পেশাগত জীবনে ইন্দোনেশিয়ার তরুণরা দক্ষতায় একেবারে কম যান না। কিন্তু প্রেম? শব্দটা শুনলেই যেন হৃদপিণ্ডটা হঠাৎ করেই কোমায় চলে যায়। কোন নারীর সামনে গেলে তো তুখোর বাকপটু উকিলটার মুখ দিয়েও কথা বেরোতে চায় না। তাহলে উপায়? এমন ভীরু মন নিয়ে প্রেমটা হবে কীভাবে? এসব ভীরু প্রেমিক যুবকদের জন্য ইন্দোনেশিয়ায় চালু হয়েছে বিভিন্ন কোর্স। মুখচোরা পুরুষদের মুখে খই ফোটাতে রয়েছে ‘‘হিটম্যান সিস্টেম''৷ আর এই সুযোগে 'লাভ কনসালটেন্ট' পরিচয়ে প্রেমের পরামর্শ দিয়ে দুটো পয়সাও কামিয়ে নিচ্ছে কেউ কেউ।
ইন্দোনেশিয়ার বাসিন্দা হানের ধারণা- তিনি যাই বলেন বা করেন না কেন নারীরা কিছুতেই ‘ইম্প্রেসড' হবেন না৷ এ কারণে তিনি তিন দিনের বিশ ঘণ্টাব্যাপী একটি ‘প্রেমের' ওয়ার্কশপে যোগদান করেছেন। এজন্য তাকে খরচ করতে হচ্ছে চল্লিশ লাখ ইন্দোনেশীয় রুপিয়া, অর্থাৎ ৩৫৬ ডলার।
রাজধানী জাকার্তার বৃহৎ একটি শপিং মলের ভিতরে একটি ছিমছাম, গোলমালবিহীন রেস্টুরেন্টে ছ'জন প্রেমের শিক্ষার্থীকে নিয়ে চলে এই ‘হিটম্যান সিস্টেমের' ওয়ার্কশপ৷ হিটম্যান সিস্টেমের তিন উদ্ভাবকের একজন হলেন কাই সাভুরি। তার মতে ইন্দোনেশিয়ার পুরুষরা তাদের সংস্কৃতি ও ধর্মের কারণে যৌন বিচারে কিছুটা ‘প্রদমিত'৷ তাই তাদের সঠিক পন্থা দেখিয়ে প্রেমে উজ্জ্বীবিত করতে এই কোর্স।
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মুসলিমের বাস ইন্দোনেশিয়ায়৷ ধর্মীয় এবং সামাজিক কারণে অবশ্যই বিবাহ ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়৷ তবে বিয়ের আগে যৌন সম্পর্কও খুব বিরল নয়৷ এরকম একটি সমাজে সাভুরি'র মতো একজন আর্ট ডিজাইনারের পক্ষে সাবেক পেশা ছেড়ে প্রেমের গুরু হয়ে বসাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়৷ ছ'বছর আগে হিটম্যান সিস্টেম চালু করেন সাভুরি।
এ পর্যন্ত প্রায় দু'হাজার মুখচোরা, লাজুক পুরুষ মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতে শিখেছেন, আলাপ থেকে শুরু করে প্রেম সব কিছু শিখেছেন৷ এই ছাত্রদের অনেকেই যার যার পেশায় সুপ্রতিষ্ঠিত।
হিটম্যান সিস্টেমে থিওরির পাশাপাশি প্রাকটিক্যালের উপরে বেশ জোর দেওয়া হয়। হয়ত শনিবার কোর্স চলাকালীন ছাত্রদের বলা হলো, পশ্চিম জাকার্তার সেন্ট্রাল পার্ক মল- এ গিয়ে সম্পূর্ণ অপরিচিত মহিলাদের সঙ্গে আলাপ করো৷ সেক্ষেত্রে শিক্ষানবীশদের কিছু পদ্ধতিও শিখিয়ে দেওয়া হয়। যেমন: কোন মহিলাকে গিয়ে নিজের দু'টো ফটো দেখানো৷ একটি ফটোতে হয়তো হাসিমুখ, অন্যটাতে গোমড়া৷ এবার সেই অপরিচিত মহিলাকে জিজ্ঞাসা করো, কোন ছবিটা তাঁর বেশি পছন্দ৷ তবে খেয়াল রাখতে হবে বলার ভঙ্গিতে রাগ হয়ে মহিলাটি আবার পুলিশ ডাকার উপযোগ না করে। সেক্ষেত্রে আলাপের আগে ওই নারীর মুখ দেখে বোঝার চেষ্টা করতে হবে তার মানষিক অবস্থা কেমন।
প্রেমগুরুদের মতে এই ধরনের এক্সারসাইজে শুধু স্নায়ুই শক্ত হয় না, লজ্জা ও আড়ষ্টতাও কেটে যায়। তবে হিটম্যান সিস্টেমের গুরুদের একটা কথা- বাড়াবাড়ি কোরো না, বেশি চাপ দিও না৷ তাদের ক্লায়েন্টদের অধিকাংশই নাকি ৩০-৩৫ বছর বয়স অবধি টাকার পেছনে ছুটতে ছুটতে এতোটাই যান্ত্রিক হয়ে পড়েন যে, সুন্দর কথাবার্তা বলে মানুষকে হাসানো বা খুশি করার কায়দাটাই জানা নেই।
তবে হিটম্যান সিস্টেমে প্রেমের শিক্ষার্থীদের জন্য বিপদসংকেত আছে ভয়াবহ। বান্দুংয়ের কোনো এক রিলেশনশিপ কনসালট্যান্টের নিজের গার্লফ্রেন্ডই নাকি তাঁর প্রেমিক হিটম্যান সিস্টেমে প্রেম করা শিখেছেন শুনে সেই মুহূর্তে সম্পর্কে ছেদ করেছিলেন! সূত্র: ডিডব্লিউ ।
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।