আমার বাবা আমাকে বলেছিলেন, রাজু, তুই জুনিয়র সার্টিফিকেট পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেলে, আমি তোকে একটা কম্পিউটার কিনে দিবো। আমি তখন বলেছিলাম, বাবা, তুমি কিন্তু তাহলে টাকাটা জমিয়ে রেখো।
আমার বাবা আমাদের গ্রামের পোস্ট অফিসের একজন পিয়ন। আমার মা সেলাই-এর কাজ করে। আমার আর একটা ছোটবোন আছে।
বাবার অভ্যাসই ছিল আমাদেরকে স্বপ্ন দেখানো। আর এইভাবে উনি আমাকে প্রাথমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাবার জন্য সাইকেল কিনে দিয়েছিলেন।
আমাদের স্কুলে সরকার থেকে পাঁচটা কম্পিউটার দিয়েছিল। তার মধ্যে তিনটি আমরা ৪৫ জন ছাত্র-ছাত্রী মিলে ব্যবহার করতাম। জুতা খুলে সেই ঘরে ঢুকতে হতো।
কিন্তু তাতে আমরা হাত দিতে পারতাম না। আমাদের স্যার কম্পিউটার চালিয়ে কাজ করতেন। আর আমরা তাকিয়ে-তাকিয়ে দেখতাম। একদিন রাতে ঘুমের মধ্যে আমি কম্পিউটার-কম্পিউটার বলে চিৎকার করে উঠি। বাবা সেটা শুনে পরদিন সকালে মাকে বলেছিলেন।
আমি লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছিলাম।
জুনিয়র সার্টিফিকেট পরীক্ষা শেষ হবার পর আমি প্রহর গুণতে থাকি আমাদের রেজাল্ট বের হবার। কম্পিউটার হাতে পেয়ে কী করবো, তাই ভাবতে-ভাবতে আমার সময় যায়। কিন্তু এর মাঝে একদিন হঠাৎ একটা অঘটন ঘটে যায়। বাবা তার সাইকেলে করে বাড়ি ফেরার সময় একটা ইজিবাইকের সাথে এক্সিডেন্ট করেন।
বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উনার একটা পা ভেঙে যায়। আমার কম্পিউটারের জন্য জমানো টাকা দিয়েই বাবার চিকিৎসা চলে।
কিছুদিন পরে আমার রেজাল্ট দেয়। আমি গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাই।
ততোদিনে বাবা বাড়িতে চলে এসেছেন। ডাক্তার তাকে মাসতিনেকের বেডরেস্ট দিয়েছে। আমার দিকে তাকিয়ে বাবা হাসলেন। বললেন, আমার মনে আছে বাবা, আমি ভুলিনি। আমি বললাম, থাক্ আমার লাগবে না কম্পিউটার।
বাবা বললেন, আমার তো আর সাইকেল চালানো লাগবে না। তাই সাইকেলটা বেঁচে দিবো। বাবার সেই কথাটা শুনে আমার চোখে মনের অজান্তেই পানি চলে এসেছিলো।
অবশ্য আমার বাবা আমার স্বপ্নপূরণ করেছিলেন। তার সাইকেলটা বিক্রি করে আর মায়ের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে, একদিন আমাকে সাথে নিয়ে শহর থেকে একটা কম্পিউটার কিনে আনলেন।
এটাই ছিল আমার প্রথম কম্পিউটার কেনার গল্প। এক বাবার কাছে তার ছেলের স্বপ্নপূরণের গল্প।
-সমাপ্ত-
মোঃ সাদাত কামাল, কম্পিউটার সোর্সের “প্রথম কম্পিউটার কেনার গল্পকথা” প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত রাউন্ডে পৌঁছে গেছেন। গল্পটি পড়ে ভালো লাগলে ভোটদিন ফেসবুক লাইকের মাধ্যমে। মোঃ সাদাত কামাল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের ৪র্থ বর্ষের একজন ছাত্র।
ভিজিট করুন - Click This Link
ফেসবুক লাইক দিন “মোঃ সাদাত কামাল” নামের নিচে। ভোট দেবার শেষ সময় ৩১, ডিসেম্বর, ২০১২।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।