বারবার শুধু ছিটকে পড়ি অশ্লীল কারাগারে
নিরানব্বই
নিরানব্বই এর ওয়ার্ল্ড কাপে পাকিদের সাপোর্ট করে গণ ঘাড় খাওয়ার পর কলোনীর পুলাপানগো থেকে একশত হাত দুরে থাকতেন শরীফুল ভাই। কেমনে জানি ঐদিন আমারে চিনতে পারে নাই, তাই আমার সাথেই একটু খায় খাতির ছিল, এর খেসারত দিতে হত অর্ধেক টানা সিগারেট ড্রেনে বিসর্জন দিয়ে। শত হইলেও একই বিল্ডিং এর বাসিন্দা বড় ভাই। অবশ্য শরীফুল ভাই হঠাত করে কিসের ব্যবসায় নাকি ব্যস্ত হয়ে পড়ায় কেবল সিগারেটটা একটু ডাউন করে সালাম বিনিময়ের মধ্যেই কিছুদিন সীমাবদ্ধ ছিলাম। তবে সেদিন রাশি খারাপ ছিল।
সকালের নাস্তার পর মাত্র সিগারেটে একটা টান দিয়া শরীফুল ভাইয়ের সম্মানে ডাউন কইরা দাড়িয়েছিলাম কিন্তু সে দেখি সহাস্য বদনে সালামের উত্তর দিয়ে কাচাবাজারের দিকে যেতে যেতে আবার ইউ টার্ন মারল
: আয় তোরে একটা জিনিষ দেখাই
কথা শেষ না হতেই শরীফুল ভাই বিশাল থাবায় এক প্রকার হেচড়িয়ে তার রুমে নিয়ে গেল। পুড়াই তাজ্জব অবস্থা, ভাই এর চেয়েও সাইজে বড় একখান মনিটরের ভারে টেবিলের মাঝখানটা এখনই বেকে গেছে।
: ভাই কি টিভি কিনলেন নাকি!
: তুই যে দিন দিন গাধা হইতাছোস এইডা অনেক দিন ধইরা অনুমান করতাসি। এইডা হইল কম্পিউটার, আজব জিনিষ, এইডা ছাড়া জামানা অচল।
তাইতো, কলোনীর পাম্পের ভাঙা দেয়ালে দ হইয়া সিগারেট ভাগাভাগির আড্ডায় একদিন না থাকলেই মনে হইতো দুনিয়া বুঝি চলতাসেনা
: আরে শা.., ছোঢভাই, কি করণ যায়না এইডা দিয়া...বলেই শরীফুল ভাই লাল একটা বাটনে চাপ দিতেই কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি কইরা একখান পর্দা আসল।
সেই পর্যন্ত কিছুই না বোঝার ভান করলাম, কিন্তু স্ক্রিন সেভারে যখন শরীফুল ভাইয়ের নামটা মোটা- চিকন, ডাইনে বামে উপর নীচ থেকে লাফালাফি শুরু করলো তখন তাজ্জব না হইয়া যায় কই।
: দেখছস কম্পিউটার কি জিনিষ! শরীফুল ভাইয়ের বিঘত খানিক হাসি মাখা মুখ দেইখা আন্দাজ করার চেষ্টা করছিলাম উইন্ডোজ তৈরির পর বিল গেটস এর হাসিখানা কতটা বৃহত ছিল।
: ভাই, আর কি করণ যায় এইডা দিয়া?
: একদিনে অনেক দেইখা ফালাইছ, আজকা বাড়ি যাও আর চিন্তা কর দুনিয়ার উন্নতিটা কোন দিকে যাইতাছে
চিন্তিত মুখে পাম্পের দিকে হাটা দিলাম। বাপের অর্ধলক্ষ টাকা খরচ করে এ্যাপটেকে ভর্তি হয়ে সি দিয়া ঘড়ি তৈরি করেই নিজেরে বিল গেটস বিল গেটস লাগতেছিল, এহন মনে হইতাছে হুদাই ভর্তি হইলাম, শরীফুল ভাইয়ের মতো স্ক্রিণ সেভারে নাম ঘুরাঘুরিতো শিখায় নাই। এ্যাপটেক পুরাই ফালতু....
তেরো বছর পরে
বাপের রিটায়ারমেন্ট এর কারণে এজিবি কলোনীর পাট চুকাতে হল।
মায়াকাননের ঘিঞ্জি এক গলিই আপাতত ঠিকানা। পরিচিত কেউ নেই, কাজের চাপে পরিচিত হয়ে ওঠারও সময় নেই, কেমন যেন হাসফাস লাগে। তাই অফিস শেষে গুলশান দুইয়ে ভিড়ের মাঝে পরিচিত মুখ খুঁজি। দুএকজনকেও পেয়েও যাই কখনো কখনো। শরীফুল ভাইকে দেখে তাই বিকট চিতকারটাকে কেউ গেয়ো ভাবলে সেটা তার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়।
আপাতত শরিফুল ভাই এর বিশাল থাবড়াটার নিচে ডান কাধটার অসহায় আত্নসমর্পণ।
: কি মিয়া, এদিকে কৈ চাকরি কর, বিয়া সাদী করছ নাকি, চল কোথাও বসি... উত্তর শোনার কোন তাড়া নেই, রুচিতার একটা টেবিলে বসে কথায় একটু পশ দিলেন ।
শরীফুল ভাইকে পেয়ে এতক্ষণ পর্যন্ত বিকশিত দন্তগুলো এবার মুখের আকার বাংলা পাচে টার্ন করায় একটু ছুটি মিলল। শ্লার কাছে কখনোই টাকা থাকেনা। বেশি বিপদে পড়লে মানিব্যাগের চিপা থেকে টেপ লাগানো একটা পাচশো টাকার নোট বাইর করে
: ব্যাগের মধ্যে কি? ল্যাপটপ? বাইর কর
: জি¦ না, কাগজ পত্র
: ধুর..., তুমিতো এখন পিছাইয়াই আছো
:জ্বি, বাসায় ডেস্কটপ আছে
: ডেস্কটপ? ঐযে বড়টা!, একটু আগাইছ, খারাপনা।
নিজের ব্যাগ থেকে ঢাউস একটা ল্যাপটপ বের করতে করতে বলেন শরীফুল ভাই
: ভাই, এইডারতো ওজন কম হইলেও তিন কেজি। কান্ধে লইয়া ঘুরেন কেমনে
: যত বেশি ওজন, তত আপডেট, ছোটগুলিতে কি সব থাকে মিয়া! অরিজিনাল, ইংল্যান্ড থেইকা আনাইছি
যত বেশি ওজন তত আপডেট...... ব্যাগে হাত দিয়া অনুভব করলাম পিচ্চি নোটবুকটা আছে কিনা, তাহলে এইসব আকামের নোটবুক নিয়া হুদাই ঘুরি, ফালাইয়া দেওনই ভালা। না থাক, নিজের পয়সায় কিনা
: ফেসবুক এড্ড্রেসটা কও, নাকি নাই!
: আছে একটা ভাই, আরকি
: আরেকটু আগাইছ। ফ্রেন্ড লিস্টে কয়জন আছে
:৫০/৬০ জন হইব
: তোমারতো দেখি সোশ্যাল হওনের কোন চেষ্টাই নাই। আমারতো ধর ফ্রেন্ড লিস্টে হাজার দুয়েক আছে।
ব্যস্ত থাকিতো, সময় দিতে পারতাসিনা। তা নইলে মনে করো আরো এড থাকতো। এই জমানায় সোশ্যাল না হইলে টিকতে পারবানা। আরো এডভান্স হও।
:ভাই কি ব্লগ লিখেন?
চিকনে প্রশ্নটা করে একটা নেগেটিভ উত্তরের আশায় আশান্বিত হতে থাকলাম।
: সেইডা কি?
: এই যে ধরেন, সমাজের বিভিন্ন বিষয় নিয়া লেখালেখি
: বুঝছি বুদ্ধিজীবি কেস, তুমি এহনও এই লাইনে চিন্তা করা, পুরাই হতাশ হইলাম তোমারে নিয়া। এই যুগে খালি মাউসে ক্লিক মারবা আর কি বোর্ড চাপব,সব আইসা যাইব। ঐসব লেখালেখির কোন বেইল আছে।
একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। ভাগ্যিস ব্লগের খবর এখনও তার কাছে পৌছে নাই।
নইলে কখন আবার ফুটকা বেলার কথা বা অমর প্রেমের কাহিনী লেখা শুরু করে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।