নিজের ভাবনা অন্যকে জানাতে ভালো লাগে।
কর্জ্যত বিএনপি এখন কোথাও নেই। নেই ক্ষমতাই,নেই বিরোধী দলে। নেই আন্দোলনের মাঠে, নেই সংলাপের টেবিলে। নেই মানে দলটার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে ব্যাপারটা মোটেও এমন নয়।
বরং আজও সরকারের শক্তিশালী প্রতিপক্ষের নাম বিএনপি। আজও কোটি কোটি নেতা, কর্মী, সমর্থক নিয়ে সমাজে বিরাজমান রাজনৈতিক শক্তির নাম বিএনপি। যে দলের এত শক্তি এত-বড় কর্মী বাহিনী তবে তার এমন করুণ হাল কেন হল? কেন হলো, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজার জন্য আমাদের দলটার রণ কৌশলের দিকে একটু নজর দিতে হবে। জেনারেল এরশাদের পতনের পর থেকেই আমরা দেখে আসছি বিএনপি-আওয়ামীলীগ এই দুই দলের পাল্টা-পাল্টি ক্ষমার পালা বদল। দেখেছি যে দল ক্ষমতাই যায় তাদের সীমাহীন দুর্নীতি আর ভয়ানক গণ-বিচ্ছিন্নতা, দেখেছি ৮তম সংসদ নিরবাচনে বিপুল বিজয় দল বিএনপির নবম সংসদ নিরবাচনে ভয়াবহ পরাজয়।
আবার দশম সংসদ নিরবানও যদি অবাত, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ভাবে হত, তবে সেই নিরবাচনে যে আওয়ামীলীগের ভয়ানক ভরাডুবি হতো সেই ধারণা আমরা নানা জনমত জরিপ আর স্থানীয সরকার নিরবাচনগুলোর ফলাফল বিশ্লেষণ করে ধারণ করতে পারি। কিন্তু ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরার প্রবণতা এদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটা অংশ। দশম সংসদ নিরবাচনে সেই সংস্কৃতির জয় হয়েছে। তবে এই অসুষ্ঠু সংস্কৃতির জন্মতো বিএনপিই দিয়েছে। জনগণ এত-দ্রুত ইতিহাস ভুলে যাবে এটা মনে করার কোন কারণ নেই, কারণ নেই বেগম জিয়ার সেই ঐতিহাসিক উক্তি ভুলে যাবার: পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয় ’সেই সাথে একতরফা নিবার্চন করে ক্ষমতাই যাবার ইতিহাসও।
এই ইতিহাস যদি দূর অতীত বলেও মনে হয়, তবে নবম সংসদ নিরবাচনের কথাও স্মরণ করা যেতে পারে। যেখানে তিনি ক্ষমার মসনদ আঁকড়ে রাখার জন্য সমস্ত-রকম ষড়যন্ত্রের ষোলো কলাই পূর্ণ করে ছিলেন! যখন বিএনপির ক্ষমাই যাবার পালা আসল, তখন দলটা সেই সংকটের মুখোমুখিই হলো, যে সংকটতে তিনি সরকারে থাকার সময় বিরোধী দলকে ফেলে ছিলেন। ততদিনে যা হবার তা হয়ে গেলে, একটি সুষ্ঠু, অবাত, নিরপেক্ষ নিরবাচনের জন্য জন-সম্পৃক্ত আন্দোলন গড়ে তুলার যে নৈতিক শক্তি দরকার দলটা সে শক্তি হারিয়ে ফেলল। সত্যি কথা বলতে কি যে কোন আন্দোলন সংগ্রাম রাজনৈতিক কর্মীরাই করে এটা যেমন সত্য, ঠিক একই ভাবে সত্য হচ্ছে, নানা মত পথের সাধারণ মানুষের সমর্থন ছাড়া কোন আন্দোলনেই সফল হতে পারে না। যে কারণে ব্যর্থ হলো বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক দাবি।
তা ছাড়া জনগণ তার আগের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝে গেছে: বিএনপির এই আন্দোলন ক্ষমতার মসনদে বসার আন্দোলন, এর মধ্যে জনগণের কোন স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যাপার,নেই। পাঁচ বছর বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় তারা কোন জন সম্পৃক্ত ইস্যুতে কর্মসূচি দিতে পারে নাই। আমার স্মৃতি যদি প্রতারণা না করে তবে বলতে পারি, বিরোধী দল হিসেবে বিএনপির প্রথম আন্দোলনের ইস্যু ছিল, সংসদের সামনের সারিতে আসন পাওয়া নিয়ে, এরপর বেগম জিয়ার বাড়ি রক্ষা, তারেক জিয়ার মামলা প্রত্যাহারের মতো কর্মসূচিগুলো পেরিয়ে শেষ আসলও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্ন। অথচ আওয়ামীলীগের গত পাঁচ বছরের শাসনকালে যা যা ঘটেছে এর প্রত্যেকটা ইস্যু নিয়ে গণ আন্দোলন গড়ে তুলা যেত। অপরদিকে জামায়াতের আন্দোলনের নামে দেশে যত রকম নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে, তার সমস্ত- দায় ভার বিএনপি তার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে।
জামায়াতের প্রশ্নে বিএনপির অবস্থা ছিল অনেকটা, নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গের মতো। কিন্তু সেই কৌশলেও তারা ভয়াবহ রকমের ধরা খেয়েছে, নিজের নাক কেটেছে ঠিকই, কিন্তু অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করতে পারে নিই। বরং উল্টা নিজের যাত্রাটাই ভঙ্গ হয়ে গেছে। যে আমেরিকা জামায়াতের মতো একটা ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িক দলকে মডেরেট ইসলামি দল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল সেই আমেরিকা ও তাদের মিত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নেই আজ প্রশ্ন তুলছে বিএনপির সাথে জামায়াতের গাঁটছড়া বাঁধা নিয়ে। ক্ষমতার মোহে তারা ভুলে গিয়ে ছিল : আমেরিকার যার বন্ধু তার কোন শত্রুর প্রয়োজন নেই!তারপরও বিএনপির বিশ্বাস ছিল তার দীর্ঘদিনের মিত্র আমেরিকা বোধ করি একতরফা নিরবাচনে করে ক্ষমতাই আসা সরকারকে স্বীকৃতি দেবে না।
এর-বাইরেও আমেরিকাকে বসে রাখার জন্য উপঢৌকন হিসেবে বিএনপির হাতে তখনও ছিল, টিফফা চুক্তির মতো একটা লোভনীয় প্রস্তাব। কিন্তু সব হিসেব-নিকেশ পাল্টে গেল, বিএনপি ক্ষমার জন্য যেমন দেশের সমস্ত স্বার্থ বিকিয়ে দিতে পারে, বিদেশি প্রভুর কাছে, একই ব্যাপারে আওয়ামীলীগেই বা কম কীসের! তাই তারা ক্ষমতা ছেড়ে পুনঃ নিরবাচিত হবার আগেই আমেরিকার সাথে সেরে ফেলল, টিফফা চুক্তিটা। আর আমেরিকার অবস্থার ক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি সেই পুরানো প্রবাদ: বিড়াল কালো হোক আর সাদা হোক, ইঁদুর ধরতে পারলেই হলো। বিএনপির রণ কৌশল, জনগণের উপর আস্তা না রেখে বিদেশি প্রভুকে তুষ্টি রাখার কৌশল এভাবেই ভয়ানক মাইর খেল। তাই আজ তাদের নিরবাচন নীতি বর্জন করে উপজেলা নিবাচনে আসতে হচ্ছে নাকে খত দিয়ে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।