদের সাথে থাকবে ভদ্র এবং সহযোগীতামূলক আচরন। (যাদের ট্যাক্সের টাকায় কর্মচারীদের বেতন আসে। )কিন্তু দেখা যাচ্ছে এইসব কর্মচারীদের সুসম্পর্ক শুধু কিছু ব্যাবসায়ী,বিভিন্ন দলীয় নেতা এবং যারা উচ্চবেতনের চাকুরীজীবি তথা প্রভাবশালী। তাইতো বিভিন্ন দলীয় প্রোগামে এদের বিভিন্ন হোটেলে দেখা যায় ফিতা কাটতে বা প্রধান অতিথী হতে।

কিন্তু যেখানে বিরাট সংখ্যক শ্রমিক যারা নিম্নআয় করে থাকে,(স্বভাবতই কাপড়-চেহারা রুক্ষ) সহ সাধারন লোকেরা যে সহযোগীতার বদলে যেধরনের ব্যাবহারের শিকার হন,তা মধ্যপ্রাচ্যে চাকুরীরত যেকোন শ্রমিককের কাছেই খোজ নিলে জানা যাবে। ধমক,খারাপভাষা থেকে ধাক্কা দেওয়া পর্যন্ত এদের জন্য যায়েজ। কারন এইসব কর্মচারীদের জানা আছে এই বিরাটসংক্ষক লোকদের সমস্যা সমাধান একমাত্র দুতাবাসই করতে পারে। পাসপোর্ট বানানো,রিনিও,ড্রাইভিং লাইসেন্স সত্যায়িত থেকে বিয়ে কাবিন পর্যন্ত। পাসপোর্টে যদিও রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরসহ নির্দেশ থাকে যে বাহককে যেকোন ধরনের সহযোগীতা দিতে দুতাবাসগুলি বাধ্য।

কিন্তু আমাদের দুতাবাস কর্মীরাতো বাংলাদেশী না। তারা ভিনগ্রহের বা অতি উচ্চ পরিবারের সদস্য। তাই তো সাধারনতঃ যারা যায় "বিশেষ শ্রেনী ছাড়া" তাদের সাথে ব্যাবহারতো দুরের কথা কথা যে বলে তাই যেন যথেষ্ট।
এতক্ষন তো ভুমিকায় ছিলাম,এবার আসি নিজের কথায়। আমার আসার প্রথমদিকেই এই অভিজ্ঞতা হওয়াতে আমি পারতপক্ষে দুতাবাসের দিকে পা বাড়াতাম না।

পাসপোর্ট বানানো বা রিনিও দালালদের দিয়েই করাতাম। ৫\১০ টাকা বেশী লাগতো। তবুও অযথা হয়রানী আর অপমান থেকে বাচার তাগিদেই এই পথ বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু সেদিন আর পারলাম না প্রোয়োজনের তাগিদেই নিজে গেলাম। শুধু দুতাবাসের একটা সীল লাগবে।

বাংলাদেশের নোটারী পাবলিকের সাইন-সীল,বিচার বিভাগীয় সত্যায়ীত সাইনসীল,বাংলাদেশের কুয়েতী দুতাবাস সহ উভয়দেশের পররাষ্ট্র দফতরের সাইন-সীল সবই আছে শুধু নেই বাংলাদেশ দুতাবাসের। যাইহোক এরজন্যই গেলাম। লাইন শেষ হতেই আমার পেপার কাউন্টরের "ভদ্রলোকের" হাতে দিয়ে জানালাম কি চাই। উনি নেড়ে-চেড়ে আরেকজনের হাতে দিয়ে বললেন সেখানে যান। এই "ভদ্রলোক"ও জনতে চাইলেন কি চাই? জানালাম সবকিছু আছে শুধু আপনাদের একটা সীল লাগবে।

উনি বললেন ঠিক আছে তবে আপনি যদি পিছনের অফিসে আরেক কর্মচারী আছে তার অনুমতি আনেন তাহলে ভাল হয়। গেলাম সেখানে। কাগজ দেখে উনি হঠাৎ করেই রেগে চিরবিড়িয়ে ফোন করে কাউন্টার প্রথমব্যাক্তির তর্ক-বিতর্ক করে কাগজপত্র আমার হাতে দিয়ে বললেন আমি শুধু মৃতদেহের বেলায় সাইন করি আপনি ফেরত যান। আবার কাউন্টারে লাইন শেষ করে পেপার জমা দেওয়ার পরে "ভদ্রলোক" জানতে চাইলেন ওহিদ সাব কি বললেন? দ্বিতীয় "ভদ্রলোক" ঠিক যা বলেছেন তাই জানালাম। উনি কম্পিটারে এন্ট্রি করে তিন দিনার ফি নিয়ে সমস্ত কাগজ ফিরিয়ে দিচ্ছেন দেখে আমি জানতে চাইলাম সীল কোথায়? জানালেন সেটা তার কাজ না।

প্রশ্ন করতেই আবার পিছনে পাঠালেন। সালাম দিয়ে টেবিলের সামনে দাড়াতেই জিজ্ঞাসুনেত্রে তাকাতে সব খুলে বললাম। আবার প্রথম ব্যাক্তির সাথে তর্ক-বিতর্কের পর কেউ কাউকে পরাজিত করতে না পেরে সমস্ত দোষ আমার ঘাড়ে ফেলে আবার কাউন্টারে ফেরত। ততক্ষনে বুঝে ফেলেছি আমার কাজের পরিনতি কি হবে। যাইহোক কাঊন্টারের "ভদ্রলোক"ও আমাকেই দোষী করলেন।

জনে চাইলাম এখন কি করা? জানালেন আমার কাগজের সীল-ছাপ্পড় যা আছে তার মেয়াদ শেষ। আবার নুতন করে সব করতে হবে,যা জীবনে প্রথম শুনলাম। বুঝলাম "ঝানু লোক" জবাবে বললাম আপনার থেকে বেশী বেতন এবং সন্মানজনক চাকুরী করেও লোকদের অনেক বেশী সাহায্য করে থাকি। আর বের হওয়ার পথে মহামান্য রাষ্ট্রদূতের মার্সিডিস গাড়ী দেখে ভাবলাম এদের পিছনে কিসের এতো জোর? সমাজিকতো নাই, কারন আমি নিশ্চিত বংশের মাঝে এরাই কম-বেশী শিক্ষিত হয়ে ঘুষ দিয়ে পররাষ্ট্র দফতরের মাধ্যমে বিদেশে বিভিন্ন দুতাবাসে চাকুরী। কারন আম গাছে কাঁঠাল ফলে না।

। তা না হলে দুতাবাস প্রাপ্ত ফ্লাটের তিনরুমই ভাড়া দিয়ে ড্রয়িংরুমে নিজে থাকতো না। ।
বিঃদ্রঃ কাউকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে আমার এ লেখা নয়, তবু কারো আত্মীয়-স্বজন হয়তো চাকুরী করেন,তাদের জন্য আমি দুঃখিত।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.