অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আওয়ামী লীগের কক্সবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল দুদক সদর দফতরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা ও উপপরিচালক আহসান আলী। পাশাপাশি সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খানকে জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তলব করেছে দুদক।
এদিকে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আবদুর রহমান বদি সাংবাদিকদের বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমি সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করব। একই সঙ্গে ইয়াবা ব্যবসায় নিজের কোনো সম্পৃক্ততা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমার নাম ভাঙিয়ে ইয়াবা ব্যবসা করছে ছোট ছোট কিছু ইয়াবা ব্যবসায়ী।
' গতকাল সকাল ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন এমপি বদি। গণমাধ্যমে আসা নিজের আয়করের তথ্যকে মিথ্যা দাবি করে তিনি বলেন, 'আমি হলফনামায় যেভাবে তথ্য দিয়েছি গণমাধ্যমে সেভাবে আসেনি। আমার সব টাকা বৈধ। আমি ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান।
যা উপার্জন করেছি নিয়মিত তার আয়কর দিয়েছি। বদি আরও বলেন, কিছু সাংবাদিক বিরোধী দলের সঙ্গে গোপন অাঁতাত করে আমার বিরুদ্ধে লেগেছেন। এ ছাড়া আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আমাকে ঘায়েল করার জন্য মিথ্যা অপপ্রচার করছে। এমনকি আমার স্ত্রীর নামে সম্পদ থাকায় তাকে নিয়েও কুৎসা রটনা করছে। আমি অবৈধ ব্যবসা করি না।
আমার ব্যবসা চালের। বৈধ ব্যবসা। আমি ট্যাক্স দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে ব্যবসা করছি। তিনি বলেন, ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দ্রব্যমূল্যসহ বিভিন্ন কিছুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমার সম্পদের মূল্যও দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বেড়েছে। এর আগে দুদকের অনুসন্ধান দল কক্সবাজার গিয়ে এমপি বদির আয়কর নথি ও হলফনামা জব্দ করে।
নির্বাচন কমিশনে বদির হলফনামার তথ্যানুসারে, প্রথম এমপি হওয়ার পর পাঁচ বছরে তার আয় বেড়েছে ৩৫১ গুণ। আর নিট সম্পদ বেড়েছে ১৯ গুণের বেশি। তার এ সম্পদ অবৈধ কি-না তা খতিয়ে দেখতে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। ১২ জানুয়ারি কমিশন বৈঠকে বদিসহ সাতজনের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
আয় নিয়ে বদি দুদকে যা বলেন : এমপি বদি দুদককে বলেছেন, গত পাঁচ বছরে তিনি আয় করেছেন ৩৬ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার ৪০ টাকা।
মিয়ানমারের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ও টেকনাফে জ্বালানি তেলের ব্যবসা করে এ টাকা অর্জন করেছেন। নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামা অনুসারে এমপি বদির বার্ষিক আয় সাত কোটি ৩৯ লাখ ৩৯ হাজার ৮০৮ টাকা। আর বার্ষিক ব্যয় দুই কোটি ৮১ লাখ ২৯ হাজার ৯২৮ টাকা। এর আগে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জমা দেওয়া হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, তখন তার বার্ষিক আয় ছিল দুই লাখ ১০ হাজার ৪৮০ টাকা। আর ব্যয় ছিল দুই লাখ ১৮ হাজার ৭২৮ টাকা।
তখন (২০০৮) বিভিন্ন ব্যাংকে আবদুর রহমান বদির মোট জমা ও সঞ্চয়ী আমানত ছিল ৯১ হাজার ৯৮ টাকা। পাঁচ বছরে এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট কোটি ৫ লাখ ১০ হাজার ২৩৭ টাকা। তার হাতে ২০০৮ সালের নভেম্বরে নগদ টাকা ছিল দুই লাখ সাত হাজার ৪৮ টাকা। আর এখন ৫০ লাখ টাকা। এ ছাড়া এখন স্ত্রীর কাছে নগদ টাকা আছে ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ২৬৫ টাকা।
আয়কর বিবরণীতে তিনি উল্লেখ করেছেন, সাত কোটি ৩৭ লাখ ৩৭ হাজার ৮০৮ টাকা। আর নিট সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ৯ কোটি ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ৫৬৩ টাকা। পাঁচ বছর আগে ২০০৮ সালের আয়কর বিবরণী অনুসারে, তখন তার বার্ষিক আয় ছিল দুই লাখ ১০ হাজার ৮৮০ টাকা। আর নিট সম্পদ ছিল ৪৭ লাখ ৭৯ হাজার ৮৮৩ টাকার।
আবদুল মান্নান খানকে দুদকে তলব : অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খানকে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি তলব করেছে দুদক।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে উপপরিচালক নাসির উদ্দিন স্বাক্ষরিত একটি নোটিস গতকাল তার কাছে পাঠানো হয়েছে। নোটিসে আবদুল মান্নানকে ওই দিন বেলা ১১টায় দুদক কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে। হলফনামার তথ্যানুয়ায়ী, পাঁচ বছর আগে আবদুল মান্নান খানের সম্পত্তি ছিল ১০ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। পাঁচ বছরের ব্যবধানে সেই সম্পদ ফুলে-ফেঁপে হয়েছে ১১ কোটি তিন লাখ টাকা। আগে তার বার্ষিক আয় ছিল তিন লাখ ৮৫ হাজার টাকা।
সেই আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে বছরে তিন কোটি ২৮ লাখ টাকায়। পাঁচ বছরের মন্ত্রিত্বকালে তার সম্পত্তি ১০৭ গুণ বেড়েছে। কীভাবে তিনি এ পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন তা এখন খতিয়ে দেখছে দুদক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।