ছোট বেলা থেকে কবিতার সঙ্গে বসবাস। ভালোলাগা-ভালোবাসার সম্পর্ক। কবিতার প্রেমে পড়ে কবিতায় মগ্ন ছিলাম এবং এখনো আছি। অনেকদিন ধরে ভাবছি, এলোমেলো কবিতাগুলো একটি বইয়ের পাতায় সাজিয়ে রাখব। সেই চিন্তা এবার বাস্তবায়ন করলো, সৃজনশীল প্রকাশনী ”স্বরবৃত্ত”।
বইয়ের নামঃ অন্ধকারে অজস্র পাখি
প্রকাশনায়ঃ স্বরবৃত্ত প্রকাশন, বাংলাবাজার, ঢাকা।
প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি ২০১৪
মূল্যঃ ১০০/- টাকা।
প্রচ্ছদঃ নির্ঝর নৈঃশব্দ্য
একুশে বইমেলাঃ স্টল নং- ৩৩৩ এবং ৩৩৪
(সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)।
বইটি ৪৮ পৃষ্ঠায় ছাপা হয়েছে। বিভিন্ন সময় পত্রিকা, সাময়ীকী এবং ব্লগে প্রকাশিত মোট ৩২ টি কবিতা এবং গান রয়েছে।
বইয়ের পেছনে যাদের মেধা এবং শ্রমঃ
বইয়ের নাম নির্বাচনে সহযোগীতা করেছেন, সাংবাদিক ও কবি শাহাদাত তৈয়ব। ফ্লাপ লিখেছেন, এ্যাকটিভিষ্ট এবং কবি ওয়াহিদ সুজন। প্রুফ রিডার ছিলেন, সাহিত্যিক এনায়েত রসুল। এছাড়া বইটি প্রকাশনায় সার্বিকভাবে সহযোগীতা করেছেন, কবি ও সাহিত্যিক নাসির উদ্দিন তুসি।
হাতেখড়ি এবং পটভূমিঃ
ছোট বেলা থেকেই লেখার চেষ্টা করেছি।
ভুল-শুদ্ধ যাই হোক। কবিতা এবং গান দুটোই বেশী লেখার চেষ্টা করেছি। বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় আমার কবিতা ছাপা হয়। কিন্তু সাহিত্য পাতায় লেখা পাঠানোর ব্যাপারে সব সময় একটা অলসতা এবং অনিহা কাজ করতো। একটা সময় লেখালেখির গতি কমে আসে।
তারপর বাংলা ব্লগ চালু হওয়ার পর আবার নতুন উদ্যোমে লেখা শুরু করি। প্রথম আলো ব্লগে লেখা বেশ কয়েকটি কবিতা বই এর পাতায় ঠাঁই পেয়েছে। তাই প্রথম আলো ব্লগের এডমিনের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
......................................................................................
লেখালেখি কেন প্রয়োজনঃ
লেখালেখি বিষয় প্রথম আলো ব্লগে প্রকাশিত পুরনো একটি লেখা আবারও শেয়ার করছি। লেখাটি প্রাসঙ্গিক হওয়ায় আবারও উল্লেখ করলাম।
দীর্ঘলেখার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।
লেখালেখি অথবা সাহিত্যের হাত ধরে পথ চলা কেন?
সাহিত্য বা লেখালেখি নিয়ে আলাপ কোথা থেকে শুরু করবো বুঝতে পারছি না। কারণ বিষয়টা এত ব্যাপক এবং এত দীর্ঘ যে এর সূচনা এবং সমাপ্তিতে পৌঁছানো অনেক কঠিন। প্রথমেই লেখাটির অবতারনা প্রসঙ্গে বলি। আমার এক ব্লগ বন্ধু প্রায়ই আমাকে প্রশ্ন করেন, লেখালেখিটা কেন প্রয়োজন? লেখালেখিটা ব্লগ ফেইস বুকের বিনোদন সামগ্রী নয়কি? এই প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর দেয়া কঠিন।
তবে ক্ষুদ্র জ্ঞানে যতটা সম্ভব লেখার এই প্রয়াস।
লেখালেখি এই শব্দটা অনেক ব্যাপক একটি শব্দ। শব্দটা আরো ছোট করে সাহিত্য অথবা চিন্তা বলা যেতে পারে। সাহিত্য লেখার ভেতর বিনোদন আনন্দ উচ্ছাস আছে। যদি লেখার মাঝে আনন্দ না থাকতো, তাহলে শত প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে একজন লেখক সারা জীবন সাধনা করতো না।
সাহিত্য কি? সাহিত্য হলো জীবনের দর্শন অথবা সমাজের দর্পন। সাহিত্য বলতে কবিতা, গল্প-উপন্যাস, নাটক, গীতিকবিতা, প্রবন্ধ ইত্যাদিকে বোঝানো হয়। কিন্তু সাহিত্যের আদি ইতিহাস কবিতা। কবিতা হচ্ছে সাহিত্যের জননী। তাই কবিতাকে বোঝার ভেতর দিয়ে সাহিত্যকে আমরা বুঝতে পারবো।
সমগ্র শিল্পের সত্তা বা হৃদয় হলো কবিতা। তাই কবিতাকে নির্ণীত করা হয় "মৌলিক" হিসেবে। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন শিল্প কবিতা। সংগীত, উপন্যাস, নাটক, চিত্রশিল্প, সব শিল্পের প্রাণ কবিতা।
wordsworth বলেন-
Poetry is the spontaneous over flow of powerful feelings.
কবিতা প্রকৃতির ভাষা পাখির ভাষা, নদীর ভাষা, ফুলের ভাষা, সব ভাষার অনুবাদ করে।
সবুজের মোহনীয় প্রশান্তি এনে দেয় মনে। শিশিরের সিন্ধতা এনে দেয় হৃদয় গহীনে। প্রবল নিঃসঙ্গতায় প্রিয় কোমল হাতটি মেলে ধরে। জীবনের সকল দুঃখ কে শুষে নেয়। মন মাতানো সংগীতের জানালা খুলে দেয়।
কবিতা মূলতঃ জীবন দীপিকা (criticism of life) বা জীবন জিজ্ঞাসা। এই জিজ্ঞাসায় জীবন সম্পর্কে সচেতন হয়ে আমরা জানতে পারি (How to live) কিভাবে বাঁচতে পারি এই প্রশ্নের উত্তর
যখন সময়টা ভীষণভাবে থমকে দাঁড়ায়। যখন চারপাশের আকাশ নীরবতার চাদরে ঢেকে যায়, দুঃখের স্রোতে ভেসে যায় জোসনার জল। ঠিক তখন কবিতা এসে সামনে দাঁড়ায়। আলতো করে হাত বাড়ায়।
দুঃখের অনুভূতিগুলো দারুণ শিল্পময় হয়ে ওঠে। কবিতা একটি অনন্য পৃথিবীর পথ। দুঃখ-বেদনা, হাসি-অনন্দ সব সময় কবিতা আমাদের মনের গভীরে শিমুলের উমের মত তুমুল আচ্ছাদনে ঢেকে রাখে। যেন দুঃখ আমাদের প্রাপ্য নয়। অথবা হাসির আড়ালে যে বেদনা আছে তা আমাদের জন্য নয়।
এসব কথাগুলো কবিতার সাদা পাতায় ফুলের মত দুলে ওঠে।
সভ্যতার ইতিহাসে ভাষা মানুষের অনন্য আবিষ্কার। কিন্তু শব্দের ভাষায় সব অভিব্যক্তি প্রকাশ হয় না। সবুজ জোসনা অবগুন্ঠিত চাদরে বিস্তৃত হলে সমস্ত দিগন্ত, তখন যে মনের গভীরে ভাষার উর্ধ্বে অনুভূতি ভেসে বেড়ায় সেটাই কবিতা। যা কিছু মানুষ ভাষায় প্রকাশ করতে পারে না, যা কিছু অধরা থেকে যায় সব সময়, সেই অধরা অনুভূতির নামই কবিতা।
কবিতা সব মানুষ পড়ে না এটা সত্য। কিন্তু মনের গহীনে কবিতার বসবাস নেই এমন কোন মানুষের অস্তিত্ব পৃথিবীতে নেই। মানুষ এবং পশুর মাঝে পার্থক্য এখানে যে, মানুষ কবিতা লিখে। কিন্তু পশুরা কবিতা লিখতে জানে না।
কবি র্যামন হিমেনেজ তাঁর একটি কবিতায় বলেছেন "আমি তো আমি নই, আমি তো সেই মানুষ যে আমার পাশে সব সময় হাঁটে, কিন্ত কখনও তাকে দেখি না, তাকে কখনও কখনও দেখতে চাই, কিন্তু তাকে অনেক সময় আমি ভুলে যাই।
আমি যখন কথা বলি তখন সে ধীর, প্রশান্ত ভঙ্গিতে নির্বাক থাকে। সে আমার কথার উত্তর দেয় না। আমি যখন তাকে ঘৃণা করি তখন সে আমাকে ঘৃণা করে না। এবং সে হেঁটে চলে যখন আমি সেখানে থাকি না। এবং আমি যখন মরে যাব তখন সে স্থির অকম্পিত দাঁড়িয়ে থাকবে।
"
কবি এখানে যে সত্য উন্মোচিত করেছেন, তা সর্ব যুগের সর্ব কালের সত্য। কবিতার সত্য কোন সময়ের ভেতর আবদ্ধ নয়। কালজয়ী কবিতায় সে সত্য উদ্ভাসিত হয়, তা সময়কে অতিক্রম করে মহাকালে ঠাঁই করে নেয়। যেমন মহাকবি ফেরদৌসি তাঁর রচিত "শাহনামা" কবিতাটিতে যে সত্য চিত্রিত করেছেন, তা সকল সময়ের জন্য সত্য এবং আধুনিক।
সভ্যতার ইতিহাসে কবিতাহীন শিল্প চর্চার কোন ইতিহাস নেই।
আরবের অসভ্য বেদুঈনরাও কবিতা শিল্প চর্চা করতেন।
কবি বলতে কাকে বোঝায়? জীবনানন্দ দাশ বলেন"সকলেই কবি নয় কেউ কেউ কবি"।
কবিতার মত বা কবিতার আঙ্গিকে লেখা হলেই তাকে কবিতা বলা হয় না। সেটা হতে পারে ছায়া কবিতা বা প্রতি কবিতা। সবাই কবি নয়।
কেউ অর্ধ কবি বা মূর্খ কবি। বাহ্যিক দৃশ্যমান বস্তুকে ভেদ করে, যে কবি বিমূর্ত পৃথিবীতে কবিতার রুপায়ন করতে পারেন না, তিনি সত্যিকারে কবি নন।
একজন কবি তার বিমূর্ত অভিব্যক্তিকে ভাষায় রুপ দান করেন। উপমা-উৎপ্রেক্ষা ও চিত্র কল্পের সাহায্যে তাকে অভিব্যক্তিময় এবং আকর্ষণীয় করে তোলেন। শুধু শব্দের বুননই কবিতা নয়।
শব্দের পেছনে যৌক্তিক বক্তব্যের প্রয়োজন হয়।
লালন বলেন-
বাড়ীর কাছে আরশি নগর
সেথা পড়শি বসত করে
এক ঘর পড়শি বসত করে
আমি একদিনও না দেখিলাম তারে...
সাহিত্য এবং শিল্পের মাঝে মানুষ তার পড়শিকে খুঁজে। যে মানুষ তার নিজের চোখে নিজেকে পরিপূর্ণ অবয়বে কখনো দেখেনি। দেখেছে অন্যের চোখে। বস্তুর চোখে।
দ্বিতীয় কোন সত্বার উপস্থিতি
আমি আমার ছায়ার ভেতর আমার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই
ভাবি এই দেখা কার চোখ দ্বারা হয়?
আমার চোখ নাকি দ্বিতীয় কোন সত্বার চোখে?
আমি যখন স্ক্ষলিত আদিম পাপময়তায় ডুবে যাই
তখন আমি শুদ্ধতার জন্য পবিত্র জায়নামাজে দাঁড়ানোর তাগাদা অনূভব করি
কে এই শুদ্ধ করে দিতে চায় বা শুদ্ধতায় সিক্ত হবার জন্য বলে
সে কি আমি নাকি দ্বিতীয় কোন সত্বার উপস্থিতি?...
আমি আমার ভূবনে নিজেকে খুঁজি। কোনটা আমি এবং কোনটা আমার আত্মা। আমি জলের ভেতর যার ছায়া দেখি, সে কি আমি! অথবা যে আমাকে অনুসরন করে, যাকে বলি ছায়ার মত কিংবা ছায়া হয়ে যে আমাকে নিরন্তর অনুসরন করে, সে কি আমি! আমার প্রাণ পাখি উড়ে গেলে এই আমার কোন অস্তিত্ব নেই পৃথিবীতে। তাহলে আমার ভেতর আমিই প্রকৃত আমি!
মানুষের আত্মা যখন কুলষিত বা পাপসিক্ত হয়, তখন আত্মার বিশুদ্ধতার প্রয়াজন পড়ে। এই আত্মার যে বিশুদ্ধতা করার চেষ্টা করি, সেই আমি কে? নাকি আমিই আত্মা আমিই আমাকে বিশুদ্ধ করি? এসব
প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কবিতার কাছে ছুটে যাই।
সাহিত্যের শিল্পিত পৃথিবীতে হেঁটে যাই অবিরাম ক্লান্তিবিহীন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।