একটা ছোট্ট ভাই আছে। কাজিন। পিএসসি পরীক্ষা দিলো। ১০ বছরও হয়নি বয়েস। গ্রামের বাড়িতে গেলে সারাদিন পিছে পিছে ঘোরে।
বছর খানেক আগে একবার বীরশ্রেষ্টদের নাম, জাতীয় দিবস গুলো জিজ্ঞাসা করেছিলাম। সব পারেনি। বলেছিলাম, 'এর পর আর একবারও যদি না পারিস তো আমার সাথে কথা বলবি না'। এরপর থেকে এগুলো সব জেনে রেখেছে। গেলেই বলে আমার পড়া ধরো।
বলেই টপাটপ মুখস্ত বলে যায়।
গতকাল ওর পিএসসি রেজাল্ট দিয়েছে। মা গতকাল দুপুরে ফোন দিয়ে বললো, 'রণি, রূপমের রেজাল্ট খারাপ হইছে। ওদের বাসার সবার মন খারাপ। ফোন দিস'।
ফোন রূপমকে দিতেই জিজ্ঞাসা করলাম, 'কি-রে? কত পাইছিস?'। ওপাশ চুপ। কোনো কথা নেই। আবার জিজ্ঞাসাইলাম, 'কিরে? এই? কী হইছে?' আমার সারাদিন মুখ হাসিহাসি করে রাখা ভাইটা ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো, 'আমার রেজাল্ট খারাপ হইছে'।
ওর বাবাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, 'কিসে ফেল করছে রূপম?' খুব মন খারাপ করে আমাকে বললো, 'ফেল করবে ক্যান? 'এ প্লাস' পায় নাই।
বাংলা আর বিজ্ঞানে 'এ' পাইছে। পয়েন্ট ৪.৬৬'। আমার আর কিছু বলার ইচ্ছে হয়নি।
আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই পড়লাম ১৩/১৪ বছরের দুটো বাচ্চা ছেলে জেএসসিতে 'এ প্লাস' পায়নি বলে আত্মহত্যা করেছে। কথাটা যত সহজ শোনাচ্ছে তত সহজ না।
পূর্ণ বয়স্কদের আত্মহত্যার কথা শুনেছি। পোষ্টমর্টেম করতে গিয়ে যত লাশ দেখেছি তার সবই পূর্ণ বয়স্ক। হয়তো জীবন যুদ্ধে হারতে হারতে আত্মহত্যার পথ বেঁছে নেওয়া। কিন্তু দু'টো ১৩/১৪ বছরের শিশু? কিভাবে সম্ভব? কতটা চাপ প্রয়োগ করলে এরা এটা চিন্তা করতে পারে তাই ভাবতেই মাথাটা ধরে যাচ্ছে! সিস্টেমটাই এমন হয়ে গেছে যে 'এ প্লাস' না পাওয়াটাই ফেল এর কাতারে ধরা হচ্ছে। 'এ প্লাস' না পেলেই প্রতিযোগীতার বাজার থেকে ছুটে যাচ্ছে ভাবা হচ্ছে।
ফলে জীবনের শুরুতেই জড় করে দেওয়া হচ্ছে পাহাড় সমান প্রত্যাশা। আর এই পাহাড়ে পিষ্ঠ হয়েই আত্মহত্যাকে বেঁচে নিতে হলো এ দু'টো শিশুর। রাষ্ট্রযন্ত্র একদিক দিয়ে সফল। এখন জিপিএ এর ভিত্তিতে মানুষ মরতেছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।