বাংলা সাহিত্য-সঙ্গীত তথা সংস্কৃতির অন্যতম প্রাণপুরুষ জাতীয় কবি, কাজী নজরুল ইসলাম প্রেমের কবি, সাম্যের কবি, বিদ্রোহের কবি, বাংলা ভাষার অন্যতম সাহিত্যিক, দেশপ্রেমী, যুগস্রষ্টা, নবজাগরণ বা রেনেসাঁর কবি। বাংলা কাব্যে অগ্রগামী এই বাঙালি কবির কবিতা ও গান আমাদের জাতীয় জীবনের অমূল্য সম্পদ। বাংলা সাহিত্য তথা বাংলাদেশের জনগণের জাতিগত আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার অন্যতম হাতিয়ার হলেন নজরুল ও তার সৃষ্টিকর্ম। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ - দুই বাংলাতেই তাঁর কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, দার্শনিক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার।
নানা দুঃখ-কষ্ট ও দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করেও দুখু মিয়া জনপদের সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্খা ও স্বপ্নের কথা উপলব্ধি করায় হতে পেরেছেন জাতীয় কবি। কর্মবীর এই মানুষটির সৃজনশীলতা ও আন্তরিকতা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জনপদের সব মানুষকে অভিভূত করতে সক্ষম হয়েছিল। তাই আজ এতদিন পরেও নজরুল বাংলাদেশের মানুষের প্রিয় কবি, প্রিয় মানুষ। এই সংগ্রামী কবির আত্মপ্রকাশ ঘটেছে তার ছোটবেলা থেকেই। ছোটবেলা থেকেই নজরুলের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার আকুতি ছিল, দৈনন্দিন জীবন যাপনে সরলতা ছিল, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার মানসিকতা ছিল, ক্রমাগত বেড়ে ওঠার অভিপ্রায় ছিল, অনিবার্য বাস্তবতাকে মেনে নেয়ার ক্ষমতা ছিল।
অনেক দু:খ কষ্টের মধ্যে কেটেছে সংগ্রামী এই মানুষের বৈচিত্রময় জীবন । তার সৃজনশীল উদ্ভাবন ও সৃষ্টিশীল কর্ম জাতির অগ্রগতি ও উন্নতির জন্যে প্রয়োজনীয় চেতনা জাগাতে অপরিহার্য।
ভুমিকা: নজরুল বাংলা সাহিত্যে এতটাই শক্তিশালী ভুমিকা রেখেছেন যে, নজরুল বিহীন বাংলা সাহিত্য যেন কল্পনাই করা যায়না। সম্পূর্ণ বাংলাকে পেতে হলে, বাংলাভাষাভাষি মানুষের আত্মপরিচয়কে গর্বের সাথে প্রকাশ করতে হলে নজরুলকে জানতে ও জানাতে হবে। নজরুল বাঙালি জনসাধারণ ও কাব্য ভোক্তা পাঠকের সামনে প্রমাণ করেছেন, স্বদেশ-স্বকাল ও শিল্পীচৈতন্য ওতপ্রোত জড়িত।
শামছুল আলম বাবু লিখেছেন, নজরুল “শুধুমাত্র কবি নন-তার পরিচয় বহুবিধ। গদ্যকার, গীতিকার, সুরকার, সুরস্রষ্টা, গায়ক, অভিনেতা, চলচ্চিত্র নির্মাতা, চলচ্চিত্র সংগঠক, রাজনৈতিক কর্মী, কারাবরণকারী স্বাধীনতা সংগ্রামী, বাংলাদেশের স্বাধীকার ও স্বাধীনতা-আন্দোলনের প্রেরণা দাতা। তার স্বর্ণখনি সমতুল্য বহুমাত্রিক প্রতিভার স্পর্শে বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংগীত, সাংবাদিকতা, নাটক, বেতার জগৎ, গ্রামোফোন, চলচ্চিত্র, রাজনীতি হয়েছে উজ্জ্বল। " প্রতিভাধর এই কবির সংসারজীবন খুব আর্থিক কষ্টে কাটে। নজরুল তারঁ জীবনের শেষ ভাষণে বলেন, আমি আনন্দের গান গেয়ে যাব।
আমি প্রেম ভালবাসা দিতেই পৃথিবীতে এসেছিলাম, কোন নেতা ও কবি হতে আসি নাই। এমন একজন মহান ব্যক্তিত্বের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যান্ত, জীবনের বিভিন্ন দিক একটি লেখার ক্ষুদ্র পরিসরে বর্ণনা করা কষ্টসাধ্যই বটে।
বর্ধমান জেলায় স্পর্ধিত অবয়ব: বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি কাজী নজরুল ইসলাম এমন এক উত্তাল রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যে এ ধরাধমে আগমন করেন যে তাকে বুঝতে হলে তৎকালীন সমাজ পরিবেশের দিকে দৃষ্টিপাত অপরিহার্য। কবি নজরুলের পূর্ব পুরুষগণ এক সময় পাটনায় বসবাস করতেন; সম্রাট শাহ আলমের সময় চুরুলিয়ায় এসে বসবাস শুরু করেন, তারা বাদশার দরবারে চাকুরি করতেন।
জন্ম ও বংশ পরিচয়: ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার জামুরিয়া ব্লকের চুরুলিয়া গ্রামে কাজী নজরুল ইসলাম ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪ মে, মঙ্গলবারে জন্মগ্রহণ করেন।
তার পিতার নাম কাজী ফকির আহমদ, মাতার নাম মোসাম্মাৎ জাহেদা খাতুন, পিতামহ: কাজী আমানুল্লাহ, মাতামহ: তোফায়েল আলী। ফকির আহমদের বাড়ির পূর্বদিকে ছিল রাজা নরোত্তম সিংহের গড়। আর দক্ষিণে ছিল পীরপুকুর। এই পুকুরের পূর্বপাড়ে হাজী পাহলোয়ানের মাজার শরীফ এবং পশ্চিমে একটা ছোট্ট মসজিদ। নজরুলের পিতা ও পিতামহ সারা জীবন এই মাজার শরীফ ও মসজিদের সেবা করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
বাংলা কাব্য ও ফার্সি ভাষার প্রতি অনুরাগ তিনি পিতা ও পিতৃব্য কাজী বজলে করীমের কাছ থেকে পেয়েছিলেন।
জীবন সংগ্রামে দুখু মিয়া: কাজী নজরুল ১৯০৮ সালে নয় বছর বয়সে পিতৃহীন হন। কাজী ফকির আহমদের দুই সংসারে সাত ছেলে ও দুই কন্যা। কাজী নজরুলের ভাইবোনের সংখ্যা ছিল চারজন। অগ্রজ কাজী সাহেব জান, কনিষ্ঠ কাজী আলী হোসেন, ভগ্নী উম্মে কুলসুম এবং কবি স্বয়ং।
ফকির আহমদের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর চারটি পুত্রের অকালমৃত্যুর পর তার জন্ম হয় বলে, তার ডাকনাম রাখা হয় দুখু মিঞাঁ। পিতার মৃত্যুর পর কাজী পরিবার অশেষ দুঃখ-কষ্টের মধ্যে নিপতিত হয়। সুতরাং বাল্যকাল থেকেইকবিকে সংগ্রাম করে বাঁচতে হয়। নিম্ন প্রাইমারি পরীক্ষা উত্তীর্ণ নজরুলকে এ সময় বাড়ির পাশের হাজী পালোয়ানের মাজারের খাদেম, মসজিদ দেখাশোনা,মুয়াজ্জিনের কাজ এবং মক্তবে শিক্ষকতাসহ ধর্মীয় কাজের দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। বাল্যে এভাবে তিনি অর্জন করেন ধর্মীয় জ্ঞান ও মুসলিম সমাজ সম্পর্কে ধারণা।
নজরুলের প্রথম বয়সে ‘সালেক’ গল্পে মুক্তি কবিতায় এবং রোগাক্রান্ত হবার পূর্বে লিখিত কোনো কোনো রচনায় যে অলৌকিকতার সন্ধান পাওয়া যায় তা হয়তো বাল্যের ঐ সংসর্গ ও অভিজ্ঞতার ফল। এইসব কাজ পরবর্তীকালে তাঁর সাহিত্যকর্মকে বিপুলভাবে প্রভাবিত করেছে। তিনিই বাংলা সাহিত্যে ইসলামী চেতনার চর্চা শুরু করেছেন বলা যায়।
সন্ন্যাসী জীবন: অত্যন্ত প্রখর মেধাসম্পন্ন নজরুল মসজিদে ইমামতিও করেন। সপ্রতিভ ও চঞ্চল প্রকৃতির নজরুল পরিবেশ-প্রতিবেশ থেকেও শিক্ষা গ্রহণ করেন।
যাত্রা, পালাগান, কথকতা কিংবা কুরআন পাঠ অথবা লেটো গান যেখানে হতো দুরন্ত নজরুল গভীর আগ্রহ নিয়ে সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিতেন। এমনকি তিনি বাউল-সুফী-দরবেশ ও সাধু-সন্ন্যাসীর সাথে বয়সের ব্যবধান সত্ত্বেও অনায়াসে মেলামেশা করতে পারতেন। তার আচার আচরণে ঔদাসীন্য লক্ষ করে লোকে তাকে তারাক্ষেপা বলেও ডাকতো। কেউ কেউ আদর করে বলতো নজর আলী।
বাল্যকালেই নানা ভাষায় সাহিত্য-রস আহরণ: নজরুল ছোটবেলা থেকে ভরঘুরে ছিল এজন্য কোন স্কুলেই দীর্ঘসময় নিয়ে লেখাপড়া করেনি।
চঞ্চলমতি ছিলেন বলে কোথাও স্থির হতে পারেন নি। আজ হেথা কাল হোথা পরশু অন্যকোথা-অন্যকোন্খানে ঘুরে বেড়িয়েছেন আর মিলেছেন নানান রকম মানুষের সাথে এবং সঞ্চয় করেছেন অদ্ভূত সব বিচিত্র অভিজ্ঞতা। তার পড়ার আকাঙ্খাও প্রবল ছিল, তাই যেখানে যা পেতেন পড়ে ফেলতেন সাগ্রহে। আর এভাবেই তিনি বাংলা, ইংরেজি ও ফার্সি সাহিত্য থেকে রস আহরণ করে নিজেকে সমৃদ্ধ করেন।
অর্থোপার্জনের জন্য লেটোর দলে প্রবেশ: দুমুটো ডাল-ভাতের সংগ্রামে নজরুল দুই বছর (১৯০৯-১৯১০) একাডেমী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকেন।
ছোটবেলা থেকেই নজরুলের মন ছিল গানবাজনার দিকে। এগারো বছর বয়সে লোকশিল্পের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে লেটো দলে প্রবেশ করেন এবং লেটোদলে গান ও নাটক রচনা করে সামান্য অর্থোপার্জন করতেন। তার চাচা কাজী বজলে করিম চুরুলিয়া অঞ্চলের লেটো দলের বিশিষ্ট ওস্তাদ ছিলেন এবং আরবি, ফারসি ও উর্দূ ভাষায় তার দখল ছিল। এছাড়া বজলে করিম মিশ্র ভাষায় গান রচনা করতেন। ধারণা করা হয়, বজলে করিমের প্রভাবেই নজরুল লেটো দলে যোগ দিয়েছিলেন।
এই দলের সাথে তিনি বিভিন্ন স্থানে যেতেন, তাদের সাথে অভিনয় শিখতেন এবং তাদের নাটকের জন্য গান ও কবিতা লিখতেন। নিজ কর্ম এবং অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বাংলা এবং সংস্কৃত সাহিত্য অধ্যয়ন শুরু করেন। একইসাথে হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অর্থাৎ পুরাণসমূহ অধ্যয়ন করতে থাকেন। সেই অল্প বয়সেই তার নাট্যদলের জন্য বেশকিছু লোকসঙ্গীত রচনা করেন। লেটোদলে গান রচনাকালেই তার প্রতিভার সম্যক পরিচয় পাওয়া যায়।
অর্থাৎ নজরুলের কবি প্রতিভার প্রখরতা অনুমান করে গোদা কবি তাকে ব্যাঙাচি বলে ডাকতেন এবং বলেছিলেন-“আমার ব্যাঙাচি বড় হয়ে সাপ হবে। “ তার ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যে হয়নি। জনাব আনওয়ারুল ইসলাম বলেন, এ সময় কালে শকুনীবধ, মেঘনাদধ, চাষার সঙ, রাজপুত্র, আকবর বাদশা ইত্যাদি পালাগান রচনা করেন। লেটোরদল নামে পরিচিত যাত্রা দলে ১২ বছর বয়সেই হাসির নাটক ও গান রচনা করে খুব সুনাম অর্জন করেন। এভাবেই শুরু হয়েছিল কাজী নজরুলের সাহিত্যজীবন।
স্কুলে অধ্যয়ন: কাজী নজরুল বাল্য- কৈশোর কালেই যেমন কবি প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন তেমনি দুষ্টুমিতেও কম যেতেন না। তার দুষ্টুমিতে গ্রামবাসী যখন অতিষ্ঠ এমনই এক সময়ে তিনি গ্রাম ত্যাগ করেন। ১৯১০ সালে নজরুল লেটো দল ছেড়ে ছাত্র জীবনে ফিরে আসেন। এই নতুন ছাত্রজীবনে তার প্রথম স্কুল ছিল রানীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ স্কুল। এরপর ভর্তি হন মাথরুন উচ্চ ইংরেজি স্কুলে যা পরবর্তীতে নবীনচন্দ্র ইনস্টিটিউশন নামে পরিচিতি লাভ করে।
১৯১১ সালের কিছুদিন তিনি বর্ধমানের মাথরুন স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে লেখাপড়া করেছিলেন। তখন ঐ স্কুলের শিক্ষক ছিলেন কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক। তিনি নজরুলের সম্পর্কে লিখেছেন, ‘আমি ২৩ বছর বয়সে মাথরুন উচ্চ ইংরেজি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে ঢুকি। তখন ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে নজরুল পড়িত। ছোট সুন্দর ছনছনে ছেলেটি, আমি ক্লাসে গেলে সে আগেই আসিয়া প্রণাম করিত।
আমি হাসিয়া তাহাকে আদর করিতাম। সে বড় লাজুক ছিল। ‘ আর্থিক সমস্যা তাকে বেশী দিন এখানে পড়াশোনা করতে দেয়নি। ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর তাকে আবার কাজে ফিরে যেতে হয়।
প্রসাদপুরের বাংলোতে বাবুর্চির কাজ: কাজী নজরুল ইসলাম যোগ দেন বাসুদেবের কবিদলে।
কবিগানের আসরে যোগ দেন এবং পালাগান লিখতে শুরু করেন। গান লিখে সুরারোপ করতেন, এমনকি ঢাকঢোল বাজিয়েও গান গাইতেন। বর্ধমান জেলার অণ্ডালের ব্রাঞ্চলাইনের একজন বাঙালি ক্রিশ্চান গার্ড সাহেব তাকে এক শীতের রাত্রিতে কবিগানের আসরে গান গাইতে শুনে মুগ্ধ হন এবং তার প্রসাদপুরের বাংলোতে বাবুর্চির কাজ দেন। গার্ড সাহেব ছিলেন অত্যন্ত মদ্যপ এবং সে কারণে নজরুলের যে গান শোনার জন্যে তাকে বিশেষভাবে কাজ দিয়েছিলেন তা শোনার অবকাশ ও সুযোগ প্রায়ই তার হতো না। কিছুদিনের মধ্যেই এক হাঙ্গামার সূত্রপাত হতেই নজরুল গার্ড সাহেবের চাকুরী ছেড়ে দেন।
রুটির দোকানে কাজ: এবার তিনি আসানসোল ফিরে এসে আব্দুল ওয়াহেদের চা-রুটির দোকানে রুটি বানানোর কাজ শুরু করেন, খাওয়া-দাওয়া ছাড়া ১ টাকা মাইনে পেতেন। জনাব আজহার উদ্দিন খান বলেন, “ নজরুল প্রসাদপুর থেকে আসানসোল ১৯১৩ সালের দিকে ফিরে এলেন। অপরিচিত জায়গায় গ্রামের ছেলে কি আর করেন স্টেশনের কাছেই হুগলী নিবাসী মুহম্মদ বখসের রুটির দোকানে পেটখোরাকী মাসিক এক টাকা বেতনে কাজ পেলেন। “
আবার স্কুল জীবন: চায়ের দোকানে কাজ করার সময় আসানসোলের দারোগা রফিজউল্লাহর সাথে তার পরিচয় হয়। তিনিই নজরুলকে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের দরিরামপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি করে দেন।
১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি আবার রানীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ স্কুলে ফিরে যান এবং সেখানে অষ্টম শ্রেণী থেকে পড়াশোনা শুরু করেন। ১৯১৭ সাল পর্যন্ত এখানেই পড়াশোনা করেন।
ছোটবেলাতেই যুদ্ধে যোগদান: দশমশ্রেণীতেই কবির স্কুলজীবন শেষ হয়। বৃটিশ সরকার প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে বাঙ্গালীদের নিয়ে ব্যাংগল রেজিমেন্ট নামে একটা সেনাদল গঠন করলে ১৯১৭ সালে দশম শ্রেণীর ছাত্র মাধ্যমিকের প্রিটেস্ট পরীক্ষার না দিয়ে কাজী নজরুল সেখানে যোগ দেন। প্রথমে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে এবং পরবর্তীতে প্রশিক্ষণের জন্য সীমান্ত প্রদেশের নওশেরায় যান।
প্রশিক্ষণ শেষে করাচি সেনানিবাসে সৈনিক জীবন কাটাতে শুরু করেন। তিনি সেনাবাহিনীতে ছিলেন ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের শেষভাগ থেকে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রায় আড়াই বছর। এই সময়ের মধ্যে তিনি ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাধারণ সৈনিক কর্পোরাল থেকে কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার পর্যন্ত হয়েছিলেন। তার কথায়, “আমি জীবনের তরঙ্গে তরঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েছি, ক্লাসে ছিলাম ফাষ্টবয়, হেডমাস্টারের বড় আশা ছিল আমি স্কুলের গৌরব বাড়াব। কিন্তু এই সময় এলো ইউরোপের মুহাযুদ্ধ।
একদিন দেখলাম এদেশ থেকে পল্টন যাচ্ছে যুদ্ধে। আমিও যোগ দিলাম সে পল্টনে। “ সেখানে থাকা অবস্থায় রাশিয়ার বিপ্লব ও লেনিনের লালফৌজের সমর্থনে অনেক কবিতা লিখেছিলেন কিন্তু বিধিনিষেধ থাকায় খবরের কাগজে ছাপানো সম্ভব হয়নি। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে যুদ্ধ শেষ হলে ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্ট ভেঙে দেয়া হয়। এর পর তিনি সৈনিক জীবন ত্যাগ করে কলকাতায় ফিরে আসেন।
ছোটবেলায় অসাম্প্রদায়িক মনোভঙ্গি : সাম্প্রদায়িক বিভেদমুক্ত সম্প্রীতির ব্যাপারটি নজরুল কৈশোর জীবন ও লেখক জীবনের সূচনালগ্নেই অনুভব করতে পেরেছিলেন। এমনকি শিশুকাল থেকেই প্রয়োজনের তাগিদে তিনি মুগ্ধ-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানবতাবাদী অধিকারী মানুষের সংস্পর্শে এসেছিলেন। সম্প্রদায়ভেদে মানুষের কাছ থেকে পাওয়া অকুণ্ঠ ভালবাসা তার মনে এ অভিনব বোধের সৃষ্টি করেছে।
বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির সাথে কাজ: যুদ্ধ শেষে কলকাতায় এসে নজরুল ৩২ নং কলেজ স্ট্রিটে বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে বসবাস শুরু করেন। তার সাথে থাকতেন এই সমিতির অন্যতম কর্মকর্তা মুজফ্ফর আহমদ।
এখান থেকেই তার সাহিত্য-সাংবাদিকতা জীবনের মূল কাজগুলো শুরু হয়। প্রথম দিকেই মোসলেম ভারত, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, উপাসনা প্রভৃতি পত্রিকায় তার কিছু লেখা প্রকাশিত হয়।
নবযুগ পত্রিকায় কাজ: ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই ১২ তারিখে অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে কলিকাতা থেকে নবযুগ নামক একটি সান্ধ্য দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হওয়া শুরু করে। এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন শেরে-বাংলা এ.কে. ফজলুল হক। কবি নজরুল সেখানে সহকারী সম্পাদক ছিলেন।
এই পত্রিকার মাধ্যমেই নজরুল নিয়মিত সাংবাদিকতা শুরু করেন। পত্রিকার অফিসেই থাকার জায়গা হয়েছিল।
কমউনিস্ট পার্টি গঠনে সহযোগিতা: ১৯২১ সালে মোজাফফর আহমদের সাথে কমউনিস্ট পার্টি গঠনের কাজে সাহায্য করেছেন। হিন্দুদেবতার নামে গান কবিতা লিখতেন এইজন্য নজরুলকে ইসলামের শত্রু বা কাফেরকবি বলে অনেকে ডাকতো। কাজী নজরুল লিখেছেন –
মৌ-লোভী যত মৌলবী আর মোল্লারা কন হাত নেড়ে,
দেব দেবী নাম মুখে আনে, সবে দাও পাজিটার জাত মেরে।
ফতোয়া দিলাম কাফের কাজী ও,
যদিও শহীদ হইতে রাজী ও।
বাংলা সাহিত্যে আরবি ও পার্শীশব্দের ব্যবহার তিনিই প্রথম করেছিলেন এজন্য অনেক হিন্দুলেখক নজরুলকে পছন্দ করতেন না।
ধুমকেতু পত্রিকায় লিখে জেলের জীবন: ১৯২২ সালে ধুমকেতু নামে একটা পত্রিকায় ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে কাজী নজরুল লিখেছিলেন। এই অপরাধে ১৩ মাস জেলে থাকতে হয়েছিল। পত্রিকার ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯২২ সংখ্যায় নজরুলের কবিতা আনন্দময়ীর আগমনে প্রকাশিত হয়।
এই রাজনৈতিক কবিতা প্রকাশিত হওয়ায় ৮ নভেম্বর পত্রিকার উক্ত সংখ্যাটি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। একই বছরের ২৩ নভেম্বর তার যুগবাণী প্রবন্ধগ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং একই দিনে তাকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করা হয়। জেলে থাকা অবস্থায় রবীন্দ্রনাথ বসন্ত নামে একটা নাটক নজরুলের নামে নিবেদন করেন। বিদ্রোহী কবিতাটি ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় এবং সারা ভারতের সাহিত্য সমাজে খ্যাতিলাভ করে। ১৬ জানুয়ারি বিচারের পর নজরুলকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
নজরুলকে আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে যখন বন্দী জীবন কাটাচ্ছিলেন তখন ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ২২ জানুয়ারি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তার বসন্ত গীতিনাট্য গ্রন্থটি নজরুলকে উৎসর্গ করেন। এতে নজরুল বিশেষ উল্লসিত হন। এই আনন্দে জেলে বসে আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কবিতাটি রচনা করেন।
সওগাত পত্রিকায় কাজ: জীবনের শুরু ও শেষে নিদারুণ অর্থকষ্টে কাটানো কবি নজরুল এ সময়টাতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলেন।
কাজ করতেন সওগাত পত্রিকার অফিসে। বেতন হিসেবে পেতেন কমপক্ষে তৎকালে দুশ টাকা। কবিতা গান গল্প আর রচনা লিখে আরও বেশ কিছু কামাই হতো তার। এমন সুদিনে তিনি বন্ধুদের নিয়ে মেতে থাকতেন হৈ হুল্লোড়ে।
সংসারে ভাঙ্গা গড়ার খেলা: ১৯২১ সালের জুন মাসে নার্গিস খাতুনের সাথে বিবাহ ঠিক হয় কিন্তু কাবিন নামায় ঘরজামাইয়ের কথা থাকায় নজরুল রাগ ও অপমানে বিয়ের আসর থেকে রাতেই কুমিল্লায় চলে আসেন।
এই শহরে ইনদ্র কুমার সেনগুপ্তের পরিবারের সাথে নজরুলের খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। সেই পরিবারে বিরজাদেবীকে তিনি মা ডাকতেন। সেই পরিবারে শ্রী বসন্ত কুমার সেনগুপ্ত ও শ্রীমতি গিরিবালা দেবীর মেয়ে আশালতা বা প্রমীলা সেনগুপ্তাকে ১৯২৪ সালের ২৫শে এপ্রিল বিয়ে করেন। যার ডাক নাম ছিল- দুলী। কাজী নজরুলের চার ছেলে ছিল প্রথম ছেলে কৃষ্ণ মুহম্মদ খুব ছোট বয়সেই মারা যায়।
দ্বিতীয় ছেলে অরিন্দম খালিদ বুলবুল মাত্র চার বছর বয়সে বসন্ত রোগে মারা যায়। এরপর আরও দুই ছেলে যাদের নাম কাজী সব্যসাচী (১৯২৯-৭৯)ও কাজী অনুরুদ্ধ (১৯৩২-৭৪) খুব অল্প বয়সেই মারা যায়। কবির স্ত্রী প্রমীলা ৫৪ বছর বয়সে ১৯৬২ সালে মারা যান।
সাহিত্যজীবন ও স্বীকৃতি: কাজী নজরুলের সাহিত্যজীবন খুব লম্বা ছিল না, তিনি বাংলাসাহিত্যের আকাশে ঝড়ের বেগে এসেছিলেন প্রেম আর বিদ্রোহের গান গেয়ে। তার সাহিত্য চর্চা কাল - ১৩২৬ হইতে ১৩৪৯ বাংলা।
প্রায় তিন হাজার গান ও কবিতা রচনা করেছেন। তার প্রথম প্রকাশিত কবিতা – মুক্তি, প্রথম গল্প - বাউন্ডেলের আত্ম কাহিনী, প্রথম প্রবন্ধ - তুর্কী মহিলার ঘোমটা খোলা, প্রথম উপন্যাস - বাঁধন হারা, সাধারণ মানুষের বিবেচনায় সর্বশ্রেষ্ঠ কবিতা – বিদ্রোহী, উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ - ভাঙ্গার গান, অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশী, চক্রবাক, রিক্তের বেদন, ব্যাথার দান, প্রলয় শিখা, আলেয়া প্রভূতি। বাল্য রচনা - মেঘনাদ বধ, চাষার সঙ, শুকনী বধ, দাতাকর্ণ রাজপুত্র, কবি কালিদাস, আকবর বাদশাহ প্রভূতি। তিনি ভারতের জাতীয় খেতাব - 'জগত্তারিণী' ও 'পদ্মভূষণ' পান। ১৯৪৫ সালে কলিকাত বিশ্ববিদ্যালয় কাজী নজরুল ইসলামকে 'জগত্তারিণী' এবং ১৯৬০ সালে ভারত সরকার 'পদ্মভূষণ' স্বর্ণ পদকে সম্মানিত করেন।
অসুস্থতা: নবযুগে সাংবাদিকতার পাশাপাশি নজরুল বেতারে কাজ করছিলেন। ১৯৪২ সালের ৯ই জুলাই সন্ধ্যায় কলিকাতা বেতার কেন্দ্রে অনুষ্ঠান চলার সময় কাজী নজরুলের স্ট্রোক তথা মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হয়, কথা বলার শক্তি হারান। এরপর তাকে মূলত হোমিওপ্যাথি এবং আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু এত তার অবস্থার তেমন কোন উন্নত হয়নি। ১৯৪২ সালের শেষের দিকে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।
এরপর নজরুল পরিবার ১৯৫২ সাল পর্যনন্ত ভারতে নিভৃতে সময় কাটান। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে কবি ও কবিপত্নীকে রাঁচির এক মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। কবি চার মাস রাঁচিতে ছিলেন। এরপর ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে নজরুল ও প্রমীলা দেবীকে চিকিৎসার জন্য লন্ডন পাঠানো হয়। ব্রিটিশ চিকিৎসকরা নজরুলের চিকিৎসার জন্য বড় অংকের ফি চেয়েছিল যেখানে ইউরোপের অন্য অংশের কোন চিকিৎসকই ফি নেননি।
অচিরেই নজরুল ইউরোপ থেকে দেশে ফিরে আসেন। এর পরপরই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডঃ বিধান চন্দ্র রায় ভিয়েনা যান এবং ড. হ্যান্স হফের কাছে বিস্তারিত শোনেন। নজরুলের সাথে যারা ইউরোপ গিয়েছিলেন তারা সবাই ১৯৫৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর রোম থেকে দেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। বিদেশে ডাক্তার দেখানো হলেও তেমন উন্নতি হয়নি। এইভাবে তিনি প্রায় ৩৪ বছর বেচেঁ ছিলেন।
বাংলাদেশে আগমন: ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙালিদের বিজয় লাভের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ২৪ মে তারিখে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এক্ষেত্রে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কবির বাকি জীবন বাংলাদেশেই কাটে। বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে তার বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমাবর্তনে তাকে এই উপাধি প্রদান করা হয়। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারিতে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। একুশে পদক বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্মানসূচক পদক হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
প্রয়াণ:জীবনের শেষ চার বছর তিনি ঢাকায় কাটান।
বাংলাদেশে আনার পর যথেষ্ট চিকিৎসা সত্ত্বেও নজরুলের স্বাস্থ্যের বিশেষ কোন উন্নতি হয়নি। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে কবির সবচেয়ে ছোট ছেলে এবং বিখ্যাত গিটার বাদক কাজী মৃত্যুবরণ করে। ১৯৭৬ সালে নজরুলের স্বাস্থ্যেরও অবনতি হতে শুরু করে। জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে ঢাকার পিজি হাসপাতালে। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগস্ট তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রিয় মসজিদের কাছের সমাধিতে অন্তিম শয়নে কবি নজরুল ইসলাম।
উপসংহার: বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অমর অবিনাশী সৃষ্টি সম্ভার আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে সংগ্রামী জাতিগঠনে। জীবনের জন্য বাতাস, পানি ও খাদ্য যেমনি অপরিহার্য, তেমনি জাতি হিসেবে আমাদের জন্য নজরুল। তার সকল রচনা মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া দরকার। অন্তত প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং গ্রন্থগারে নজরুলের সকল রচনা এবং নজরুল-সম্পর্কিত রচনা যাতে সহজে পাওয়া যায়, সরকারিভাবে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
এতে করে নজরুলের সৃষ্টিসম্ভার পাঠ করে আমরা তাঁর চেতনার কাছাকাছি যেতে পারব। তাঁর সকল সৃষ্টির প্রতি দেশের জনগণের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য সরকারকে উদ্যোগ দিতে হবে। বহির্বিশ্বেও যাতে নজরুল সৃষ্টি প্রচারিত হয়, সে ব্যাপারেও জাতীয় স্বার্থে যথাশীঘ্র উদযোগ নেয়া দরকার। নজরুল সাহিত্য অনুবাদের জন্য পৃথক সেল গঠন করার কথাও ভাবা যেতে পারে। আমাদের জাতীয় কবি হওয়া সত্ত্বেও নজরুলের কোনো প্রামাণ্য জীবনীগ্রন্থ নেই।
আমাদের জাতীয় কবির পূর্ণাঙ্গ জীবনী প্রণয়নে জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই। জাতীয় কবিকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শনে ব্যর্থ হলে- আমাদের কপালে জুটবে অসম্মানের গ্লানি। তাই তাকে ও তার লেখনীকে অনাগত প্রজন্মের সামনে জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই তুলে ধরতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।