অসংখ্য সিরীয় উদ্বাস্তুর মতো সিরীয় শিশু মারওয়ানর পরিবারের গন্তব্য ছিল জর্ডান সীমান্তের ওপারে আশ্রয় শিবির। যেখানে ঘরহারা সিরীয় উদ্বাস্তুরা খোলা আকাশের নিচে তাঁবু ফেলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে গত তিন বছর ধরে। পরিবারটি এতোদিন মাটি আঁকড়ে পড়েছিল দেশে। কিন্তু শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হয়ে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ অবসানের আশার শেষ বাতিটি নিভে যাওয়ার পর তারাও ঘর ছাড়তে বাধ্য হন। পথে কোনও এক দুর্ঘটনায় শিশু মারওয়ান পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
হারিয়ে যায় মরুভূমিতে।
ছোট্ট ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে গেলেও সীমান্তের পথে যাত্রা থামায় না মারওয়ানের পরিবার। আর মারওয়ান সিরীয় মরুভূমিতে দিশহারা হয়ে ঘুরতে থাকে পথনির্দেশহীন।
পরিবারটি যখন উদ্বাস্তু শিবিরের দিকে যাত্রা করেছিল তখন সবাই আলাদাভাবে সঙ্গে খাবার আর পানি রেখেছিল যেন যুদ্ধের ফেরে কোনওভাবে আলাদা হয়ে গেলেও ক্ষুধা মেটানোর রসদটুকু অন্তত থাকে। চারদিনের নিঃসঙ্গ ভ্রমণে প্লাস্টিকের ব্যাগে থাকা খাবার আর পানি মৃত্যুসঙ্কুল মরুভূমিতে ছোট্ট শিশুটিকে প্রাণে বাঁচিয়ে দেয়।
আরব মরুর দেশের বালক হওয়ার কারণেই হয়তো মরুভূমির দিনের আগুনে-উত্তাপ আর রাতের বরফশীতলতায় বেঁচে থাকার মতো প্রাণশক্তি নিয়ে জন্মেছিল মারওয়ান। নয়তো মরুপথে এতো ছোট শিশুর উৎরে যাওয়া তো রীতিমতো রূপকথাই।
পথ চলতে চলতে ভাগ্যক্রমে জর্ডান সীমান্তের কাছাকাছি চলে আসে মারওয়ান, তখনই তাকে দেখতে পায় এন্ড্রু হারপারের নেতৃত্বাধীন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার প্রতিনিধি দল। মারওয়ানের চারদিনের একাকী দুঃসাহসিক অভিযানের সেখানেই সমাপ্তি ঘটে। জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলটি শেষ পর্যন্ত তাকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করতে সক্ষম হয়।
সিরিয়াতে গৃহহীন হয়ে মৃত্যু আর ক্ষুধার সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে ১০ লাখেরও বেশি শিশু। তিন বছর ধরে চলে আসা গৃহযুদ্ধ এরই মাঝে ১ লাখ ৩০ হাজার লাশের স্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে গেছে। মারওয়ানের মতো শিশুরা স্বপ্ন দেখে- এ সংখ্যা আর একটিও বাড়বে না, পুরোন দিনগুলোর মতো আবারও একদিন শান্ত রাস্তা ধরে স্কুলে যেতে পারবে তারাও।
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।