আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বতন্ত্র বিভাগ গঠনের দাবি

স্বতন্ত্র 'পুলিশ বিভাগ' গঠনের দাবি নিয়েই আজ শুরু হচ্ছে পুলিশ সপ্তাহ, ২০১৪। অন্যান্য দাবির মধ্যে থাকছে 'পুলিশ ব্যুরো অব কাউন্টার টেররিজম' (পিবিসিটি) গঠন এবং অন্তত ৫০ হাজার জনবল বৃদ্ধি। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষভাবে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে স্বতন্ত্র্য 'পুলিশ বিভাগ' গঠনকে। পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও 'পুলিশ বিভাগ' গঠনের বিষয়টি তুলবেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। জানা গেছে, একজন অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অ্যাডিশনাল আইজিপি) ও একজন উপ-মহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) সমন্বয়ে কাঠামো তৈরি করে দুই বছর ধরে একটি প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে।

প্রস্তাবিত স্বতন্ত্র পুলিশ বিভাগ পুলিশ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত হবে। অন্যদিকে একজন অতিরিক্ত আইজিপিকে প্রধান করে বিশেষভাবে জঙ্গি দমনের জন্য পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট 'পুলিশ ব্যুরো অব কাউন্টার টেররিজম' গঠনের প্রস্তাবটিও দীর্ঘদিন ধরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঝুলে আছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা জানান, আমলাদের বৈরী আচরণের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরেই পুলিশ বিভাগকে দাবিয়ে রাখা হচ্ছে। প্রশাসন ক্যাডারের আমলারা পুলিশকে তাদের শত্রু মনে করেন। আর এ কারণেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আমলারা নিজ জিম্মায় রেখে দিয়েছেন।

আর এ কারণে অন্য ক্যাডারের তুলনায় সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পুলিশ। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম জানান, স্বতন্ত্র পুলিশ বিভাগ গঠনের ব্যাপারে তার আপত্তি নেই। শীঘ্রই তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করবেন। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গিবাদ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চরমপন্থি দমন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, ২১ আগস্ট, বিডিআর, দশ ট্রাক অস্ত্র মামলাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলা তদন্তে পুলিশ সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে। তবে সময়োচিত সিদ্ধান্তের অভাবে সাইবার, জঙ্গি তৎপরতা, মানব পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধ পরিপূর্ণভাবে মোকাবিলা করা অনেক সময়ই সম্ভব হয় না।

গোয়েন্দানির্ভর আধুনিক পুলিশিং এবং তথ্য ও প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অপরাধ দমনের বিভিন্ন যুগোপযোগী প্রস্তাবনা রহস্যজনক কারণে শ্লথ হয়ে যাচ্ছে। এ সংক্রান্ত ফাইল দিনের পর দিন চাপা পড়ে যাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। অপরাধ সংঘটন করে পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই জঙ্গি দমনে দেশজুড়ে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হয়। গ্রেফতার করা হয় বিপুলসংখ্যক জঙ্গি সদস্য ও নেতাকে।

নিষিদ্ধ করা হয় কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনকে। বিশেষ করে জঙ্গি দমন ও সংগঠনগুলোকে চিরতরে নির্মূলে ন্যাশনাল পুলিশ ব্যুরো অব কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গঠন করার ব্যাপারে জোর দাবি উঠছে পুলিশের পক্ষ থেকে। অন্যদিকে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো পুলিশের একাধিক ইউনিট গঠন করা হলেও জনবলের অভাবে সেগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। বিশেষ করে র্যাবের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি এলিট ফোর্সে ও জনবল সরবরাহ করতে পারছে না পুলিশ। র্যাবে পুলিশের ২৬৮ জন কর্মকর্তা থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ১৩৮ জন।

কনস্টেবল থেকে উপপরিদর্শক পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ৮২৪ জনের ঘাটতি রয়েছে বলে জানা গেছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে অর্থ বিভাগ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিকল্পনা বিভাগ এবং বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় সরকারের গৃহীত পরিকল্পনা দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পুলিশ, বিডিআর, আনসার, পাসপোর্ট, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস, নারকোটিকস কন্ট্রোল, কারা অধিদফতর প্রভৃতি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান থাকার পরও সরকারের গৃহীত কর্মসূচি দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, তিনি নিজেও পুলিশ বিভাগ গঠনের বিষয়টি অনুভব করেন। অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে ভাবা হচ্ছে।

একই সঙ্গে পর্যায়ক্রমে পুলিশের দাবি ও সমস্যাগুলো দূরীকরণে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সাবেক আইজিপি এস এম শাহজাহান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'আইজিপির প্রস্তাব একজন সহকারী সচিব রিভিউ করবেন এটি অত্যন্ত বেমানান। সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে পুলিশ সরাসরি জড়িত। তাই পুলিশ সদস্যদের দিয়ে স্বতন্ত্র পুলিশ বিভাগ শীঘ্রই করা উচিত। এতে এ বিভাগের গতিশীলতা আরও বাড়বে।

'

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.