মাশরুম উন্নয়ন ও সমপ্রসারণ কেন্দ্র, সাভারের জন্য ২৯ পর্বের ডকুমেন্ট্রির স্ক্রিপ্ট করেছিলাম। পরবর্তীতে যেটা কয়েকটি চ্যানেলে প্রচারিত হয়। ডকুমেন্ট্রির স্ক্রিপ্টটা লেখতে গিয়ে মাশরুম সম্পর্কে কিছু বিষ্ময়কর তথ্য জেনেছি, তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
প্রায় ৩০০০ বছর ধরে মাশরুমকে সুস্বাদু খাদ্য হিসাবে মানুষ গ্রহণ করে আসছে। প্রাচীন ফারাও সম্রাটরা মাশরুমকে দেবতার খাবার হিসাবে মনে করত।
গ্রীকরা মনে করত, মাশরুম লড়াই জয়লাভের প্রয়োজনীয় শৌর্যবীর্য যোগাতে পারে। চাইনিজরা অমরত্বের জন্য মাশরুম খেতো। আর আমাদের পবিত্র হাদিস শরীফে মাশরুমকে বেহেসতী খাবার মান্নার সাথে তুলনা করা হয়েছে। সহীহ বুখারী শরীফের হিসাবে আমাদের নবী করিম (সঃ) বলেছেন, “আল কামাতু মিনাল ওয়া মাহা সাফা আল আইন” অর্থাৎ মাশরুম এক শ্রেণীর মান্না এবং এর রস চোখের জন্য ঔষুধ বিশেষ। ”
* মাশরুমে প্রচুর পরিমানে সালফার সরবরাহকারী এমাইনো এসিড আছে, এটি চুল পড়া ও চুল পাকা প্রতিরোধ করে।
* মাশরুমের ইলুডিন এম এবং ইলুডিন এস নামক উপাদান আমাশয়ের উপকারী।
* মাশরুমের এনজাইম হজমে সহায়ক, রুচি বর্ধক এবং পেটের পীড়া নিরাময়ক।
* মাশরুমের গ্লাইকোজেন উপাদান আমাদের শক্তি বৃদ্ধি করে, যৌবন ধরে রাখে।
* মাশরুমের ফলিক এসিড ও লৌহ রক্ত শূণ্যতা দূর করতে সহায়ক।
* মাশরুমে চর্বি ও শর্করা কম থাকায় এবং আঁশ বেশি থাকায় এটি ডায়াবেটিস রোগীদের আদর্শ খাবার।
* মাশরুমে প্রচুর ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন-ডি আছে, যা দাঁত ও হাড় গঠনে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে বাড়ন্ত শিশুদের।
* মাশরুমে নিউক্লিক এসিড এবং এন্টি-এলার্জেন নামক দুটা উপাদান আছে ? যা কিডনী রোগ প্রতিরোধ করে, সাথে নানান রকম এলার্জিও প্রতিরোধ করে।
* মাশরুমে বি-ডি গ্লুকেন, ল্যাম্পট্রোল, টারপিনওয়েড ও বেনজোপাইরিন নামক কিছু উপাদান আছে, যা ক্যান্সর ও টিউমার প্রতিরোধ করে।
* মাশরুম জন্ডিস রোগের প্রতিষেধক।
* মাশরুম আমাদের ইমুন সিস্টেম উন্নত করে, লিভার কার্যক্রম সঠিক রাখে এবং ব্যাকটিরিয়া প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে।
* মাশরুম রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং ইনসুলিন নিঃসরন তরান্বিত করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
* ফুসফুসের ইনফেকশন নির্মূল করে এবং শরীরের অবসন্নতা দূর করে।
মাশরুম বিফভূনা
উপকারণ ও পরিমাণ # মাশরুম ৫০০ গ্রাম / গরুও মাংস ১ কেজি / তেল হাফ কাপ / পেয়াজ ৪-৫টা / ধনে গুঁড়া দেড় চা-চামচ / শুকনা মরিচ গুঁড়া দেড় চা-চামচ / আদা বাটা ১ টেবিল চামচ / জিরা বাটা ১ চেবিল চামচ / রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ / হলুদ বাটা হাফ টেবিল চামচ / কাচা মরিচ বাটা ১ টেবিল চামচ / লবন পরিমাণমত / গরম মসলা পরিমাণ মত / তেজ পাতা ১-২টি ।
প্রণালী # ১/ প্রথমে মাশরুম ধুয়ে কেটে নিন।
২/ তারপর মাংস কেটে সব মসলা দিয়ে মেখে ১ ঘন্টা রেখে দিন। ৩/ গরম তেলে পেয়াজ ভেজে লাল করে তাতে মাংস ছেড়ে কষান, ভাল ভাবে কষানো হলে তাতে মাশরুম ও গরম মসলা দিন। ৪/ তারপর পানি কমে গেলে আবার গরম পানি দিয়ে মাংস সিদ্ধ করুন। মাংস সিদ্ধ হয়ে গেলে কষিয়ে নামিয়ে ফেলুন ৫/ এবং পরিবেশন করুন চমৎকার সুস্বাদু মাশরুম বিফ ভুনা।
চিংড়ি মশিরুম
উপকারণ ও পরিমাণ # মাশরুম ২০০ গ্রাম / চিংড়ি মাছ ১০০ গ্রাম / পেয়াজ কুচি ১ চা চামচ / আদা বাটা ১ চা চামচ / জিরা বাটা ১ চা চামচ / রসুন বাটা ১ চা চামচ / হলুদ গুঁড়া ১ চা চামচ / কাঁচা মরিচ ৪ টা / তেল পরিমাণ মত / লবন পরিমাণমত।
প্রণালী # ১/ প্রথমে চিংড়ি মাছ পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন। তারপর মাশরুম ধুয়ে ছিঁড়ে পাত্রে রেখে দিন। ২/ অন্য একটি পাত্রে গরম তেলে পেয়াজ কুচি ছেড়ে নেড়ে লাল করে তাতে চিংড়ি মাছগুলো ছেড়ে দিন। ৩/ চিংড়ি মাছ সিদ্ধ হয়ে গেলে মাশরুম দিয়ে পরিমাণ মত লবন ও কাঁচা মরিচ দিয়ে কিছুক্ষণ ঢেকে রাখুন। ৪/ পানি কমে গেলে নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুক মজাদার পুষ্টিকর চিংড়ি মাশরুম।
মাশরুম রোল
উপকারণ ও পরিমাণ # তাজা অথবা শুকনা মাশরুম কুচি ২০০ গ্রাম / পাতলা রুটি ১০ টি / গাজর কুচি ১ কাপ / বরবটি কুঁচি ১ কাপ / বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ / সয়াসস ১ টেবিল চামচ / টমেটো সস পরিমাণ মত / তেল পরিমাণ মত / লবন পরিমাণমত।
প্রণালী # ১/ প্রথমে মাশরুম সহ অন্যান্য সব সবজি গরম পানিতে ৫ থেকে ১০ মিনিট সিদ্ধ করে নিন। ২/ এবার অন্যপাত্রে সিদ্ধ করা এসব সবজি সামন্য তেলে সয়াসস ও লবন দিয়ে ভেজে নিন। ৩/ এবার পূর্বে তৈরি করা রুটির মধ্যে ভাজা সবজি দিয়ে রোল বানিয়ে ডুবা তেলে ভেজে নামিয়ে ফেলুন। ৪/ তারপর টমেটো সস দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।
মাশরুম স্যুপ
উপকারণ ও পরিমাণ # তাজা মাশরুম ২০০ গ্রাম / ডিম ২ টি / কর্ণ ফ্লাওয়ার ১/৪ কাপ / ঔবন ১ চা চামচ / সয়াসস ১ টেবিল চামচ / সিরকা ১ চা চামচ / পেয়াজ কুচি ২ টেবিল চামচ / কাঁচা মরিচ কুচি ৪ টি / স্টিং সল্ট ১/৪ চা চামচ / গোল মরিচ গুঁড়া ১/৪ চা চামচ।
প্রণালী # ১/ প্রথমে মাশরুম কুচি করে নিন। তারপর পাত্রে পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, লবণ ও মাশরুম কুচি নিয়ে নাড়ুন। ২/ সব উপকরণ নরম হয়ে আসলে তাতে সয়াসস দিয়ে ৮ কাপ পানি দিয়ে ভাল ভাবে ফুটান। ৩/ এবার কর্ণ ফ্লাওয়ার পানিতে গুলিয়ে স্যুপে দিয়ে নাড়তে থাকুন।
৪/ তারপর ডিমের সাদা অংশ ফেটে চিকন ধারায় ফুটে উঠা স্যুপে মেশান। ৫/ সব শেষে টেস্টিং সল্ট দিয়ে নামিয়ে পরিবেশন করুন গরম গরম মাশরুম স্যুপ।
মাশরুম ফ্রাই
উপকারণ ও পরিমাণ # তাজা মাশরুম ২০০ গ্রাম / বেসন আধা কাপ / টাউলের গুঁড়া বা সুজি ১/৪ কাপ / মরিচের গুঁড়া ১ চা চামচ / আদা বাটা ১/৪ টেবিল চামচ / লবন ১/৪ চা চামচ / তেল ১ কাপ।
প্রণালী # ১/ প্রথমে বেসন, চাউলের গুঁড়া, লবন মরিচের গুঁড়া ও আদা বাটা মিশিয়ে পানি দিয়ে পাতলা মিশ্রণ বানাবেন। ২/ তারপর তাজা মাশরুম ধুয়ে বা তুলে দিয়ে পরিষ্কার করের সেই মিশ্রণে চুবিয়ে ডুবা তেলে মচমচ করে ভাজুন।
৩/ মাশরুমের উভয় পিঠ লালচে বাদামী রং হলে তুলে ফেলুন। ৪/ তারপর এই মাশরুম ফ্রাই সস বা চাটনি সহকারে পরিবেশন করুন।
মাশরুম ফিসকারী
উপকারণ ও পরিমাণ # মাশরুম ২০০ গ্রাম / বড় মাছ ৭-৮ পিস / পেয়াজ কুচি ২ কাপ / আদা বাটা ১ চা চামচ / জিরা বাটা ১ চা চামচ / রসুন বাটা ১ চা চামচ / হলুদ গুঁড়া ১ চা চামচ / ধনে গুঁড়া ২ চা চামচ / মরিচ গুঁড়া ১ চা চামচ / কাঁচা মরিচ ৪ টা / তেল পরিমাণ মত / লবন পরিমাণমত।
প্রণালী # ১/ প্রথমে মাছ ধুয়ে হালকা রবন ও হলুদ দিয়ে মেখে রাখতে হবে। এবং মাশরুম ধুয়ে কুঁচি কুঁচি করে কেটে রাখতে হবে।
২/ কড়াইতে গরম তেলে পেঁয়াজ কুচি নেড়ে লাল বর্ণ করতে হবে, তখন মাশরুমগুলো ছেড়ে দিতে হবে। সাথে অন্যান্য মশলা দিয়ে কষাতে হবে। ৩/ তারপর কষানো মশলাতে মাছ ছেড়ে পরিমান মত লবন ও আস্ত কাঁচা মরিচ দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। মাছ ভাঙে না এমন ভাবে হালকা করে নাড়তে হবে। ৪/ তারপর পানি কমে গেলে ভুণা অবস্থায় নামিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার মাশরুম ফিস কারী।
মাশরুম পাকোড়া
উপকারণ ও পরিমাণ # মাশরুম ২০০ গ্রাম / আলু ২-৩ টি / গাজর কুচি ১ কাপ / বাঁধাকপি কুচি ১ কাপ / বেসন ২৫০ গ্রাম / কাঁচা মরিচ ৪টা / পেঁয়াজ কুচি ১ টেবিল চামচ / আদা বাটা ১ চা চামচ / জিরা বাটা ১ চা চামচ / টোস্ট বিস্কুট গুঁড়া ১ কাপ / তেল পরিমাণ মত / লবন পরিমাণমত।
প্রণালী # ১/ প্রথমে আলু সিদ্ধ করে ভর্তা করে নিতে হবে। ২/ মাশরুম বাঁধাকপি, গাজর কেটে লবন ও কাঁচা মরিচ দিয়ে অল্প পানিতে সিদ্ধ করে নিতে হবে। ৩/ তারপরা আলু ভর্তার সাথে সিদ্ধ সবজি মিশিয়ে পাকোড়া বানাতে হবে। ৪/ অন্য একটি পাত্রে অল্প লবন দিয়ে বেসনের মিশ্রণ বানাতে হবে।
৫/ তারপর তৈরিকৃত পাকোড়া বেসন মিশ্রনে ডুবিয়ে বিস্কিচের গুঁড়া মিশিয়ে তেলে ভেজে নিতে হবে। ৬/ সব শেষে পরিবেশন করুন গরম গরম মজাদার পাকোড়া। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।