ব্যাট যেন মেশিনগান, আর বল আগুনের গোলা। ৪৩ বছর পর মিরপুরে আবারও ফিরে এসেছিল সেই ৭১। ব্যাট হাতে কাল বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা পাত্তাই দেয়নি পাকিস্তানি বোলারদের। ছক্কা-চারের বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছে মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়াম। টাইগারদের সুনামিতে ছিন্নভিন্ন হয়েছে পাকিস্তান।
কাল ইনিংসে ৮টি বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে বাংলাদেশ। ইনিংসে মোট বাউন্ডারি ৩১টি। তিন উইকেটে ৩২৬ রানের পাহাড়সম স্কোর গড়ে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তো বটেই, যেকোনো দলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোরের নতুন রেকর্ড এটি। এর আগে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ৩২০ রান, ২০০৯ সালে বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে।
কাল শেষ ১০ ওভারে এসেছে ১২১ রান। অর্থাৎ প্রতি ওভারের ১২ রানের বেশি। ওয়ানডের ইতিহাসে আগে কখনো শেষ ১০ ওভারে এতো বেশি রান হয়নি। তবে পাওয়ার প্লে-র দুর্বলতা রয়েই গেছে। প্রথম ১০ ওভারে এসেছে মাত্র ৩৯ রান।
আর ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে অবস্থা ছিল আরও করুণ। ৩৫-৩৬ ওভারে এসেছে মাত্র ১৬ রান। এই সময়ের মধ্যে হারাতে হয়েছে বিজয়ের উইকেটটি।
গত দুই বছর ধরে ওয়ানডেতে দারুণ খেলছে বাংলাদেশ। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ায় ক্রিকেটারদের আত্দবিশ্বাসে লাগে চোট।
একের পর এক ইনজুরি ও সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞা এশিয়া কাপের আগেই ভেঙে দেয় টাইগারদের মনোবল। প্রথম দুই ম্যাচে ভারত ও আফগানিস্তানের হেরে যেন খাদে পড়ে যায় বর্তমান রানার্সআপরা। কিন্তু এই ম্যাচে সাকিব ফেরায় বদলে যায় চিত্র। আত্দবিশ্বাসী হয়ে ওঠে পুরো দল। সাকিব আল হাসান যে বাংলাদেশ দলের প্রাণ, তা আরও একবার যেন প্রমাণ হলো।
বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার দলে ফেরায় ভাগ্যই খুলে গেল বাংলাদেশ। কাল ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষাতেই এসেছিল ব্যাপক পরিবর্তন। সবার মধ্যেই যেন খেলে যাচ্ছিল বিদ্যুতের ঝলক। যে চিত্রটা আগের দুই ম্যাচে ছিল না। কাল টস জয় থেকে শুরু করে প্রতি ক্ষেত্রেই ভাগ্যের সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ।
মুশফিকুর রহিম প্রথমে ব্যাটিং নেওয়ায় অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছিলেন। কেননা দিবা-রাত্রির ম্যাচে টার্গেট তাড়া করে রান করাই যে তুলনামূলক সহজ! তাছাড়া প্রথম ম্যাচে ভারতকে ২৮০ রানের টার্গেট দিয়েও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। যদিও আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ছিল উল্টো চিত্র। তবে কাল দুই ওপেনার এনামুল হক বিজয় ও ইমরুল কায়েস সবার ভুল ভেঙে দেন। তারা দুজনে মিলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৫০ রানের রেকর্ড পার্টনারশিপ গড়েন।
দারুণ এক সেঞ্চুরি করে এনামুল হক বিজয়। আউট হওয়ার আগে ১৩২ বলে ১০০ রান এনামুল হক বিজয়। ছয়টি বাউন্ডারির সঙ্গে চার চারটি বিশাল ছক্কা। বিজয়ের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি এটি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো বাংলাদেশি ওপেনারের প্রথম সেঞ্চুরি।
তাছাড়া বিজয় ও ইমরুলের করা ১৫০ রান ওপেনিং জুটিতে যেকোনো দলের বিরুদ্ধেই বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
বিজয় হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেছিলেন ৫৫ বলে। তবে সেঞ্চুরি করতে খানিকটা বেশি সময় নেন। স্পিনার মোহাম্মদ হাফিজের করা ৩৯তম ওভারের চতুর্থ বল লং অনে ঠেলে দিয়েই উসাইন বোল্টের গতিতে দৌঁড় দেন। বিজয় হেলমেট খুলে দুই হাত প্রসারিত করে উদযাপন করেন সেঞ্চুরি।
পুরো স্টেডিয়াম তখন বিজয় বিজয় রবে প্রকম্পিত। শুধু শেরে-বাংলা স্টেডিয়াম কেন, উচ্ছ্বাসের আবেগ তখন সাড়া দেশেই।
হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ইমরুল কায়েস, মমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম। শেষ দিকে উইকেটে এসে ঝড় তুলেন সাকিব আল হাসান। মাত্র ১৬ বলে ৪৪ রানের অপরাজিত সাইক্লোন ইনিংস খেলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
শেষ উইকেট জুটিতে মুশফিকের সঙ্গে মাত্র ৩৪ বলে করে অপরাজিত ৭৭ রানের পার্টনারশিপ গড়েন তিনি।
তিন বছর পর দলে ফিরে চমক দেখিয়েছেন ইমরুল কায়েসও। ৭৫ বলে করেছেন ৫৭ রান। বাংলাদেশের এই ওপেনার ওয়ানডেতে সব শেষ ব্যাট হাতে নেমেছিলেন ২০১১ সালের ডিসেম্বরে। ফিরে প্রথম ম্যাচেই দারুণ এক ইনিংস খেলে সবার মন জয় করে নিলেন।
তবে ইমরুলের শুরুটা ছিল খুবই ধীরগতির। কিন্তু উইকেটে সেট হওয়ার পর শক্ত হাতে ব্যাট চালাতে থাকেন তিনি। পাঁচটি বাউন্ডারি ছাড়াও দুটি ছক্কা হাঁকিয়েছেন। মমিনুল হাফ সেঞ্চুরি করেন ৪৭ বলে। আর মুশফিক অর্ধশতক পূরণ করেছেন মাত্র ৩৩ বলে।
আগের দুই ম্যাচে হেরে যাওয়া কাল বাংলাদেশ দলে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। আগের ম্যাচে খেলা পাঁচ পাঁচজন ক্রিকেটারের বাদ দেওয়া হয়। সাকিব, ইমরুল ছাড়াও দলে ফেরেন মাহমুদুল্লাহ্, শফিউল ও আল আমিন। ৩২৭ রানের পাহাড় সমান টার্গেট নিয়েও আবারও আফ্রিদি ঝড়ে জয় পেয়ে পাকিস্তান এশিয়া কাপ ক্রিকেটে ফাইনালে জায়গা করে নিল। ৮ মার্চ তারা শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে লড়বে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।