জেলায় জেলায় আওয়ামী লীগের কাউন্সিল নেই। উপজেলায়ও কাউন্সিল হচ্ছে না দীর্ঘদিন ধরে। ইউনিয়নেও কাউন্সিল নেই। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগেরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। কোনো কোনো জেলায় যুগ পেরিয়ে গেলেও কাউন্সিলের খবর নেই।
আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলে এমন অনিয়ম কর্মীদের কাছে অনেকটা অকল্পনীয়। যথা সময়ে দলীয় কাউন্সিল না হওয়ায় তৃণমূলের নেতৃত্ব বিকশিত হচ্ছে না বলে কর্মীদের অভিমত। জেলা পর্যায়ের নেতারা কেন্দ্রের কাছে বার বার কাউন্সিলের দাবি জানালেও দলের নীতিনির্ধারকরা এ ব্যাপারে যেন উদাসীন। সারা দেশে বছরের পর বছর দলীয় কাউন্সিল না হওয়ায় সাংগঠনিক স্থবিরতা চলছে আওয়ামী লীগে। সাংগঠনিক স্থবিরতার কারণে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে শুরু করে মন্ত্রী-এমপিরাও সাংগঠনিক কার্যক্রমে অনেকটা নিষ্ক্রিয়।
দলের মাঠপর্যায়ের কর্মীদের প্রশ্ন এমন অবস্থা আর কতদিন? নতুন নেতৃত্বের অপেক্ষায় মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের উৎকণ্ঠা বাড়লেও আগামী জুনের আগে জেলা পর্যায়ের কাউন্সিল হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র এমন আভাসই দিয়েছে। সূত্রমতে, ধাপে ধাপে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠান শেষ হলে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দলীয় কাউন্সিল করবে আওয়ামী লীগ। আগামী জুনে শুরু হবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ধারাবাহিক কাউন্সিল। কেন্দ্র থেকে এমন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
দলীয় সূত্রমতে, প্রায় ২০টি সাংগঠনিক জেলায় সম্মেলন হচ্ছে না প্রায় এক যুগ ধরে। প্রায় এক দশক পেরিয়ে গেছে, খোদ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নিজ জেলা গোপালগঞ্জে কাউন্সিল হচ্ছে না। দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নিজ জেলা কিশোরগঞ্জের অবস্থা আরও খারাপ। সেখানে প্রায় এক যুগ ধরে সম্মেলনের খবর নেই। ১৪ বছর অতিক্রান্ত হলেও সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগে ভর করছে পুরনো নেতারাই।
দীর্ঘদিন কাউন্সিল না হওয়ায় সিরাজগঞ্জের দলীয় নেতা-কর্মীরা রীতিমতো হতাশ। একই অবস্থা নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লায়ও। এ দুটি জেলায় সর্বশেষ কবে দলীয় সম্মেলন অনুষ্ঠি হয়েছিল তা অনেকেরই অজানা। কুমিল্লা উত্তর ও কুমিল্লা দক্ষিণেও সম্মেলন হচ্ছে না দীর্ঘদিন ধরে। অনেক প্রতীক্ষার পর ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হলেও কঙ্বাজার, রাঙামাটিসহ চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জেলায় কাউন্সিলের খবর নেই।
ঢাকার অদূরেই নারায়ণগঞ্জ। দলের কেন্দ্রীয় সব কর্মসূচিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা থাকলেও সেখানেও একই চিত্র। নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল আজ থেকে প্রায় এক দশক আগে। নাটোর জেলা আওয়ামী লীগেও হতাশার চিত্র। দলীয় কাউন্সিলের দাবি থাকলেও প্রায় ১১ বছর হতে চলল নাটোর জেলায় কাউন্সিল নেই।
পরপর দুবার ক্ষমতায় আসা দেশের সর্বাপেক্ষা বৃহত্তম দলটির এমন সাংগঠনিক স্থবিরতা অধিকাংশ জেলায়। ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার এক-তৃতীয়াংশ জেলায়ও এখন পর্যন্ত কাউন্সিল করতে পারেনি দলটি। সরকার তুলনামূলক গতিশীল হলেও দলের এমন সাংগঠনিক স্থবিরতার কারণেই উপজেলা নির্বাচনেও প্রভাব পড়েছে বলে দলের মাঠপর্যায়ের নেতারা মনে করেন। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ পায়নি নতুন নেতৃত্ব। সম্প্রতি মহানগর আওয়ামী লীগের থানায় থনায়, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সম্মেলন শুরু হয়েছে।
আগামী এক মাসের মধ্যেই ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের থানায় থানায় নতুন নেতৃত্ব আসতে পারে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে ত্যাগী ও মাঠের নেতাদেরই মূল্যায়ন করা হবে। সাংগঠনিকভাবে দক্ষ ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতারাই কমিটিতে ঠাঁই পাবেন। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কাউন্সিল সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উপজেলা নির্বাচন শেষ হলে পর্যায়ক্রমে সব জেলার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ হবে। পর্যায়ক্রমে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের দলীয় সম্মেলনের ভেতর দিয়ে দলকে আরও গতিশীল করা হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।