আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ১৩ বছরেও পায়নি পূর্ণাঙ্গ রূপ

কাজ শুরুর ১৩ বছরেও পূর্ণাঙ্গ আঙ্গিকে যাত্রা শুরু করতে পারেনি দেশের ভাষাভিত্তিক প্রথম ও একমাত্র উচ্চতর গবেষণা প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। ২০০১ সালের ১৫ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তারপরও সার্বিকভাবে চালু হয়নি ভাষা ইনস্টিটিউট। বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিপন্ন ভাষাগুলোর অধিকার রক্ষা এবং ভাষার উন্নয়নে ভাষা ইনস্টিটিউটে বর্তমানে শুধুমাত্র ভাষা জাদুঘর সবার জন্য উন্মুক্ত করা হলেও যে উদ্দেশ্যে ভাষা ইনস্টিটিউট নির্মাণ করা হয়েছিল তার কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।

এর অন্যতম কাজগুলো হলো_ বিভিন্ন ভাষাভিত্তিক গবেষণার কাজ, ভাষা সংরক্ষণের জন্য আর্কাইভ নির্মাণ, বিভিন্ন ভাষা সংরক্ষণ এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা ইত্যাদি। তবে ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. জীনাত ইমতিয়াজ আলী সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে আগামী দেড় বছরের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গভাবে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে ভাষা ইনস্টিটিউটের ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু ফেব্রুয়ারি চলে যেতেই আর কাজের খোঁজ নেওয়া হয় না। ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ জানায়, ১২ তলা ভবন নির্মাণে প্রকল্প ব্যয় হয়েছে ৫৪ কোটি টাকা।

বর্তমানে ইনস্টিটিউটের ভাষা জাদুঘরটি সবার জন্য উন্মুক্ত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে জাদুঘর পরিদর্শনের জন্য তারা চিঠি পাঠিয়েছে। শিক্ষার্থীসহ আগ্রহী দর্শক এবং বিদেশি নাগরিকরা প্রতিদিন জাদুঘর পরিদর্শনে আসছেন। অবশিষ্ট রয়েছে ইনস্টিটিউটের লাইব্রেরি ও আর্কাইভ নির্মাণ, বিশেষজ্ঞ জনবল নিয়োগ ও প্রবিধানমালার কাজ। বর্তমানে 'এথনো ল্যাংগুয়েস্টিক সার্ভে'র কাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছে।

এ জরিপের কাজ শুরু হবে আগামী মার্চ থেকে। তা ছাড়া দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর যেসব ভাষার লিখিত রূপ নেই তা সংরক্ষণে সফটওয়্যার উন্নত করার কাজ শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে। চালু করা হয়েছে ভাষা ইনস্টিটিউটের নিউজ লেটার। এ ছাড়া উচ্চতর গবেষণার জন্য চারজন গবেষক নিয়োগ করা হয়েছে। সরেজমিন ভাষা ইনস্টিটিউট ঘুরে দেখা যায়, আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু না হলেও জাদুঘরে এরই মধ্যে দর্শনার্থীদের আনাগোনা শুরু হয়েছে।

এ জাদুঘরে বিশ্বের ৪৪টি দেশের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, ভাষা আন্দোলনের শহীদদের নামসহ ছবি, বিভিন্ন সময়ে ২১ ফেব্রুয়ারির প্রভাত ফেরীর ছবি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রাচীন বর্ণমালার ছবি ও পরিচিতি এবং বাংলাসহ বিভিন্ন দেশের ভাষা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও ছবি প্রদর্শিত হয়েছে। জাদুঘরের জন্য কোনো প্রবেশমূল্য নেই, সবার জন্য উন্মুক্ত। এ ছাড়া তিনতলা ইনস্টিটিউট ভবনের নিচতলায় গাড়ি পার্কিং ও জাদুঘর, ২য় তলায় অডিটোরিয়াম ও আর্কাইভ এবং তৃতীয় তলায় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অফিস, কনফারেন্স সেন্টার, রেস্ট হাউস, স্টাফদের অফিস, ভাষা ল্যাব, রিসার্চ সেল, শিক্ষকদের রুম, কম্পিউটার ল্যাব ও শ্রেণীকক্ষ রয়েছে। আকর্ষণীয় ভবনের অবকাঠামোগত কাজ শেষে এখন প্রশাসনিক কাজ শুরু হলেও কবে নাগাদ কাজ পূর্ণাঙ্গভাবে শুরু হবে জানতে চাইলে জীনাত ইমতিয়াজ আলী এ প্রতিবেদককে বলেন, 'আমাদের অবকাঠামোগত কাজ শেষ। পরিপূর্ণভাবে কাজ শুরু করতে বাংলা একাডেমি ও শিল্পকলা ভবনেরও সময় লেগেছিল।

তবে ভাষা ইনস্টিটিউট নিয়ে মানুষের মধ্যে শিল্পকলা বা বাংলা একাডেমির মতো প্রত্যাশা জেগেছে। কিন্তু ভাষা ইনস্টিটিউটের মূল কাজ হচ্ছে ভাষা নিয়ে গবেষণা করা। এটি সহজ নয়। এ জন্য বিশেষজ্ঞ জনবল প্রয়োজন। শুধু ভবন নির্মাণ হলেই যে ইনস্টিটিউটের কাজ শুরু হবে এটি ঠিক নয়।

উদ্বোধনের চার বছরের মধ্যে ভাষা ইনস্টিটিউটের ভালো অগ্রগতি হয়েছে। আমরা এরই মধ্যে ভাষা জাদুঘরের কাজ শুরু করেছি। আর এ প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান পৃষ্ঠপোষক হওয়ায় সরকারের সহযোগিতাও পাচ্ছি। একটু বিলম্ব হচ্ছে। তবে আশা করছি আগামী দেড় বছরের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গভাবে ভাষা ইনস্টিটিউটের কাজ শুরু করা যাবে।

' কর্তৃপক্ষ জানায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিদেশি নাগরিকরা এরই মধ্যে ভাষা ইনস্টিটিউটের ভাষা শেখার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠা ও বিভিন্ন দেশের ভাষা নিয়ে গবেষণার কাজ আরও সহজ হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো ইনস্টিটিউটের কাজ শুরু না হলেও ভবন নির্মাণের পর এ পর্যন্ত প্রতিটি ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানের কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। ২০০১ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর সরকার পরিবর্তন হলে এর নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ সাত বছর প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকার পর ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রকল্পের কাজ শুরু করে।

২০১০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রস্তাবিত ১২ তলা বিশিষ্ট ভবনের তিনতলা পর্যন্ত নির্মাণের কাজ শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন করেন।

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.