দৃশ্য – ১
সময়: রাত
স্থান: কোনো একটি আবাসিক এলাকার রাস্তা
চরিত্র: ফারিয়া
রাতের রাস্তায় লোকজন ও যানবাহনের তেমন চলাচল নেই।
হঠাৎ একটি সরু গলিপথ থেকে বড় রাস্তায় বেরিয়ে আসে ফারিয়া। ফারিয়ার পরনে ছিল গায়ে হলুদের শাড়ি, মাথায় ও গলায় ছিলো ফুলের গহনা। গলিপথ থেকে বের হয়ে বড় রাস্তা ধরে হাটতে থাকে ফারিয়া।
কিছুক্ষণ হাটার পর একটি চার রাস্তার মোড়ে এসে দাড়ায় ফারিয়া।
রাস্তার মোড়ের চায়ের দোকানে কয়েকজন ছেলে আড্ডা দিচ্ছে। মোড়ে দাড়িয়ে ফারিয়া এদিক-ওদিক তাকিয়ে ভাবতে থাকে কোনদিকে যাবে। অবশেষে একটি পথ ধরে ফারিয়া আবার হাটতে থাকে। চায়ের দোকানে আড্ডা দেয়া ছেলেগুলো ফারিয়ার পিছু নেয়।
কিছুটা পথ হাটার পর ফারিয়া বুঝতে পারে পেছন থেকে তাকে কেউ অনুসরণ করছে।
তাই সে পেছন ফিরে তাকায়। ফারিয়া পেছনে তাকাতেই ছেলেগুলো অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে দাড়িয়ে থাকে। বিপদ আশংকা করে ফারিয়া দ্রুতগতিতে হাটতে থাকে। ছেলেগুলোও ফারিয়ার পেছন পেছন হাটতে থাকে।
কিছুটা পথ গিয়ে ফারিয়া হাটা থামিয়ে দাড়িয়ে এদিক-ওদিক তাকাতে থাকে।
ফারিয়া (ভয়েস অফ): এভাবে বেশিক্ষণ হাটা ঠিক হবে না। আমাকে এক্ষুনি নিরাপদ একটা আশ্রয় খুঁজে নিতে হবে। নাহলে যেকোনো সময় একটা বিপদ ঘটে যেতে পারে।
তারপর ফারিয়া একটি বাড়ির গেটের দিকে এগিয়ে গিয়ে গেট নক করে।
ভেতর থেকে দাড়োয়ান গেটটি খুলে দিলে ফারিয়া দ্রুতগতিতে ভিতরে ঢুকে পড়ে।
দারোয়ান: (কিছুটা উত্তেজিত হয়ে): বলা নাই কওয়া নাই ফট কইরা বাড়ির ভিতরে ঢুইকা পড়লেন যে? কে আপনে? এতো রাইতে এইহানে কী চান?
ফারিয়া: (বিনয়ের সুরে): আমি ভীষণ বিপদে পড়েছি। কিছু খারাপ লোক আমার পিছু নিয়েছে।
দারোয়ান গেট দিয়ে বাইরে বের হয়ে এদিক-ওদিক তাকায়। কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না। দারোয়ান আবার ভিতরে ফিরে আসে।
দারোয়ান: কই বাইরে তো কাউরেই দেখতে পাইলাম না। মিছা কথা কওনের আর জায়গা পান না। যান এইখান থেইকা ভাগেন।
ফারিয়া (বিনয়ের সুরে): আপনি বিশ্বাস করুন আমি সত্যি কথা বলছি। ওরা আমাকে ফ্লো করতে করতে এইখান অবধি এসেছিলো।
দারোয়ান (ঢংয়ের সুরে): আপনে আমারে আহাম্মক পাইছেন? ভাবছেন আপনের এইসব কথা শুইনা আমি আপনেরে থাকতে দিমু। আপনেগো মতো মাইয়া মাইনসেরে আমার মেলা আগের থেইকা চিনা আছে। বিপদের কথা কইয়া থাকনের জায়গা কইরা তারপর সবকিছু চুরি কইরা পলাইয়া যাওনের ধান্ধা আর কি। ভালোয় ভালোয় কইতাছি এইখান থেইকা ভাগেন। নইলে কিন্তু খুব খারাপ অইয়া যাইবো।
ফারিয়া (আকুতির সুরে): বিশ্বাস করুন আপনি যা ভাবছেন আমি মোটেও সেরকম মেয়ে নই। প্লিজ আজকের রাতটার মতো আমাকে একটু এইখানে থাকতে দিন।
দারোয়ান (অবহেলার সুরে): ওইসব প্লিজ টিলিজ কিছু বুঝিনা। আপনেরে আমি থাকতে দিতে পারুম না এইটাই আমার শেষ কথা।
দোতলার বারান্দায় এসে দাড়ায় দোতলার বাসিন্দা মাহিন।
মাহিন (দাড়োয়ানের উদ্দেশ্যে): এতো রাতে এখানে এতো হইচই কিসের?
দারোয়ান (কিছুটা এগিয়ে গিয়ে উপরের দিকে তাকায়): আর কইয়েন না স্যার এই মহিলা কইর থেইকা না করই থেইকা আইয়া বাড়ির ভিতরে ঢুইকা পড়ছে।
ফারিয়া (মাহিনের দিকে তাকিয়ে, আকুতির সুরে): বিশ্বাস করুন আমার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নেই। বাইরে কিছু ছেলে আমার পিছু নিয়েছে। সকাল হলেই আমি এখান থেকে চলে যাবো।
চোখ ঘুরিয়ে ফারিয়ার দিকে চোখ পড়তেই মাহিন একদৃষ্টে ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবতে থাকে।
মাহিন (দারোয়ানের উদ্দেশ্যে): ঠিক আছে ওনাকে উপরে পাঠিয়ে দেও।
দারোয়ান (উপরে তাকিয়ে, মাহিনের উদ্দেশ্যে): না না স্যার, এইসব কথা আপনে বিশ্বাস কইরেন না। পরে বিপদে পরবেন।
মাহিন: (দারোয়ানের উদ্দেশ্যে) বেশি কথা না বলে, তোমাকে যেটা বলেছি সেটা করো।
ফারিয়া: (ভয়েস ওভার) লোকটার কোনো খারাপ মতলব নেই তো আবার? না হলে গায়ে পরে আমাকে আশ্রয় দিতে চাইছে কেনো? এছাড়া আমার হাতে আর কোনো উপায় নেই।
কপালে যা থাকে হবে। আজকের রাতটা আমাকে এখানেই থাকতে হবে।
দারোয়ান: (ফারিয়ার উদ্দেশ্যে)যান আপনে উপরে যান।
ফারিয়া ভয়ে জরোসরো হয়ে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে থাকে।
দৃশ্য – ২
সময়: রাত
স্থান: মাহিনের ফ্ল্যাট
চরিত্র: মাহিন ও ফারিয়া
ফ্ল্যাটের দরজা খুলে দাড়িয়ে আছে মাহিন।
সিড়ি দিয়ে ফারিয়া উপরে উঠে দরজার কাছে দাড়ায়।
মাহিন: (ফারিয়ার উদ্দেশ্যে)আসুন ভিতরে আসুন।
মাহিন: (ফারিয়ার উদ্দেশ্যে) আপনি দাড়িয়ে আছেন কেনো? আসুন বসুন।
ফারিয়া: (কম্পিত কন্ঠে) না ঠিক আছে। আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
মাহিন: (বসা থেকে উঠে গিয়ে ফারিয়ার কাছে এগিয়ে যায়)
আপনি কি কোনো কারণে ভয় পাচ্ছেন?
ফারিয়া: (কাপড়ের আচল দিয়ে মুখের ঘাম পরিষ্কার করে) না না ভয় পাবো কেনো? আসলে এরকম সিচুয়েশনে আর আগে কখনো পরিনি তো তাই একটু নার্ভাস ফিল করছি।
মাহিন: টেনশনে আপনি ঘেমে যাচ্ছেন। এসে একটু পাখার নিচে বসুন। দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে।
ফারিয়া ধীর পায়ে হেটে গিয়ে সোফায় বসে।
মাহিন: আপনি বসুন। আমি একটু ভেতর থেকে আসছি।
ড্রইং রুম থেকে মাহিন বেডরুমের দিকে চলে যায়। ফারিয়া ড্রইং রুমে বসে থাকে।
দৃশ্য – ৩
সময়: রাত
স্থান: মাহিনের বেড রুম ও ড্রইং রুম
চরিত্র: মাহিন ও ফারিয়া
ফারিয়া: (ভয়েস অফ) লোকটা ফোনে কার সাথে কথা বলছে? আবার কোনো কু-মতলব করছে না তো? না জানি ভাগ্যে আজ কি লেখা আছে।
ল্যান্ড ফোন কানের কাছে ধরে বিছানার উপর বসে আছে মাহিন।
ড্রইং রুম থেকে ফারিয়া, মাহিনের দিকে তাকিয়ে আছে।
ফোনে কোনো একজনের সাথে কথা বলছে মাহিন।
মাহিন: তোমরা কোনো টেনশন করো না। আজকের রাতটা যে করেই হোক ভুলিয়ে ভালিয়ে মেয়েটিকে আমি আটকে রাখবো।
সকাল হলে তুমি সবাইকে নিয়ে চলে এসো।
মাহিন ঘুরে ফারিয়ার দিকে তাকায়। ফারিয়া মাহিনের দিকে তাকিয়ে আছে।
পুরুষ কন্ঠ: (অফ স্কীন) ঠিক আছে। রাতে একটুও ঘুমাবি না।
ওর দিকে ভালো করে খেয়াল রাখবি। আমরা আসার আগে ও যেনো চলে না যায়।
মাহিন: মেয়েটি এদিকে তাকিয়ে আছে। আমি এখন রাখছি।
পুরুষ কন্ঠ: (অফ স্কীন) ঠিক আছে রাখ।
দৃশ্য – ৪
স্থান: ড্রইং রুম
সময়: রাত
চরিত্র: মাহিন ও ফারিয়া
বেড রুম থেকে বের হয়ে মাহিন ড্রইং রুমে এসে ফারিয়ার পাশে সোফায় বসে।
মাহিন: সরি আপনাকে অনেকক্ষণ একা একা বসিয়ে রাখলাম।
ফারিয়া নিজেকে মাহিনের কাছ থেকে কিছুটা দুরে সরিয়ে নেয়।
মাহিন ফারিয়ার দিকে কিছুটা এগিয়ে বসে।
ফারিয়া: (ভয়েস অফ) লোকটার মতিগতি দেখে তো খুব ভালো মনে হচ্ছে না।
যে করেই হোক আমাকে এখান থেকে বের হতে হবে।
ফারিয়া বসা থেকে উঠে দাড়ায়।
ফারিয়া: দরজাটা খুলে দিন। আমি চলে যাবো।
মাহিন বসা থেকে উঠে গিয়ে ফারিয়ার সামনে দাড়ায়।
মাহিন: চলে যাবেন মানে? এতো রাতে আপনি কোথায় যাবেন? আর আপনি চাইলেও এতো রাতে আপনাকে আমি একা বাইরে বের হতে দিতে পারবো না।
ফারিয়া: আপনি যদি জোর করেন তাহলে কিন্তু আমি চিৎকার করবো। আপনি কি ভেবেছেন এখানে বসে বসে আমি আপনার লালসার স্বীকার হবো? অতো বোকা মেয়ে আমি নই। আপনাদের মতো পুরুষ মানুষদের আমার খুব ভালো করে চেনা আছে।
মাহিন মুখ চেপে হাসতে থাকে।
ফারিয়া: (কৌতুহল নিয়ে)কী ব্যাপার আপনি এভাবে নির্লজ্জের মতো হাসছেন যে?
মাহিন: আপনার কথা শুনে না হেসে পারলাম না। আচ্ছা আমি যদি বলি আপনি কোনো কু-মতলব নিয়ে এখানে এসেছেন।
ফারিয়া: (ধমকের সুরে) খবরদার। আমার সম্পর্কে একটাও বাজে কথা বলবেন না। আমি মোটেও কোনো কু-মতলব নিয়ে আপনার এখানে আসি নি।
বিপদে না পড়লে আপনার এখানে আমার আসতে বয়েই যেতো।
মাহিন: (অনুরোধের সুরে) ঠিক আছে মানছি আপনি কোনো কু-মতলব নিয়ে এখানে আসেন নি। এখন পাগলামি না করে একটু শান্ত হয়ে বসুন। সকাল হলে আমি আর আপনাকে আটকাবো না।
ফারিয়া: আমি থাকতে পারি তবে একটা শর্ত আছে।
আপনি আমার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করবেন না।
মাহিন: আমি আপনার শর্তে রাজি আছি। এবার আপনি একটু শান্ত হয়ে বসুন।
ফারিয়া দাড়ানো থেকে বসে। মাহিন গিয়ে ফারিয়ার বিপরীত পাশের সোফায় বসে।
মাহিন ও ফারিয়া কেউ কোনো কথা না বলে চুপচাপ বসে থাকে।
ফারিয়া: (অনুরোধের সুরে) আমাকে এক গ্লাস পানি দিবেন প্লিজ।
মাহিন: ওহ সিওর।
মাহিন বসা থেকে উঠে গিয়ে ডাইনিং টেবিলের উপর রাখা জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে এনে ফারিয়াকে দিয়ে ফারিয়ার সামনে দাড়িয়ে থাকে। ফারিয়া এক চুমুকে গ্লাসের পুরোটা পানি খেয়ে কাপড়ের আচল দিয়ে মুখ মুছে জোরে একটা নি:শ্বাস ছাড়ে।
ফারিয়া: ভয়ে গলাটা শুকিয়ে একেবারে কাঠ হয়ে গিয়েছিলো। আর একটু হলে বোধহয় তৃষ্ণায় মারাই যেতাম।
মাহিন: আর এক গ্লাস দেবো?
ফারিয়া: না আর লাগবে না।
মাহিন, ফারিয়ার হাত থেকে পানির খালি গ্লাসটি নিয়ে ডাইনিং টেবিলের উপর রেখে এসে ফারিয়ার বিপরীত পাশের সোফায় বসে।
ফারিয়া কপালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকে।
মাহিন: আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে?
ফারিয়া: না তেমন কিছু না। আসলে মাথাটা খুব ধরেছে। আপনি যদি কিছু না মনে করেন, আপনার এখানে চা বা কফি...
মাহিন: আপনি একটু বসুন আমি এখুনই নিয়ে আসছি।
মাহিন উঠে রান্নাঘরের দিকে চলে যায়।
*** চলবে ***
বি:দ্র: আমি কোনো প্রফেশনাল রাইটার নই।
কিছুটা চেষ্টা করি। জানিনা কতটুকু হয়। আমার কাছে সমসাময়িক সামাজিক বিভিন্ন ধ্যান ধারণার উপর ভিত্তি করে লেখা কয়েকটি স্ক্রিপ্ট রয়েছে। নাটক সংশ্লিষ্ট কেউ থাকলে যোগাযোগ করতে পারেন।
যোগাযোগ: ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।